মধুমিতা
মুখোপাধ্যায়
ভালবাসার ডাক
অতীতের ফুলেল
রেশমী অনুভবে
অলীক
স্বপ্নের রঙিনতন্তু দিয়ে
ভুলের পর
ভুলের কলকা সাজিয়ে
বানিয়েছি
ইহজন্মের নকশি কাঁথা!
তার উপরেই
রচেছি আমার ভুলেভরা
স্বর্গীয়
ফুলশয্যা!
সহবাসে
মিশেছি শরীরে শরীরে
‘অণ্যে’র চাদরে বন্য আদরে ভুল করে
উচ্ছ্বলা নদী
হয়ে নীলাভ আশমানে!
মহামিলনের
ভুললগ্নে নিজেকে
ঢেকেছি তাকেই
আবরণ করে,
অনুভবে ভুল
করে !
না না ! এ
আমি কোনো শরীর নই!
আজও প্লাবন
আনতে পারি মরুর বুকে।
ভালবেসে মেলে
দিতে পারি ইচ্ছেডানা!
উড়ে যেতে
পারি হিমালয়ের চূড়ায়!
যেখানে
অনন্তনিবাসী আমার স্বপ্নের
নীলকন্ঠ
পাখি!
হাজারো বসন্ত
অপেক্ষায় থাকতে পারি
জন্ম থেকে
জন্মান্তর শবরীর মতো!
মিশে যেতে
পারি গোধুলিরঙে মুরলীর সুরছন্দে!
যদি একবারও
বলে ডেকে,ভালবাসবে সে
একটা জনম,বহুকোটি আলোকবর্ষ
শেষে
জীবনঘড়ির
সময়মতো!
প্রলাপ
বেঁচে থাকারা
ধিকি ধিকি পোড়ে নগরসভ্যতায়
সুন্দরের
পরিত্যক্ত জঘন্য অতীতের নির্যাসে........
দিশাহারা
পথিক অধঃপতনের শেষসীমায়
অসুন্দর
আবর্জনা মাখে অবলীলায়.....
হৃদয় খোঁজে
কাজলা চাহনি....
ভুল
শমীবৃক্ষের নীচে পথভ্রষ্ট ত্রিষ্টুপ
ধরে অযোগ্যের
হাত......ক্ষণিকের আশ্রয়.....
নিঃসঙ্গ
গাঙচিল সাক্ষী থাকে
জ্যোৎস্নাহারা
চাঁদের ক্ষণিক প্রগলভতার!
গোধুলি আবহ
অভ্যস্ত চোরাবালির বুকে
মুখ গুঁজে ওম
নেয় অতলের আহ্বানে....
পরিশেষে
অবলুপ্ত চেতন ফেরে দুচোখে
হারিয়ে শরম
লাজ!
যে ভাবনারা
জানে যোগ্যতা ছিল না শূন্যভাঁড়ারে
আপন করে
পাওয়ার....!সে অনুর্বর বিষবৃক্ষই
ছন্দময়তা দেয়
অতীত হালকর্ষণের.......জীবন থামে
যে উদ্দাম
অসতীর আহ্বানে
ভুলের সেপথ
দিয়েই ফিরে যেতে হয়
সুন্দর আসার
আশায় একলা নিশ্চুপে......
রোদ্দুরের পথ
ধরে আগামী বসন্ত উৎসব একুশের পুনর্মিলন........!
কর্কশ ডেকে
ডেকে ফিরে গেছে কাক
ডানায় মেখে
ভালবাসার ভৎর্সনা ...
সামাজিক
কর্তব্য আর অসামাজিক
নান্দনিক মন
আজো কি খোঁজে বন্ধুর স্পর্শ
অথবা আমৃত্যু
মনে রাখার এক অচ্ছুত শিহরণ?
প্রেম-অপ্রেম
আরশিনগরে
যত্নে গড়ি
তোমারই
স্বপ্নের ঘর!
জল-মাটি আর
বীজে
হালকর্ষণে
উর্বর চরাচর!
ছোট্ট
ভালোবাসার আকাশে
রামধনু রঙের
ভাসাভাসি
সাগরের অতল
আহ্বানে
নীল সহবাসে
মেশামেশি!
আজ জানলায়
ঘুণপোকা
দরজার পরোতে
খয়েরীজং
তোমার অনুচিত
জগতে
আমার অনুভূতি
ফিকেরং!
সময় ঈগলের
বুড়োডানা
দূরে
পাহাড়চুড়ো ঢাকে
তোমার
দিশাহারা স্মৃতিকণায়
কাব্যের
উপেক্ষিতা থাকে!
বিরহের নাকি
দূরত্বের
অতীত এই
মৃত্যুচেতনা
আমার পরতে পরতে
অনাবিল
বিচ্ছেদ যন্ত্রণা!
ফিরে গেছো
অ-নীতিবোধে
রেখে গেছ
অতীতসম্ভার
কতটুকু
ছিলেইবা তুমি
অলীক
প্রেম-অপ্রেমের সংসার!
সীমন্তিনী
ভাগ্যদেবতার
সন্ধ্যারতি ক্ষণে
আলতো
মিষ্টিস্পর্শের চিরআড়ি
শেষ
সাক্ষাৎকারে মুখোমুখি
একজোড়া
প্রেমহীন শুকসারি!
জীবনের
অন্তর্মুখী ধারায়
হৃদয়-নদীর
প্রগলভ স্রোতে
ঘাত-প্রতিঘাতে
ভরা সময়ের
সঙ্কটময়
বিচ্ছেদ ধারাপাতে!
পৈশাচিক
আতঙ্কের আবহে
মরেছে আত্মার
লাজুকসম্ভ্রম
ক্ষমাই
জীবনের পরমধর্ম
চিরায়তস্তোক
শ্রীবুদ্ধ গৌতম!
সীমন্তিনীর
পবিত্র উপচার
কাগজমোড়কে
ওয়ালেট খাঁজে
রাজপুত্তর ঘোড়ায়
আসেনি
নারী
জীবনযৌবনের মন্তাজে!
লাবণ্যিত
অন্তরের ফুলডালি
কুসুমিত মননে
চিরন্তনে
পূজারিণী
ব্রাত্য ভালবাসায়
গোধুলির
অপাংক্তেয় ক্ষণে!
আরশিনগরের
নিঃশব্দ স্রোতধারা
নিস্তরঙ্গ
বহতা ফল্গুরজলে
ভালবাসা
নিঃশেষ যতিচ্ছেদে
সমাধিত নীলের
নীলঅতলে !
ঋণ
বেশ তাই হোক
তবে!
মধুর ভালবাসা
চাওয়া-পাওয়ার ঋণ শোধ হোক
সুদে আসলে
হিসাবের নৈপুণ্যে উপযুক্ত দামে!
অতীত অনুভবে
হৃদয় চিহ্নের ডাকটিকিট সাঁটা
না পাঠানো
পুরনো জরাজীর্ণ নীলরঙা সেই খামে!
মনে কি রেখেছ?কত-কি-কেমনতরো সে ঋণ?
কতটা জমেছে
সুদ আর.......
বাকিটা আসলে অন্তহীন !
প্রতি,
-মধুর নামে!
বাহ্ এমনিও
নাকি হয়?
মনেতে যা
ভাবো
তা কি মনের অনুভবে রয়?
কখনো
বহুযুগের সস্তা গল্প মনে দেয় দোলা,
কখনো দুর্বুদ্ধির
জেরে প্রেমজ কায়াকল্প
অল্পস্বল্প,
কখনো বা
দিশাহারা মনের দ্বন্দ্ব
আর দোলাচল বৃত্তি
কখনো বা মনের ভুল প্রলাপ!
অথবা অনৌচিত্য ভাবনার আবেশে
চিরনিবৃত্তি!
ভাবি মনে,
দিই তবে একটা ঋণের খসড়া কষে!
সম্পর্কের
গভীরতার নিরিখে
আর ভাবনার আবেশে!
দাও দিকি
চুকিয়ে
অঙ্কের পর
অঙ্ক সাজিয়ে
দশমিক যোগে
বিয়োগে মিলিয়ে
আর হৃদয়টাকে
কয়েক পাক চক্রবৃদ্ধিহারে ঘুরিয়ে
সুদে পেঁচিয়ে
শতকরায়
মিশিয়ে
অনুভবের
সম্পাদ্যে
শিহরণের লগে
কোসেকর
উত্তরে
পুবের কল্পনা
বসিয়ে?
তবে দাও শুধে
দাও তোমার অগুনতি ঋণের সম্ভার!
সেই কাকডাকা
ভোরের প্রথম আলো
চাদর সরিয়ে
ঘুমন্ত ঈশ্বরীয় মুখ চকিতে দেখা
দুষ্টুমিতে
পিঠের নীচে জীর্ণ আঁচল আটকে রাখা
সন্তর্পণে
টানতে গিয়ে ঘুম ঘুম চোখে তাকিয়ে থাকা!
আদরে নিবিড়ে
চটকিয়ে মটকিয়ে
কপালে আলতো
ঠোঁটের ছুঁয়ে যাওয়া
দিনের শুরু
ভাল থাকা-ভাল রাখা!
দাও ফিরিয়ে
সুদে আর আসলে!
বুঝিনা কি
রেখেছো আর কি বা দেবে ফিরিয়ে?
প্রতি সকালের
স্নিগ্ধ বাতাসে চায়ের গন্ধ মেশে
আধখানা
বিস্কুটের ভাগ
আর একটা কাপে দুটির ঠোঁট
চুমুকের সেই শিহরণ অনুক্ষণ........!
একের থেকে ছড়ানো অপরের অনুরণন!
তুমি
বারান্দায় বসা কাগজ হাতে
আমি ব্যস্ত
অফিস স্কুলের ভাতে মাছে
আর টিফিন
গুছাতে।
হঠাৎ চোখ
ঘড়ির কাঁটায়
দুগ্গা
দুগ্গা !মা ভালো রেখো মানুষটায়!
সময়ে যায় ,সময় যেন সুস্থশরীরে
ঘরে পৌঁছায়!
ছিনিও তবে
ঘড়ির পানে অভ্যস্ত সে দৃষ্টি!
হয় না কি শোধ?ছি! ছি! কি
অনাসৃষ্টি!
দুপুরের
ভাতঘুম বিশ্রাম
আর অফিসে টিফিনের অবসরিকা
দুটো চড়াই
খেলে বেড়ায়
প্রেম প্রেমের খেলা অল্প অবসর ঝটিকা!
উঠোন জুড়ে
রোদে ছায়ায় মিলন্তিকা
দূরভাষে দূরনিবিড়
নৈমিত্তিকা !
হয় যে না শেষ
কথার ভার
বেলা পড়ে এলো, আকর্ষণ দুর্নিবার!
ফেরাবে কি
তবে সে প্রেমের ঋণ ভার?
কতটা মূল্য
দেবে? কত আছে দাম তার?
বিকেলের আলো
নামলেই ব্ল্যাক কফি,জিলিপি
ঘরের পথে
দুটি পা ক্লান্ত ভারি জীবনের প্রতিলিপি!
কপালে ঘাম , কাজের চাপে অবসন্ন
জীবন
এসো মাথা রাখ
কোলে
হাত বুলিয়ে শুষে নিই
যতটুকু শ্রম দিয়েছো এতোক্ষণ!
একটা চায়ের
কাপ আর রুটি মোচার তরকারী
প্লেটে অল্প
চানাচুর,ভাজা ঝুরি
ভালবাসা ভরা
গলাজড়াজড়ি!
কি দাম ধরবে
অনুভবটার?
একি ভালবাসা
নাকি রদ্দি দৈনিক সমাচার?
বেচে দেবে সের দরে?
কতো বেছে
ফেলবে?
ধরা আছে
ভরে আছে হৃদয় গ্রন্থিতে
থরে থরে!
কাজ থামলেই
রাত নামলেই
বাচ্চার
ঝক্কি ভুলে
পড়ে না মানে
না অবুঝ নালিশ
বড় বেয়াদপ হচ্ছে ক্ষণে ক্ষণ
লেগে গেল
দুজনের ঝগড়া ভীষণ!
সব অভিমান সব
মালিন্য ফেলে ঝেড়ে
এখন শুধু
নিবিড় ভালবাসা ভরা ঊষ্ণ আদরে!
বুকে মাথা
রেখে ক্লান্তির ঘুম
বলি” বাঁদিকটা যে ধরে যায় “!"যাচ্ছে যাক"!
"তুমি -তুমি যে সব না-পাওয়ার বিকল্প আধার
দিশাহারা
হতাশ জীবনের অন্তরায়!"
"দাও অমৃত! নামাও দুচোখে ঘুম!"
আমি যে
পূজারিনী !
তুমি যাতে খুশি
আমি শুধু
আগলেছি যখের এ ধন পরম !
বল তবে কি
ভাবে কতটা ফেরাবে ঋণের আকারে!
আমি যে
নিঃসঙ্গ দূর্গা,জীবনের জোয়ারে!
শুধুমাত্র
তোমার তরে,
চলেছি অন্তর্জলি যাত্রায় চিরতরে!
-ইতি পূজারিণী!