বৃহস্পতিবার, ২১ জুন, ২০১৮

শুভদীপ সেন



শুভদীপ সেন

আমায় চিনি, ওনার'টা জানি না

তুমি এসে ছিলে-তাই মায়াহীন পানশালা,
হেঁটেছে রাস্তাঘাটে ছোটগল্প নিয়ে,
ওঝা'র ধূপে যখন ভূত-অদ্ভূত ছেলেখেলা,
নদী পালিয়ে যায়, পরিচালক'কে নিয়ে।

বাদামী আগুনে ঠাঁসা সিনেমার নন্দন,
ভাঙা কাঁচ জুটিহীন মরিচীকা খোঁজে-
আসলে জীবন তো জীবিকার বন্ধন,
গোলাপগুলো বন্দী নারী;  পরমাত্মার মাঝে।

অদলবদল হাত-চোখ দুটো দিলরুবা হারা
কামরায় গান গেয়ে জোটে কিছু বখ্শিষ,
বরঞ্চ ব্ল্যাক কফি,  তুমি মৃদু আঁচে ক্যাফেকবিরা
সাথে মিনারেল ঠোঁট,  আর একচিমটি সৌরিশ।

টিকিট ভিজে গেছে, ফেরিঘাটে ঢেউয়ের নাবিক
ছলাৎ ছলাৎ কথা, লাইব্রেরী মাঝে মধ্যে আসে,
ইচ্ছে ছিলোনা জানি;  তাই মৌসুমী ভৌমিক--
আর নিখিলেশ সান্যাল, চলে গ্যাছে প্যারিসে।

যে যেতে চায়, তাকে চলে যেতে দাও,
হে তারিখ...
যতোই আধুনিকা হতে চাও,
আসলে তো তুমি নিজেই পৌরাণিক!






পরলোকচন্দ্রিকা

অরণ্যের গায়ে লেগে থাকা
আঁশটে স্বরলিপি শুঁকতে
এ ঘোরকলি'তে বেশ নির্নায়ক অনুভূতি লাগে,

ঠিক যে সখ্যতায়
পাতালপ্রবেশ কালে;
শ্রীমতি সীতা পুনর্জন্ম নেয় শুক্রানুর অগ্রভাগে।

আজ, সে মহাকিরনের অজান্তে
খোলা শরীরের গন্ধে--
দুর্ধর্ষ নারায়নী সেনাকে ছত্রে ছত্রে করি বাজিমাত

কুরুপ্রান্তর থেকে ধাবমান
কৌশিকি অমাবস্যার খাতিরে--
এক লহমায় মূর্চ্ছিত খন্ডে পাঠ করে চলি সর্পাঘাত।

অস্থি-মজ্জা বেশভূষাহীনা এক দেবদাসী,
পাঁজরের দুর্বলতায় যে জলচর শ্যাওলার স্রোতে
কলমীলতার মতো গজিয়ে ওঠে...

এ তপ্ত দহনে
রাজহাঁসের মতো বিধবা বরফের হলদে সুবাসে
মুক্তোমালা গাঁথি নির্ণায়ক কামসূত্র কন্ঠে।

অপর মহানির্বানের কোষ্ঠী'তে
বেহাত হয়ে যাওয়া প্রতিকূল শঙ্খনাদের
ওস্তাদি কাঠামো নির্মানের আত্মা,

নগণ্যে অপরিচিত বৃন্দাবন--
ছায়া সৌন্দর্যে পোষাকি মাধুর্য,
বিপরীতে নশ্বর স্নায়ুতন্ত্রের উপরি চাঞ্চল্য;  অগত্যা।

সৌভাগ্যে চামড় দোলাই
উন্মুক্ত শ্রীচরণতলে, কথা উপকথায়
গিরিখাত মাঝে জাগ্রত ঝোড়োহাওয়া বইতে থাকে

শয়নকক্ষ প্রস্তুত...
দখিন খোলা দৃষ্টিভঙ্গীতে অপেক্ষমান স্বর্গরথ--
নিজে মৃতদেহ আগলে নিজেরই মৃত্যুরেখা আঁকে!






উঠি তাহলে

শ্রীজাত...
তোমার বিচ্ছিন্ন কৃপন সেতু ছুঁয়ে
সংশোধনাগারে গিয়ে টের পেলাম,
কয়েদী'রা সব মেষপালক;
পাহারাদাড় স্লো-পয়জন।

মানচিত্রে বেমক্কা লক্ষ কোটি আঁচর কাটলেও
পৃথিবীর পরিমিতি আর বদলাবে না।

তোমার কারনে মাউন্টেনিয়ারিং ইনস্টিটিউট-এ
অর্কিড সেজে ফ্রেমবন্দী হয়েছি ক্লান্তি'তে,  
পাহাড়ী সানরাইজের কমলা মুহূর্তে-
উৎসাহী জনতা শাবাশ বললে;
নিজে শুনেছি শুধুই 'শ্রীজাত'...
যে নক্ষত্রের উদয়-অস্ত বলে কোনও বিধিনিষেধ নেই।

কিংবা অভিমানে নিজেকেই বলাৎকার করেছি
বারবার,
হাত পেতেছি দেহাতি ঝর্ণার উপপাদ্যে

হ্যাঁ শ্রীজাত...
কম্পাস কিনতে পারিনি বলে কি;
ক্ষুদ্রতম বৃত্ত'টা কখনও সাদা পৃষ্ঠার বুকে
হামাগুড়ি দিতে পারবে না!

মাঝেমধ্যে অন্তরের পশুটা হিংসার স্বাদ খোঁজে...
বেপরোয়া মন এক মহাসমুদ্র রক্তে স্নান সেরে
মৃত্যুদেবী'র চরনে সমর্পন করতে চায়-
'অন্ধকার লেখাগুচ্ছ'

কিন্তু এ রাজবন্দী তোমার ঠিকানা জানেনা যে;
তাই বছরের যে কোনো একটা তারিখ কে
তোমার মহানিস্ক্রমনের তিথি ভেবে
পায়েস রেঁধে আনে...

তারপর একশতাব্দী ফুরিয়ে গেলে
ঠিক তোমার মতন দেখতে
এক হিজরের কাছে গিয়ে বলে ওঠে
'এই নাও পুরুষ বা নারী--
নাচাও এ শিশুকে বেহুলার মতো
যতো টাকা চাও আমি দেবো...নাচাও নাচাও,
'অন্ধকার লেখাগুচ্ছ'!

অনেক বড়ো বড়ো বাড়ি উল্টোদিকে--
যতটুকু দেখেছি মানুষগুলো বেঁটে বেঁটে
তবুও সেই-ই গির্জার ঘন্টায়,
'দেশ' পত্রিকা'র আগামী শারদ সংখ্যায়
সমস্ত কয়েদী'র জামিন হয়ে যায়।

মুক্তো ওরা...ঝিনুকের জিনে দাবানল
তোমার বারান্দা; তুমি নায়াগ্রা জলপ্রপাতের মতো;
শরশয্যা তোমাকে ইচ্ছেডানা দান করেছে বলে
সাঁকোটা অদৃশ্য...মাঝে সুইসাইড নোট;
আর ডাউন লাইনে গ্যালপিং
'অন্ধকার লেখাগুচ্ছ'--শ্রীজাত...!






বর্ষা রাতে

বর্ষা রাতে হাত ধুয়েছি কামরাঙা বন তলে
আঁচড় কাটার আগেই দেখি, স্তবকগুলো ছেঁড়া
অবৈধ এক কফি'র সাথে ঘর বাঁধি ম্যানহোলে
নরম ঘামে স্নান সেরেছে, বেশ্যা ধ্রুবতারা।

বর্ষা রাতে কুয়াশা মেখেছি দৈব কর্মফলে
রক্তচোষার ক্যানভাস দেখি, রক্ত দিয়েই আঁকা
ধমনী বোনা মেনুকার্ডে'তে আশ্রয় ওঠে উথলে
ধ্যানগম্ভীর সাগরপাড়ে, উৎসাহ ঠাসা নৌকা।

বর্ষা রাতে আদিম হয়েছি, আধুনিকতার ছলে
স্বীকার করার পূর্বেই দেখি, পিসা'র হেলানো মিনার
ছদ্মবেশী পুরোহিত আজ গুপ্তচরের দলে
অসময় নেই একটুকরো, রাজকাহিনী শোনার।

তবুও সূত্রে জ্বলছে চিতা, তবুও অ্যালার্ম জাগে
তৃতীয় পেগের আয়না বুকে কার্ল মার্কস'কে এনো
খাঁচার পাখি দেনার জ্বালায় চাঁদের গন্ধ শোঁকে
বর্ষা রাতে দেশলাই দিও, শীতল মহাশূন্য...





নিহত নয়; শ্রীজাত

আমি এই শীতল মুহূর্ত পর্যন্ত জানি,
শ্রীজাত কলম নয়; সীমান্তহীন প্রতিচ্ছবি।
নিশ্চল স্কটিশ অর্কিডভরা চশমা হতে
অন্ধ'কে দৃষ্টি দানকারী সীমান্তহীন প্রতিচ্ছবি...
যেখানে ইতালীয় শিল্পী'র রং'চটা
কোনও অভিধান পাওয়া যায়নি।

রিষ্টওয়াচের মিনিটের কাঁটায়--
গড়ে উঠেছে যজ্ঞকুন্ড;
নতুবা গরিব পা-জামায় বিধর্মী কিছু কব্জি।
আমি সেই দু-নৌকোয় বিষ শ্বাস নিয়েও জানি,
শ্রীজাত মন্ত্র নয়, পুরুষরূপী আদিম দেবী।

নখের ফায়ারপ্লেসে খাবার চাইবার অপরাধে
কতোবার নেমেছে হত্যাকান্ড,
আকরিক মহাকাব্য আর ময়ূরকন্ঠী সুফী।

যমুনাতীরেও কোনো ফোরলেন ঠিকানা--
ঢেউয়ের সফেদ ফেনা'কে শত্রু মনে করেনি।
শুধু দুই শালিকের কফিনে মিশে,
মেঘের মাপে উপহার পাঠিয়েছিলো
উল্টোবাসার বাবুই;
আমি এতকিছুর পরেও কর ধরে ধরে গুনতাম,
সপ্তাহ শেষে শ্রীজাত ছুটির রবি।

সূর্যের চোখের ক্ষতে মিটে যায়
সূক্ষ্ম সূক্ষ্ম আতঙ্ক,
যা একতারাতে গাইতে গাইতেই
মিলিয়ে যায় ব্যস্তমেরুতে।
ঘুমন্ত শিশুর ঠোঁটে সাঁতার শেখায়
মৌসুমী বায়ুকে,
যার অমাবস্যা নিখুঁত বর্ণমালা বেষ্টিত।
আর সহোদরদের ভৌগলিক পান্তভাতে মেখে
গিলে নেয় জতুগৃহের বন্দর।

তবুও পুরনো চুল সাদা হয়নি বলে,
নাগিন নায়িকার কোমরে জমা হয় মৃত্যুসারথী।
আমি এত দুর্ভিক্ষের পরেও
গন্ধ ওড়া বাইবেলে মানি,
শ্রীজাত কোনো উষ্ণ বায়োডাটার ভৌতিক হবি।

ঈশ্বরভক্তি ফরমানের অর্থ বোঝেনা,
যথা কাচ ভাঙেনা ডিভোর্স মামলায়।
তারপর ভাগফলে,
মিলে যাওয়া দোতলা বাসের গায়ে
বংশানুক্রমে বিভিন্ন অসুখের বদনাম।
তাই, দূর আকাশে ওড়া ঈগলের চোখে দেখতাম,
শ্রীজাত কেবল পাহাড় নয়--
মুসাফিরের নবী

জেগে ওঠো ঢালু আড়চোখ,
জেগে ওঠো স্পর্ধার সমাপ্ত সোপান,
এবার সলিল সমাধি দাও...