বৃহস্পতিবার, ২১ জুন, ২০১৮

সোমনাথ সাহা



     সোমনাথ সাহা

মেঘমলাট

দোলনচাঁপার দিন এসেছে। ধূসর মেঘের মলাটে,
এখন কি আর ছলচাতুরী একটু হলেও খাটে !

'জন তবু ধরতে পারে হাত ! সহজে মনে আসে,
একলা পাহাড় ঝড়ের মুখে আজও বৃষ্টি ভালোবাসে।

বৃষ্টি আসে। বৃষ্টি পড়ে, ভিজতে থাকে মন ?
সঙ্গী যাদের মনখারাপই, এমন ভিজতে পারে ক'জন !

হৃদয় যখন কঠিন থাকে, যতই সে প্রেম অন্তর,
রক্তপাতই শান্তি আনে। হত্যা এখন সহজতর !

শত যুদ্ধের সামনে দাঁড়াও, পার্বণে প্রেম-উৎসবে...
বারুদ নাকি বাগান দামী ! হিসেব কষে আর কি হ'বে ?

তবুও আজকে ছড়িয়ে দিলাম, অস্ত্রযুগের রাজ্যপাটে--
খোপায় রাঙা দোলনথোকা। এমনদিনের মেঘমলাটে।






নষ্টনীড়

মেঘলা নিশাচর মন খারাপের মতো,
অনিকেত ঘরে স্মৃতিরা অনভিপ্রেত।
রাত্রি নিভে গেলে দামাল আদর শেষ,
শব্দরা মুগ্ধতার জীবাশ্ম বিশেষ...।

চোখের মলাটে শীতল বর্ষার চিঠি
নাব্যতার অতলে নদীর কারুকাজ
হিয়ার গহিনে অনুভবের তীব্র ঢেউ
দাঁড়িয়ে সম্মুখে; বিমূর্ত বরষণ আজ।

ইন্দ্রজালে বোনা পরিযায়ী স্মৃতি
সবুজ স্বপ্নের ভেতর নক্ষত্রেরা ওড়ে,
লাবণ্যের দ্যুতি ছড়িয়ে অহোরাত্রি
মনের কার্নিশে ঘনত্বে বৃষ্টি ঝরে।

বুকভর্তি চন্দনের সুঘ্রাণ নিয়ে
নষ্টনীড়ে সময়ের গল্প খুঁজে নিও!
জানি সেথায় আসো না তুমি আর
তবু নির্বিবাদী মনে শ্রাবণ দিয়ে যেও।







বর্ষাস্মৃতি

মেঘ করেছে দিনগত, বাদল ঘন বারি
বর্ষা ঘন সকাল বেলায়, নিশ্চুপ সব বাড়ি।

ঝাপসা কাঁচের জানলা এখন বৃষ্টি ফোঁটায় ঘেরা,
নিত্য কাজে ছুটি নিয়ে আজ ঘরের কাছে ফেরা।

মেধাবিহীন শীতল হাওয়ায় বর্ষা স্মৃতি ভাসে --
অবসৃত সূর্যখানি মলিন সাজে হাসে।

পাখির ডানায় বর্ষা-মঙ্গল, বৃষ্টি ভেজা গলি
ঘর পোড়া এক পথিক আমি, মেঘের সাথে চলি।

শিউলি বনে সোহাগ মাখা বাতাস পরিচিত!
ধানের ক্ষেতে বুনে দেওয়া শরৎ তুমি আগত।







বৃষ্টির ভোর

থরে থরে নেমে আসে কামাতুর মেঘ,
বৃষ্টি জড়িয়ে নামে শহরের ভোর ;
হরিণ আজ হরিণীর গ্রীবা টুকু ছুঁয়ে,
যেভাবে থেকেছে শুয়ে হাজার বছর।

হাওয়ার স্রোতেতে ভাসে বিগত দুপুর ,
পিচগলা রৌদ্রের মায়া মায়া টান !
কাগজের নৌকা ভেসে যেতে যেতে ,
বুকেতে পুষছে মেঘ -মল্লার গান।

ঘুম ভেঙে দেখেছ কি বৃষ্টির ভোরে ?
চোখের পাতাতে নামে অকাল শ্রাবণ !
কবেকার ফেলে আসা স্মৃতির মিনার
আগে কি ভিজেছে বলো কখনো এমন ?








মৃত্যুদিন

শ্রাবণের ফরমায়েসে এই মেঘ অপরিষ্কার
শহরময় সতর্কতা, শোকবার্তা অজানা
অপেক্ষার প্রহর গোনে আরব্ধ চিৎকার
ভালোবাসা অনুরক্ত এক হৃদয়ের জরিমানা।

পরমাত্মা পরমান্ন এ এক অলীক সংশয়
ব্যর্থতার শরীরে সেই হৃদয় অকপট...
স্মৃতি চায় এক আকাশ বৃষ্টিসঞ্চয়
আষাঢ়দিন পোষ মানায় মেঘের ছায়ানট।

তারিখ অবসন্ন এই সামুদ্রিক দিন
বিদীর্ন শোক ফেটে পড়ে আলোর উল্কায়
জাতিস্মর মেঘেদের বৃষ্টির ঋণ...
সকাল নাকি সন্ধে, আজ কে নেবে তার দায়!

শ্রাবণ অবশেষে এই মেঘের সংস্কার
বন্দরে পড়ে থাকা জাহাজের শেষ গান...
এখনও কেউ জানে না, আসলে সময় কার
মৃত্যুদিন স্বীকার করে না বৃষ্টির পিছুটান।