বৃহস্পতিবার, ২১ জুন, ২০১৮

জাকিয়া এস আরা



  
  জাকিয়া এস আরা

 অপরাহ্ণের প্রার্থনা

  শেষবেলার তির্ষক আলো ধ্রপদী ঢঙে
  হাত বাড়িয়ে দেয়, অন্ধচোখে কিভাবে
  বুঝব, আলো না আলোর সহগ !

  চেঁচিয়ে ওঠে অবসাদের ঘোড়া
  মানব জমিনে মনন ক্ষুধার
  লেগেছে  দারুণ ক্ষরা, অনিরুদ্ধ
  বচনে, নাচনে শরীরে ক্লান্তির প্লাবন,
  সময়ের আবর্তে  আমিও চলে যাব,
  চাইনা আরতি, চাইনা ক্ষণকালীন প্রভা
  এভাবে, ঘুরতে ঘুরতে  পথহারা পাখি
  হয়ে মরে  পড়ে  থাকি যেন !

       
 





  উত্তর খুঁজছি

  সুন্দর, শাশ্বত, মুহূর্ত
  সময় পারেনা ধরে রাখতে
  জল পড়ে, পাতা নড়ে
  ছায় স্থির, মৃত্যু স্থির
  কোজাগরী চাঁদ দিঘীর জলে
  ঠায় দাঁড়িয়ে আছে।

  স্বপ্ন হাত ফস্কে উধাও!
  আমি কেবল  বোকার মতো
  চোখ বুঁজে ধাঁধার উত্তর
  খুঁজছি,  খুঁজছি - - - -!

 






 যেভাবে পার জীবন সাজাও

  জীবন সাজাবার দিন, অথচ তুমি অতীত নিয়ে বসে আছ !
  ভুলে যেওনা এখন কাঁঠালের আমসত্ত্ব বানানোর দিন,
  রঙিন অতীত সাঁতার কাটুক তোমার হৃদের লেকে
  স্বজনেরা ফেলে রেখে গেছে জান্তব অহম
  সেই অহমিকার বালুর  চরে  গোবেচারা ভেড়ারা চরে !
  ভোরের শিশির স্নাত  মানবের লালসায় ,কাশবনে
  পড়ে থাকে  পুরুষের স্খলিত  বীর্য,  বালিকা
  জীবন কেড়ে নেয় শকুনে  দাহ হয়না !

  খালেক চাচার ফুটো নৌকা ডুবে গেল ভাদ্রের বানে !
  এবার  নবান্ন হবে তো?  যেভাবে পার জীবন সাজাও,
  জীবনের গান বানের  জলে  ডোবেনা !
  যতই  অভাবের পাহাড় উঁচু  হোক, পাগল ও সময় পেলে,
  নিজের দিকে ফিরে  ফিরে  অদ্ভুত  চোখে  তাকায় !

 






  বিষণ্ণ  মনের  ভাবনা

  চারপাশে কেবল ক্রর অলস শব্দাবলি,
  মনের ত্রিভুজ  দ্রুত  এঁকে  ফেলেছি  আমি
  নিঃস্ব নই, রিক্ত নই, আমি আমাতে মৌতাত,
  ঢকঢক গিলে  ফেলি  মধুবৎ  তরলং ।
  আসেনি   সুপ্রিয়  কেউ, কিম্বা ঋভু, ঋষি,
  সম্পর্ক কাচের  দেয়াল, মানি  তা আমি,
  কেউ কেউ বলে,"
  আলোতে এস, মুখটা খোলো,
  বিচার চাও, অন্তর্জালের দুনিয়া,  জানো ত? ""

  কারো সাথে নেই, পাছে নেই, শূন্য ঘরে একা,
  একাই  হাঁটি, একাই  গাই,  আঁকিবুকি  একা!

 





 ভুলে গেছি পাসওয়ার্ড

  জীবনের গোপন পাসওয়ার্ড ভুলে গেছি সেই কবে!
  বহতা নদীর কোনো  পরিচয় লাগেনা,
  তিরতির করে বয়ে যায়  অয়ন্ত  জলের টানে।

  অথচ  আমি আঁধারে আঁধারে সোনা খুঁজি,
  আনাড়ি হাতে,  অনভ্যসে বলি প্রিয়  কথা!
  বসন্ত বাউরি ডেকে ডেকে চলে গেল
  জীবনানন্দের  দেশে, আর  এইদিকে,
  পৃথিবী পাটরানি  হয়ে বসে  আছে  ধুলার রাজত্বে!
  কাঁচা  আমের ঘ্রাণে  জিহ্বায় জল আসে,
  জলের  কলস  খালি  পড়ে  আছে  ঘরে,
  আর আমি  চাতকের মতো মেঘের তপস্যা করি,
  প্রকৃতির  গালে  খাণ্ডব দাহন !  হা ঈশ্বর!
  আমি এখন কোথায় যাব!  ভুলে  গেছি
  যে বেঁচে  থাকার  সেই  গোপন  পাসওয়ার্ড !
  ,

   





 আমার  বেলা  যে  যায়

  স্বপ্নের  ডাইনোসর টা  হাসছিল
  স্মৃতির ঝুড়ি থেকে ফুলগুলি উধাও!
  খোলস ছেড়েছে  সম্পর্কগুলো  কৌশলে।

  কারফিউ  চলিতেছে  মহাকাশে আজকাল,
  মানুষ আর  পারবে না যেতে,
  শেষ ট্রেনের টিকিট  কাটব বলে, পৃথিবী
  তোমার ওয়েটিংরুমে  আমি  অপেক্ষমান,
  কোথায় তুমি ওগো আমার, স্টেশন- মাস্টার !
  " আমার বেলা যে  যায়  সাঁঝবেলাতে ""
  কোথায় তুমি কোন অনন্তপুরে !
  ওগো আমার  বড়ো সাধের স্টেশন - মাস্টার !

  স্বপ্নের ডাইনোসর হাসে, আমার বেলা যে যায় !








আশংকার  বালুচর

  জীবন এখন হামাগুড়ি দেয়, আশংকার বালুচরে!
  কোথাও কোনো বিলাপ নেই, কিংবা প্রতিবাদের ঢল,
  যে যার মতো চলছে, ছিন্ন, ছিন্ন, কিছু ছোট ছোট দ্বীপ,
  অসুমিত,  আলোহীন  দ্বীপগুলো,
  যেখানে  কোনো জাহাজ নোঙর  করেনা,
  তারা ভুলে গেছে ভোজ অথবা উপবাসের  কথা ।

  কিছু  প্রাচীন কংকাল  কেবল অট্টহাস্য  করে 
  চারদিকে বিষকাঁকড়া ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে,
  তবুও বেহুঁশ  তারা নালিশ  করেনা!

  যে যার মতো চলছে, ছিন্ন, ছিন্ন কিছু ছোট ছোট দ্বীপ ।