বৃহস্পতিবার, ২১ জুন, ২০১৮

লক্ষ্মীকান্ত মণ্ডল



লক্ষ্মীকান্ত মণ্ডল

স্পন্দন

মাটির ভিতর শুয়ে থাকা বিছেটির ঘুম ভাঙলে শীতলতাভুক
পায়ের পাতায় শিরশিরানি শুরু হয়ে যায়। পুরো ছয় কাল
শুয়ে থাকার পর এই স্নায়ু স্পন্দনের প্রয়োজন ছিল। নতুবা
কোনো সিঁড়ি নেই,  কাল্পনিক সিঁড়ির ধাপে বসে রতন কাকা
যে বিড়ি টেনে চলেছে তা ছাই হবে না কোনো দিন। চাকা
বসে যাওয়া পথের ধারে যতই হিজল পাতার বাতাস লাগুক
সুন্দরতম পায়ের ছাপের জন্য চুপচাপ বসে থাকার কোনো
মানে হয় না। গতরাতে চোতকাকি গালে যে নিঃশ্বাস ফেলেছিল -
তার দিকে না হয় ঠোঁট পাতি,  তার পলাশে মিশিয়ে দেই
কিছু কামড়, আর ফরফরে বাংলা ক্যালেণ্ডারটা আবার
কেঁপে উঠুক পয়লা বৈশাখে--








প্রতীক্ষা

একটানা কুড়িয়েছি বকুল।  তারপর দীর্ঘ তামাটে রং পেরিয়ে
একটা পুকুরে চান করতে চায় যে পাখি - তার ঠোঁটে ঘননীল
আকাশপথ। তবুও তলানি প্রায় জলের কাছে ডানা ঝাপটাতে
ভালো লাগে - ভালো লাগে বৃষ্টির প্রতীক্ষা করা সমস্ত রতন কাকাদের
কাছে বসে মেঘের ক্লান্তিতে হাত তালি দিতে। বিপন্ন দৃশ্যপট থেকে
ঝুলতে থাকে থোকা থোকা শিমুলের সারি। হাওয়া চায় নীরব হৃদয় -
তাকিয়ে থাকি পথের দিকে - না চাইলেও আসবে কাটফাটা রোদ,
হাঁসফাঁস করা ইতিহাসের প্রণয় থোকে বিন্দু বিন্দু ঘাম আর
বাঁকে হারিয়ে যাবে ঝরাপাতার ছন্দজ্ঞা






অন্তরঙ্গন

চুমু দিতে পারিনি বলে ভেবো না কখনো হাঁটিনি
কাকজ্যোৎস্নায় ; সমস্ত হিজলপাতার শুকনো
সময়কে জড়ো করে এক করতাল বাদকের
কাছ থেকে পতিত জমিটুকু নেশায় নিয়েছি,
আগুনের উত্তাপে হলুদ পাখিটি নির্জনতা ঠোঁটে
নিয়ে মালা গেঁথে দিচ্ছে ভুঁইচাঁপা গাছের এধার
ওধার - নাভিতন্তুতে দিচ্ছে কমুণ্ডুলুর জল; সারা
পথ ছিল উষর, আলো জল আর সামান্য জলভাত -
মৃত তিল ও আজানু জীবাশ্মেরর দীর্ঘশ্বাসে আঁকতে
থাকি শষ্যকাল ; কালঘামের ভিতর জ্বলতে থাকুক দারিদ্র্য --







আবর্ত

বাতাস নিয়ে আসছে সন্ধ্যা আরতির শব্দ, চাঁদের নিচে
ফ্লুরোসেন্ট লাইট মাখা বাসন্তীর মুখ, সাঁকো গড়ে দিচ্ছে
পশ্চিমের অন্ধকারে। নির্জন এই প্রহরে বটগাছটি একা-
বাতাসের পায়ের শব্দে চমকে তাকায় মথরানী, মধুর চেয়েও
বেশি প্রয়োজন জলের- পাখনার রঙ ঝরে, প্রতিটি বাঁকের
জীবনে অমাপ্রেম আনে দুঃসময় --

নক্ষত্রের চেতনায় দুহাতে মেঘ সরাতে থাকে আকাশ।







বৈশাখি চাঁদের নিচে

বৈশাখি চাঁদের নিচে উদোম হাঁটতে থাকি
যতটুকু পারি জ্যোৎস্না শুষে নিতে চাই লোমকূপ দিয়ে
আমি চাঁদ গরিব
মেঘ রাজের দাসত্ব নিয়ে খুঁড়ে চলেছি সুড়ঙ্গ
কোথায় পালাবো কালসিটে দাগের শরীর নিয়ে?
এত আগুন বাতাস, এত পোকার চলাচল
শিকড়ে রক্ত হীনতা
কার হাতে দিয়ে যাবো আমার কালো ত্বক?