সুদীপ্ত বিশ্বাস
বিরহ
সেটা স্পষ্ট
ভাবে খোদাই হয়ে আছে
সেটা মরতে
গিয়ে আবার বেঁচে ওঠে
তাকে মারব
বলে মিথ্যে ছোটাছুটি
সেটা রোজ
সকালে পদ্ম হয়ে ফোটে ।
সেটা হারিয়ে
গেলে দারুণ ভাল হত
সেটা অনেক
বেশি কষ্ট বয়ে আনে
সেটা দিনের
শেষে নিদ্রা কেড়ে নেয়
সেটা কাঁটার
মত বিঁধেই থাকে প্রাণে ।
তাকে এড়িয়ে
যেতে দুহাতে চোখ ঢাকি
তাকে ভুলব
বলে মিথ্যে ছুটে মরি
তার মায়ার
জালে বদ্ধ আমি আজও
তার গভীর জলে
ডোবে আমার তরি ।
তার শীতল
বিষে জ্বলছে গোটা দেহ
তাকে ভুলব বলে তিলক মাটি আঁকি
তার আবছা
মুখে কাপড় ঢেকে দিলে
তার স্মৃতির
কথা বলে ভোরের পাখি।
বাঁচা
সকাল বিকাল
ব্যস্ত হয়ে ঘুরছি যে ভাই খোশ মেজাজে
তোমরা যারা
হিসেব কষ নোংরা তারা ভীষণ বাজে।
আমি তো বেশ
পাহাড় চড়ি, ঝর্ণা দেখি
প্রতিদিনই
তোমরা শুধু
ভ্যানতারা গাও- ‘রক্তে চিনি, রক্তে চিনি।’
আমি তো রোজ
মেঘের পাশে চাঁদ খুলে দিই রাত দুপুরে
আকাশ তখন
নাচতে থাকে তারার আলোয় আদিম সুরে।
আবার যখন ভর
দুপুরে ঝাপুর-ঝুপুর বৃষ্টি নামে
তোমরা তবু
হিসেব কষ, শেয়ার কেন অল্প
দামে।
আমি তখন
ছাদের পাশে লুকিয়ে দেখি গোলাপ কুঁড়ি
কিংবা হঠাৎ
লাটাই নিয়ে মনের সুখে উড়াই ঘুড়ি।
বনের পাশে
ঘরটি আমার ঘর মানে তো খেলনাবাটি
আসল কথা
গুরুই জানে- ‘মাটি টাকা, টাকা মাটি।’
বেঁচে আছি
মনের সুখে বাঁচতে আমার ইচ্ছে আরও
তোমরাও ভাই
ইচ্ছে হলেই এমন বাঁচা বাঁচতে পারো।
আহ্বান
কত কথা বলাই
হল না
বলা বড় দরকার
ছিল
মুছে গেল কত
স্মৃতিলেখা
মিলে গেল
কিছু গোঁজামিলও।
আয় দিন যায়
দিন করে
কেটে গেল
বেশিটা জীবন
কত কিছু হতেও
পারত,
ভাবলেই ভারী
হয় মন।
মাঝ রাতে
কেঁদে উঠি একা
কি করে যে
কান্না থামাই
মন খুলে
দেখাবার পরও
ভালবাসা
বোঝেনি আমায়।
ভালবাসা
পুড়িয়ে মেরেছে
ভেসে গেছে
মাঝ দরিয়ায়
জ্বলে পুড়ে
খাক হয়ে শেষে
মন তবু
ভালবাসা চায়!
কিছু নেই তবু
বেঁচে আছি
আমি আছি, আছে গৃহকোণ
এস তুমি কিছু
দুঃখ দাও
ভালবেসে
ডাকছি যখন।
আয় সুখ আয়
আয় সুখ আয়
তোকে ছুঁয়ে বেঁচে থাকি
যেভাবে রাতকে
ছোঁয় রাতচরা পাখি
যেভাবে
মাটিকে ছোঁয় জোছনার আলো
যেভাবে
কালিকে ছোঁয় কাজলের কালো
যেভাবে
প্রেমিক ছেলে প্রেমিকাকে রাতে
ছুঁয়ে থাকে
সাবধানে, হাত রাখে হাতে
যেভাবে
পক্ষীমাতা ডিম রাখে বুকে
সেভাবে আগলে
তোকে বেঁচে থাকি সুখে ।
যেভাবে পদ্ম
পাতা মুছে ফেলে জল
সেভাবেই তুই
কেন চলে যাস বল ?
আয় সুখ আয়
তোকে ছুঁয়ে বেঁচে থাকি
নরম আদরে
তোকে আয় ধরে রাখি ।
জল হয়ে যাওয়া
প্রেমে কেন
সুখ নেই, ভালবাসা কেন যে
কাঁদায়
আসলে প্রেমিক
না গো, ভেবেছিল করবে আদায়!
তাই ভেঙে
গেছে ডাল, ভেঙে গেছে বুকের
খাঁচাটি
যারা শুধু
দিতে জানে, জানে তারা প্রকৃত
বাঁচাটি।
যে জন যেমন
চায় ঠিক ঠিক তার কথা শুনে
কত এল কত গেল, জল সেটা দ্যাখে নাতো
গুনে।
সাঁতরে যাবার
পরে জলে পরে থাকে কোনও রেখা?
জলই ভালবাসতে
জানে আলিগলি সবই তার শেখা।
চলো জল হয়ে
যাই, বয়ে যাই নদীটির
পাশে
খিল খিল হেসে
উঠি যদি কেউ আসে, ভালবাসে।
মোম গলছে
সেদিন যখন
আলতো করে আমার ডানায়
আদর মাখা
অভিমানের স্পর্শ দিলে
সেই দুপুরে
জীবন তখন শীতলপাটি
ফুরফুরিয়ে
চলল উড়ে আকাশ পথে।
ভারচুয়ালি
ফেসবুকে না, ঠোঁটের পাশে
উষ্ণ তোমার
স্পর্শ পেয়ে পাগল পাগল
নাছোড়বান্দা
তোমাকে আর কিই বা বলি?
হ্যাঁ হ্যাঁ
তুমি সব লুটে নাও সব লুটে নাও।
ধকধকিয়ে উঠল
জ্বলে বহ্নি শিখা
মোম গলছে মোম
গলছে শরীর জুড়ে।
বাঁ চা র ম জা
আমি তো বেশ
ভালই বেঁচে আছি
তোমায় ছেড়ে
দিব্যি একা একা
অনেকটা রাত
চাঁদের সঙ্গে জাগি
সকালে পাই
টুনটুনিটার দ্যাখা।
ল্যাপটপ বা
স্ক্রিন টাচ মোবাইলে
ফেসবুকে রোজ
নতুন কিছু লাইক
দেশটাও বেশ
গরগড়িয়ে চলে
ইনফ্লেশান, দ্রব্য মূল্য হাইক-
সব কিছু বেশ
সয়ে গ্যাছে আজ কাল
ভালবাসাও
পদ্ম পাতার জল
এক জীবনে ও
মেয়ে তুই এসে
কতটা আর দুঃখ
দিবি বল?
মন খারাপের
মেঘেরা ভেসে গ্যাছে
অনেক দূরে, দূর পাহাড়ের গায়ে
নদীর তীরে
একলা হাঁটি আমি
ছলাৎ-ছলাৎ
ঢেউ এর রাশি পায়ে।
মরুভূমির উট
হারিয়ে গেলে
হেঁটেই চলে
একলা বেদুইন
মরীচিকার
মিথ্যে জলের খোঁজে
ঘুরে বেড়ায়
প্যারিস, জাপান, চীন।
আমিও যাই
ছোট্ট নদীর তীরে
রোজই করি
টুনটুনিটার খোঁজ
বাতাস মেখে
তাধিন তাধিন বাঁচি
বাঁচার মজায়
বেঁচেই থাকি রোজ।