বৃহস্পতিবার, ২১ জুন, ২০১৮

সুলতানা শিরীন সাজি



সুলতানা শিরীন সাজি

তবুও জীবন

তবুও আদর,
তবুও হাতছানি দেয় নিঃশব্দের রঙিন পাখা।
মেঘ সরে গেলে রোদ,
পাখি উড়ে গেলে পালক,
বাতাস থেমে গেলে আমলকী পাতার ঝিরঝির নাচন।

লক্ষীপেঁচা বোধ এর কাছে ডুবে থাকে আলোর ফুল ঝুমরী রোদ।
উঠানে বিকালের ছায়া নেমে এলে,
দরজায় কড়া নাড়ে কে?
কে যেনো এসে বলে যায়,
ওঠো পাখি,
বিকালের ঘুম বড়বেশি স্বপ্নহীন হয়।

জানালের বাইরে আকাশটুকুর কাছে কত দেনা।
এক একটা দিন তো নয়,
এক একটা জীবন!

মানুষের এই জীবনের ছায়া ছায়া ডুব দেয়া চোখে,পরবাসী
আঁধো আলো মেখে,
কে কুড়ায় জীবনের মুঠো মুঠো আলিঙ্গন?

তার চেয়ে দেবদাস ভালো,
ভালোবাসা দূরে গেলে, সুরাপানে মরে যায়।
মরে যেতে যেতেও বুকের ভিতর জাগে সাধ,চোখে থাকে দেখার আশ!

এরপর ,তবুও জীবন!
তবুও আদর হাতছানি দেয়, অযুত নিযুত উত্তাপে!
একটা জীবন ,শুধু ঘুঘু ডাকা রোদ্দুরে নিমেষেই মিলায়!






প্রেম

চলে যাওয়া সময়ের অন্তহীন টান থাকে।
যেমন থাকে হারিয়ে যাওয়া তাস তুরুপের আড্ডার।
বুকের ভিতর গোপন ডাকবাক্সে এখনো জমা হয় নীল খামের চিঠি।
সিঁড়ির নীচে লুকানো আলিঙ্গনের সময়কাল এক সেকেন্ড।
অথচ
পরম আদরে সেই ক্ষণটুকুও জমানো।
ঠোঁটের তিলের কাছে প্রণয় এর প্রথম চুমুটা,
জোছনার আলোর মত ঝলমল।

ভালোবাসা মউমউ রাতে, সেই তার হাত ধরে রাখি।
কতকাল চলে গেলো তবু, এখনো,
তার কত কাছে চলে আসা বাকি!






কেমন করে বাঁচি

দিঘীতে পড়ে থাকে ছায়া।
মায়ার মত খুব আপন,সেই ছায়ার কাছে যাই।
জড়িয়ে ধরতেই ,শিরদাঁড়া বেয়ে বয়ে যায় স্রোত!

বাতাসের হুটোপুটি কাঁপনে ভিতর থেকে কে জেনো ডাকে!
নিজের নামটাকে এত অচেনা মনে হয়!
ছুটতে ছুটতে বহুদুর চলে যাই।
সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, মিশন মোড় পার হয়ে যেতে থাকি দূরে!

স্বপ্ন ভেঙে গেলে,জানালার পর্দা সরিয়ে ভোর দেখি।
আকাশের লাল দেখি।
দুরের বিলবোর্ডে ঝরা পাতার মর্মরে হাঁটে কিশোরী এক।
আরো দুর থেকে ছায়ার মত কেউ হেঁটে আসে।
নাকি দূরে চলে যায় ?

আমার বুকের ভিতরের সেই আপন জনেরা ছায়ার মত কত দূরে যায়?
আমি কি করে থাকি!
কি করে বাঁচি এই একলা বনভূমে!







পাখির জন্য

উৎসব ছুঁয়েছিল তোমাকে।
সবুজ শাড়ি লাল পাড়ে ঢাকা প্রিয় সাজগোজ!
কি যেনো পড়েছিল চোখে, নাকি শুধু কাছে আসার একটুখানি আহ্লাদে,
তোমাকে কাছে পেয়ে ,হয়েছিলাম দুরন্ত প্রেমিক এক।

দুইচোখে বুনোহাঁস থাকে।
উড়ে উড়ে দূর পথ ঘুরে,তুমি
কোথা থেকে কোথা চলে যাও!
কাছে এসে চলে গেলে দূরে, তবু
সুরভিত তোমাকেই পাই।

পাখি তুমি ,বুকের ভিতর গুনগুন সুর অবিরাম।
পাখি, আমি তোমার ওড়ার আকাশ।
যত দূরে যাও,
জেনে রেখো আছি,
গভীর গোপন প্রণয়ের খুব কাছাকাছি।







ভালোবাসার ঘোর

ভালোবাসার নিগুঢ় অভিমানে জমা থাকে ভোরের শিশিরের মত টলটলে জল।
হৃদয় নিংড়ানো প্রেম,
সবটুকু দিয়ে যদি বলি ,যাই।
কেনো হাত ধরে থাকো ? কেনো বলো যাই বলে যেতে নেই ?
কেনো চোখের ভিতর ধরে রাখো আপন আলোর ঘোর?

সারা পৃথিবীকে ঘুম পাড়িয়ে যেমন করে রাত জেগে থাকে।
তেমন করেই তুমি পাহারা দাও আমাকে।
যেনো চোখের পাতা খুললেই জেগে যাবে পৃথিবী!
জেগে যাবে পাখিরা!
জেগে যাবে পাতালপুরীর স্বপ্নমাখা ভোর!

তোমার হাত ধরে ঘুরে বেড়াই মহাবিশ্বের এ পাশ থেকে ওপাশ।
ভালোবাসা কে বলে ফুরায় ?
ভালোবাসা জেগে থাকে রাতের মত গভীরে।
ভালোবাসা অন্তহীন আদরের রুমাল হয়ে ছুঁয়ে থাকে ।
ভালোবাসা ব্যাথা ভুলে তাকিয়ে থাকে তোমার দিকেই।

অজস্র তারাবাতির আগুনজ্বলা আনন্দ নিয়ে শুধু তোমার দিকে ধাবিত হই।
এ আগুন পোড়ায় না।
এ আগুন জলের কাছে যাবে বলেই জ্বলতে থাকে।