রিয়া
ভট্টাচার্য
বারিষসিক্ত
আজ আবার
গিয়েছিলাম একবার;
খুব চেনা ওই
রাঙা মাটির পথে....
যেখানে
গোধূলির অসহায় আত্মসমর্পণ ---
কান্না হয়ে
মেশে বিবাগী অস্তরাগে।
ঈশান কোনে
বড্ড মেঘ জমেছিল,
কোনো অসহায়
কৃষ্ণদানব যেন ফুঁসছিল ব্যার্থ আক্রোশে---
ভেঙে পড়ছিল
কৃষ্ণচূড়া পলাশ'
চূড়ান্ত
সমীকরণ বদলে গিয়েছিল আবেগের,
ঝরাপাতারা
ধ্বস্ত হয়ে উড়ে বেড়াচ্ছিল দিকেদিকে....
বাস্তব যেন
কুঁকড়ে শুয়ে ছিল নিয়তির বুকে;
শেষ সৎকারের
আশায়।
আচমকা
কান্নাগুলো ঝরে পড়ল শিরে....
অব্যক্ত কিছু
অন্তর্মুখিতা যেন ফেটে পড়ল---
বিভৎস
আর্তনাদে।
কালনাগিনীর
বিষাক্ত ফণা কপোল বেয়ে গড়িয়ে নামছিল নীচে,
আরও নীচে---
পঙ্কিল
কলঙ্কধারা প্রবেশ করছিল পাতালে'
নির্বাক
নির্লিপ্ততায়,
সহসা আছড়ে
পড়লাম মাটির কোলে---
ঠিক যেভাবে
লক্ষ অপারগতা আত্মসমর্পণ করে;
নিয়তির
কণ্টকিত চাতালে....
রক্তাক্ত
ক্ষতবিক্ষত রয়ে যায় কিছু দাগ;
মোছেনা প্রকৃতির
অমোঘ খেয়ালে।
গুটিসুটি হয়ে
শুয়েছিলাম মেঠো রাস্তায়;
সদ্যজাতের
মতো,
আলবোলা সময়ের
কাঁটা থমকে গিয়েছিল আপন খেয়ালে---
অকিঞ্চিৎকর
কিছু স্বপ্নগুলো বলি দিলাম সেথায়;
মিঠেজলে
নোনাজল নিংড়িয়ে,
বহুদিন পর; আজ আবার---
থমকানো
অতীতের কাদা মাখতে গিয়েছিলাম;
শব্দসেতুর সমান্তরালে।।
বর্ষণনামা
জানলার কাঁচে
অনিত্যসম লেগে---
কিছু ঝাপসা
নীলচে দাগ,
শুকিয়ে এসেছে
ক্ষত----
জীবন হয়ত
এগোবে নিজের রাস্তায়;
আরো একবার।
বৃষ্টিভেজা
কার্নিশে ঝরে পড়ে টুপটাপ---
বিধাতার অলিক
অসুখ,
ঝড় থেমে যায়
শেষমেশ....
পড়ে থাকে
পুরাতনী বটবৃক্ষের শব;
বসন্তবিকেলে
মনভাঙানিয়া চিনার পাতার মত।
অগোছালো
স্মৃতি ডাইরির মাঝে----
রক্ষিত হয়
চিরকাল,
উই ধরে
তাতে.......
হলদেটে
পাতারা,
একদিন প্রজাপতি হয়ে;
উড়ে বেড়ায়
আঙিনাতে।
বোবা
মেঘগর্জনে ভেসে ভেসে আসে-----
কত অপেক্ষা ; আগামীর ক্ষত,
রিমঝিম ঝরে
পড়ে ছিন্ন আবেগ,
হৃদস্পন্দনের
কমিয়ে গতিবেগ.....
ক্লান্তিহীন
ভেজে নিয়ন আলোর শহর;
রক্তাক্ত
আশার মরিচীকা ধুয়ে ফেলতে।।
বর্ষাপ্রলাপ
অন্ধকার যখন
আঁকড়ে ধরে,
না রাখা
কথাগুলো ভেসে বেড়ায়
সময়ের আলগা
স্রোতে.....
দিশাহারা
ভাবনার বুকে ছেদ টানে----
সামাজিকতার
চেনা গণ্ডি,
অন্তরে তখন
ঘোর বর্ষার আগমনী,
তৃষিতা
ধরিত্রীর জীর্ণবক্ষ চিরে....
গর্জে ওঠে
বিদ্যুল্লতা,
অন্তর কালিমা
ঘুচিয়ে মন্দ্র হয় হৃদতন্ত্রী,
ঠিক যেভাবে; ভোরের শিশিরধৌত
-----
ধানের শিষে
লেগে থাকে অপার মোহময়তা।
জগতের সকল
পবিত্রতা সংগ্রহ করে,
একগোছা গোলাপ
ফুটে থাকে মনমন্দিরে,
সে গোলাপ
বড্ড অমোঘ.....
আদরমাখা কোনো
নির্মল শিশুর হাসিতে;
যেমন ঝরে পড়ে
বিধাতার আশীর্বচন....
বৃষ্টিধারা
ভিজিয়ে যায় সম্পর্কভিত;
আবদার জমে ঘর
গড়ে ওঠে মেঘনীলে।।
ইচ্ছেমৃত্যু
ভাসছে আজিকে
নিয়ন আলোর শহর....
ঝোড়ো বাতাসে
বিরহিয়া গল্পের ছাপ,
পুরানো
ডাইরির পাতা খোলা পড়ে আছে টেবিলে....
ঢাকনাহীন কলম
গড়িয়ে চলেছে সেদিক থেকে এদিক,
শুকোনো
গোলাপের পাপড়িরা উড়ে বেড়াচ্ছে ঘরময়, আর;
ভেজা জানলার
কার্নিশ উপচে পড়ছে স্মৃতিবাষ্পে।
ব্যার্থ আশায়
মেখে আগামীর জঞ্জালকণা----
ট্রামলাইন
ঘেঁষে ছেঁড়া স্বপ্নেরা হাঁটে মাঝরাতে,
আকাশ ঢেকে
যায় ধোঁয়াটে কুয়াশায়---
ব্যস্ত শহরের
বারুদঘরে;
প্রতিরাতে কত
তারা খসে পড়ে বিছানাতে।
ভোরের আজানের
সাথে এক ভাঁড় চায়ে---
জেগে ওঠে
কতশত মৃত কবির কঙ্কাল,
সোনালি
রোদ্দুর মেখে....
ভালো আছি' মুখোশ সেঁটে ঘুরে
বেড়ায় রাজপথে,
রাতের
অন্ধকার কালি হয়ে লেপটে থাকে পাতায় পাতায়....
ধমনী ছেঁচে
আনা শোণিতধারায় আঁকা হয় ছায়াপথ,
আকাশগঙ্গা
থেকে টালিনালা----
এক হয়ে মিশে
যায় তাতে।
বৃষ্টিস্নাত
শহরের কংক্রিটনামায়....
আলগোছে মেলা
থাকে সোঁদা মাটির চাদর,
কবিরা সেখানে
হেঁটে বেড়ায় প্রতিরাতে....
কুড়িয়ে নেয়
বাতিল অনুভূতির আবর্জনা----
নীলনেশায়
মিশিয়ে ধারণ করে রক্তে,
কবিরা আসলে
ইচ্ছেমৃত্যুর অধিকারী;
আপন
ব্যবচ্ছেদী ভাবনার হিম মর্গে।।
আবেগের আলপিন
অগোছালো
রাতের নিস্তব্ধতার বুকে----
আমি আবেগের
আলপিন ফোটাতে চাই,
দীর্ণ করতে
চাই নির্দয়ী নির্লিপ্ততা.....
কুয়াশার
আস্তিন ছিঁড়ে বের করে আনতে চাই;
আজন্মলালিত
প্রত্যাশাগুলো,
আনমনে ছড়িয়ে
থাক তারা.....
পাহাড়ের
শরীরে,
অলংকারচন্দ্রিকা
রূপে।
মেটে
শ্যাওলার ভিজেভাব মেখে---
থমকে হাসুক
রাতের স্বপ্নসুখ,
তারার চাদরে
জমানো আদরে ঘুমোক'
শত অসহায়তার
মলিন মরণকাঠি,
বৃষ্টিরা
নামুক এ মরুশহরে আরবার....
কাঁটার আগায়
দুলে উঠুক পুষ্পদল,
খুলে নিষিদ্ধ
বঞ্চনার আগল'
পাহাড়টা
কাঁদুক আরেকবার.....
শীতল জলের
নীরবতা জড়িয়ে;
গুটিসুটি
ঘুমোক সদ্যজাতের ন্যায়----
নির্ঝরিণী
কোলে।।