তন্ময় ধর
অপরচর্চা ১
শব্দের শীত থেকে টানা উড়তে থাকে পাখি। রূপক অর্থে আমরা তার
ফাঁদ ও খাঁচা তৈরি করি। গাণিতিক কৌশলের ভেতর বেশী করে ঢুকে পড়ে বার্ন্ট সিয়েনা।
আমরা খুলে ফেলি একুশ সেন্টিমিটার আকাশের ইতিহাস।
যন্ত্রের মতো কথা বলি আমরা। মাংসাশী হাতের ওপরে লালন
সাঁইয়ের গান লিখে রেখে অন্ধকার ঘরে বসে থাকি। কলিংবেলে ক্রমশ বাজতে থাকে সেই পাখি।
দরজা খুলে তোমার গভীর অন্ধকারের সাথে দেখা হয় আমার।
সে পাখির নীল চোখ ছিল। আমার হাতে জ্যোতির্বিজ্ঞানের বই ছিল, তোমার হাতে
বৌদ্ধদর্শন।
অপরচর্চা ২
স্পর্শের অভিনয় সরিয়ে ফেলি আমরা। পাখির পিছনে ঈশ্বরের জন্ম
হয়। রক্তের ফিসফাস অনুসরণ করে আমরা গরুড়-প্রয়াগ পর্যন্ত হেঁটে আসি। তারপর আমাদের
সম্পর্ক থেকে গড়িয়ে পড়ে বিধ্বংসী বোল্ডার।
মৃত্যু থেকে অদৃশ্য হয়ে যায় পাখির ঝাঁক। মৃত শব্দের অভিনয়
আমাদের দিকে হেঁটে আসে। খুলে ফেলে নাস্তিক রঙ। বর্ণান্ধ একটি পাখিকে আমরা বন্দী
করে রাখি দীর্ঘকাল। মেডিক্যাল রিপোর্টে ধরা পড়ে না কিছুই।
পাখি ও নিষাদের গল্পের নীচে ধীরে ধীরে মিউজিয়াম তৈরি হয়।
তার টিকিট কাউন্টারের পাশেই আমি তোমার নিরুদ্দেশের বিজ্ঞপ্তিটি প্রথম দেখতে
পাই।
অপরচর্চা ৩
মৃত সন্তান আমাদের ছবি আঁকে, খাদ্যশৃঙ্খলে আটকে থাকা ঈশ্বরকে জল দেয়। আমরা আবার পাখির
মতো নেমে আসি শোকে ও শ্লোকে- ‘মা নিষাদ প্রতিষ্ঠাং ত্বমগমঃ শাশ্বতীঃ সমাঃ’। নীড়ের মতো এক চোখ থেকে রক্তপাত শুরু হয়।
অসংখ্য বোবা পাখির কান্না সেসব সম্পর্কের বাইরে ডেকে নিয়ে
যায় আমাদের। তীব্র লাল এক অন্ধকারের ভিতর দিনের পর দিন বসিয়ে রাখে আমাদের। আমরা
ছদ্মবেশে বেরিয়ে আসি অন্য এক শব্দের রাস্তায়
শব্দোত্তর সেই রাস্তার নিরীশ্বর চোখের ভিতর আমাদের ধাক্কা
দেয় দেওয়াল ও মৃত সন্তানের দেয়ালা। পাখির ডাক নকল করতে করতে ঈশ্বরের জিভ শুকিয়ে
যায়।
অপরচর্চা ৪
ভাষান্তরিত এক পাখির ভিতর খেলনা হয়ে গিয়েছি আমরা। খেলনা
ভাঙার শব্দ থেকে আমাদের খেলা শুরু হয়। সময়ের নীচে পায়ের শব্দ। সন্তানের মৃতদেহের
পাশ থেকে লুকোচুরি খেলার ভুল শব্দ উঠে আসে।
ভুল ভাঙার শব্দেও অন্তঃসত্ত্বা থাকার চেষ্টা করে একটা পাখি।
তুমি-আমি হালকা হই। আকাশের ধ্বংসস্তূপ আমাদের চেনে না। শব্দোত্তর কাঁচ ঝাপসা হয়ে
আসে। আমরা তার গায়ে অসাড় সিন্ধুলিপি লিখে দিই।
মাছের কাঁটা আমাদের জলপিপি-আয়ুতে ফুটে গিয়েছে। স্বপ্নে
চিৎকার করছে অন্যান্য পাখিরা।
অপরচর্চা ৫
শব্দের ভিতর থেকে তোমার অ্যাকোরিয়াম সরে যাচ্ছে। ক্ষুধার্ত
মাছের মুখে আমাদের টোপ। থেকে আমাদের টোপ থেকে সরে যাচ্ছি আমরা। আঁশটে জলের
ছায়াতড়িতে ভাঙছে আমাদের অভিনয়, আলো ও কিউবিজম। গর্ভ-কঠিন এক জলজ কালপুরুষাঙ্গ আলো দাগ
দিচ্ছে তাপমাত্রায়
জলের দৃশ্যহীন ইশারা থেকে ঈশ্বরের মতো রঙ বদলে আমরা ডুবে
যাচ্ছি নখ ও একমুখী অন্ধত্বে। সমান্তরাল এক শীত চমকে উঠছে সাপের খোলস দেখে। মৃত
পাখির কঙ্কাল কেঁপে উঠছে আমাদের ফিসফাসে। আকাশপ্রদীপের মতো শান্ত হয়ে উঠছে আমাদের
সম্পর্কের আলো
আবার শীতঘুমের মতো পাগল হয়ে উঠছে আমাদের যুদ্ধ, নিওলিথ পাথর, রঙ, স্মৃতি এবং মহাকাশ।
ভোরের স্বপ্ন থেকে একটা লাল তিল উঠে আসছে তোমার দরজায়, রান্নাঘরে, কোষপর্দায়। কাঠকুটো জ্বালানোর এক ভুষোগন্ধ কেঁপে উঠছে
বহুদূর বাতাস পেরিয়ে