আবার স্বাভাবিক হবে সবকিছু:
রাজপথ, ন্যুমার্কেট, বিশ্ববিদ্যালয়,
সিনেমা হলের সামনে ভিড় হবে,
কাউন্টারে খিল খিল হাসি।
আমরা উত্তপ্ত হবো পরস্পর হাসি- তামাসায়।
কেবল পেছন থেকে হঠাৎ ডাকবে তুমি,
নিহত আত্মার স্মৃতি শুধাবে কুশল;
‘তোমরা কেমন আছো রক্তাক্ত বাংলায়?’
-----নির্মলেন্দু গুণ (কুশল সংবাদ)
ঠিক এই একই কথা যদি জানতে চাই আমরা পরস্পর। কেমন আছো তোমরা রক্তাক্ত বাংলায়!
জানি অনেকেই অবাক হবেন। হঠাৎ এই প্রশ্ন? কেন খারাপই বা কি আছি। খাচ্ছি দাচ্ছি
ঘুমাচ্ছি গড়াচ্ছি। অনেকে মুখে কিছু বলবেন না। কিন্তু মনের কোণে চিলতে চিলতে হাসিতে
ভাবতেই পারেন, দিব্বি তো ঠকাচ্ছি, জমাচ্ছি, গোছাচ্ছি চৌদ্দোপুরুষের মতো। ভালোই তো
আছি। সত্যই তাই, যে মুহুর্ত্তে নিজেদের দিকে তাকাবেন, দেখবেন দিব্বি তো চলে যাচ্ছে
সব কিছু। সে আপনি সততার যে পারেই অবস্থান করুন না কেন। চারধারে তাকালে তো বাজার
দোকান অফিস কাছারি সব কিছুই স্বাভাবিক দেখা যায়। তবে সমস্যা কোথায় বন্ধু? সমস্যা
নাই? সত্যই কি তাই? তবু কি প্রতিদিনের নিহত আত্মারা অন্ধকার জানলায় ভিড় করে উঁকি
দেয় না? আমার আপনার ঘরে? তাদের দীর্ঘশ্বাসের প্রলম্বিত ছায়া উপচ্ছায়া পড়ে না কি
আমার আপনার সুখনীড়ে? কবির প্রশ্ন কি তাদেরও প্রশ্ন হয়ে আমাদের ঘুমন্ত চৈতন্যে শীষ
দিয়ে যায় না কখনো সখনো?
প্রতিটি সূর্য ওঠা ভোরে প্রভাতী সংবাদের ছত্রগুলির পরতে পরতে নিহত আহত ঠকে
যাওয়া, ঠেকে যাওয়া দীর্ঘশ্বাসের আর্তস্বর কি বুকে বাজে না আর আমাদের কারুরই? এতই
কি ভালো আছি আমরা? নাকি অসাড় হয়ে যাচ্ছে আমাদের সংবেদনশীলতার মানবিক পরিসরটুকুই।
দিনে দিনে রোজ প্রতিদিন। একটু একটু করে। এও তো এক ক্ষয়। মানবিক অবক্ষয়। যেখানে
সংবাদ পত্রের সংবাদই হোক, আর সংবাদ চ্যানেলের ভিডিও ফুটেজই হোক; কোন কিছুই আমাদের
বিচলিত করে না আর আজ। বেআইনি বন্দুকের দুর্বিনীত বুলেটের প্রাত্যহিক আস্ফালনে আমরা
আজ এতটাই অভ্যস্থ হয়ে গিয়েছি, যে তাজা রক্তের মৃত কান্নাও আমাদেরকে আর রক্তাক্ত
করে না কোনভাবেই। বিচারের বাণীকে নিরবে নিভৃতে কাঁদতে দেখলেও মনে হয় সেটাই তো
হওয়ার কথা আমাদের সমাজে। তাই মনেই হয় আমাদের, ঠিকই তো আছে সব স্বাভাবিকের মতন।
এই যে অসুস্থতাকেই স্বাভাবিক বলে ধরে নেওয়া, যে কোন জাতির পক্ষেই এ এক ঘোরতর
অস্বাভাবিক অবস্থা। আজকের বাংলা, হ্যাঁ কাঁটাতারের উভয় পারেই বিরাজমান এই
অস্বাভাবিক অবস্থা। যার মধ্যে আমরা সবাই। এবং নিশ্চিন্ত নিরুদ্বেগ! আমাদের স্বপ্ন
আমাদের পরিকল্পনা সবই বর্তমানকে পাশ কাটিয়ে ভবিষ্যৎমুখি। আমাদের আশাগুলি সবই
ব্যক্তিগত। পারিবারিক। তাই আজকের সমাজ কোনভাবেই আশাহত করে না আর আমাদের কাউকেই।
আমাদের সাহিত্যচর্চা, আমাদের কাব্যচর্চার উৎসরণও তাই এই বাস্তবতার দিগন্তেই।
দিব্বি নিরুদ্বেগে সারাদিনের আয় ব্যায় লাভ লোকাসানের হিসাব মিলিয়ে অবসর কাটাতে এসো
কবিতা লিখি নেটে! একটু তলিয়ে ভেবে দেখলেই দেখা যায় কি অসাড় আমাদের এই সংস্কৃতিচর্চার
আদিগন্ত পরিসর। আমাদের সব রকম সৃজনশীলতাই ব্যক্তিগত ভালো থাকা না থাকার প্রেক্ষিত
থেকেই জায়ময়ন। এ এক সমষ্টিগত বোধের ফাঁকা দিগন্তেই যেন আমাদের চলাচল। আর সেখানেই
কিন্তু আমাদের সংস্কৃতিচর্চার মূল দূর্বলতা। এই কারণেই আজ এই সময়ের কাব্যচর্চার
বেশিরভাগটাই মূলত ফাঁপা অন্তঃসার শূন্য শব্দের রকমারি কারুকাজ মাত্র।
এইখানেই প্রশ্ন ওঠে কবিতার দর্শনের। কবিতার দর্শন? কেন স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ কি
নিজেই বলে যান নি, তিনি কবি মাত্র। দার্শনিক নন? ঠিকই। কবি তো দার্শনিক নন। কিন্তু
কি হতে পারে তাঁর কবিতার দর্শন? এই এক মূলগত প্রশ্ন। সচারচর যা আমরা এড়িয়েই চলতে
অভ্যস্ত। অনেকেই মনে করি, কবিমনের অনুভবজাত সংবেদনশীল সৃজনশীলতাই কবিতা মূলত।
অবশ্যই তাই। কিন্তু কবিমননের সেই সংবেদনশীলতার পেছনের সুস্পষ্ট দর্শনটিই বা কি?
ধরা যাক, কবি যখন লিখলেন; “যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু নিভাইছে তব আলো, তুমি কি
তাদের ক্ষমা করিয়াছো, তুমি কি বেসেছো ভালো?” (প্রশ্ন)। – তখন রবীন্দ্রদর্শনের একটি
সুস্পষ্ট প্রতিছবিই কিন্তু পাঠকচিত্তে জায়মান হয়ে ওঠে। আমরা স্পষ্ট চিনতে পারি
মানুষের রবীন্দ্রনাথকে। আমরা প্রত্যক্ষ উপলব্ধি করি মানুষের কর্তব্য কি হওয়া উচিত
সেটাই। কিংবা ধরা যাক জীবনানন্দের লেখা থেকে, যেখানে তিনি লিখলেন: “ধনের অদেয় কিছু
নেই, সেই সবি/ জানে এ খণ্ডিত রক্ত বণিক
পৃথিবী/ অন্ধকারে সবচেয়ে সে
– শরণ ভালো/ যে প্রেম জ্ঞানের থেকে পেয়েছে গভীরভাবে আলো”-(যত দিন
পৃথিবীতে) এবং যে আলোর ছবি ফুটিয়ে তুলছেন তিনি সেই ইতিহাস ঘেঁটেই: “ইতিহাস খুঁড়লেই
রাশি রাশি দুঃখের খনি/ ভেদ করে শোনা যায়
শুশ্রূষার মতো শত শত/
শত জলঝর্নার ধ্বনি”- (হে হৃদয়)। কবিতার এই
দর্শনই কি আমাদের পাঠকচিত্তকে আলোড়িত করে উদ্বুদ্ধ করে তোলে না পরিপূর্ণ মানুষ হয়ে
উঠতে? আমাদের সময় আমাদের সমাজ ইতিহাসের ধারায় চিনে নেওয়ার রসদ জোগান দেওয়াই কি তবে
কবিতার দর্শন হয়ে উঠতে পারে না?
হ্যাঁ কবিতার দর্শন মূলত তাই। যা আমাদেরকে আমাদের পরিপার্শ্বের জীবন প্রবাহের
সাথে সংবেদনশীল ভাবে সংলগ্ন করে রাখে। যা আমাদেরকে নিজ ব্যক্তিজীবনের খণ্ডিত
সীমানা ছাড়িয়ে মানুষের সমষ্টি চেতনায় পৌঁছিয়ে দিতে পারে। যা এই বিশ্বজগতে আমাদের
অবস্থানকে আরও সুশোভন ও সমন্বিত করে তুলতে পারে আবহমান সময়চেতনার সাথে। কবিতার
দর্শন তাই মানুষের সভ্যতাকে আরও বেশি করে মানবিক আলোয় উদ্ভাসিত করে তোলারই
নামান্তর মাত্র।
তখন আর “তোমরা কেমন আছো রক্তাক্ত বাংলায়?” –এই প্রশ্নে কেউই অবাক হবেন না
‘হঠাৎ এই প্রশ্ন কেন?’ ভেবে। সেখানেই কবিতার দর্শনের নোঙর মূলত। দুঃখের বিষয় আজকের
কবিতা এই দিগন্ত থেকে নিজেই যেন স্বনির্বাসিত। কিন্তু কবিতাকে তার এই স্বেচ্ছা
নির্বাসন থেকে ফিরিয়ে নিয়ে আসতে হবে আমাদেরকেই। আমাদেরকেই ভাবতে হবে কিভাবে সম্ভব
হবে সেইটি। পথ খুঁজে এগিয়ে চলার দায়িত্ব আমাদের প্রত্যেকেরই। সকলের। মাসিক
কবিতাউৎসবও এই দায়িত্বেরই উত্তরসূরী। সেই উদ্দেশ্যকে সমানে রেখেই প্রতিবারের মতোই
এবারেও আমাদের ‘এ মাসের অতিথি” বিভাগে আমরা সাথে পেয়েছিসমাজ সংসার সম্বন্ধে
সংবেদনশীল এমনই এক সাহিত্যিকের। সুলেখিকা মণিজিঞ্জির সান্যালের সাথে কবিতাউৎসবের
একান্ত আলাপচারিতায় তাই উঠে এসেছে লেখিকার সাহিত্যদর্শনের নানান অনুষঙ্গই। আমাদের
আশা কবিতাউৎসবের পাঠক এ মাসের অতিথির সাথে আলাপচারিতায় তৃপ্তি পাবেন বিশেষ করেই।
অন্যান্য প্রতি সংখ্যার মতোই এবারেও কবিতাউৎসবের উপহার দুই বাংলার শতাধিক কবিতার
বিশাল সম্ভার। সারা মাস ব্যাপি কবিতায় থাকার কবিতার সাথে থাকার একান্ত অবসর।
কবিতাউৎসবের ফেসবুক পেজ :
https://www.facebook.com/amaderkobitautsov/ কে লাইক করে ফেভারিট করে
রাখলে কবিতাউৎসবের যাবতীয় তথ্য ও বিজ্ঞপ্তি সরাসরি আপনার ফেসবুক ওয়ালেই দেখার
সুযোগ ঘটবে। এই পেজেই কবিতাউৎসবে প্রকাশিত কবিতাগুলিও নিয়মিত প্রচারিত হয় লিংকসহ।
এবং এরই সাথে কবিতাউৎসবের ফেসবুক
গ্রুপ:
https://www.facebook.com/groups/kobitaautsov/# এ জয়েন রিকোয়েস্ট পাঠালে
গ্রুপের সদস্য হিসাবে গ্রুপের ওয়ালে আপনার কবিতা ও কবিতা বিষয়ক মূল্যবান মতামত
সরাসরি পোস্ট করে সকল সদস্যদের সাথে শেয়ার করেও নিতে পারবেন। গ্রুপের পিনপোস্টে এই
বিষয়ে সুস্পষ্ট নির্দেশাবলীও দেওয়া আছে।
এছাড়াও কবিতাউৎসব গুগুল কমিউনিটি:
https://plus.google.com/u/0/communities/117144176931778027450 তে সরাসরি জয়েন করে একটি সম্পূর্ণ ওয়েবসাইটের মতো সুযোগ গ্রহণ করতে
পারেন। এখানে আপানার কবিতা পোস্ট করার সুবিধা ছাড়াও আপনার নিজস্ব সাহিত্য ব্লগের
লিংক নিয়মিত ব্যবধানে প্রচারের সুবন্দোবস্ত ও অন্যান্য একাধিক বিভাগে আপনার
যোগদানের সুযোগ রয়েছে। রয়েছে সুস্পষ্ট নিয়মাবলীও।
***কবিতাউৎসবে লেখা পাঠানোর সাধারণ
নিয়মাবলী:
১) স্বনির্বাচিত স্বরচিত ৫টি প্রিয়কবিতা
পাঠাতে হবে
২) অভ্র বাংলা হরফে টাইপ করে একটি
এমএস-ওয়ার্ড ফাইলে এটাচ করে
৩) কোনভাবেই পিডিএফ ফাইল ও বিজয় ফন্ট
গ্রহণযোগ্য নয়
৪) একটি প্রফাইল চিত্র অতি অবশ্যই আবশ্যক
৫) কবিতা পাঠানোর ঠিকানা amaderkobitautsov@gmail.com
৬) পাঠানোর শেষ দিন প্রতি বাংলামাসের ১লা
তারিখ
***কবিতাউৎসবে প্রকাশিত কবিতার স্বত্ত্ব
লেখকের নিজস্ব।
কবিতাউৎসব আপনার সৃষ্টিশীলতার প্রতি ঐকান্তিক
শ্রদ্ধাশীল থেকে সবরকমের সহযোগিতার বিষয়ে সাধ্যমত অঙ্গীকারবদ্ধ। কবিতাউৎসবের সাথে
থাকুন কবিতাউৎসব আপনার পাশে রয়েছে সবসময়।