ফিরোজ আহমেদ
প্রত্যাবর্তন
♦
দুটি রঙিন মাছ ভিন্ন নদীতে সাঁতার শেষে
ঘরে ফিরে এসেছে এই বর্ষায়
তাদের গতরে ভিনদেশি আঁশটে-গন্ধ,
তাদের ভালোবাসা লেখা মৃত অক্ষরে।
ভিনগ্রহের আলোর শরীরে মাটি
কাছে গেলে সকল ফুলই কাগজে বদলে যায়
জলের বিছানায় দুটি কানকো ছেঁড়া মাছ
জলের বিছানায় কোথাও জল নেই।
মাছেরা কী কাঁদে?
জল আর অশ্রুর বিভেদ জানে না মাছের বিজ্ঞান
হয়তো কাঁদছে দুটি মাছ
হয়তো কাঁদছে না তারা।
-----------------------------------
মধ্যবয়সী নদী
♦
আপনাদের মধ্যবয়সী নদীদের কথা ভাবছেন?
তারা স্নানের জলে ভিজিয়ে রেখেছে
কাটা-শ্যাওলার দিন
আর পাহারা দিচ্ছে আপনাদের সাঁতার।
আষাঢ়ি পূর্ণিমা রাতে
আপনি ভরাট নদীতে যাবেন,
মেঘদূতের গল্প বিগত-নদীদের উপাখ্যান
ফেলে দিন মায়াগন্ধী ভাবনার জট।
হলুদ বিকেলের রঙ মেখে নিন
জলের প্রতিটি ধারায়
জীবন জানেই মাছেরা জলচর,
সুখী-- জলে ও কাদায়।
------------------------------------------
কবিতা
==========
অবচেতনে সে তোমাকে ভাসিয়ে নিক
ডানাহীন ডানা থাকুক তার
শব্দের ফুল থাকুক অদৃশ্য সুতোয় বাঁধা
শিকড়ে প্রোথিত প্রাণহীন প্রাণের কাঁপন।
সে তোমাকে নিয়ে যাবে এমন ঘরে,
যা মূলত ঘর নয়
পথগুলোও পথ নয় ঠিক
ঘরের চারপাশে দরোজা খোলা
পথের সীমানায় কোনও নোঙর বসে নেই।
তুমি তাকে চেনো
সে আসলে চেনে না তোমাকে।
সে যখন শ্লোগানে হত্যা হয়, ঠোঁটের কার্নিশে
নন্দন ঘুমাতে যায় অন্যবাড়ি।
তাকে বাঁচিয়ে রেখে তুমি মরে যাও
তোমার মৃত্যুতে তার ডানায় রঙিন পালক।
------------------------------------
পথ
♦
পিঠের দিকে চেয়ে আছে পিঠ,
এখন আমাদের পেছনদিকে তাকিয়ে থাকার সময়,
ভালো না-বাসার কিছু দিন থাকুক মাটির কলসে।
আমাদের কিছু সুদিন ছিলো; এই ভেবে
ছুঁয়ে না-দেখেই বিকেলের ম্লান আলো, ঘুমিয়ে পড়ি।
পিঠের সাথে পিঠ মিশিয়ে এইসব দূরের যাত্রায়
পথের দীর্ঘতা বেড়ে যায়,
জলের কলসে কোনও জল নেই; পান অথবা স্নানের।
--------------------------------
সাঁতার
একটি পুরুষ-বৃক্ষ জড়িয়ে ধোরছে আর একটি
পুরুষ-বৃক্ষকে
আলবেয়ার কামু বাঁশি বাজালেন,
না
দেখা গেলো তাদের একটি বৃক্ষের পাতা নেই
কামু, এইসব পাতাহীন বৃক্ষের সাথে আপনার--
টেকোমাথা মিলে গেলে, সেটা কাকতালীয়।
আমরা অবশ্য ফ্রয়েড পড়েছি
হাতের রেখাগুলি জানে কীভাবে তারা মুছে যায়
ভাগ্যরেখায় যাকিছু লেখা,
সকলই ওপারে।
বর্ষার জল বাড়ে
বড় হয়ে ওঠে শোলের পোনারা
সাঁতারের দিন আসে না, ইজারার জলমহলে।