শর্মিষ্ঠা ঘোষ
অন্য শিশু
শিশুর হাতে মানায় যখন ডল
মা সাজা আর রান্না বাটি খেলা
পাকা বুড়ির বড় হবার সখ
এক ধাক্কায় ঘুচিয়ে দিল কে
ঐ ছেলেটার ডাগর কালো চোখ
পঙ্খীরাজের ডানা চিনল কই
শাসন ত্রাস আর নির্মম উপবাস
গল্প রঙা সকাল নিল কেড়ে
অন্যরা তো দিব্যি স্কুলে যায়
আদর খুশি বায়না কতরকম
এদের পেটে কিল মেরেছে কাজ
সকাল সন্ধ্যা ভূতের মতন খাটে
জন্মদোষে মাথাতে নেই ছাদ
পাত কুড়োনো দূর ছাই ফ্রি জোটে
কাজ করলেই জুটবে পেটে ভাত
মা বাপ কি আর থাকার মত আছে?
হাড্ডিসার আর ময়লা ঘাটা হাত
পায় যদি সে স্লেট পেন্সিল খাতা
সুস্থ পেটে মুঠো দুয়েক ভাত
কম কিছু নয় দেখিয়ে দেবে সে
গল্প
ট্র্যাক ছেড়ে বেরনোর গল্প গুলো যতদিন করবো
ততদিন আদতে কোথাও যাবো না -
যাবো যাবো বলে অবশেষে ভুলে যাব বলাবলি
আনমনে রেখে দেব বুকের আখর
আরও কেউ একই পথে ফেরি করবে আমায়
ইতিকথা বয়ে যাবে সুরেলা ডাকে
পরম্পরা রক্ত লসিকা চিনে নেবে ধমনী বাহিত
জ্বলজ্বলে তাদের কেউ পিয়ামন কেউ রেবন্ত ...
ভুল
স্তব্ধতার মুগ্ধ স্বরলিপি
অপ্রেম হে , দিলাম তোমায় দিলাম
এই উন্মুখ শরীর ছোঁয়ার পর
ঘি মধুময় আগুন আমার হোক
অনেক ছিল অন্য কথাকলি
মানিয়ে নিতাম অবাক টানের জন্যই
আর যাবো না মাপ করো না তুমি
ঘৃণায় বিষে জর্জরিত কর
সোহাগ মানে তুল্যমূল্য চাওয়া
চাই না এমন ভুল করবে আর
চাইছি ভুলতে ঘুণ পোকাদের রাত
তুমি ভুললেই বাধিত হই আরও
প্ল্যান
রেগেমেগে নস্যাৎ করার পরও বলে যাব অনুরাগগাথা
এটা প্ল্যান এ
তোমার গম্ভীর আকাশে গুটিগুটি খুলে দেব পুবের
জানালা
এটা প্ল্যান বি
প্ল্যান সি নিয়ে আলোচনা হোক
বল কার আগে কে আমাদের অভিমান ভাঙাবে এসে
যুদ্ধ
সব যুদ্ধের কিছু একটা নাম চাই , একটা পতাকা একটা
বিগ্রহ একটা সেনাপতি একটা আবেগ একটা বিশ্বাস একটা লক্ষ্য একটা প্রতিপক্ষ । সব
যুদ্ধের পরিণতি লেখা থাকে ধূলিকণায় । সব যুদ্ধের বিজয় চিৎকারের অন্তর্নিহিত অর্থ
জানতে হয় তোমার আমার সন্তানকে । প্রতিদিন যুদ্ধের নাম সংসার । তুমি আমি অসহায়
আত্মসমর্পণ করছি মনে মনে এদিকে দেখাচ্ছি লড়কে লেঙ্গে হিন্দুস্তান । আমাদের
রণহুঙ্কারে কেঁপে যাচ্ছি নিজেরাই । টলে যাচ্ছে ভরসা বিশ্বাস সৌন্দর্য মরমীয়া অন্তর
। অনাবশ্যক বর্মে শামুকের অভ্যাস রপ্ত করছি । নেশা ধরে যাচ্ছে সন্দেহপ্রবণ ।
প্রতিটি ভাবভঙ্গি দ্ব্যর্থক মনে হচ্ছে । আয়নার ছবিটা পর্যন্ত প্রতিপক্ষ লাগছে ।
একটি সরলমতি মানুষের সন্তান রাজ্যপাটে বসুক । অনায়াস ফুল-ফলের বাগান টলটলে জলের
আরাম পশুপাখির সখ্য প্রায়োরিটি তালিকায় একটু ওপরে তুলে আনুক সে । একটু পাহাড়ের
কাছে যাই , একবার আকাশের নীচে শুই , সাগরের অতল অবগাহন করাক পূন্যস্নানে । রাজা
আমাদের দীক্ষা দিন ধৈর্যে স্থৈর্যে ভালোবাসায়
আত্মবিশ্বাসে করুণায় অকলঙ্ক নিবিড় বন্ধনে । আমাদের হাতের রাখি খুলে তার
হাতে পরিয়ে দেব । ভাইটিকায় তিনিও মাটির কাছাকাছি আমন্ত্রণে আহ্লাদিত হবেন জানি ।
তার আগমন নিশ্চিত করতে যার বিরূদ্ধে হোক যুদ্ধে রাজী আছি ।