সুকুমার চৌধুরী
অনিচ্ছাভ্রমণ
আর অনেকদিন পর ইডিয়ট কোলকাতা
ধন্য হোয়ে উঠলো আমার অনিচ্ছাভ্রমণে
কড়িকুষ্ঠের মতো হেসে উঠলো ভুগর্ভের পাতাল
প্রণালী
ডাবের পাহাড় থেকে তিনলক্ষ ভিখিরির মাথা
আমাকে কুর্ণিস কোরে স্বাগত জানালো
আর আমি ট্রামলাইনের হিম মাড়িয়ে মাড়িয়ে
বহুদিন পর হেঁটে এলাম আজ আর
ওমনি টুকটুক করে জ্বলে উঠলো বিজ্ঞাপনের নীল আলো
আর আমার মনে পড়ে গেল আমি দেখেছিলাম
ট্রেনের কামরায় ঘুমন্ত শ্লিপার থেকে
লোভের মতো ঝুলে ছিলো কালো ব্রেসিয়ার
আঃ ঈশ্বর আমার তো শীত কোরছে না এই ফুর্ফুরে
হাওয়ায়
তবে কি স্বল্পবাস যুবতীদের শরীরের আঁচে
কোলকাতা হারিয়ে গেছে শীতের বিষাদ
আর আমি সিগারেট ধরিয়ে হেঁটে যাচ্ছি
কোলকাতার বুক চিরে চিরে
আর ধন্য হোয়ে উঠছে তোমাদের শহর ইডিয়ট কোলকাতা
‘মহাভারত’ সেলুনে
‘মহাভারত’ সেলুনে বাইক খাড়িয়ে
অল্প অবসর মেলে
কেননা প্রতীক্ষা......... ভীড়.............অল্প
লাইন,
দেখি ‘ভীমদূত’ অটোখানি বাইরে দাঁড়িয়ে আর
অটোবালা বসে আছে বনিয়ান খুলে । নরসুন্দরবাবু সুগন্ধি
ছিটিয়ে তার ঘেমোমুখে ফেশিয়াল
সারে.................
যারা প্রতিটি নিমেষ জুড়ে কাজ করে, ব্যস্ত আর যুযুধান
তারা এ রকম চুর্ণ অবসরে কি করে ? কি জানি ?
আমি নোঙরা আর এলোমেলো রগরগে মারাঠী
ইভনিঙ্গারগুলি
পড়ার চেষ্টা করি ।
মল্লিকা ও বিপাশার মুখোমুখি অর্ধনগ্ন দুটি ছবি,
বিপাশাকেই বেশী আবেদনময়ী লাগে, সে কি বাঙালী বলেই !
যাঃ
শেষে কি আমিও বায়াসড হোয়ে পড়লাম । কি আর করা
যাবে,
এখনো একটা দাড়ি.................... অতঃপর
মোবাইল নিয়ে পড়ি । কত যে মেসেজ ছাই জমা হয়ে আছে
।
একে একে খুলি, যেন পাখি, আর উড়িয়ে দিই । শেষে
ওড়াতে ওড়াতে কিছু মিষ্টিক মেসেজ খুঁজে পাই ।
নিশ্চিত
আমার নয় । অন্য কেউ সন্তর্পনে ব্যবহার কোরে গেছে
ঠিক । ভুলে গেছে ডিলিট দাবাতে । মজা করে উত্তর
দিয়ে
ফেলি । অবসর সময়ে বুঝি মানুষেরা ভালবাসে এমন
লঘুতা ।
তুরন্ত জবাব আসে বিন্দাস বারাডীতে........
কিন্তু আর এগুনো যায় না, নরসুন্দরবাবু ডাকে.......
রুমার জন্য
দুপুর গড়িয়ে গেল শেষবিকেলের আলো ক্রমশঃ মিলিয়ে
গেল
অন্ধকার কুয়াশাচাদরে
তুলসিতলায় জ্বলে উঠলো সান্ধ্যপ্রদীপ ভেসে এলো
ধূপগন্ধ
সন্ধ্যারতি শঙ্খের আজান
তোমার আসার পথে নেমে এলো অন্ধকার রাত্রি উদাসীন
পাখিরা ফিরলো ঘরে স্তব্ধ চতুর্দিক
তীব্র অভিমানে আমি একা একা শুয়ে থাকি জানালা
উজিয়ে
আসে স্নিগ্ধ হিম তারার কিরণ
তুমি তো চলে যাওয়ার কথা বলেছিলে সেইদিন মৃদু
সন্ধ্যেবেলা
গেয়েছিলে বাস্পমুখ বিদায়ের গীতি
অশ্রুতে ভিজিয়ে মুখ বলেছিলে ভালবাসা মৃত্যুহীন
সংবিধান মিথ্যে কথা সমাজবন্ধন
টিশার্ট গলিয়ে আমি ডেরা ছেড়ে নেমে আসি রুক্ষ
জলাপথে
আমি জানি কতক্ষণ প্রতীক্ষা সুন্দর
আমার লাগে না
কত কিছু লাগে মানুষের
কেন লাগে মাঝে মাঝে ভাবি ।
তারা অনায়াসে
পেয়ে যায় বলে
হয়তো লাগে, লাগতেই থাকে ।
আমার লাগে না অত কিছু
কেন লাগে না আমি তাও
ভেবে দেখেছি
। হয়তো পাই না
বলে, কিছুই লাগে না । হয়তো
দেওয়ার কেউ নেই বলে,
কিছুই লাগে না ।
শুধু তাই নয়, আমি চাইও না
কিছু ।
আর চাইবো কোন ভিখিরীর
কাছে ।
কত কিছু লাগা বাকি থেকে
যায় মানুষের । মিটলে তো দেবে !
যেটুকু না হলে নয় তাই দিয়ে
বেশ চলে যায়
আমার । তা বাদে
যেটুকুউপায় করি কত কিছু
খুঁজে খুঁজেফিরি । বিস্তর সময় যায় ।
কত চাওয়া মানুষের, ক্লান্ত হলে ভাবি........
বিলাস
ফিরে আসে । ঘড়ির কাঁটারা তখন উল্ঢো দিকে হাঁটে
। সময়ের এই
থেমে ষাওয়া কেউ কেউ টের পায় । কোন মুসাফির , কেউ বিলাস
বিজন ।
কিভারে সে ফিরে আসে সন্তর্পন কুয়াশার আস্তরন
ফুঁড়ে । ছোট
ছোট অনুষঙ্গ নিয়ে, কাতর সম্তাপ নিয়ে, সন্ধ্যা ও সকালগুলি
নিয়ে
স্মৃতিময় ।
কেন যে সে ফিরে আসে । অশোক বৃক্ষেরা ভাবে, কান্ডহীন । শোকাভ
চাদ্দিক ফের ঘন হয়ে আসে । বৃষ্টি হয় । অনুভূত
হয় শূণ্যবোধ । অগম
উদ্ধার ।
নিস্প্রান আলাপচারি, মুসাফির থম্ ।
নিঃশব্দ শাসন করে মৃত্যু, অশরীর
ফিরে আসে পুরোনো দিনের গল্প । স্মৃতি ও তৎপর, হিম, আর অধোমুখ বিমর্ষ
বিলাস ।