মোকসেদু ইসলাম
মানুষ জন্ম
........................................
কতো কিছুই তো আমরা বুঝতে পারি না। চিনতে পারি না। ধরতে গিয়েও ধরতে পারি না।
একদা ঘাসের ভেতর যারা লুকিয়ে ছিল ইদানিং তারাও ভানুমতির খেল দেখিয়ে হয়ে উঠেছে সভ্য
মানুষ। আধিভৌতিক গল্প নয়, চাদরের ক্ষুদ্র
প্রান্ত ধরে যাদের উত্থান তারাই এখন গায় সঞ্জীবনী গান। স্বার্থপরতার যুগে কবে কে
ভাল ছিল? এক কৃষক ছাড়া। বনেদি বাড়ির
মেয়ে তারও তো লোভ ছিল উঁচু ঘরে যাওয়ার। ঘামের গন্ধে পতঙ্গেরা উড়ে এলে আমরা বলি
চিরচেনা মানুষটিও হয়ে গেছে অচেনা। ঘরের ভেতর থেকে যে যাই বলুক সবকিছুই হলো
মূর্হুতের দৌড়। জীবনের ভাঁজে ভাঁজে পড়েছে যে শুকনো বালুর চর সেখানে কি করে উঠবে
বুনো ফসলের ঢেউ। আঁচলে বেঁধেছো অভিশাপের কৌটা। মোড়লের বিষ বাঁশি মুখে নিয়ে শুনিয়ে
যাও ঋণসভ্যতার সুর। আগুন লাগা সময়ে আপত্তি আসুক এবার। জলদগম্ভীর আওয়াজে থমকে
দাঁড়াক মেঘের দল। ঘাসের সাথে মানুষের কি সম্পর্ক কিংবা মাটির সাথে বৃক্ষের - দুলতে
থাকা সময়ে এই সব চিরচেনা প্রশ্ন পড়ে থাক। সম্পর্কের সুতোয় টান পড়লে মানুষ জন্মও
হতে পারে বৃথা।
জীবনের সরল অংক
....................................
মেয়েটি অংক বোঝেনি সেদিন। মাতাল পদক্ষেপে অভিশাপ নিয়ে বাড়ী ফিরে দেখে নির্লজ্জ
চোখের চাহনীতে পুড়ে যাচ্ছে সে। আঙুলে দাগ কেটে গেছে। সঙ্কোচে নামিয়ে চোখ
প্রতিক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকে রাত্রির আঙ্গিনায়।কার জন্যে এ অধির অপেক্ষা? গোপন মৃত্যুর বুঝি! নৈঃশব্দ্যের বাতাস এসে কানে কানে বলে
গেলে, ‘মেয়ে, বাঁচতে শিখতে হয়।’ ধূসর আকাশ কেটে গেলে রংধনু’র ছায়ায় বিছিয়ে দিতে হয় গুলো। সেই থেকে তাঁর হাঁটা হলো
শুরু। বুকের ভেতর অংকের মুগ্ধতা পুষে দেখতে থাকে সোস্যাল ড্রামা। সব যেন হিন্দি
সিরিয়ালের মতন। বাতিঘরে আলো নেই অথচ বেঁচে থাকার চিৎকারে কঙ্কাল বুকে তোলে ঝড়। ও
থিয়েটারওয়ালা এবার হোক কলবর। হাতে যাই থাকুক শূণ্য কিংবা এক।
শীতপর্ব (২)
.........................
তারপর কেটে গেছে দীর্ঘদিন। যে গল্পটার শুরু হয়েছিল বিশাল ইমারতের ছায়ায় বসে
সেখানে এখন ঢুকে পড়েছে শীতের ঘোড়া। সূর্যের অন্তর্বাস খুলে গেলে যে পাখিরা নেমে
আসে পৃথিবীতে তাদের হৃদয়জুড়ে ওঠে নব প্রেমের জাগরণ। শীত শহরে ডুবে যেতে কার না
ভালো লাগে? এমন রমণ দিনে
হরণ করতে সাধ জাগে প্রেয়সীর দেহ। এসো আলিঙ্গনের সূত্রগুলো শিখে নিই গৃহমায়া
ভুলে। মাঘের বুক চিরে শরণার্থী সকালবেলায় যে শিশুটি দাঁড়িয়ে আছে উদোম গায়ে
তাকে উষ্ণবুকে জড়িয়ে ধরি। পালকবিহীন এদিনের বৈশিষ্ট্যগুলো জানাই। শীত নয় এ যেন
বস্ত্র জোগানোর উৎসব, শস্যখেতে মৌসুমি
মেঘের ছায়া। জ্যামিতিক ভূগোলে আটকে থাকা এক স্থির পৃথিবী। কুয়াশা কাটার
আর্তনাদের দিনগুলোতে তারপরও বসে থাকা। ভোরের আলো ফুটলে নতুন করে নেবো ধারপাতের
পাঠ।
অভিনয় করেই বাঁচি
...............................
পাখির সাথে উড়ে যায় যে মেঘ তাতে বিন্দু পরিমাণ বৃষ্টির ছিঁটেফোঁটাও নেই। অথচ
আমরা বিপরীত ক্রিয়ায় যে ঠিকানা বানিয়েছি সেতো কাঠ ঠোকরার আদিম নেশা। নতুন ধানের
গন্ধ পেলে আমরাও জলের ছবি আঁকতে থাকি। পাণ্ডুলিপির মতো করে গুছিয়ে নিই জীবন। ’ভোগ’ এর প্রচ্ছদে ওঠে
যার ছবি সেই শুধু বিখ্যাত নয় পাড়ার ছেলেটিও যে প্লাটফর্ম এর স্বপ্ন দেখেছে সেও তো
সত্যের নেয়ামত। তারপরেও আমরা কেবল অভিনয় করেই বাঁচতে শিখি। বাতাসে পর্দা দুলে উঠলে
নরম বালিশে মাথা রেখে ভাতঘুম দিই।
মানুষের মুখ
..........................
পাপ কোথায় থাকে? সেদিন মদের আসরে
বসে প্রশ্নটা তুলেছিল এক বেরসিক বন্ধু। আমি সরল বিশ্বাসে সহজ উত্তর দিয়ে বলেছি, তামাকের গন্ধে যে রাত নেমে আসে সেখানে দেখবে কিছু লোভাতুর
চোখ। অথচ মানুষের বাসনা নিষ্ফল। সবচেয়ে ভালো জানেন আমাদের গোপন ঈশ্বর। মানুষের
মুখটা আসলে শিশুদের মুখের মতোই পবিত্র থাকে। জ্বলে পুড়ে নিরেট পেটানো ইস্পাতের
ন্যায় পৃথিবীর মানুষগুলোর আত্মপ্রকাশ ঘটে মাত্র। চলমান মানুষের মুখগুলোকেও থমকে
যেতে দেখেছি লোকসানের মাঠে। অথচ ‘ভালোবাসি’ এই কথাটি আমরা মানুষের মুখ থেকেই শুনতে চাই। কিন্তু তবুও
মানুষ মরছে, ঘরবাড়ী পুড়ছে, না খেয়ে থাকছে মানুষ। মুখের ওপর মুখোশ পরে মানুষ কুকুরটাকে
দেখছে। তারপরেও মানুষ ব্যক্তিগত স্বপ্ন দেখছে আর বলছে মানুষ, হ্যাঁ পৃথিবীর মানুষগুলো সব মানুষ হোক, সব মানুষেরা ভালো থাকুক।