সুমনা পাল ভট্টাচার্য
ফিরে আয় অজুহাতে...
---------------------
ক্রমশই অন্ধকারের গভীরে অতল আলোর সন্ধান করে
চলেছি
কেমন ঘূর্ণি ওঠা চক্রাকার বলয়ের মত পরতের পর পরত
নিভে যাওয়া সমস্ত স্ফুরণ কুয়োতলার নীচের অচেনা
গল্প খোঁজে
সেই অচিন পথে আমার সম্বল শুধুই তোর বুকের চেনা
ঘ্রাণ
যেখানে একদিন আদরের চাঁদোয়া বুনেছিলাম এফোঁড়
-ওফোঁড়
রাতের মুখোমুখি নিজের অবয়বের কাছে আত্মস্তুতি
খুঁজি
ও বুকে সূঁচ টুকু ভুলে ফেলে এসেছি কি!
তবে কি ব্যথা বাজে আজও!!
চোখের অবাধ্য পরিধি ছাপিয়ে উত্তর ছুঁয়ে যাওয়া
চিবুকে চিনচিনে যন্ত্রণা
একটা নতুন ভোর প্রসব করি রোজ ওই যন্ত্রণার সাথে
তারপর ফিসফিসিয়ে বলি-
"ফিরে আয় অজুহাতে"...
----------------------------------------------
একটু উষ্ণতার খোঁজে
---------------------
এক গভীর অরণ্য-চোখে হেঁটে চলেছি একা
সামনের ওই একটু একটু করে বড় হয়ে আসা গাছ টা আমার
লক্ষ্য।
আমার পথের দুপাশে অনেক আলো, নানা রঙের আলো
সবার ঝুঁকে পড়া মুখের নীচ দিয়ে গলে যাচ্ছে
অপেক্ষার স্থির বিন্দু।
অনেকটা পথ পিছু হেঁটে এসে হাতড়ে খুঁজি সেই আলোটা
যে নিভে গিয়েছিল হঠাৎ পরিহাসে
আর জ্বলেনি। অনেক অনেকবার জ্বালাতে গিয়েও
জ্বলেনি।
অন্ধকারের বলয়চক্রে ক্রমশ: তলিয়ে যাই রোজ
আলোর পথে আর ফেরা হয় না আমার
নতজানু হয়ে বসে দুহাত মেলি শূন্যে
বাঁচার প্রার্থনায়।
আগুন নিভে গেলেও তার সবটুকু তাপ হারিয়ে যে যায়
না,
তা জানে
একটু উষ্ণতার খোঁজে হেঁটে চলা এই পরিযায়ী
বিশ্বাস।।
---------------------------------------
প্রতিবিম্বে
----------
আয়নায় চোখ রাখলেই বুঝি
ঠিক এমনই একটা "আমি"র কি বুভুক্ষু
খিদে -
পারদ লাগা কাঁচের ওপারে তোর চেনা মুখ
এখন সরতে সরতে ক্রমশ: ঘেমে ওঠা ফুটেজ
আমার আঙুল খুঁটে খেতে চায় সেই চেনা বিন্দু
ছুঁয়ে দিলেই জানি এখুনি হবে সব ঝাপসা
অচেনা চটি পায়ে পড়ি, নামি রাস্তায়
মৃত্যূ মিছিলে হাঁটছে অগুন্তি শবদেহ
শ্লোগানে সোচ্চার 'তোর ফেরার কথা ছিল'....
অক্টোপাসের হাঁ মুখের ভিতর গলে যাওয়া সময়
পাঁজরের পরিহাসে কিলবিলিয়ে বাঁচতে চায়
রেখাপথের লাল আলো বেয়ে চলছে সন্ধান
চোখে পড়ে বেওয়ারিশ লাশ
রক্তমাখা বুকপকেটে একটুকরো চিরকুট
'আমার মত একটা আমি'
--------------------------------------
জানার নেইকো শেষ
---------------------
কাজল পড়লেই
জানতাম,
এ চোখে তোমার মরণ
ঠোঁটের কোলে জোছনা নামলেই
জানতাম,
তোমার ভীষণ তেষ্টা....
বুকের আঁচল হাওয়ায় পাল তুললেই,
জানতাম
তোমার ভরাডুবি
অভিমানের মেঘকে জলরেণু ভারি করে তুললেই, জানতাম,
তোমার বুকে বড় ব্যথা
তোমার চশমার আড়ালটুকুও যখন সরিয়ে দিতে বাইফোকালে
জানতাম,
তুমি আছড়ে পড়ছ উজান নাব্যতায়, বন্য অরণ্যে..
আমাদের মৌণতার সংলাপ যখন রাত পেরিয়ে সূর্যের
তাপে পুড়ে ছাই হয়ে গেল
জানলাম,
আমায় আকণ্ঠ পান করেও, আজও ছুঁতে পারোনি
এতোটুকু।।
-------------------------------------------
জীবাশ্ম প্রেম ছুঁয়ে
-----------------
বানভাসি আদরে যেদিন প্রথম তোমার চশমা ভেঙেছিল,
সেই গুঁড়ো গুঁড়ো কাচের ভিতর পড়েছিলাম,এক তীব্র বিশ্বাসের
পাঠ।
তোমার খিদের গুহায় যেদিন প্রথম রেখে এসেছিলাম
সবুজ হৃৎপিন্ডটাকে,
সেই মুহুর্ত থেকে আমার বুকের ঘরে জ্বালিয়েছিলাম
দহনের লাল শিখা...
আমার মন কাঁদনের দিনে যেদিন প্রথম তোমার ঘরে
উৎসব হতে দেখেছিলাম,
সেদিন
আধমরা নুনে পোড়া 'আমি' বাতাসের ছাইরঙা মেঘে মিশে গিয়েছিল, নি:শব্দে।
তোমার নখের দুরন্ত আঁচড়ে যখন পরিপাটি লিখছিলে আমার শেষকৃত্য
তখন,
আমি মা এর নরম আঁচল পেতে দিচ্ছিলাম তোমার আগামীর
পথে...
রক্তের তান্ডব নেশার শেষে যখন একলা আর ক্লান্ত
হবে তোমার আঙুলগুলো
তখন,
আমার মরা মাংস চিবিয়েও যেন তুমি পেতে পারো
দু-মুঠো জীবন...
এখন মরা বৃত্তের অন্দরে রোজ জ্বালিয়ে রাখি
একটিমাত্র প্রার্থনা .....
তুমি যেন
বেঁচে থাকো চিরদিন......
নি:শেষ, এই জীবাশ্ম প্রেম ছুঁয়ে ।।
------------------------------