ঈশানী ব্যানার্জী
ভেদাভেদ
জাতের বিচার করে করে
গেল মোদের জীবন ঝরে
আজও মানুষ জাত মানে?
সেই দু'শো বছর পরে!
জাতের বিচার করতে গিয়ে
বজ্জাতি সব পড়ছে ধরা
লড়াই বিষে জাতির শিষে
উঠছে মেতে, দিচ্ছে নাড়া।
জাত গেল, জাত গেল বলে
ছি ছি! কারে মাতছে যারা
রক্তে তাদের বাড়ছে শুধু
দিনে দিনে বিষের পারা।
লড়তে লাগে ভায়ে ভায়ে
ভারত মায়ের বুকের পরে
মা যে আমার যন্ত্রণাতে
কেঁদে যে যায় অঝোর ঝরে,
কে দেয়? সে দাম চোখের জলের!
বিভেদ ভুলে গলায় ধরে
কাটলে দেহ লাল বয়ে যায়
নীল কারো নয়, নয় তো সবুজ
সন্তান সব একই মাটির
তবু কেন এতই অবুঝ!! ।।
অক্ষমতা
আমি ডুবতে চেয়েছিলাম
তোমার হৃদয়ের চোরাবালিতে,
আমি ভাসতে চেয়েছিলাম
তোমার মনের চোরা স্রোতে
তৃষ্ণার্ত হৃদয়ের
তৃষ্ণাটুকু
মেটাতে চেয়েছিলাম,তোমার হিমবাহ
হতে ঝরে পড়া একটি জল
বিন্দুতে
আমার উপচে পড়া জলস্রোতকে
চেয়েছিলাম, তোমার মরুভূমিতে
হারিয়ে যাওয়া নদীর সাথে
মেশাতে,
আমার জলন্ত হৃদয়ের কামনার
অগ্নিকে
নেভাতে চেয়েছিলাম তোমার
মরুভূমির
মরুদ্যানের শান্তির বারি
দিয়ে।
কিন্তু না! আমার চাওয়া
গুলো হেরে গেল
তোমার বিষাদ সিন্ধুর কাছে,আমিও হারিয়ে
গেলাম, তোমার অসীম অক্ষমতার মাঝে;
আমি এখন আঁকি আকাশের রঙ
দিয়ে
আমার মৃতদেহে নিস্পন্দ
পৃথিবীর ছবি
তোমার বিষাক্ত হৃদয়ের
ক্যানভাসে।।
গানের তরী
আমার সকল গানের তরী
বাইল সখা ধাইল তোমার
প্রেমে,
তোমার গানে সখা তোমার গানে
বাইল আমার সকল প্রেমের
তরী।
ধাইল শেষে স্রোতের ধারায়
ভেসে
ধাইল বাউল বেশে, নিরুদ্দেশের দেশে;
নাই যে দেখা নাই যে দেখা
তোমার
ধাই যে অকুল পাথার শেষে।
গাই যে শেষে তোমারই গান
ভুবন মাঝে তোমার পানে চেয়ে
চেয়ে।
তোমার ভাষা হারা ভুবন মাঝে
আমার আশার বেদন বাজে,
আমার ব্যথার গানের কলি
ছড়ায় গগন তলে, তোমার হিয়ার মাঝে।
পাগল হাওয়ায় বেয়ে বেয়ে
ধায় যে আমার গানের কলি
তোমার নিখিল গগন মাঝে
যেথায় আমার গানের বেদন
বাজে।।
বিপাশা
বিপাশার উন্মত্ত যৌবন উদ্দামতার স্রোত
সিন্ধুর বুকে ঝাঁপ দিয়ে
খুঁজে মরে প্রেম!
হায় রে, সিন্ধু এ কেমন অক্ষমতার রোধ
কেমনে সইবে! উদ্দাম
ভালবাসার বোধ!
শত জনমের পরে সেএক একদা
সিন্ধু তোমায় দেখেছিল সে
তার মরণ দ্বারে
সিন্ধুর বুকে সতত বিপাশা
আনাগোনা করে মরে
সেখানে কেন যে চন্দ্রভাগা, ইরাবতী, শতদ্রু,
ঝিলাম আরো কত আলিঙ্গনা রতা,
বিপাশার বেগ সহনাতীত, অক্ষমতার ব্যথা!
পরিহাস, তুমি অশক্ত!তুমি সিন্ধু!
পারনি তুমি গ্রহণ করতে
একাকী বিপাশার কর!
শত নদীতে মিলিয়ে গেছে
বিপাশার জলস্তর,
তুমি আজ সুখী শতদের মাঝে
তোমার মত্ততায়
একাকী বিপাশা আজও খুঁজে
যায় তোমাকে শুধুই,
অসীম প্রতীক্ষায় ।।
প্রতীক্ষাসম
আজ তুমি পরবাসে
এ কি এ প্রতীক্ষা মম,
ধ্যানমগ্না পার্বতী সম
এ কি এ প্রতীক্ষা মম।
কৈলাস আজি
ছুঁয়েছে মন্তরে
গিরিরাজ সদা
উদিছে অন্তরে,
রবির কিরণ
ছুঁয়ে যায় ঘুম ঘোর
জ্যোৎস্না আলোয়
ভরায় ফুল ডোর।
আকাশের চোখে
স্বপ্ন আঁকিতে আঁকিতে
তারা হয়ে আমি
রব তব আঁখিতে।
আর হারাবো না দোঁহে
আর হারিব না মোহে,
কি দহন জ্বালা অন্তর তরে
কি সহন আসে অঙ্গ ভরে
রাখিব রাখিব মম কেশভার
তব পদতলে, পুণ্য কমলে
ভাসিব আঁখিতে আঁখিতে।।