অভিজিৎ পাল
ক্যানভাসে
সেজে ওঠে দুঃস্বপ্নের স্বরলিপি
রঙ মাখাই দু'হাতে।
সাদা ক্যানভাসে চোখ আঁকি,
নাক আঁকি, মুখ আঁকি। আঁকি-বুঁকির মধ্য দিয়ে হঠাৎ জেগে
ওঠে বুদ্ধের মুখ। এই মুখটা চিরচেনা। আমার অহৈতুকী যাপনের দাগগুলোর মতো নিজের মতো
করে চেনা। বুদ্ধদেব চেয়ে থাকেন ক্যানভাসের বাইরে। তাল গোল পাকিয়ে নেমে আসছে
বোধবৃক্ষের ঝুরি। একটা। দুটো। তিনটে। অনুভবগম্য হয়ে উঠছে মাটির প্রতি ভালোবাসায়।
রঙ মাখা হাতের ছাপ বসাই। লাল রঙা হাতের ছাপ। নীল রঙা হাতের ছাপ। ক্যানভাসের নীচ
দিয়ে নদী বয়ে গেছে অনেক দিন। ভেসে যাই। গান ওঠে একটা ভাঁটিয়ালীর। নাগরিক ক্যানভাসে
সেজে ওঠে দুঃস্বপ্নের স্বরলিপি। এখানে কোথাও সহজাত অনুভব নেই!
...........................................................................................
অনির্বাণ
আলোরা ম্লান হয়ে এলে
একটি ঘুম থেকে আরেকটি
ঘুম পর্যন্ত আমাদের যেসব সোনালীযাপন, তার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দিয়ে নেমে
আসছে ভালোবাসার সাতরঙ। এই অমোঘ প্রতিফলিত আলোর কথকতা আমি চাইনি কোনোদিন। প্রতিটি
নদীকেই সাগরে মিশে যেতে হয়,
হারিয়ে দিতে হয় নিজস্বী মনোভাব। কেউ আমরা সবাই হতে চাই নি।
চাইবও না হয়তো কোনোদিন অজ্ঞাতসারেও। তবুও প্রিয়াঞ্জলির রাগ আর অভিমানী মুখ কবেকার
যেন একমুঠো খইরঙা অদ্ভুত মেলে ধরে। দেখি। দেখতে দেখতে হাসি পায়। হাসি। রাই বিষয়ক
পুরাধুনিক পদাবলীর গান সেজে ওঠে আমার কঠোরতা ভেঙে ধূমল হয়ে আসা ক্যানভাসে। চোখের
উপর ভেসে আসে ভালোবাসা গন্ধ। সেখানে মাথুর পরবর্তী পর্বগুলো ক্রমপরম্পরায় সাজানো
আছে। আমাদের সোনালীযাপনের অনির্বাণ আলোরা ম্লান হয়ে এলে আমরা আবার শিখে নিতে বসি
অযুত দিনের নিযুত অধ্যায়ের প্রাথমিক পাঠ। সেখানে নিরক্ষরেখার মতো কোনো
বিচ্ছিন্নতাবাদী ভেদরেখা গড়ে ওঠেনি..
...........................................................................................
চৈতন্যচরিতামৃত
নিয়ে বসে আছি ক্যানভাসে
ক্যাম্পাসে জমে আছে
কথোপকথন। একটু সময় নিয়ে যাব হাতের মুঠোয় ওই মেয়েটির পায়ের কাছে। সবুজ নালিঘাস
ইতিউঁতি গন্ডী দেওয়ার জন্য অপেক্ষা করছে। সরে আসছি দেবযানীর মুখের দিকে চেয়ে।
ভালোবেসে একটা মেয়ে প্রেমে পড়েছিল কারো। সেখানে নগর সংকীর্তনের অভিজ্ঞান ছিল না।
সেই মেয়ে সরে গেছে একা একা অভিমানী চোখের জলের শিল্প সাজাতে সাজাতে। বিষ্ণুপ্রিয়ার
চোখের দিকে চেয়ে আছে গৌরীয় দেবতা। এতটা অবহেলা হয়তো দরকার ছিল না। অজানা এক পোড়া
সলতের গন্ধ উঠছে আমার রাত নেমে আসা অভিসারী ঘরে। চৈতন্যচরিতামৃত নিয়ে বসে আছি
ক্যানভাসে। কয়েকটা রঙ বদলে যাচ্ছে ধীরে ধীরে ধীরে ধীরে ধীরে..
...........................................................................................
অমরেশ
সেদিন সন্ধ্যাযাপন শিখিয়েছিল
পাঠক্রম থেকে শিখি কাকে
কাকে কোন নিক্তি মাপা পাঠমালায় বন্ধু পদবাচ্য বলা চলে। শ্রেণি থেকে আর একটা
শ্রেণিতে উঠি। পাঠ বদলাই। পাঠক্রম বদলাই। পাঠমালাও বদলে আসে। বন্ধু বদল হয়
মধ্যরাতে। নবায়িত ভাবনার উপর কম্পাস ঘুরিয়ে মেপে ফেলি দিগবর্ণনার ধাপগুলো। শরীর
সঙ্গম শিখি। পুনরায় স্থবির হই। যন্ত্রণা অনুভব করি। একটা নতুন একা হয়ে ওঠার ভয় হয়।
হঠাৎ করে নেমে আসে দূতকাব্য। অমরেশ সন্ধ্যাযাপন শিখিয়ে দিতে থাকে আমায়। পুনশ্চ আমি
বাঁচতে শিখি ঐকান্তিক একাযাপনে।
...........................................................................................
দেবীযান
দেবতার সাধন সঙ্গীতগুলো
কবিতার মতো মূর্তিমান হয়ে ওঠে। আমি আনত হই। বিনত হই।ধ্বনিমধুর পুরাধুনিক কোরাস ওঠে
সভাঘরে। আচ্ছন্ন করা সুর। ঊর্ধ্বমণ্ডল থেকে মহাবোধির গম্ভীর নাদ ভেসে আসে। কবিতার
লাইনের ভিতর প্রবেশ করে মৃদুগমনে। আমার অপূর্ণ শব্দযাপন হয়ে ওঠে পূর্ণাবয়ব
ধ্বনিগম্ভীর। দেবীর আবাহনী শ্লোকগাথা উচ্চারণ করি ধীরে। ধ্রুবপদ গাই। পরমহংস
হাসেন। একটা ধর্মরাজ্য আমিও স্থাপন করতে চাই। একটা রামকৃষ্ণালোকিত অরাজনৈতিক
সমন্বয়সাধনের পথ এখনও আমার বহুকাঙ্ক্ষিত রয়ে গেছে...