সোমবার, ২১ আগস্ট, ২০১৭

চয়ন ভৌমিক



চয়ন ভৌমিক

রাংতার নীচে আগুন জ্বালালো যারা

স্মৃতিময় অতীত, অতর্কিত বর্তমান এবং অচেনা ভবিষ্যৎ
কিছুই যেন নাড়া দেয়না আজকাল।
নিজের কাছেই নিজের ঠিকানা হারাই,
ভুল কলিং বেল টিপে শিউরে উঠি আপাদমস্তক।
প্রিয় মুখ ভাসে রূপালী পর্দায়,
চেনা ছায়ানটদের তির্যক দৃষ্টি ফুটে ওঠে উল্লসিত সেল্‌ফিতে
অথচ আমার নাম নেই কোথাও,
নেই ছড়ানোর মত কোনো অক্ষর ধুলোময় উঠোনের রোদে।
পাখিদের খুঁটে খেতে দেখি পতঙ্গের ডিম, বিদুরের খুদ
চড়াইদের দেখি বাসা বাঁধছে সেই পুরোনো ঘুলঘুলিতে।
আর আমি?
অস্তিত্বহীন আধাঘুম অস্বস্তি , আধা জাগরণ রুটিনওয়ার্ক
ফিরে যাচ্ছি সেই গর্ভের পদ্মসায়রে,
যেখানে ওম ছিল, সাঁতার-জল ছিল, অপরিসর ছিদ্রপথে মাথা ধাক্কা ছিল
প্রকাশের সুদীর্ঘ পথ পাড়ির ব্যর্থ প্রত্যাশায়।

কেন-
উৎস ও অন্তিমের মাঝে পরিহাসমুখর বিচরণ ক্ষেত্র ভুলে যাচ্ছো আমায়?




বৈষম্য ও ঐক্য

বাতাসে ভেসে বেড়ানো প্রত্যেকটা দুঃখই
একে অপরের থেকে আলাদা একা ও একমেবাদ্বিতীয়ম।
তাদের নাম ভিন্ন।
জাত, ধর্ম, ঠিকানা, লিঙ্গ সব পৃথক পৃথক।
তবুও তারা একে অপরের সাথে দেখা হলে হেসে কথা বলে
কুশল জিজ্ঞাসা করে, প্রশ্ন করে
অফিসে সব ঠিক তো? কেমন হলো মেয়ের পরীক্ষার ফল?”
গরম কালে পরিবার নিয়ে তারা চলে যায় উটি বা কাশ্মীর
শীতে পুরী কিংবা কেরলের সোনালি সৈকত।
সেই সব স্বতন্ত্র কষ্টরা বাজার যায় সকালে,
বর্ষাকালে ইলিশ আর রবিবার মাংস কেনে যথাযোগ্য দামে।

শুধু, সেইদিন তাদের সবার মুখ একই রকম থমথমে আর ম্লান হয়ে যায়

যেদিন
সকাল থেকেই আকাশের মুখ কালো,
নাগাড়ে একঘেয়ে টিপটিপ বৃষ্টি চৌপরদিন
যেদিন - একটা জোলো হাওয়া এসে জানান দেয় তারও পরে,
দুঃখরা আসলে একটাই ভারী পাথর যা গোপন থাকতে থাকতে
একদিন না একদিন পাহাড় নড়িয়ে, গুমগুম শব্দে
গড়াতে গড়াতে নেমে যায় অতল খাদের গভীরে।




অপরিচিত

মেস থেকে রাস্তায় নেমে তিনটি ছেলে হাঁটে।
তাদের মোবাইল মগ্নতা, বিচ্ছিন্ন দ্বীপের মতো নীরব।
রাতে খেতে যেতে যেতে তারা
বহুদূরে বসে থাকা কোনো কল্পনাপ্রসূত বন্ধুকে বার্তা পাঠায়
ভালো আছি বলে,
জানিয়ে দেয় রুটির সাথে তড়কাটায় ঝাল ছিল প্রচুর,
অথবা সারাদিন শহরে রোদ্দুর ছিল প্রখর ।

তারপর আবার ফিরে আসে একই মেসে,
একই ঘরের তিনটি অর্বিটে রাখা তিন বিছানায়।

কথা থামেনা, মাস্টারবেশন বাড়ে মুঠিতে আঙ্গুলে,
তিল থেকে তাল হয় মাঝরাতের চাঁদ, আর
দূরের সেই সত্তার ছায়া, প্রকট থেকে প্রচন্ড হয়ে যায়।

ঘরভাড়া ভাগ করা ছাড়া, সংস্রবহীন অচেনা মূর্তি ইব
চেনা তিনজন ক্ষয়ে যেতে যেতে অদৃশ্য হয়।।




জীবন ও যোদ্ধাদের নামে

বেঁচে থাকা মানে -

মিনিটে বাহাত্তর বার শান্তির হৃদস্পন্দন হতেও পারে
নাও হতে পারে,
এল টি এ নিয়ে বছরে একবার সপরিবারে
পাহাড় বা সমুদ্রে বেড়ানো তাও সম্ভবত না।
অফিস থেকে ফিরে এক কাপ লিকার চা,
খবরের কাগজ পড়তে পড়তে দুটো ফিল্টার উইল্‌স,
পাড়ার ক্লাবে দাবা অথবা ব্রিজ সেসব তো একদমই নয়।

আসলে বেঁচে থাকা একটা দুঃসাহসী লড়াই, একটা অভাবী ছুট
যা দেখছি
আট সওয়ারি নিয়ে, সেই বুড়ো ভ্যান-চালকের বলিরেখা মুখে
যার উপর শেষ বিকেলের রোদের মত ঝরে পড়ছে ফাগুনের ঝরা পাতা,
অথবা  -
ওই হাফপ্যান্ট পরা ছেলেটার কঠিন চোয়ালে
যে কেটে যাওয়া দেড়তেল ঘুড়িটার পিছনে দৌড়ে পেরিয়ে যাচ্ছে
মিত্রদের তিনতলা ছাদ, বড়রাস্তার পাশের গোখরো-বিল,
- রশিদ মিঞার সবথেকে উঁচু নারকেল গাছটা।।




ঈশ্বরের সন্তান

পুজো করি,
দান করি সমূহ সম্বল।
ভাবি,
প্রার্থনা সংগীত শুনে
ঠাকুর মিটাবে অভাব।

তাই, মন্দিরে যাই ,
আসন পাতি পূজারীর পাশে
দেখি, অবাক তার জোড় করপুট।
সেও তো অভুক্ত
সেও ছুঁড়েছে ফুল
সাথে হাজারো প্রস্তাব ,

-   উচ্চারিত জপমন্ত্র তাঁর
সবটাই  কী ভুল?

তবে চাই কার কাছে?
কে সারাবে ক্ষত ,
কিভাবে নিভে যাবে খিদের আগুন?

যদি নাই থাকে দৈব প্রভাব ,
তবে খোঁজ করো কাকে অসহায়!
সে কোন শক্তি, বরাভয় তুলে,
যে থামাবে –    এই বিধ্বংসী ---
ঝড়ের প্রাদুর্ভাব।।