মণিজিঞ্জির সান্যাল
একজন সাধারণ নারীও
মায়ের
কথামতো বাগান থেকে কুড়োনো ফুল
ঠাকুর
ঘরে সাজানো স্তরে স্তরে
কোনওদিন
হলদে কলকে , কোনওদিন রক্তকরবী
কখনও
বা সাদা রজনীগন্ধা ।
চোখের
সামনে ভেসে ওঠে বৃদ্ধ পুরোহিতের
দীপ
আরতি , কর্পূর আরতি
বড়
পদ্মফুল দিয়ে ক্রমে
শ্বেত চামর
আরতি ।
একজন
সাধারণ নারীও
নির্বেদ
বৈরাগ্যের সন্ধান পান
শোকের
সময় ।
হায়
শোক ! হায় অনুভূতি !
সবকিছুই
আজ
শুকনো
হলদে কলকে , রক্তকরবী বা
রজনী
গন্ধার মতো ।
কোনো
কাজ নয় ,
কোনো
কাজের মধ্যেও নয়
সমস্ত
শূন্যতাকে সেদিন
নিজের
উপস্থিতি দিয়েই ভরে তুলতেন
কোনো
প্রিয়জন ।
আজ
শূন্যতার কোনো অবকাশ নেই
অবকাশ
নেই সেই শূন্যতাকে ভরার ,
প্রত্যেকে
আছে তার
নিজস্ব
শূন্যতাকেই সঙ্গী করে ।
তবুও তো ছিলে
তবুও
তো ছিলে
দেখা
হোক বা না হোক, কথা হোক বা না হোক
তবুও......
মনে হতো এই তো তুমি আছো, আমার
কাছেই
আজ
তুমি অনেক দূরে,
বহু দূরে
চেনা
গন্ডীর পথ ছাড়িয়ে আমার চোখের আড়ালে
কোনোদিন
আর বলবে কি 'কেমন আছো ?'
' তোমায় কি মিষ্টি দেখাচ্ছে ! '
জানি
আর বলবে না কোনোদিন
তোমার
স্বর ওই দূরে বহু দূরে,
সেই
মেঘের দেশে
যেখানে
তুমি ভাসতে চেয়েছিলে,
আমায়
বলতে ' পাহাড় আমার খুব ভাল লাগে জানো ?কিম্বা
বৃষ্টির কথা শুনেই বলতে
' আঃ
ভেসে চলে গেলাম তোমার বৃষ্টির কাছে '
আমি
বলতাম ' মেঘ হয়ে উড়ে এসো আমার কাছে ,
বৃষ্টি
হয়ে ভিজিয়ে দাও আমার অভিমান '
তুমি
বলতে 'এই তো আমি,
তোমার পাশেই '
কার
কাছে আর এসব কথা বলি বলতো ?
এই
বৃষ্টির কথা,
আমার
পাগলামোর কথা,
তুমি
তো সব অভিমান জড়ো করে চলে গেলে অনেক দূরে
বহু দূরে ...............
নি:শব্দ আলাপন
খোলা
আকাশের তলে
শুয়ে
থাকা হয়নি কখনও
পাথরগুলো
কি অদ্ভুত ভাবে
সময়
গুনছে যেন প্রতিনিয়ত
অপেক্ষা
করছে অনন্তকাল
ওদের
দেখলে মনে পড়ে যায়
প্রত্নতাত্ত্বিকদের
কথা
আকাশ
কি ধার দিতে পারে
একটু
বৃষ্টিকে
খোলা
আকাশের তলে
শুয়ে
থাকা আমার আমি' কে ?
আমার
ভেজা শরীরে
সূর্য
নামবে এরপর
ধীরে
ধীরে
অতি
ধীরে
শিল্পীর
হাতের বনানীর চিত্র
আমার হৃদয়ের ক্যানভাসে
এরপর চাঁদের আলো
স্পর্শ
করবে নীরবে
আলতো
আদরে
ভুলিয়ে
দেবে
আমার
টুকরো টুকরো অভিমানগুলো
খুলে
দেবে আমার দুঃখের জানালা
ঐ দূরে
চাঁদের কোলে
একাকী
সূতো কাটা বুড়ির সাথে
নিঃশব্দ
আলাপন
খোলা
আকাশের তলে
শুয়ে
থাকা হয়নি আমার কোনদিনও ।
গোলাপী ঝিনুক
এই
শরীর একদিন পুড়ে যাবে
পুড়ে
যাবে মন
হৃদয়ের
সব অনুভূতি
দাবানলের
মতো একটু একটু করে ,
মুহূর্তের
আবেগ
রাতজাগা
অশথ্থ গাছের পাতা
কাঁপবে
নীরবে
কিম্বা
শিশিরের সাথে কিছু কথা ।
কুয়াশা
ঘেরা সন্ধ্যা
রাজকীয়
অতীত
ভেজা
বালুর ওপর
ফেলে
আসা পদচ্ছাপ
সিক্ত
গোলাপী ঝিনুক
নিঃশব্দে
হেঁটে চলা কিছুটা সময়
নিয়মের
বাঁধ ভাঙা
সকাল
বিকেল
থেমে
যাবে সব
একটু
একটু করে
সময়ের
ভাঁজে ।
হে
মৃত্যু
জীবনকে
আরো কিছুটা সময় দাও .......
বৃষ্টি
ভেজা মন
তোমার সাথে দেখা হওয়াটা
জরুরী ছিল । বসন্ত আসছে বলে নয় , ফাগুন হাওয়ার গন্ধ শরীরে
স্পর্শ করছে বলে নয় । শীত বিদায় নিচ্ছে বলে নয় । আবির রাঙা বসন্তে নিজেকে স্নাত
করব বলে নয় ।
দেখা করাটা জরুরি ছিল কারণ তোমাকে কাছে
থেকে দেখব বলে ; তোমাকে আরো কাছে থেকে চিনব বলে ; তোমাকে আরো বেশি করে ভালবাসবো বলে
। তোমার স্পর্শ পেতে চাই বলে ; আর ঠিক তাই জন্যেই তোমার সাথে
একটিবার দেখা করাটা জরুরি ছিল।
লাল গোলাপ আমার বড়ো প্রিয় আর প্রিয়
মুঠো মুঠো চকলেট । আর তুমি তাই রাজকীয় ভঙ্গিতে আমার স্পর্শ পেতে দু হাতে টেনে নিলে
আমাকে। বরণ করলে গোলাপী পাতায় পাতায় উষ্ন চুম্বনের মধ্যে দিয়ে । একি স্বপ্ন দেখছি
! না বাস্তব ?
আসলে কিছু স্বপ্ন ঘুমের
মধ্যেই শেষ হয়ে যায় । ঘুম শেষ হলে স্বপ্নগুলো ভেসে যায় ঐ বাষ্পকণার সাথে । তখন
ভাবনাগুলো এসে ভিড় করে ।
তোমার পৌরুষত্ব ; তোমার গাম্ভীর্য ; তোমার ব্যক্তিত্ব নিয়ে আমার চলে
টানাপোড়েন । তোমাকে নতুন রূপে দেখব বলে
শুরু হয় কথোপকথন । তারপর মান-অভিমান ; রাগ-অনুরাগ আরো কতো কি
। তোমার ভাষায় এসব নিছক এখন বাড়াবাড়ি;
অবশ্য প্রথম প্রথম এসবকে ছেলেমানুষি ভেবে হাসিতে মজাতে উড়িয়ে
দিতে । তোমার সেই হাসি , তোমার সেই কণ্ঠস্বর আজ-ও আমার হৃদয়ে
এসে কড়া নাড়ে । এক বৃষ্টিভেজা মন কেমন যেন
উদাসী হাওয়ার সাথে মিশে যায় কিভাবে কখন ।
আচ্ছা এ সব কিছু-ই তাহলে
স্বপ্ন ! স্বপ্ন নিয়ে এতো কিছু ভাবনা , এতো জলতরঙ্গ ! জলতরঙ্গ -এর
রিনিরিনি স্বর তোমার কানে পৌঁছে যাবে কোনো একদিন । যেদিন আমি থাকবো না এই
পৃথিবীতে । থেকে যাবে শুধু কিছু কথা আর অভিমানী মেয়ের অবুঝ কণ্ঠস্বর ।