বুধবার, ২১ ফেব্রুয়ারী, ২০১৮

রেজওয়ান তানিম


রেজওয়ান তানিম

অনল শ্রাবণ

বৃষ্টি মানেই অঝোর শ্রাবণ
ঝুমবেদনার রাতনিশীথে কষ্টপাখির
ধূসর শয়ন।

বৃষ্টি মানেই জলের অনল,
পোড়া পাজর আর ভাঙা এ মনের
নিয়ত দহন।

বৃষ্টি মানেই ছেড়াটে মলাট
আকুল হয়ে খণ্ডিত সব স্মৃতিগুলোর
ধূলায় পতন।

বৃষ্টি মানেই চোরঠুকুরির
ভাঙা চৌকাঠ, ফাগুন জমা রঙপ্রহরের
স্বপন হরণ।





জন্মপাপ

অন্ধকারে ডুব দিলে নামে দুপুরের রোদ, আহ ছিন্ন বিকেল!

এ জন্মে তুমি পেলে না করুনার আলিঙ্গন, দিগন্তের গ্রীবা

চুমু দিয়ে গেল না কোন সরালির ঝাঁক! কফিসন্ধ্যায় হঠাৎ

ঠোঁটে আলো ঝরাতে গেলে জমে যায় হাত, হৃদয়ের হাপর

দীর্ঘশ্বাস ফেলে, এ পাখিজন্মে আমার হল না পালক মেলা!

ডানায় লাগলো না আর খররৌদ্রের অলৌকিক উচ্ছ্বাস!






রৌদ্রদিনের রাগ

জানি দেখা হবে একদিন, দূরবর্তী নদীগান যেমন উদাস করে
বলে যায় আমাদের ঘাসপুতুলের সুর, নতুন আদর চুমু মেখে
ওম খুঁজবার আরেক ফাগুন উপাখ্যান! উঁচুতে উঠলে শহরের
শেষে দেখা যাবে- মেঘের মিনারে ওই, পাখি ঠোঁটে প্রেম ফোঁটে!

প্রিয়ন্তিকা, ভুলে গেছ রৌদ্রদিন, ঘাসের চাঁদরে শুয়ে আনমনে
ডুবিভাসি প্রেম, সোনালি সোহাগ নিয়ে মিশে যাওয়া মাতাল মন!

কাজল ও চোখে ফেনা জাগে, জানি বালু ও জলের সঙ্গম অনিঃশেষ
দূরে চলে গেলেই যায়না ছিঁড়ে, প্রেমভাষা আনকোরা বেদনার সুর!





কফিন

মরে গেলে বেঁচে যায় অন্ধকার!

এই বিশ্বাস নিয়ে যতবার শুয়েছি কফিনে,
ততবার উঠে এসেছে মাংশল অসুখ, জেগেছে
নষ্ট বীজের নৈরাজ্য উৎসব!

প্রিয়ন্তিকার পোড়া ঠোঁট আজকাল যেন
মোহন মৃত্যুর আশ্বাস!

যে শকুন খুবলে খায় মরা লাশ,
তার মুখে হাসি ফোটে জরাথুস্ত্রের নিন্দাবাদে। 

ভুল বলেনি ছায়াপুরাণ
আজকাল শকুনেরাও মানুষ হতে চায়!

প্রতিধ্বনির গ্রীবায় লিখে রাখে
সবিস্তার, নিজস্ব ভ্রূণ নষ্ট করার গল্প!




শিকার

নীল রক্তে ভেজা বিষাদী রাতপ্রহর, এখন শিকারে নেমেছে!

আমায় লোভ দেখায় পরাবাস্তবতার; সেখানে আশৈশব মৌনতা চাষি সকাল- অদ্ভুত এক ডানা ঝাপটানো
বিহঙ্গের কাছে নিয়ে যাবে, প্রতিশ্রুতি দেয়। আমি লুফে নেই সেই অদ্ভুত আবদার! মিলিয়ে যেতে চাই তাজা
ব্যথার কবিতা থেকে সুখের অক্ষরবৃত্তে।

সেই দেশটা কেমন? আমাকে বলেনা রাতের লুব্ধক। কল্পনায় আর কত দূর ভাবতে পারি, বলো! শুধু বিশ্বাস
করি, মন থেকেই জানি- দুঃখ নামক কাঁচপোকাদের জন্য সে এক নিষিদ্ধ শহর, রৌদ্রের ওম লাগানো শান্ত
সবুজ নিয়ে তার পাখনায় আঁকা সুখদেশের স্বর্ণালী ম্যাপ। যেখানে বৃষ্টিদিনে প্রেম নামে।

এমন আহ্লাদে সে ডাকছে, মন বলে এখনি ছুটে যাই। যাব, চলেই যাব হয়তবা। সুখ নামের সুরবালিকার
উড়বার নক্সার খোজে, বিষাদ লিরিকে মিলনের রাগাশ্রয়ী সুর বসাব বলে ওকে আমার বড্ড দরকার। খুব
তাড়াতাড়ি যাব আমাদের হারানো দিনের জমাট বেদনার এপিটাফ পাথরের খোঁজে। নীল চাঁদের ব্যথাতুর
কোমল ঠোঁটের নীচে যার বাস, বলে গেছে ধ্যানী বুড়িটা।

ফিরে যদি না আসি, ভুলে যেও।
কেউ মনে রেখ না, মিলিও না বিষাদ লিরিকে কান্নাতুর কণ্ঠের ছাঁচ!
স্মৃতি মানেই দু:খের সাথে তার অবিনাশী সহবাস।

আমাদের যেতেই হবে আজ অথবা কাল।
এই কথাটুকু মনে রেখ, ভুলে যেও।