বুধবার, ২১ ফেব্রুয়ারী, ২০১৮

সুলতানা শিরিন সাজি


সুলতানা শিরিন সাজি

নির্বাসিত

অনেক দিন হয়ে গেলো
পথ,ঘাট,মানুষের প্রবাহ ফেলে
আমার নির্বাসিত জীবন।

এমন জীবনের সাধ আমার
বহুকাল ধরে ছিলো।
বুকের ভিতর, যেখানে
পদ্মপাতায় দোলা পদ্মফুলের মত
হৃদয় থাকে।

সাধনায় সব হয়।
একাগ্রচিত্তে চাইলে সব সম্ভব।
কোন এক বইতে পড়েছিলাম
(একবার দীর্ঘ সাধনায় এক ঋষির
পিছনের অংশে লেজ হয়েছিলো।
অন্য এক ঘটনায়,
এক সাধক কামজয়ী হবার জন্য
রমনী হতে চেয়েছিলেন।
কি আশ্চর্য্য উনি রজঃস্বলা হয়েছিলেন!)

আমার তোমাকে দরকার ছিলো।
খুব প্রয়োজন ছিলো পরিপূর্ণ তোমাকে।
অথচ তুমি এমন দুরের একজন
যার কাছে পৌছাতে হলে
হতে হবে পাখী কিংবা ফুল।
আর তাই, আমার এই স্বেচ্ছা নির্বাসন।
যদি আমার সাধনা সফল হয়।
যদি হই পাখী কিংবা ফুল।
জেনে রেখো আমি তোমার বুকের কাছে
এক নীরব কবি হবো।





মমি হতে চাই

আমার স্বপ্ন গুলো আজকাল
খুব বেশী জাগতিক।
চাওয়া পাওয়াময়।

অথচ একসময় গেছে যখন স্বপ্নে
মিশর ঘুরেছি।
পিরামিড দেখতে গিয়ে বিস্মিত দু'জন
নানান প্রশ্নের মুখোমুখি হয়েছি।

গুহার মত সারি সারি পথ
আঁধো অন্ধকারে একটার পর একটা!
মমিগুলো পাশাপাশি।

বহুদিন স্বপ্নে যাওরা হয়নি মিশর!
এখন ঘুম মানে একদম মৃত্যুর কাছে
চলে যাওয়া।
স্নায়ুদের অখন্ড অবসর।

তুমি নেই,
কোথায় আমার মিশর!
কোথায় সেই পিরামিড!

যখন তুমি পাশে ছিল্‌
তোমার হাত দু'টো ধরে
কত দেশ।
কত মরুভূমি।
কত রাজপথ ।
কত মহাসাগর।

শুধু তুমি থাকো নাই বলে কেমন
একলা হয়ে যাওয়া।
একলা জীবনযাপন।

আজ আমায় বলতে পারো,
জীবনের ওপারে কি কি আছে?
কোন দেশ আছে ?
কোন আকাশ?
কোন পাতাবাহার বন?

যেই বনে গিয়ে নিঃশ্বাস নিলে কি মনে হয়
সুখ ছড়িয়ে যায়।
মনে হয় জীবন মানে
সবুজের সমারোহ ?

আমি শুধু আর একবার মিশরে যেতে যাই।
একবার মমি হতে চাই পিরামিডের।
তোমার খুব পাশাপাশি ,
এক আলো অন্ধকার গুহায়!





নিষিদ্ধ

এক রাতে অন্ধকারের
বনছায়ায় ভীষন ভয়
পেয়েছিলাম।
তুমি বললে পৌছে দেবে ঘরে,
ঘরের দ্বোর গোড়ায় পৌছুতেই
তোমার থরথর করে কাঁপা হাত আমায় ছুঁলো।
সাহস করে বললাম, চলো পৌছে
দিয়ে আসি।
তারপর থেকেই আসা যাওয়া শুরু!





আমি কিংবদন্তী হবো তোমার কবিতায়

তুমি আমাকে নিয়ে একটা কবিতা লিখেছো জানলে
আমি শিশিরের সুষমা হতাম।
আগুনের শিখা হতাম।
সমুদ্রের ঢেউ হতাম।
হতাম আকাশে ওড়া পাখিদের মতন সুখি।

শুধু একবার আমার নাম লিখলে,
উপন্যাসের কত কালজয়ী চরিত্রের মতন
তোমায় কবিতায় আমিও কালজয়ী হতাম।

লিও তলস্তয়ের আনাকারেনিনার দুঃখকে ছাপিয়ে
আর একটা ষ্টেশন,
আরো কিছু গভীর গোপন দুঃখ হয়তোবা আমাদের নেই।
ইবসেনের নোরা,
যার দম আটকানো অদ্ভুত এক পুতুলের মতন জীবন যাপনের ইতিহাস,
সেও আমাদের নয়।
ডল'স হাউসের শেষ দৃশ্যে নোরার চলে যাওয়া,
দরজাটার বন্ধ হওয়া।
এমন কিছু ঘটবার জন্য আমাদের কোন দুঃখ স্মৃতি জমা নেই।

তবে আমাদের আরো অনেক কিছু আছে!
আমাদের দুজনের বানানো নক্ষত্রের চাদর আছে।
আমাদের রেলগাড়ি আছে।
রেলগাড়িতে বুফে কার আছে।
(যেখানকার পুডিং তোমার ভারী পছন্দ)
আমাদের ভোরের স্বপ্ন আছে।
যে স্বপ্নে গায়ে চাদর দিয়ে দিয়ে তুমি আর আমি
শীতের সকালে চায়ের দোকান খুঁজে বেড়াই।
চায়ের কাপ থেকে চা ঢেলে খাওয়া ম্যানার্স এর বাইরে,
অথচ স্বপ্নে আমরা সুরুৎ সুরুৎ শব্দ করে চা খাই।

আমাদের স্বপ্ন গুলোতে অনেক গাছের সমাহার।
তুমি গাছ ভালোবাসো বলে তোমাকে ডাকি ইউক্যালিপটাস।
তুমি আমার কোন নাম দাওনি।
বলেছো তার জন্যই নাম দিতে হয় যার নামটা সুন্দর নয়!
এ কথা শুনে আমি অহংকারী ময়ূর হয়ে যাই।

আমি তোমার জন্য দূর্বাঘাসের মালা বানাই।
ঘন কুয়াশায় হাঁটতে হাঁটতে আমরা অনেকদুর চলে যাই।
আমাদের নিঃশ্বাসের সাথে ধোঁয়া বের হয়।
আমি সান্দ্রা বুলকের মতন সুখটান দিতে থাকি।
তুমি হাসতে হাসতে বসে পড়ো।
কত ছোট ছোট সুখ আমাদের পথে জমা হতে থাকে ।

সান্দ্রা বুলককে আমার ভারী পছন্দ! তোমারও তাই?
ছেলেদের মধ্যে পছন্দ হ্যারিসন ফোর্ড আর রিচার্ড গিয়ার।
তোমার আর ও একজন পছন্দ,
জুলিয়া রবার্টস্‌।
আমারও তাই।

আমাদের কত মিল।
আমাদের কত মিলে যাওয়া সুখ।
অথচ আমরা কত দুর!
তুমি জোনাকী হলে আমি হই রোদ্দুর।
তুমি হরপ্পায় গেলে আমি যাই মোহনপুর।

শুধু তুমি আমাকে নিয়ে যদি একবার কবিতা লেখো,
আমি মেনে নিতে পারি আমাদের নির্বাসন।
আমাদের যেনো আন্দামান নিকোবরে কোন দ্বীপে পাঠানো হয়।
তুমি দীনমান কবিতা লিখবে।
আর আমি মেঘের ভেলায় ভাসাবো আমার স্বপ্নলোকের ডিঙা!

তুমি শুধু একবার নাম লিখে দেখো।
আমি কিংবদন্তী হবো তোমার কবিতায়!





চোখ

চোখ এর স্বভাব দেখতে থাকা।
চোখ দু'টোকে সামলে রাখিস।
তোর আমার চোখের ভেতর,আকাশ থাকে!
পাখী হয়ে উড়তে থাকিস ইচ্ছেমতন।
একটু যদি হয় অবসাদ, বসতে পারিস।

চোখের কাছেই নদী থাকে !
নদীর কাছেই ঘাসের উপর ,একটু নাহয় বসেই গেলি।
তোর হাতের মুঠোর ভিতর, জোনাক জ্বলে সন্ধ্যা হলে।
আমায় নাহয় সেই জোনাকের আলোটুকু ছুঁতে দিলি!

বুকের ভিতর যেই বুনোহাঁস,
আদর ভরে সাঁতার কাঁটে, চন্দ্রাহত সে নাকি রোজ,
বিনি সুতার মালা গাঁথে!
আমায় কেবল সেই মালাটা, পড়তে দিবি?

পথ হারানো পথিক যেমন পথের দিশা চায়।
তোর কেনো আজ হাতের মুঠোর হাত হারাবার ভয়?
কাছেই আছি, তোর কাছেই, চোখের আলোর মত,
ঘুম এলে যে স্বপ্ন আসে ,সেখানেও আমিও।

ঠোঁট এর ভাঁজে যেই আদরে সকাল জাগে তোর।
আমায় কেনো খূঁজে বেড়াস চোখে নিয়ে ঘোর?
চোখ দুটো তোর ,আমার চোখেই,ঘর বেঁধেছে কবে।
বলতে পারিস কার অপরাধ, কার বনবাস হবে?