বুধবার, ২১ ফেব্রুয়ারী, ২০১৮

শিপ্রা পাল


শিপ্রা পাল

আগামীর অরণ্য

অরণ্যের আরশীতে ফিরে আসে বারেবারে
আকাশ ছোঁয়া পাহাড় অগোছালো গন্ধে
মেঘকুণ্ডলী মৃত রোদ্দুরে বৃক্ষলতার ছায়ে
নিঃশব্দে কতো শব্দের হ্রদে ভাসতে থাকে।

শনশন বাতাস শুধু কল্পনার নৈবেদ্য হাতে
ঝরা পাতার চিলেকোঠায় কাঁদে নির্জনতায়
কিছু কথা আলনায় ভাঁজে পড়ে থাকে অযথা
পাথরকুঁচিতে হোঁচট লেগে প্রতিধ্বনিত হয়।

তবুও সেই পথে বুনো শীতলতার আঙুল ধরে
তুমি নিয়ে চলো বহুদূরে পরবাসী জন্মান্তরে
নতুন একটি সূচনায় সবুজের বসত কুটিরে
আগামীর অরণ্যময় খোলা জানালায়।






নীলের হাত ধরে

বেওয়ারিশ ভেজা স্বপ্নগুলো বাষ্প হয়ে
স্মৃতি মোড়কে আঙুল ছাপে দেখি
রাত জাগা লাল চোখের বিনিদ্র দাগ
ঘাসের ডগায় লেগে থাকে শিশিরে।

দিনের আলোয় ভুলে থাকা ব্যস্ততার
ফাঁকে উঁকি দেয়া অ-নীল আকাশ
মাঝেসাঝে বেদনার সাঁঝবাতির আয়নায়
ঝরা তারা মাটিতে আগুন জ্বালে।

তবুও দিন চলে চলার মতো বেস্বাদে
হয়তো আবার কখনও একমুঠো রোদে
মেঘ বৃষ্টির হাসি-কান্নায় ছুটে যাবো
ছায়া বৃক্ষের সেই নীলের হাত ধরে।






বিশুদ্ধ প্রেমিক

বিশুদ্ধ প্রেমিক হবে বলে
ওষ্ঠ ছুঁয়ে গোলাপের অঙ্গুলি রেখেছিলে
আমি বিশ্বাস করে বারবার
হেরে গিয়েছি হে পুরুষ।

জলপাই অরণ্যে স্বপ্ন দেখিয়ে
মিথ্যে হাতে আশ্বাসের শপথে বেঁধেছিলে
আমি মরেছি কতোবার কতো যুগ ধরে
নির্বাসিত নোনা পদ্ম মাঝে।

যতোবার ভেবেছি ভুলে যাবো
খসে পড়ুক সমস্ত ভালোবাসার পলেস্তারা 
শুকিয়ে যাক পেয়ালার অমৃত সুধা
জ্বলে উঠুক অ-প্রেম মশাল।

আর কতোভাবে কতোরূপে আসবে
শুদ্ধ প্রেয়স তুমি হে নর মানব দেবতা
তবুও আমি প্রেয়সী হয়ে রই অনাদিকাল হতে
তোমারই পথ চেয়ে শূণ্য আকাশে।






একুশের মানচিত্র

একুশের পতাকা হাতে মানচিত্রে দাঁড়িয়ে 
রক্তে মাখা ফেব্রুয়ারি লালে লাল।
সোচ্চার কণ্ঠে মিছিলের সেই আহ্বান
পলাশ শিমুল লজ্জায় ম্রিয়মাণ
অলি-গলি রাজপথে লাশে সয়লাপ
মাতৃভাষা লড়াইয়ে প্রতিবাদের শ্লোগান।
জন্মভূমি মাটির গন্ধে ঘুমিয়ে
লাখো সেনার শহীদ মিনার স্তবকে নত
পৃথিবী অঙ্কিত আজ বাঙালির সম্মান।
বর্ণমালা হে ভাষা শহীদ বাংলার রবি
প্রভাতফেরী আলপনা আঁকা খালি পদচলা
একুশে ফেব্রুয়ারি তোমায় সালাম।






আঙুলের কড়েতে ঈশ্বর

আঙুলের কড়েতে একদিন ঈশ্বর দেখা দিলেন
দেখতে পেলো কৃষক মজুর বস্তিবাসী চাকুরিজীবি
কিন্তু ওপরতলার কিছু কার্পেটে মোড়া মানুষরা দেখতে পেলো না।

ঈশ্বর বারবার তাদেরও কাছে আসেন
রেখে যান নরম রোদের বালিশ
তবুও ওরা ভুল করে ভুলে যায়
ওদের আর ফুরসৎ হয় না দেখার।

যখন দেখার সময় হয়
তখন হয়তো অনেকটা সময় পেরোয়
তবুও ঈশ্বর ছাপ রেখে যান অপেক্ষা করেন
ঈশ্বর তো সবারসেটি হয়তো ভুলে যায় কেও কেও কখনো।