মনিকা
আহমেদ
জানালা
উত্তরের জানালা ক'দিন খুলতে পারিনা;
তোমার মত ঠান্ডা বাতাস
হু হু করে কানে হিম ছড়িয়ে মারে
আজ সাতাশ, এরপর বাতাস আরো তীব্র হতে হতে উড়িয়ে
নেবে
প্রিয় বারান্দার
কুসিম্বী লতা,
প্রিয় হেমন্ত, কুদফুলের সাতটি পাপড়ি
ভেবেছিলাম দক্ষিণমুখী
জানালাটা আজ খুলেই দেই
রোদে পোড়া চোখ মাঝ রাতে
আধেক চাঁদে চন্দ্রাহত হোক
উত্তরের হাওয়া আর দক্ষিণ
জানালা পরস্পর
নরপতির মত আচরণ দেখে মনে হচ্ছে,
আমায় নাগরিকত্ব না দিলে
জানালা খুলে দিতে পারিনা
বাতাসের কী স্পর্ধা!
বাড়োয়ারি ঋতু আর তোমার মত ঠান্ডা দেবশিশু
আমায় জানালায় আটকে রাখে;
পুড়ে যেতে ভালো লাগে
রোদে
বা শীতের হিম কুয়াশায়; তবু জানালা খোলা চাই
অপেক্ষা -২
যদি এমন দিনে
আসতে
শীতের মৃধুমন্দ বাতাস
লাগে গায়ে
খুব ভালো হতো হেমন্তের
দুপুরবেলা
চোখে চোখে হতো
রোদ্দুর খেলা
তোমার আর আমার হ'তো দেখা !
শীত এসে চলেও যাবে নীরবে,
পাতা ঝরা দিন শুরু হবে
কিছু প'রে
যাবার বেলা শুরু হবে
বৃষ্টি খেলা
বেলা বহে যাবে -
পান্ডুর চোখ খুঁজবে
কৃষ্ণচূড়া
তখনো হতো যদি দেখা !
হয়তো হলুদ বসন্ত শেষে, তুমি উধাও বাতাসে
দাঁড়াবে খিড়কিতে এসে; বৈশাখী ঝোড়ো হাওয়া
যখন করেছি নোঙর অন্য
দেশে...
হবে না কখনো আমাদের আর
দেখা
তবু অপেক্ষা!
রাত্রির গান
যে রাত্রি জড়িয়ে ধরে পা
তাকে আর রাত্রি বলিনা
যে গহন অন্ধকার ভালোবাসে
সে সবচেয়ে কাছে থাকে;
যে সশব্দে কাছে আসে
তাকে ভেঙেচুঁরে হই
ক্ষান্ত অবশেষে ।
যে আমায় দেখেও দেখে না
সেই-ই টানে-
সে' ই সবচেয়ে ভাল জানে;
তার সাথে হয় আমার পরিচয়
দিন রাত্রি পারাপার -
এক আলোকিত অধ্যায়।
তার সাথে বাঁধি সুর, প্রকৃতির স্বরে
সে বোধ ও বোধনে টানে
রাত্রির অন্ধকারে, জড়িয়ে ধরে প্রাণে ।
মৃত্যুঘুম
আজকাল দু'চোখে গহন ঘুম নামে
সেই সাথে গহন মৃত্যুও
ডাকে__
পোড়া চৈত্রের মতন হেমন্ত
বাতাস
ঘুমের যাতনায়; কাঁদেকাটে
ঋদ্ধ হতে চায় বালুকণা, সমুদ্র ফেনা;
ডুবে যাই নোনা জলে, গহন ঘুমে...
স্রোতস্বিনী টেনে নেয়
কোন কিনারে;
পাঁজর ভেঙে চূর হয়, রুক্ষপ্রকৃতি গিলে খায়
আমার সমুদয়!
এরচে' মৃত্যু কি ভালো নয়?
শৃঙ্গধরের দহন
সেই কবে শুরু হয়েছিল
আমাদের দহনকাল;
শৃঙ্গধর
তুমি কী এতই অসহায়, আঁধারে ফোটা শুভ্র গুল্ম
শেফালিকার জন্যে কাঁদো!
বলেছিলে কী ভীষণ পুড়ে
যেতে থাকো...
গাঢ় বিকেলেই চোখে
নিঃসীম অন্ধকার; শ্বেতপদ্মে ঢাকো
অমানিশার
রাত্রিগুলো ঢালে গুপ্ত দাহ;
দহনে পোড়ে বুকের লুকোনো
শ্যামলতার গন্ধ
দেখো, একদিন আমাদের প্রেম হবে চারুশিল্প
ওরা বুক পাঁজরে আঁকবে
শ্বেতপত্র
কেন তুমি একা একা বুকে কষ্ট জমাও ?
শিশিরের মত
আমার বুকেও
টুপ টাপ টুপ টাপ শব্দ হও
শৃঙ্গধর, আজন্মের তৃষ্ণিত দহন
কিছুটা আমাকেও দাও!