অভিজিৎ পাল
অপমান
১.
আমায় অপমান করতে চাও তুমি। আমি জানি। এসব বহুদিন থেকে জানি। তবে তোমায় সুযোগ
দিতে ডরাই। পাছে সহ্য করতে না পেরে আমিও অপমানের ফন্দি ফিকির খুঁজে ফিরি। সতর্ক
হয়ে থাকি। অনেকখানি সতর্ক। মাঝে মাঝে ইচ্ছে করে তোমার বলে ফেলি আসল সত্যিটা। অপমানের
অনেক পথ আছে, দুর্ভাগ্য বশে তুমি শুধু তাঁর
কয়েকটি মাত্র চেনা পথই জানো। বেশিরভাগই জানো না। জানতেও পারবে না।
২.
তোমার জানা শর্তাবলী বাঁকা। নিজের যৌন পরিচয় যেমন মানুষ গোপন রাখে তেমন করে
লুকিয়ে রাখো অভিসন্ধিদের। কোনোদিন তোমাকে ধরিয়ে দিতে চাইনি অনেক চোখের সামনে।
আমি জানতাম এই কাজে আমার কোনো ক্রেডিট বা ডেবিট নেই। অপমানের ঘর করো তুমি। সামাজিক
ও ধর্মীয় স্বপ্নের ঘোরে সতী সেজে মেনে নিতে থাকো নিগ্রহগুলো। নিজেকে ভুলিয়ে রাখো
রান্নাঘরের অজস্র বাসনের ঠুং ঠাং শব্দের উপমায়।
৩.
তৃতীয় পুরুষকে ভয় পাও তুমি। আমি জানি এই সত্যিটা। কোনোদিনই নিজের ইচ্ছেটুকু
জানাতে পারোনি সিগারেট টেনে চলা রাশভারি গম্ভীরমুখো বাবার সামনে। অথচ ভুলে যেতে
পেরেছো প্রাক্তন দিনের একসঙ্গে সুখের সংসারের স্বপ্ন দেখা প্রিয় মানুষটিকে। নিজেই
বেছে নিয়েছিলে নিজের অসম্মান। অযথা মেকানিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করা ছেলেটি
হাস্যস্পদ হয়েছিল কলেজের ক্যান্টিনে। ও কিন্তু নিজের অপমানের দাম চাইতে আসেনি।
৪.
চিরদিন এভাবেই চলে এসেছে সব। শোনা কথার বুকে ভর করে আমাদের অভিভাষণ। অনেক অনেক
মুখে শুনেছ কত কত সূক্ষ্ম চালে পূণ্য থেকে পাপ গড়ে ওঠে। এভাবে শিখতে চেয়েছ তুমি।
অবাধ্য হওনি মিথ্যাচার ব্যভিচার দেখে। ভেবেছিলে কষ্টসাধনে শরীরপাতনে মন শুদ্ধ হয়।
আমি বারণ করে দোষের ভাগ বাড়িয়েছিলাম। বেশ। এবার আমার মৃত্যুর পর রেখে যাওয়া শেষ
দেড় সের ছাই ঘেঁটে খুঁজে নিও পাপের মতো পূণ্য আছে কিনা।
৫.
আমার সবটুকু তুমি জানো না, জানার
চেষ্টা করে গেছো মাত্র। তোমার অভিসন্ধি বুঝতে পারছি আমি। বয়স তো হলো। অনেক কুটিল
চোখে মেপে নাও আমাকে। অনুসন্ধান করার প্রচেষ্টা করো আমার যৌন পরিচয়। আমি বুঝতে
পারি ওই চোখের চাউনি দেখেই। ভয় পাই আমি। অজানা এক ভয়ঙ্কর ভয়। গুটিয়ে আসে হাত
পা মাথা পেটের ভেতর। ব্রহ্মজ্ঞানী ব্রহ্মচারী হওয়ার ইচ্ছে তুমি নেতিবাচক দৃষ্টিতে
বুঝে নিতে চাও!