বুধবার, ২১ ফেব্রুয়ারী, ২০১৮

রীনা তালুকদার


রীনা তালুকদার

ভালোবাসার অক্সিটোসিন

নেই কেউ দেখার
তাই মনে নেই বসন্ত তোমাকে
থাকলে কেউ মনে হতো
বাসন্তী ফুল সাজা ঘরে বাইরে
পোশাকে বাসন্তী রঙের লুটোপুটি
পলাশের বুকে হামাগুড়ি দেয়া
হলুদ ঠোঁটে হলুদিয়া চঞ্চল পাখি
বার বার চম্কে চম্কে উঠা
ভালোবাসার স্পর্শ পরশে উন্মাতাল

নেই বসন্তের গল্প কথা শোনার বন্ধু
বসন্তের ইমেজ অন্য রকম এখন
নেটের ফেসবুকে বসে বন্ধু তালিকার ম্যাসেজ
বাসন্তী ফুলে রাঙা পোশাকে বাহারী সাজ
তবুও বসন্ত বিকেল রাস্তায় রিকসায় ঘোরা
যুগলের ছোট ছোট কথা মনে করিয়ে দেয়
সে প্রথম প্রেম প্রথম বসন্ত প্রণয়
মনে হলে এখনো বুকের ভেতর
ষোলো  শ্বাস ধুকপুক্ ধুকপুক্
ভালোবাসার অক্সিটোসিন মোহমায়ায়
অ্যান্ডোরফিনস জড়িয়ে রাখে জৈবিক দশদিক
বসন্ত ভালোবাসার হাত বাড়াতে চায়
বসন্ত বন্ধু পারবে কী ইস্ট্রোজেনকে
টেষ্টোষ্টেরন উপহার দিতে পারে
পারলে এসো তবে এই বসন্ত বেলায়।





বসন্ত উদাস

কে বলেছে বসন্ত নেই; চলে গেছে কবে
রক্তিম হাসি হয়নি তো ম্লান
পলাশের উন্মুক্ত পাপড়িতে
হলদে পাখিটা শিমুলের ডালে ডালে ফিরছে
ডালিম ঠোঁটে সুতীব্র ভালবাসা মেখে
উজানের জল গড়িয়ে উঠছে  বারোমাসি কৈ
ক্লান্তির রোদ পোহায় বৈকালিক সারস
মাছরাঙা ছিপে বসে ভাবছে শিকারের সুখ
যায়নি বসন্ত দ্যাখো সূর্য গ্রহণ তাপ 
সরগরম চায়ের আড্ডায় জমে যায় বেশ
আয়েশী রাতের আকাশ জুড়ে তারকার বিয়ে বাড়ী
দিনে রাতে বসন্ত খেলে থৈ থৈ লুকোচুরি
নক্ষত্র আগুনে এলেবেলে হাত ছুঁয়ে
হঠাৎ জ্বলে উঠে বসন্ত উদাস।





কেমন আছো তুমি

ধীরোদাত্ত সব সময় তোমাকে দেখি
সব দেখা সব সময় এক হয় না ধীরোদ্ধত
কখনো জিজ্ঞেস করি না কেমন আছো;
আজ দেখিনি বলেই বেজায় মন খারাপ
ইচ্ছের ছিটকিনিতে হাতুড়ী পেটায় 
দ্বিধার বাহুল্য ঘিসকোপে চেঁচে ফেলে
জিজ্ঞেস করি- তুমি কেমন আছো ?
খুব সাধারণ নিবিড় প্রশ্ন
ঝুমঝুমি মনের সপ্ত সুর ভেঙ্গে হঠাৎই
নীরব চর্তুদিকের শব্দ তরঙ্গ
বসন্ত বাহানা ব্যাকুল গোপিত হৃদয় খঞ্জনা
নিভাঁজ চোখে সংখ্যাহীন নিবেদন
পরিপক্ক আদরের আহ্লাদী আবীর ছিটিয়ে যায়
দ্রবীভূত হতে হতে কোমল কনকাচলের গোপুর
ডবডব উষ্ণ অভিষঙ্গে বিহবল
ঊষর মন কখনো কখনো ভালোবাসার অক্ষটী খোঁজে।
নোটঃ অক্ষটী- শিকারী, কনকাচল-সুমেরু পর্বত, অভিষঙ্গ-তীব্র আসক্তি,
পরাভব, আক্রোশ, অনুরাগ। গোপুর- মন্দির দ্বার,
ঘিসকোপ/ ঘিসক্যাপ- কাঠ চাঁচার যন্ত্র বা র্যাঁদা, ধীরোদ্ধত-স্বভাবত:। 





লুকানো যায় না

তোমাকে কোথায় রাখি
সুড়ঙ্গ সড়কে চলমান গোয়েন্দা চোখ
অলৌকিক আলোকে হৃদয় ধন্য
ঘুম জাগানিয়া ভ্রমর
শর্ষে মঞ্জরির কত বুক ভরা স্বপ্নরাজি
অদৃশ্য প্রাণের খেলায় ভোর বিভোর
নক্ষত্র দেশের গ্রহ পুঞ্জ
নিশি ঝরা কুয়াশায় কথারা জাল বোনে
একা একা ধূ-ধূ প্রান্তরের একলা সুখে
অসময়ে ডাকা ডাকি ; মন গেয়ে যায়
মনন্তরের বেদনার এক সংগীত
রাত ভিজে সারা অমল নদীর ধবল স্রোতে
লুকাবো কত আর দগ্ধ শরতের ঘা গুতো
এইখানে আজও জোৎস্না নিলাজ স্নানে মত্ত হয়
সূর্য ওঠা ভোরে পালকের শেষ উত্তাপে বসন্ত হাসে।





দুয়ারে বসন্ত

কারো জানার আগ্রহ থাক না থাক
দুর্বার বসন্ত মানে না কোনো ঝড় ঝঞ্ঝা
অপেক্ষা তার জানা নেই আসতে হবে আসবেই
মনে না থাক কারো যায় আসে না কিছু
প্রকৃতি আপন সুরে গেয়ে উঠবে বসন্ত গান
কোকিল কণ্ঠ জাগিয়ে দিবে ঘুমন্ত চেতনায়
ভাববো তুমি এসে দাঁড়িয়েছো অভিসারী চোখে
মোবাইল ম্যাসেজে বসন্ত এসেছে মনে
ভুলে ছিলাম অনায়াসে নৈমিত্তিক ভাবনায়
নিউটন বলের বিকর্ষণ প্রক্রিয়ায় হঠাৎই হেসে উঠলাম
হলুদ ফুলে বিস্তারিত বনভূমি
ফুটেছে জারুল শাখে যৌবন উচ্ছাসে
আজ বসন্ত অতিথি দিয়েছে হাঁক দুয়ারে
স্বাগত স্বাগত প্রিয় বসন্ত বাতাস।





বসন্তের তাপ

শেষ রাতে গুচ্ছ গুচ্ছ শিমুল ফুল ঠোঁটে
এসেছে হলুদ পাখি
গভীর ঘুমের ঘোরেও সিম্পনি চোখে
জানাই স্বাগতম স্বাগতম
কানে কানে ফিসফিসিয়ে বলে
জাগো, আমিই তোমার বসন্ত দেব
এই দ্যাখো বুকের দেয়ালে রক্তিম কোলাজ
ভেতরে পঁয়তাল্লিশ ডিগ্রী ফারেনহাইট তাপে
পুড়ছে শিকারী শরীরের ঘরবাড়ি
জানি তাতে জ্বলছো তুমিও
অন্ধকে যে পথ দেখায়
তার ভেতরে আমূল বসন্তের উৎসব
কেউ না জানুক আমি তো জানি সব
চলো বাসন্তী,
দ্রবণীয় নুনের জলে মাখামাখি
প্রকৃতির ইলিশের বসন্তী মিলন মেলা দেখি।





মাতাল গাছ

মানুষ মাতাল হয় শুনতে শুনতে
কানে ও মস্তিস্কের স্নায়ুবিক চেতনায় সয়ে গেছে
গাছ মাতাল হয় শুনেছে কেউ ?
শোনেনি কেউ বলে অবাক হবার কিছু নেই
পলাশের ডালে ফেটে পড়া আগুন রঙ
আর কৃষ্ণচূড়া পাকা ডালিম ফাটা
ঘোর মাতাল নয়তো কী বলা যায়
খুনরঙে পলাশ ও কৃষ্ণচূড়া গাছ মাতাল হলে
বুঝতে হবে বাসন্তী আগুনে
হাতে হাত রেখে এসেছে ফাগুন।





একাশিয়ার বসন্ত

একাশিয়াতো সেজেছে কম না
ভালোবাসা চাইলেই কি যায় পাওয়া ?
যতই বসন্ত ঝড় থাক না
ভালোবাসা দিব না, দিবো না।