বুধবার, ২১ ফেব্রুয়ারী, ২০১৮

শাশ্বতী সরকার


    শাশ্বতী সরকার

আয়রে যৌবনেরই দূত

নাহ্‌! পুরনো আর কিছু ভাবাচ্ছে না আমায়।

কতবার যে পুরনোকে ভুলতে চেয়ে চেয়ে চেয়ে

আবার নতুনের প্রেমে পড়ি!

পুরনো মানেই লজ্‌ঝড়ে, পচা, রদ্দি মাল

গড্ডালিকা প্রবাহে গা ভাসাতে ভাসাতে

এরা ভুলে গেছে বিপ্লবী হতে, স্বাধীন হতে,

সুন্দর হতে, নির্ভীক হতে -

এরা শুধু অভিনয় করে যায়,

নিখুঁত সুন্দর অভিনয় -

মনে হয় পুরনোরা সব বোরখা পড়ে আছে

আড়াল থেকে যত হম্বিতম্বি।

আয়রে নতুনের দল,

পৃথিবীর সামনে বুক চিতিয়ে বল্‌

নিজের বিশ্বাস, নিজের আদর্শ, নিজের ভালবাসার কথা।

নতুন যৌবনের দূত

যুগে যুগে তোরাই তো করেছিস্‌

পৃথিবীকে সুন্দর, পুরনো অন্ধকার সরিয়ে

এনেছিস নতুন আলো।

আয়রে! তোকে নিয়ে আবার ঘর বাঁধি,

নতুনের স্বপ্ন দেখি,

আছিস নাকি রে কেউ তেমন?






ও মা চৈতন্যময়ী

কেন যে পাথর গলেনা!

কেন যে অন্তরের দীপখানি জ্বলে ওঠে না!

ওপার থেকে যে সুর ভেসে আসে

মনে হয় সে যে মিথ্যে নয়, মিথ্যে নয়

পাথরের বুকে অহরহ কান পেতে

আমি যে ঝর্ণার ধ্বনি শুনতে পাই

কুহকিনী বাঁশি ডাকে আয় আয়

তবে কি সে মিথ্যে মায়াময়?

ও বিরাট শিল্পী,আমাকে বধির করে দাও

আমাকে অন্ধ করে দাও

বাইরের আলো আমি আর চাই না,চাই না

চৈতন্য দাও হে আমায়, চৈতন্যময়ী

তোমার জ্যোতির্বলয় দিয়ে

অহরহ আমাকে ঘিরে থেকো।






কালী করালবদনী

সত্য স্বরূপা তুমি, তাই তুমি নিরাবরণা

মহাকালের বুকে উদ্ধত পা দিয়ে

দাঁড়িয়ে আছ ভীষন দর্শনা

তোমার কোন আড়াল নেই

তোমার কোন দু-মুখ নেই

অপ্রিয় সত্যের তলোয়ারে তুমি চারিদিক

খন্ড বিখন্ড করে দাও

পড়ে থাকা মিথ্যের মুন্ডগুলি দিয়ে

মুন্ডমালা পরে, হা হা অট্টহাসিতে

ভরিয়ে দাও চারদিক

মুহূর্তে সামনের পথ ফাঁকা করে দিয়ে

মিথ্যেরা মুখোশ পরে পালিয়ে বাঁচে

আশ্রয় নেয় ছলনার আঁচলের নীচে

আর নীরবে এসে প্রণামী বাক্সে রেখে যায় পূজা

ভীষণা করুণাময়ী পরম মমতায় সে মিথ্যের

পুতলিগুলোকে কোলে তুলে নিয়ে আদরে মাতে,

তখনই খসে পড়ে ভণ্ড মুখোশ

ক্রুদ্ধ করালবদনী,মুখোশে কন্ঠ ছিঁড়ে রক্তপান করে

এভাবেই বয়ে চলে কাল

ছলনার মায়াজাল ছিঁড়ে মিথ্যে কখনও

তোমার সামনে এসে দাঁড়াতে পারেনা

সম্মুখ সমরে। 






পাঠকের দরবারে

বিদ্বেষী হাওয়ারা আজ বিষ ছড়ায় আড়ালে
আর প্রকাশ্যে হুমকি দেয় নিরীহকে
তাদের মতানুসারী না হলেই চড় মেরে
পথের কাঁটা সরিয়ে দেবে বলে।
কারণ ক্ষমতার অলিগলি তাদের সব চেনা,
তারাই আজ বড় কবি ও লেখক।
গুন্ডারাজে ছেয়ে গেছে দেশ,
যেখানে ক্ষমতা সেখানেই জনতার ভীড়,
এসব দেখে শুনে ছোট কবি কাঁদেন নিভৃতে
আর বলেন,ভাল হোক্‌,বন্ধু,তোমাদের
সকলের ভাল হোক্‌।আমি চিরকালই
দুর্বলের দলে,সবহারাদের দলে।
তাদের ছেড়ে যদি মিথ্যের সাথে,ক্ষমতার সাথে
আপোষ করি,তাহলে আমার শরীর থেকে
কবির তকমা খুলে নিও তোমরা,
আমাকে নির্বাসন দিও কোন জনহীন দ্বীপে
অথবা মৃত্যুদন্ড দিও বিশ্বাসঘাতকতার অপরাধে।





একটি সংলাপ

নির্বাক সময় এখন
তবু নির্মোহ কি হতে পেরেছ?
না বোধহয়, এখনও পুরোটা হতে পারিনি
কেন বলতো? কিসের টান?
আমার স্থির বিশ্বাস তিনি আসলে আমাকেই চান।
আর যদি তা না হয়?
তাহলে বুঝব পৃথিবীতে যা কিছু সুন্দর সব মিথ্যে।
আর কবিতা? তোমার কবিতাও তাহলে মিথ্যে?
না না, তা কি করে বলি? সে যে আমার
বুকের রক্ত দিয়ে লেখা!
তোমার কবিতা তবে সত্য?
হ্যাঁ, সূর্যের মত সত্য,চন্দ্রের মত সত্য,ধ্রুবতারার মত সত্য।
তবে কবিতাকেই আঁকড়ে ধর, সে তোমাকে
কখনোই ঠকাবে না।একমাত্র কবিতাই
তোমাকে দিতে পারে সেই অমৃতের সন্ধান,
যার খোঁজে তুমি সারাটা জীবন ব্যয় করেছ।