বৃহস্পতিবার, ২১ জানুয়ারী, ২০২১

নাসির ওয়াদেন

 

"কবিতাউৎসব" শীতের বিকেলে স্নিগ্ধ চাঁদের সুশীতল আলোর বন্যা বয়ে এনে জোৎস্নাঝরা স্রোতে চিন্ময় করেছিল কবিতার জগতকে। এক মায়াময় রৌপ্যরূপের শরীরী অবয়ব ঘিরে উৎসাহের শেষ ছিল না আমার কাছে। এক নতুন জগত, একটা নতুন পথ খুঁজে পেয়ে, সেই আলোক বিকিরণমুখর পথে হাঁটতে হাঁটতে পৌঁছে গেছি এক মায়াবী বনে। প্রতি মাসের ২১-শের অপেক্ষায় থাকতাম কখন ভূমিষ্ঠ হচ্ছে আমাদের সোনার স্বপ্ন। নিরবিচ্ছিন্ন ধারার সাথে নিয়মিত পথ ধরে পৌষো শীতকাতুরে আলপথ বেয়ে রৌদ্রদগ্ধ দুপুরের উন্মাদাকাশের বুক ভেদ করে ভালবাসার ননী বেরিয়ে আসবে, সেই অপেক্ষায় নির্ভেজাল পায়ে দাঁড়িয়ে থাকা। অগ্নিবলাকার ঠাঁই দাঁড়িয়ে থাকা এক নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে মৎস্য শিকারের তৃপ্তিকর উৎকণ্ঠা নিয়ে শীত, গ্রীষ্ম, বর্ষা,হেমন্ত, বসন্তের প্রতিকূল অনুকূল আবহাওয়া পৃষ্ঠে ধারণ করে একখণ্ড শিকারের প্রলোভনে প্রহর থেকে প্রহর, মাস থেকে দিনের অপেক্ষা। এক অতি তুচ্ছ মানের একজন কবিতাপ্রেমী হিসেবে নিজেকে সমৃদ্ধ করতে পেরে ধন্য হয়েছি আর বহুকবির সান্নিধ্যে এসে কাব্যপ্রেরণা পেয়ে আলোকিত হয়েছি। সাদামাটা, আলোছায়া মুখর, নিঝুম আনন্দ মুখরিত শব্দবন্ধন ও শব্দজালির ভেতরে আটকে গেছি বারবার, ঢুকে পড়েছি শূন্য থেকে উর্ধ্বে আর প্রান্ত থেকে অসীমের শব্দবন্ধে, চিত্রকল্পের নতুন তরঙ্গে।

 

কবিতাউৎসবএর সাথে এক সমান্তরাল রেখায় টেনে এনেছিল এক কবি, সেই কবিকে অস্বীকার করি কীভাবে। ভুলে যেতে পারিনা তার বদান্যতা ও উদারতা। শুধু রাস্তা দেখিয়ে ক্ষান্ত হয়নি, আঙ্গুল ধরে পথ হাঁটিযে টেনে নিয়ে গেছে কবিতাউৎসবের ঠিকানায়, দোরে। কবিতা লেখার উৎসাহে ঘৃতাহুতি দিয়েছে, আমার ভেতরের ভালবাসার আগুনকেও জাগিয়ে দিয়েছে, তিনি এ সময়ের অন্যতম এক বিশিষ্ট কবি, কবি তৈমুর খান, আমার পরম পূজনীয়, প্রিয়জন, পথপ্রদর্শক ও সহযোদ্ধা। রামপুরহাটে রোদ্দুর পত্রিকার প্রকাশ অনুষ্ঠানে নতুন করে পরিচয়। আমি বরাবরই লাজুক প্রকৃতির এবং কবিতা বিষয়ে আত্মপ্রত্যয়হীন। আমার কবিতা আদৌ কবিতা কী না, তা বরাবর সন্দেহের তালিকায় রাখতাম। কিন্তু কবি তৈমুর খান আমাকে টেনে তুলতেই নতুন পথ খুঁজে পেলাম। তার পদাঙ্ক অনুসরন করতে করতে আর কবিতাউৎসবের স্নেহ-ছায়াতে আমার কবিতা কিশলয় থেকে পর্ণে পরিণত হতে থাকে। যদিও আমি নিজেকে কবিযোগ্য মনে করি না। কেন না, কবিতা লেখা বিষম কঠিন ।

 

পরিশেষে, আমার দীর্ঘ পাঁচ বছরের অভিজ্ঞতা আর কবিতাউৎসবের মত সুজন সাথী পেয়ে তার সাথে যুক্ত কবিকুলের সান্নিধ্যে এসে যথেষ্ট যথেষ্ট রূপে নিজেকে তৈরি করে নেওয়ার সুযোগ ও সাহস পেয়েছি। কবিতাউৎসবএর লিংক পাওয়ার অপেক্ষায় থাকতাম, একুশের ভোরে উঠে লিংক খুলে কবিতাউৎসব পড়তাম, তারপর অন্যকথা। সেই স্মৃতিমধুর দিন কী আর ফিরে পাব, কল্পনা নয়, বাস্তবের মাটিতে দাঁড়িয়ে আমার খুবই কষ্ট অনুভূত হচ্ছে, বেদনাহত চিত্তে ভাবছি, আর কী লেখার উৎসাহ পাব 'কবিতাগুচ্ছ' পাঠাতে। তবু মনে করি, এই দীর্ঘ সময়ে কবিতাউৎসব আমাকে যা দিয়েছে তার ঋণ অ-শোধিত এবং আমাদের যা দিয়েছে তা কম কীসের। লাভের হার অনেক বেশি, পেয়েছি হাজার হাজার ভালবাসা, সুধিজনের সান্নিধ্য ও সাহচর্য। ক্ষমা প্রার্থী সময়কে গুরুত্ব দিতে না পেরে। অফুরন্ত ভালবাসা রইল কবিতাউৎসবের সেনাপতি ও সহযোদ্ধাদের। হয়ত আমাদের সামনে অন্য আর এক উষালগ্ন অপেক্ষা করছে, সেই পথ ধরে পৌঁছে যাব মহামিলনের মিলনতীর্থ ভূমিতে, যেখানে করোনা আমাদের আটকে দিতে পারবেন না। ভালবাসা। ভালবাসা ভালবাসা।