বৃহস্পতিবার, ২১ জানুয়ারী, ২০২১

ভাস্কর পাল

 

আমার এক হাত ছুঁয়ে আছে উত্তাল মহাসাগর আর এক হাতের স্পর্শে অনুভূতি জুড়ে অনুরণন তোলে আমার জন্ম মুহূর্ত। জীবন বোধের অগভীর তল থেকে শুরু হয় আমাদের প্রাত্যহিকতা। নিজেদের জীবন প্রক্রিয়ার চারপাশে অতৃপ্তি আর তৃপ্তির পারস্পরিক আর আপেক্ষিক দ্বন্দের ফলে সামগ্রিক জীবন বোধের গভীরে পৌঁছাতে পারছিনা আমরা। আর এর ফলেই আমরা হারিয়ে ফেলছি বৃহৎ মানব জীবনের প্রেক্ষাপটে ব্যক্তি জীবনের মূল প্রেক্ষিত। ঠিক এই পরিসরে বর্তমানের অনুভবে অতীতের অভিজ্ঞতায় সিঞ্চিত করে সচেতন উপলব্ধি আর ভবিষ্যতের বাস্তব কল্পনার সাহিত্যিক মেল বন্ধনের কাজটি বছর বছর ধরে সুনিপুন ভাবে করে চলেছে কবিতাউৎসব। একুশের আলোক শিখায় যার জন্ম, যে একুশের বলে বলীয়ান হয়ে এগিয়ে চলেছে নিত্যদিনের প্রাত্যহিকতায়। যখন কথা বলি একুশকে নিয়ে আমাদের শিরায় শিরায় অনুরণিত হয় আবেগ। একুশ আমাদের গর্ব, আমাদের অহংকার। একুশ আমাদেরই অস্তিত্বের আধার, এই একুশই এক উত্তরণের পথ, একুশ অসাম্প্রদায়িক একুশ ধর্ম নিরপেক্ষ। একুশের আবেগকে সাথে নিয়ে বহু নামী, অনামি কবির লেখার মঞ্চ উপস্থাপনার মুন্সিয়ানায় হয়ে উঠেছে এক উৎসবের প্রাঙ্গণ। আমরা অনুভব করেছি সোশ্যাল মিডিয়ায় সুনামির মতো আছড়ে পড়া অক্ষরবৃত্তই যে কবিতা নয়। জনপ্রিয়তার মাপকাঠিতে খ্যাতির আলো পড়া শব্দবন্ধই যে কবিতা নয়। কবিতা যে আরও বড়ো কিছু। সাহিত্যচর্চা বা কাব্যচর্চা অবসর বিলাস নয়। জীবনকে ছুঁয়ে ছেনে অনন্ত সময় ও মহাজীবনের পটে গভীর ভাবে অনুভবের বিষয়। যে অনুভব মানবিক উপলব্ধির সীমানায় মানুষকে আরও মানবিক করে তোলে। জীবন সংগ্রামের প্রতিদিনের অলিন্দে যাবতীয় অন্ধকারকে প্রতিহত করতে প্রেরণা দেয়। অনুপ্রাণিত করে নব জীবনের উদ্বোধনে। আর এই প্রাসঙ্গিকতা আমাদের উপলব্ধি করিয়ে দিয়েছে কবিতাউৎসব। আমরা এক নীহারিকার জন্ম দেখলাম, আকাশ জুড়ে তার উদ্ভাসিত আলোক মালায় বিচরণ করলাম আজ তাঁর মূল্যায়ন ও স্মৃতিরোমন্থন বড়ই কষ্টদায়ক। আমার আশা সমস্ত প্রতিকূলতাকে জয় করে কবিতাউৎসব এমন করেই নবাগত কবি ও লেখককে তাঁর উৎসব প্রাঙ্গণে স্থান দেবে।