বৃহস্পতিবার, ২১ জানুয়ারী, ২০২১

ফাল্গুনী মুখোপাধ্যায়

 

বাংলা কবিতার মাসিক সংকলন ‘কবিতাউৎসব’ তার পথচলা থামিয়ে দিল পাঁচ বছর চলার পর। সংকলন সম্পাদক যখন শেষ সংখ্যার ঘোষণা করেছিলেন তখন অনেকের মত আমিও অবাক হয়েছিলাম। প্রশ্ন জেগেছিল কেন এই থেমে যাওয়া? লেখকদের সাড়া পাচ্ছিলেন না বা পাঠক মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে এমন নয়, বরং একটু বেশিই সাড়া পাওয়া যাচ্ছিল। তবুও থেমে যেতে হল। আমরা জানি যে, জীব জগতের প্রতিটি বস্তুর ক্ষেত্রে, জড় বস্তুর ক্ষেত্রেও, তার সৃষ্টির মধ্যেই লুকিয়ে থাকে তার ধ্বংসের বীজ। কিন্তু সাহিত্য ও শিল্প সৃষ্টির ক্ষেত্রে তেমন তো নয়! সাহিত্য ও শিল্প সৃষ্টি চিরস্থায়ী তার মৃত্যু হয় না, ধ্বংস হয় না। অনেক পাঠক ও কবিতা অনুরাগীর মতও আমিও দুঃখ পেয়েছি কবিতাউৎসব বন্ধ হয়ে যাচ্ছে বলে। তবু কোথাও যেন মনে হচ্ছে এই থেমে যাওয়া অনিবার্য ছিল। বাংলা সাহিত্যের আঁতুড় ঘর লিটল ম্যাগাজিন সম্পর্কে বলা হয় তার জন্ম যেন মৃত্যুর জন্যই। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তাদের বন্ধ হওয়া বা থেমে যাওয়ার কারণ আর্থিক। কিন্তু অন্তর্জাল পত্রিকার ক্ষেত্রে আর্থিক কারণ তেনন থাকে না। ওয়েব ব্লগ প্রকাশনার প্রায় সবটাই হয় একক ব্যক্তিউদ্যোগে। মাসের পর মাস, বছরের পর বছর ব্লগ প্রকাশনায় হয়তো ক্লান্তি আসে। আমি জানি না কবিতা উৎসব বন্ধ হওয়ার পেছনে প্রকাশক- সম্পাদকের ক্লান্তিই দায়ি কি না।


দশ বছর ধরে দুটি ওয়েব ব্লগ প্রকাশনার অভিজ্ঞতায় দেখেছি বহু ওয়েব ব্লগ বা ওয়েব পত্রিকার আবির্ভাব হয়েছে আবার কয়েকটি সংখ্যা প্রকাশের পর বন্ধ হয়ে গেছে। আমরা জানতেও পারি না কখন তার পথচলা থেমে গেছে, কেনই বা থেমে গেছে। সে দিক দিয়ে কবিতাউৎসবের থেমে যাওয়াকে অভিনবই বলব। ‘এবার আমি থামছি’ ঘোষণা করে থেমে যাওয়া, অভিনব বৈকি! যেন এটুকুই গন্ত্যব্য ছিল। কোন চাওয়া বা পাওয়ার হিসাব করা অবান্তর। পাওয়া কি কিছুই যায়নি? নিশ্চিতভাবেই পাওয়ার পরিমাণ কম নয়। পাঁচ বছর আগে সংকলনের প্রথম সংখ্যার সম্পাদকীয় প্রতিবেদন লেখার গৌরব অর্জন করেছিলাম আর আজ  শেষ সংখ্যাতেও তার থেমে যাওয়া নিয়ে কিছু শব্দ লিখতে হল।


প্রথম সংখ্যার সেই সম্পাদকীয় প্রতিবেদনে লিখেছিলাম “কবিদের অবাধ বিচরণ ক্ষেত্র রূপে গড়ে তোলার লক্ষ্য নিয়ে ‘কবিতাউৎসব’ সংকলনের প্রকাশ; এই সময়ের কবিদের নিজস্ব পরিচয়ের ভুবন গড়ে উঠবে এই সংকলনটিকে কেন্দ্র করে, পাঠক এঁদের লেখনশৈলী সম্পর্কে সহজেই একাত্ম হবেন, এটাই প্রত্যাশা।  অন্তর্জালে ছড়িয়ে থাকা বাংলা ভাষায় অজস্র পত্রিকার ভীড়ে এটিও ‘আরো একটি’ পত্রিকা বা সংকলন হয়ে থাকবে নাকি নিজস্ব কোন বৈশিষ্ট্যে উজ্বল হয়ে উঠবে তা সময়ই বলবে। আপাতত, সংকলনটির আগামীর পথচলার মধ্য দিয়ে সেই বৈশিষ্ট্য অর্জিত হবে, এই বিশ্বাসটুকুই রাখি"।


আজ কবিতাউৎসবের শেষ সংখ্যায় আমার শেষ প্রতিবেদনে আমার বলতেই হবে সেই প্রত্যাশার কিছুটা পূরণ হয়েছে নিশ্চিতভাবেই। অনেক কবির কাব্যসৃষ্টির ক্ষেত্র উঠেছিল এই সংকলন। অনেক মানুষ কবিতার কাছে এসেছেন, কবিতার সঙ্গে জড়িয়ে গেছেন, কয়েক সহস্র কবিতা অন্তর্জালে ছড়িয়ে গেছে, সেগুলি সংরক্ষিত হয়ে থাকলো। পাঠক সেই কাব্যসম্ভারের কাছে যেতে পারবেন। এই প্রাপ্তিটুকুও কম নয়।