বুধবার, ২১ ডিসেম্বর, ২০১৬

সোনালি পুপু



সোনালি পুপু

যাতায়াত
যাত্রা আমার পথেরদাবী
রাত ফুরোলে দিন জানিয়ে রাখা
যাত্রা আমার একার ঘরে
ঘরেপরে আকুল মনের পাখা
হেমন্ত মন যখন তখন
রাস্তা পথিক উদাসী এক তারা
একলা আসর ভোরাই রেওয়াজ
সুগন্ধ ময় স্নেহরসের ধারা





মশাল
রাস্তারা চলেছে হেঁটে
দশ, কুড়ি, কখনও চল্লিশ
জল,বাস্প উড়ে গিয়ে
শিকড়ে পাহারা অহর্নিশ
দুহাতে আঁকড়ে রাখো
কচি প্রাণ ,ক্যাকটাস ফুল
পাখিমা আতঙ্কে কাঁপে
তবু বুকে আগলায় মুকুল
মায়েরা, মেয়েরা ,চোখে
জল জ্বেলে মশাল বানায়
কামদুনি ,বারাসাত ,
কোনে কোনে খড়গ শানায়
লড়াই সম্মানের জন্যে
সম্মানের দাম কত টাকা?
সিঁদুরের মেকি রং
আজ যেন বড় বেশি ফাঁকা।
চালচিত্র পিছে থাক।
শিব , আহা, উঠুন ছাদেতে
বাচ্চার পোশাক ,বই
মায়ের মনের আহ্লাদেতে
কেনা হোক ইচ্ছাসুখে।
শুধু খাদ্য পানীয়েই সুখ ?
কলেজে ওঠার পয়সা? ছবি আঁকা?
সমাজ বিমুখ।
আমরা চালাই দেশ।
চলে রাজ্য আমাদের হাতে।
তবে কেন অপমানে
মার চোখে জল প্রতি রাতে?
বাল্যেতে পিতার বশ
যৌবনে স্বামীর ,শেষে ছেলে।
কেন স্কুলে ঠেলো রোজ ---
সুশিক্ষিত জোঁক হব বলে?
চটি, জুতো ,ক্লিপ, কাঁটা
ফুচকা দিয়ে কিনবেন স্বামী
কোন পায়ে দাঁড়ায় মেয়ে ?
পা কেটেছে রঙিন গোলামি
মালিক তো দেবেনই খোঁটা
কাটে গরু খোঁটায় জাবর
মর্জি সুখে হাত বোলান
বে-মর্জিতে গালেতে থাপ্পড়।
অর্থশাস্ত্র শেখো মেয়ে
ভাত খাও ঘামে ভেজা পাতে।
মগজে শানাও তীর
কুর্ণিশ ছিনিয়ে নাও হাতে।





দেশ
আমার সমস্ত জুড়ে
পেতে দিলে আলো বোনা জাল
বাইরের আতঙ্ক , অগ্নি, বিভীষিকা ,
অসভ্য মাতাল , কদর্য ইঙ্গিতি চোখ ,
লালা-ঝরা শ্লেষ্মা মাখা গালি
তারও মাঝে দু পা গেড়ে মাটিতে
মশাল শিখা জ্বালি
নিস্পলক দৃষ্টি নিয়ে
এক পা এক পা সামনে রাখি
পিছোয় হাঁ জন্তুর মুখ
একেই বিজয় বলে ?
বল এই কি জিতবার সুখ ?
কচি মাথা গুঁড়ো করে নিশাচর
ক্লীব অশ্বত্থামা
তৃণ রঙা হে কেশব ,
থামাওনি যুদ্ধের দামামা
এ পৃথিবী দেবো কাকে ?
বেশ্যাগ্রস্ত কৈশোর ঝিমোয়
যোনীতে পেতেছে ফাঁদ
মাতৃত্বকে রাস্তায় বিকোয়
অট্ট হাস্যে ছিন্নমস্তা
এ আমার ভারত বর্ষ , দেশ ?
তবে জ্বালো আরও চিতা
রজঃস্বলা ছিন্ন মুক্ত কেশ
যুদ্ধে আমি বাকি আছি
আমি আছি জাগ্রত সংঘাতে
ধর্ষকের মুখোমুখি সংশপ্তক অস্ত্র ধরা হাতে





অন্য নিষাদ
হে নিষাদ, তুমি তীর ছুঁড়বেই জানি
আতংকে কাঁপে বুকের ওম পালক
তার সপ্তকে বেজে ওঠে যত ব্যথা
যত ভয় পাওয়া বিচ্ছেদ নাবালক
তুমি যন্ত্রণা তাই তো তুমিই প্রাণ
প্রান্তিক আমি শিউরে শিউরে বাঁচি
কবির পায়ের কাঁচে কাটা লাল ধারা
রক্তের ছাপ ফেলে মৃত্তিকা ছাঁচে

রং তুলি আর শব্দ ছন্দ ফুল
ফোটাতে বসেছে বিচিত্র মালাকার
উপহাসে তুমি অলখ্যে বাঁকা হাসি
"মা নিষাদ " থামো ভয় দেখিয়ো না আর
কবিও মানুষ দুবেলা অন্ন ক্ষুধা
তৃষ্ণার জল ক্লান্ত দিনের বশ
ঘুমের অবসাদ হাতড়ে খোঁজে আদর
হে নিষাদ, তাকে দিও বাল্মীকি যশ।





কাব্য
একটা ভিড় বাসের পাদানি তে আমার কবিতাকে দেখতে পেলাম।
কন্ঠার হাড় ফুটে উঠেছে ঘোর কৃষ্ণ চামড়ার নীচে থেকে
কোথাও চামড়া আর চওড়া হাড় ছাড়া বাড়তি কিছু দেখা যায়না।
উস্কোখুস্কো চুলগুলো শস্তার ক্লিপ দিয়ে তুলে কায়দার খোঁপা করার চেস্টাটা কার্যকরী হয়নি।
এলো মেলো চুলগুলো ঘাড়ে ঝুলছে।
কাঁখে ততোধিক রোগা কংকাল সার ঘুমন্ত মেয়েটা আঁকড়ে রয়েছে মাকে
আর মা খিমচে ধরে রয়েছে
সামনে দাঁড়ানো পুরুষ টির নোংরা স্যান্ডো গেঞ্জি
লোকটি অবাংগালি।কালিঝুলি মাখা এক গাল দাড়ি।
মাঝবয়সের ক্লান্তি সারা গায়ে।
মেয়েটির পরনে অজস্র শস্তার জরি মাখামাখি টকটকে লাল একটা শাড়ি।
অমন শাড়ি দেখলে আমরা হ্যাক থু বলি
কিন্তু বাস থেকে তাকে নামাচ্ছে তার আদমি যেন সে আর ওই হাড় জিরজিরে বাচ্ছাটা কোহিনুর হিরে মানিক
কি নির্ভরতা সংসারের সব রং মাখিয়ে দিয়েছে ধারালো কাল মুখ খানায়।
আমি অবাক হয়ে দেখলাম বিশ্বসংসারএর সব চেয়ে উজ্জ্বল রোমান্স তেরো  নম্বর বাসের সিঁড়ি দিয়ে নিচে নেমে গেলো।