বুধবার, ২১ ডিসেম্বর, ২০১৬

আল মামুন




আল মামুন
এখনো ভুলিনি তোমায়

সমুদ্র আকাশের অশ্রুজল
সমুদ্র কি আমার চেনা পৃথিবীর শেষ প্রান্ত ও নয়?
যদি এমন হয়
আমি পৃথিবীর শেষ প্রান্তে দাঁড়িয়ে আছি-
উপরে নির্ভার নীলাকাশ নিচে আমি
আরো একবার ভিজতে চাইবো আমি সেই অশ্রুজলে।
হৃদয়ের পরতে পরতে জমে থাকা আমার দু:খগুলি
সেই জলে ধুয়ে ধুয়ে সুখ হতে থাকবে।

পাহাড় পৃথিবীর পেরেক কিংবা ভারসাম্য রক্ষাকারী
পাহাড় কি আমার চেনা ভূ-খন্ডের সর্বোচ্চ স্থান ও নয়?
যদি এমন হয়
আমি পৃথিবীর সর্বোচ্চ চূড়ায় দাঁড়ানো-
অনেক নিচে নীলসাগর আর উপরে দুরন্ত মেঘমালা
মেঘমালাদের দুরন্তপনায় মাথার চুল আমার এলোমেলো!
অবশিষ্ট দু:খগুলো এখানে এসে হারিয়ে যায় অবশেষে
কষ্টেরা হারায় আকাশের নীলে বাতাসে ভেসে ভেসে।

নদীর কাছে গেলে আমার নারীর কথা মনে হয়
দু'জনেই আজন্ম মেঘবতী আর নতজানু! জল থেকে জলে..
আসলেই কি তারা নয়?
যদি এমন হয়
কোনো এক মধ্যরাতে মাঝ নদীতে ভেসে যাচ্ছি আমি জোছনায় ভিজে ভিজে-
চাঁদেরকণায় ছুঁয়ে যাওয়া রুপালী স্রোত
আমার অণুকষ্টগুলিকে নি:শেষ করে টেনে চলে মোহনার পানে ধেয়ে।

আমি যখন আমার সব দু:খ-কষ্টগুলি
সমুদ্র পাহাড় আর নদীর কাছে বিলিয়ে দিয়ে নি:স্ব হয়ে ফিরে আসি
তখন আমার তোমার কথা মনে পড়ে!
ছুটে আসি আমি তোমার কাছে
দু:খ শূণ্য হৃদয় নিয়ে অনুভূতিহীন নির্বাক
তাই বলা ও হয়না আমার মনের কথা তোমাকে
 'জানো কি মেয়ে? অনেক অনেক ভালবাসি তোমায়!'
তুমি তখন আমার পানে চেয়ে
বললে হেসে আরেকটু পাশ ঘেষে
'এত সুখ ভাল লাগছে না আর আমার
পারোতো কষ্টগুলোকে ফিরিয়ে আনো আবার।'

আবারো সেই ক্লান্তিকর পদযাত্রা আমার
নদীর জলে ভেসে ভেসে আবারো পাহাড়চূড়ায় আরোহন
আরো একবার সেই সমুদ্রপাড়ে দাঁড়িয়ে পৃথিবীর শেষ প্রান্তের যুবক হওয়া আমার!
কুহকী প্রহর জুড়ে থাকা শূণ্যতায় ডুবে ডুবে যাই আমি
আকাশের নীল থেকে আমার কষ্টগুলিকে ফিরিয়ে আনতে আরো একবার মেঘবালক হই!

প্রথম দফায় ব্যর্থ হই আমি..

কষ্টগুলি একবার হারালে কেন জানি ফিরতে চায় না আর
ঠিক তোমারই মতন!
অবশেষে হেসে হেসে
দু:খ-কষ্টের পাহাড় নিয়ে আমি ফিরে আসি যখন লোকালয়ে
শুনি তখন আর তুমি নেই আমার
অন্য কারও হাত ধরে নাকি সুখ খুঁজতে বেরিয়েছ!

এমন কেন তুমি!?

এখনো আমি পৃথিবীর শেষ প্রান্তের যুবক হই
এখনো পাহাড়চূড়ার দুরন্ত মেঘমালারা আমার চুলকে এলোমেলো করে যায় পরম মমতায়
মধ্যরাতের নদীর শব্দে ভেসে যায় আমার হৃদয়ের হাহাকার
এখনো প্রতিটি জায়গায় গিয়ে আমি তোমাকেই খুঁজি মেয়ে
চীতকার করে করে বলি, 'সুবর্ণা! এখনো ভালবাসি তোমায়!'

মেয়ে! তুমি কি শুনতে পাও?

উল্লাসমূখর আরো একটি সন্ধ্যা  তোমার সাথে কাটাবো বলেই
এখনো ঘুরে বেড়াই পাহাড় সমুদ্র আর নদীর মাঝে..

সমুদ্র পাহাড় আর নদী
এখনো আমাকে তোমার কথাই মনে করিয়ে দেয় মেয়ে।।‌




একদিন গল্পচ্ছলে
সেই যে তোমার কাছে এলাম প্রথম যেদিন
আমার দৃষ্টির মুগ্ধতায় তিরতির করে কাঁপছিল তোমার চিবুকের কালো তিল!
মনে পড়ে? আচ্ছা বলতো,
এখন কেন একটুও শিহরিত হও না সেই আগের মত
অনুভূতিগুলো কি সব লোপ পেয়ে গেল তোমার?

- তাই কি হয়?
মানুষের জীবন তো অনুভুতিময়।

ইদানিং তোমার গ্রীবা ছুঁয়ে ছুঁয়ে আমার ভালোলাগাগুলো
যতই অধঃপতনে নেমে চলে
কই! একটু ও তো স্পন্দিত হও না তুমি?

- পৃথিবীতে কিছু কিছু সত্য বড় রহস্যঘেরা!

আমি সেই রহস্যের শিখর থেকে পাদদেশে পৌঁছাতে চাই
তোমার হৃদয়ের অবগুন্ঠিত ধোঁয়াটে তোমায়
উন্মোচিত করেই ছাড়ব দেখ আজ!

- তাতে যদি মিলায় সে ধোঁয়াশা সত্য হাওয়ায় হাওয়ায়
 ভিতর-বাহির অন্তর ছাড়িয়ে ধুধু প্রান্তরে বয়ে যায়?

আমি হাওয়ার ভিতরে এক আদিম লিলুয়া বাতাস
তোমার রন্ধ্রে রন্ধ্রে হব উপবিষ্ট!
তোমার ভিতরে আমি আর আমার ভিতরে তুমি
দেখি  কিভাবে ভিতরের তুমি না জেগে থাকো শান্তশিষ্ট।

- কী হবে এখন এসবে?
কত গুরুতর প্রসংগ আছে আরো
আচ্ছা, গহন মনের ভিতরের জন ঘুমে কি জেগে
তুমি কিভাবে জানতে পারো?

ভালোবাসা সখী সবই ভালোবাসা 
যদি চাও, এসো শিখাই তোমায়!

- ভালোবাসা ও কি শেখা যায়?

কেন নয়?
গল্পে গল্পে আরো কাছে এসে নিবিড় হও
আপনাতে তুমি বুঝিবে সখি মুখে তা  বোঝানো দায়।
কাছাকাছি এলে, আরো কাছে পেলে
ভালোবাসা এমনিতে-ই হয়ে যায়।।



নির্মোহ নৈশব্দে
তোমায় ছুঁয়ে দিতে চাইলে অনেক আগেই তা পারতাম আমি
ছুঁতে তো চাইনি
আমি বাতাস হতে চাইলাম না বলেই
আর ছুঁয়ে দেয়া হয়নি।
আমি ভেবেছিলাম বাতাস হবে তুমি নিজেই..

এক জীবনে আর কত কি হওয়া যায় বলো?
আকাশ দেখতাম আর ভাবতাম বসে একা একা..
উপরে নিশ্চল নীলাকাশ নির্মোহ নিশ্চুপ
আমাকে মায়ের আঁচলের  কথাই মনে করিয়ে দিত!

মা ছিলেন আকাশের নীলে নীলে
নিশ্চুপ নৈশব্দ মাঝে নিঝুম নিমগ্ন সুখে
আমি মেঘ হতে চাইলাম না বলেই ছোঁয়া হলনা তাকে!
ইচ্ছে করেই আমি মেঘ হতে চাইতাম না তখন..

ইচ্ছে করলেই অনেককে ছুঁয়ে দেওয়া যায় না!

তোমার হৃদয় ক্যানভাসে আলপনা আঁকা যায় ভাবতাম
কিন্তু তুমি  ক্যানভাস হতে চাইলে না আমার
তাই শিল্পী ও হয়ে উঠা  হলনা আর।

তোমার ক্যানভাসের রঙ ও হতে পারলাম না আমি!

ইচ্ছে করলেই কাউকে ছুঁয়ে দেয়া যায় না
ইচ্ছে হলেই কারো কাছে ও যাওয়া যায় না!
ইচ্ছের ইচ্ছেতে ও আজকাল অনেক কিছুই হয় না।।



নির্জণ রাস্তা, স্ট্রিট ল্যাম্পপোষ্ট আর_আমি

আমি যখন স্ট্রিট ল্যাম্পের আলোয় রাস্তা দিয়ে হাটি
কোনো ছায়া থাকে না আমার
আমি এক ছায়ামানব?

আমি আমার ভিতরের অন্য কারোর আলোয় পথ চলতে চেয়েছি
অন্য কেউ নিজেই ছিল আধারের বাসিন্দা
তাই অব্ধকারেই আলো খুঁজে বেড়ানো!

সেই আধারের মানুষটি জনমভর বন্ধু রইল আমার
আমাকে পূর্ণগ্রাস চাঁদে পরিণত করল প্রতিটি দিন-
অণুক্ষণ ঘন্টা মিনিট..
প্রতিটি দিন-ই এখন আমার অমাবশ্যা!

আমি যখন অন্ধকারে হাটি তখন ও যেমন ছায়া থাকে না আমার
ক্যাম্পাসের রাস্তা ধরে
স্ট্রিট লাম্পের আলোয় হেটে চলেও
নিজের ছায়া খুঁজে পাইনা আমি।

নির্জন রাস্তা স্ট্রিট ল্যাম্পপোষ্ট আর আমি
এক হেমন্তের রাতে একসাথে অনেকক্ষণ...।।



তিনি একজন বিপ্লবী ছিলেন

তিনি একজন বিপ্লবী ছিলেন
বিভিন্ন ধাপে ধাপে জেনে বুঝে
তিনি বিপ্লবী হয়েছিলেন।

তিনি একজন মানুষ ছিলেন
অন্য মানুষদের কথা বলতে গিয়ে
তিনি বিপ্লবী হয়েছিলেন।

যখন বালক ছিলেন, তখন থেকেই
পাওয়া না পাওয়া নিয়ে বড্ড সোচ্চার ছিলেন
তাই অভিভাবকেরা তাকে বিপ্লবী বলে চেনা শুরু করেছিল।

সুকান্তের কবিতার পংক্তির মত
তিনি জন্ম থেকেই ক্ষুব্ধ স্বদেশভূমি দেখেছিলেন
তিনি একজন জন্মগত বিপ্লবী-ই ছিলেন।

তখন সময় এমন ছিল
চোখে দেখা যাবে কিন্তু কিছু বলা যাবে না
তিনি বলতে গিয়েই বিপ্লবী হয়েছিলেন।

এলাকার এক বন্ধুর বোনকে রেপ করেছিল প্রভাবশালীর ছেলে
তিনি প্রতিবাদ করতে চেয়েছিলেন
প্রভাবশালীরা তাকে চরমপন্থী দেখিয়ে থানায় হ্যান্ডওভার করেছিল।

ছাড়া পেয়ে ভুল পথে গিয়েছিলেন
নিষিদ্ধ ঘোষিত পার্টির আরেক গ্রুপের জালে ধরা দিয়েছিলেন
শেষে বাঘের পোষাকে শিয়াল হয়ে বাঘ চরিয়েছিলেন।

তিনি একজন বিপ্লবী ছিলেন
রাষ্ট্র তাকে ক্ষমা করে নাই
যেভাবে ক্ষমা করে নাই চে' গুয়েভারাকে।

একজন আজন্ম বিপ্লবী বুলেটে ঝাঁঝরা হয়েছিলেন
রাষ্ট্রযন্ত্রের সময়োপযোগী সিদ্ধান্তের বলি হয়েছিলেন
তারপর ও তিনি একজন বিপ্লবী ছিলেন।।