হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়
অন্ধকারের দেশে
লোভ তাকে নিয়ে গেল অন্ধকারের দেশে
সবকিছুই চলছিল ঠিকঠাক
আলো, বাতাস, গাছপালা, মানুষজনকে নিয়ে
কিন্তু হঠাৎ সবকিছু কেমন যেন অচেনা হয়ে গেল
সে আর মাটির দিকে তাকাতে পারছিল না
সবথেকে কাছের জনের যা চাওয়া পাওয়া থাকে
যা হৃদয় দিয়ে অনুভব করতে হয়
তার সেটাও আস্তে আস্তে হারিয়ে গেল
আসলে তাকে যেন কে তাড়া করে ফিরছিল
কোনো কিছুই তাকে যেন শান্তি দিচ্ছিল না
সে যেন কোথাও যেতে পারলে বাঁচে
আলোর দেশে তো অনেক কথা, অনেক গান গাওয়া হল
এবার সে যেতে চায় অন্ধকারের দেশে
ঝোড়ো বাতাস তাকে সাবধান করেছিল
কর্দমাক্ত পথ তাকে সাবধান করেছিল
কিন্তু কে শোনে কার কথা
লোভ তাকে নিয়ে গেল অন্ধকারের দেশে
সেখানে সারাদিন পাতা ঝরে
রিক্ত নিঃস্ব গাছেরা ভূতের মতো দাঁড়িয়ে থাকে
কেউ কারও কথা বোঝে না
বুকের মধ্যে জমা হতে থাকে কথার পাহাড়
শুধু কুড়োবে বলে যে দু'টি হাত এই দেশে এসেছিল
অর্থের হিম স্রোতে তারা আজ নিস্তেজ
অন্য আর কিছু না
মুক্ত বাতাসে সে আজ মানুষের হাত ধরতে চায় ।
*********************
স্বপ্ন নিয়ে
একটানা হাঁটার ক্লান্তিতে পা কিন্তু থেমে যায় নি
অামি হাঁটছি, এখনও হেঁটে চলেছি
চোখে নানা রঙের স্বপ্নের ভিড়
আসলে স্বপ্নের কড়া নাড়া শুনে
আমি দরজা খুলতে চলেছি
সেরকমভাবে ভালোবাসাই তো হলো না
তাই ভালোবাসা আমার চুলে এসে বিলি কেটে যাক
ভবিষ্যত সন্তানের পায়ের তলায় জমা হোক
কিছু শক্ত মাটি ----
এসব দেখার জন্যই তো হাঁটা
প্রতিক্ষারত মনের মানুষটির দুটি চোখ
আগামীকাল ঠিকঠাক বেঁচে ওঠার জন্য
একটা নতুন সূর্যোদয় দেখব বলেই তো
আমার এই হাঁটা ।
আর সত্যিই তো
দরজার বাইরে কাউকে দেখতে না পেলে
দরজা খুলতে যাবার কোনো মানে হয় ?
*******************
ভালো খারাপ
কোনটা ভালো আর কোনটা খারাপ
কিছুতেই বুঝে উঠতে পারি না
কোনো কোনো সময় ভালোটা বুঝলেও
সেটা ঠিক কতোটা ভাল অর্থাৎ
ভালোটা সত্যিই ভালো না লোকদেখানি
তা বুঝতে পারা যেন আরও কঠিন
খারাপের ক্ষেত্রেও সেই একই সমস্যা হয় আমার
খারাপ ভাবতে গিয়ে আমার কেবলই মনে হয়
এটা আমার ভাবার ভুল নয়তো
অথবা মানুষটা কী সত্যিই খারাপ হতে চেয়েছিল
অথবা মানুষটাকে কেউ খারাপ করে না দিলেও
এর পিছনে কোনো অবস্থা বা ঘটনার কী হাত ছিল ?
ভালো খারাপের নামতা ঠিক ঠিকভাবে
মুখস্থ না হওয়ায় একটা সুবিধা আমার হয়েছে
সবাইকেই আমি ভালো বলে ধরে নিই
আর তাতে খারাপের মধ্যে হঠাৎই
ভালো কিছুর সন্ধান পেয়ে যাই
তাই খারাপকে আমরা যতটা খারাপ ভাবি
তারা ঠিক ততটা খারাপ নয় ।
*****************
প্রতিদিন
তোমাকে রোজই দেখি
প্রতিদিনের রোদের মতো
তবুও কী রহস্যে
আমি পুড়ে যাই
নিমজ্জিত হয়ে কখনও
জীবনের গান শুনি
*********************
বিশ্রামকক্ষ
আমার সব ভার তোমাকে দিই
তোমার রোদের শরীরে তা যেন
এক একটা বিশ্রামকক্ষ
এসব কোনো দাগ নয়
শিল্পীর ক্যানভাসে রঙের প্রলেপ ।
*************