সুকুমার চৌধুরী
প্রিয়জনবাবু
যারা আমার প্রিয়জন তাঁরা আমাকে
প্রিয়জন নাও ভাবতে পারেন
কেন না প্রিয়জন হবার কোন যোগ্যতায়
আমার নেই
আর যেহেতু তাঁরা প্রিয়জন
সেহেতু তাঁরা অনেক বেশী সম্পন্ন ও গুণী
তাঁদের ইমেজ
খানিকটা দেবতার মতো প্রিয়তর
আর মাঝে মাঝে কিছু
দুর্গম প্রিয় জায়গায় আমার প্রিয়মানুষেরা আসেন
তাঁদের পরনে প্রিয় পোশাকটোশাক
মুখে প্রিয় অভিব্যক্তি প্রিয় সিগারেট
আমিও কখনো সখনো ভুল কোরে
প্রিয় জায়গায় এসে পড়ি
আর প্রিয়জন দাদাদের সাথে দ্যাখা হোলে বলি ;
এই যে প্রিয়জনবাবু...... কেমন আছেন ...
ভালো তো...... আমার চিঠি......
আর প্রিয়জনবাবু প্রিয় হাসি হেসে বলেন ;
মাপ কোরবেন...... ইয়ে আপনাকে ঠিক ...
কোথায় বলুন তো......
জীবন
ঞ্জীবন চাঁদিই বোঝে চাঁদ ততো অনিবার্য নয়
তবু আমি আকাশের দিকে বাড়িয়ে দিলাম
আমার শীর্ণ দু হাত
আমার ভাতের থালা কেড়ে নিয়ে গেল মহাজন
আর প্রতিবেশী জীবন এসে দিয়ে গেল
ছোলামুড়ি দীপঙ্কর জ্ঞান
আমি পেটে গামছা বেঁধে চেঁচিয়ে বললাম
হে জীবন তুমি সুন্দর ও শিল্পময় হোয়ে ওঠো
আমাদের সম্মিলিত ভালবাসায়
লটারির টিকিট কিনতে কিনতে বুড়ো হোয়ে গেলেন বাবা
আমি তার অভিমানী প্রত্যাশায় লিখে রাখলাম
সত্য শিব সুন্দরের গান
আমার পোশাক ছিঁড়ে নিয়ে গেল শাইলক
আর কোথার থেকে একদিন জীবন এসে বলল
তুমি কি পাগল দিগম্বরের মতো দাঁড়িয়ে রয়েছো
চোদ্দোপুরুষের ভিটেয়
আমি বললাম শুদ্ধতার দিকে হেঁটে যাক
আমাদের ছদ্মজীবন
ঢিল হাতে আমায় তাড়া কোরলো জীবন
আর আমি দৌড়তে লাগলাম সুন্দর ও শিল্পময়
জীবনের ওপর দিয়ে
পিঠের ওপর দমাদ্দম পড়তে লাগলো ঢিল
রক্তে ভিজে গেল আমার জন্মভুমি
আমাদের সত্য শিব জীবনের গান
আর এ ভাবেই পিছু হটতে হটতে পিছু হটতে হটতে
আমি এক্ সময় বলে উঠলাম
রক্তের মতো উষ্ণ আর পরিশ্রুত হোয়ে উঠুক
আমাদের বেঁচে থাকা
শরীর চুঁইয়ে পড়তে লাগলো রক্তের ধারা
আর লুটিয়ে পড়ার আগে শেষবারের মতো
আমি এক সময় আকাশের দিকে ছুঁড়ে দিলাম
আমার ক্ষুব্ধ দু হাত
অবোধ
যেন শীর্ণ পেরেকের আগা
শুধু তার সহিষ্ণু মাথাটি
কি রকম ভেসে থাকে দেখি
আরও দেখি তার অবোধ অন্তিমখানি
অদৃশ্য হওয়ার আগে
কেমন বহন করে ছেঁড়া জামা
সখ্যতা ও অপমানগুলি.........।।
মায়ের মৃত্যুর দিনে
মায়ের মৃত্যুর দিনে মানুষেরা কি করে 1
ইন্ডিয়া-পাকিস্তান আজ মোহালিতে,
অফিসে হাফ ডে । বাড়ি ফিরতে ফিরতে
অনেক বছর আগে মরে যাওয়া মায়ের মুখটা
মনে পড়ে । ভাবি মা কোনদিন ক্রিকেট ম্যাচ
দেখে নি । মায়ের কোন হাফ ডে দেখি নি ।
রান্নাঘরের ধোঁয়ায় রেকর্ডবিহীন একটা হাফ
সেঞ্চুরী সেরে মা চলে গেছে সেই কবে ।
ছবি ছিলো না বলে তিনটে ছবি এঁকেছিলাম ।
ভাইবোন আত্মীয়স্বজনের বাড়ি ঘুরে দেখেছি
সে সব ছবিতে এখন অন্ধকার, শুকনো মালা,
ধুলোর আস্তরণ ।
মা আমার মাথায় হাত রাখে । ভালো থাকিস
সুকু । আমার কথা অতো ভাবিস নে আর ।
আমি ঠিক আছি ।
আমার লাগে না
ক্লান্ত লাগে । এত কাজ । এত যোগাযোগ ।
চব্বিশ ঘন্টাও এত কম পড়ে যায় ।
বন্ধুরা বিরক্ত হয় । বস ও ব্যসন ভুলে যাই ।
সংসারে বিবিধ অভাব জমে ওঠে ।
আর আমি আরো দুর নির্বাসনে যাওয়ার আগে
নির্লিপ্ত সেই বইটি লেখার কথা ভাবি ।
শুধুই শিল্পের সৌজন্যে আমি যার
নাম রেখেছি : আমার লাগে না