বুধবার, ২১ ডিসেম্বর, ২০১৬

মোকসেদুল ইসলাম



মোকসেদুল ইসলাম


উড়ে যাওয়া পাখি
.........................................
আরও বেশিদিন বাঁচার আশায় যে পাখিটি খাঁচা ছেড়ে উড়ে গেল
তারও ছিল রোদ জ্বলা দুপুরের একটা বয়স্ক ডানা
ঈশ্বরের ঠিকানায় উড়ে যাবে বলে মনে জেগেছিল কচি ইচ্ছা।
জন্মেই যে উড়তে শিখেছিল ছায়া চোখ ফাঁকি দিয়ে
মাটির ভালোবাসা ফেলে গেলে তাঁর আর কোন উৎসবের প্রয়োজন নেই।

সমস্ত মায়া ত্যাগ করে পাখিটি উড়ে গেলেও
আমরা তার ফেলে যাওয়া পাখা নিয়ে সাজাই মন মন্দির।
হয়তো উড়ে যাওয়া পাখিটি জানে না,
বেদনার বালুচরে একলা একা বসে কেউ কেউ তারে মনে করে।





স্মৃতি
....................
চরম শূন্যতার সময়ে চাঁদের আলো কোন মুখ্য বিষয় নয়
কুয়াশার প্রেমিকা জানে অসীম অন্ধকারে প্রতীক্ষার শরীরে
কিভাবে আঁকতে হয় সযন্তে পুষে রাখা বেদনার মুখাবয়ব।
পথের বাঁক ছেড়ে হাটছিলাম সময়ের তীরবিদ্ধ চোখে
দেখছিলাম পিপাসার্ত ঠোঁটে আলোর স্রোতধারা
দৃষ্টিভ্রম নয়, পৃথিবী উদ্বাস্তু হলে শীতের রাতে ঝড়ে পড়ে
মেঘ বৃক্ষের সব দুঃখ বিলাস।

পেন্সিলে আঁকা সুখ মুছে গেলে বুক জুড়ে বয় বৈরি বাতাস
একপশলা বৃষ্টিতে ভিজে গেয়ে উঠি রবী ঠাকুরের গান
মানুষের জীবন কতনা বিচিত্র,
বৃক্ষশরীর নিয়ে দাড়িয়ে দেখে মানুষেরই বর্বরতা।
এসব সত্যের অপলাপ, মাছের পেটের মত সাদা
ছিল যাদের মন তারা নাকি এখন দুর্গন্ধ ছড়িয়ে
জরাজীর্ণ দেওয়ালের গা ঘেঁষে দাড়িয়ে থাকে সুখের আশায়।

ঘাসপাতা মন যাদের তারা আয়না জুড়ে নিজের ছবিটাই দেখে
আশ্বিনের রাতে মৃতরাও যে ডাকতে পারে সমুদ্রের ডাক
তা না জেনে ভূমিহীন এসব মানুষ শুধু স্মৃতির ঝিনুক খুঁজে।





প্রিয় বাংলাদেশ
......................
তোমাকে ভুলে যাওয়া অতোটা সহজ নয় প্রিয় বাংলাদেশ
যতো সহজে ভুলে যাওয়া যায় শৈশব স্মৃতি
কষ্ট দুপুরের একলা খেলা।
ভুলে থাকা যায় প্রেমিকার ছোঁয়া, আদর মাখা বুলি
ভুলতে পারিনা মায়ের কান্না, সাইরেনের তীব্র আওয়াজ।

তোমাকে ভুলে যাওয়া অতোটা সহজ নয় প্রিয় বাংলাদেশ
শান্ত-স্নিগ্ধ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি তুমি
শহীদের রক্ত স্রোতের বিনিময়ে পাওয়া হয়েছে তোমায়
তিরিশ লক্ষ মা-বোনের আর্তনাদে ভারি হওয়া আকাশে
আজ পতপত করে উড়ে লালসবুজের পতাকা।

তোমাকে ভুলে যাওয়া অতোটা সহজ নয় প্রিয় বাংলাদেশ
সবুজ মৃত্তিকা লালনের সুরে মিশে আছো তুমি একাকার হয়ে
নীল সমুদ্র আর পাহাড়ের গায়ে বাংলার রূপ ঝলসে ওঠে
জীবন দিয়ে যারা এনেছে সবুজ, রক্তে রাঙা পলাশ
তাদের তরে নতজানু হই, ভক্তি ভরে জানাই সালাম।





রাত নামলে মানুষও পাল্টে যায়
..........................................
রোদ্দুরের গন্ধ শূন্যে মুছে গেলে যে রাত নেমে আসে
সেতো মৃত্যু পথের ন্যায় শ্মশানের নীরবতা
কিশোরী সন্ধ্যায় যারা গেয়ে ওঠে জীবনের গান
তাদের জন্যে শুদ্ধি অভিযান নিষ্প্রয়োজন।

শব্দহীন সব অতীত পুড়ে যাচ্ছে বার্ধ্যকের আগুনে
সাদা পেয়ালায় ঠোঁট রেখে আমরা মেতে উঠি ঝড়ের আড্ডায়।
আততায়ী কষ্ট এসে যখন হানা দেয় আমার সৌখিন ঘরে
চাঁদের দীর্ঘশ্বাসে তখন ঝরে পড়ে সব ধ্রুপদী সুর।

পোড়া ফসল বুকে নিয়ে এখন নির্ঘুম রাত কাটে আমারও
বেশিকিছু নয় একফোটা জল চেয়েছিলাম তৃষ্ণার দিনে
দুর্দান্ত দুপুরে সূর্য হারানোর অজুহাতে ফিরিয়ে দিয়েছ আমায়
রাত নামলেই বুঝি সব মানুষ অন্যরকম হয়ে যায়।





ঈশ্বরের তরে নতজানু হই
........................................
কথা পাল্টানোর সহজ যুক্তি দিয়ে ভাবো আমরা বদলে যাচ্ছি
গঙ্গা স্নানে শুদ্ধ হয়ে ঈশ্বর বন্দনায় নতুন দিনের শুরু হলেও
উত্তাল আঁধারের ঝড়ে পরিবর্তীত হয় আমার দাদার জমিনের ফসল।

এইতো দিন যাচ্ছে কেটে, অভিশাপের জল মাথায় নিয়ে
তামাদি ভুলের অবসানে আগামী সূর্যোদয়ের আশায় পথ চেয়ে রই
বলার মতো কিছুই নেই, নিষিদ্ধ ভায়োলিনের সুরে
প্রাপ্তিরর বাসনায় বাড়ছে শুধুই পথের দীর্ঘশ্বাস
তবু সব অভিনয় পিছনে ফেলে রাখি।

বেদনার যেসব স্মৃতি আমায় তাড়িয়ে বেড়ায় নিত্য
সেসব নীল কষ্টকে বর্ণিল সাজে সাজিয়ে
আমি অধম নতজানু হই ঈশ্বরের তরে।