মুস্তফা কামরুল আখতার
সবাক হতো যদি
.........................
বিনে-পয়সায় সিগরেট ফুঁকতে দিয়ে তপুকে পটিয়ে
তোমার বাড়ির পরই এক বাড়ির চিলেকোঠার ছাদে।
যেন, সমাসীন সিংহাসনে এক
দোর্দণ্ডপ্রতাপ রাজা।
দূর থেকেই তোমার মৃদুহাসি,
লাফিয়ে উঠত হাজার রংধনু, লক্ষ গোলাপ!
ওই পাড়ারই উঠতি যুবক, লাল রক্তবর্ণ চোখে
দখল নিতে চাইত, চর দখলের মতো,
বলতো, 'মেয়েটি আমার' !
আলতো করে এক সুখী চর এসে জেগে উঠত বুকে,
জানতাম, এই চরেই বাসা আমার।
ঘর-বাঁধা মন বেঁধেই রাখে আশার প্রাসাদ ।
এই চর আর কারো হতে পারে না ।
বসতি গেড়েছি, প্রতিটি বিন্দু মন জড়ো করে সব দিই।
তারপরেই ওড়ে নিশান, যেন চন্দ্রজয়ের অভিযান শেষ !
ওয়ালেটের ময়লাটে নোটগুলো গুণে গুণে,
কফি হাউস আর রেস্টুরেন্টে জমাতাম ফ্রেম, স্মৃতি খুঁচিয়ে বার্গার।
আর,অক্ষমতায় মৃদু উচ্চারণ, 'আর একটু ফ্রেঞ্চ ফ্রাই, প্লিজ'!
খিদেভরা দুপুরে ফ্রেঞ্চ ফ্রাই আর তুমি,
এবং তোবড়ানো সিগরেটে সময় ছিল এগিয়ে যাবার ।
প্রথম দেখা হওয়া, প্রথম হ্যাঁ বলা, আরও কত কী-বলা দিবস
একখানা সাদামাটা ইমিটেশন, কাচের চুড়ি
কিংবা লোক্যাল মার্কেটের শার্ট কিনে কী
বিজয়োল্লাস !
সাদাকালো চরে যেন শুধুই উড়ত রঙিন ঘুড়ি।
আশার বসতি আর চরে একদিন ব্যাধও আসে। শিকার কাঁদে,
তবুও জিতে গিয়ে শিরোপা ঝোলায়। হত্যাযজ্ঞেও
বীরের পদক,
চকচকে চোখে বিজয়ের উল্লাস।
আধখানা বার্গার,দু'এক টুকরো ফ্রেঞ্চ ফ্রাই, ইমিটেশনের গল্প...
আবছা হাসির গল্প এখন। কিনে নাও চর, ওড়াও নিশান!
যদি সবাক হতো, আশার বসতি আর চরের জল ও মাটি!
মন-ভর পৃষ্ঠা
...................
লেখো-বলো যাই করো কষ্ট গা-মেখে
উদ্ভট এই-সব বলো তো কে দেখে!
নেই দেশ, জাতি-কাল, নেই কোনো দর্শন
মাথা ঘোরে কী যে লেখে, বিমূর্ত ঝনঝন!
কতো তার কথাতেই
মনে হয় মানে নেই
নেই কোনো লক্ষ্য -- নেই মতাদর্শ
কে শোনে !
লিখে যাক ও ব্যাটা ভরে গোটা-বর্ষ !
ওরা দেখে, লিখেছে সে তার কষ্ট,
দুনিয়ার আর কিছু দেখেনি পষ্ট।
আর বুঝি কিছু নেই,
হারানোর জো নেই।
সে লেখে, ভরে তোলে মন-ভর পৃষ্ঠা
ধুত্তোর, কে পড়ে! বেদনার শিস-টা!
হিসহিস করে ফণা, পিশাচের বিষটা
ভ্রষ্টরা হাত মেলা, পিশাচের হাত ধর,
নষ্টেরা খেলে যায় ভেঙে যায় সুখীঘর।
ফেরাও একবিন্দু আশ্রয়
.....................................
সবটুকু বৃষ্টি নাও, মেঘ করে দাও, জমিয়ে-রাখা সুখের
সবটুকুই নাও। আশ্বাসটুকু নাও, শেষ আলোটুকু নাও,
নিঃস্বতর করে দিয়ে এগোবার ইচ্ছেটুকুও নাও !
পারো না নিতে শেষ মুদ্রাটিও, ঝোলাঝুলিসমেত।
অনুনয়ের সবটুকুই আজ -- নিয়ো না ! ফিরিয়ে দাও।
ব্রহ্মাণ্ড ছাপিয়ে অশ্রু, শতাব্দীর চোখে সব জল।
সব জল। যেন জলই সব!
দেখিনি, চলে যাওয়া তোমার, নোঙরছেঁড়া নৌকোর পাল।
বাতাস জানিয়ে দেয় -- বৈঠা-ছইহীন আশাগুলো
তড়পায় !
তবুও ভালোবাসা জন্মায়, প্রখরতায়।
আমার সব সুর, তারুণ্যের ঐশ্বর্য,
বিহ্বল শহরে মেট্রোপলিস আয়োজনে বাসের নাগরিক
সুখ,
সেলফোনে ছুটে আসা প্রিয়মুখ ভালোবাসা,
ব্যস্ত নগর জুড়ে বিন্দু-বিন্দু আড্ডা আর চায়ের
চুমুকে,
বিপণীর বিপণনে অগণন-পণ্যভাসা সিঁড়িতে সুখ,
সব-ই দিয়ে দিতে চাই।
দুপুর-বিকেলে, সন্ধ্যে-রাতে খুঁজে-পাওয়া একরত্তি সুখ,
আকাশ-চন্দ্র-তারায় তোমাকে দেখার সুখ, ...
তোমাকে ভালোবেসেও যে সুখ, সবই দিয়ে দিতে চাই।
আমার সব কবিতাগুলো, সব সুর, আঁকা-ছবি সব --
শব্দেরা আর না-ই বা ফুটুক, ঠোঁটে আমার।
সবই তোমার ! তবুও...
ফিরিয়ে দাও, ফেরাও তাকে, ফিরিয়ে দাও একবিন্দু আশ্রয়।
একটি রাবারের পৃথিবী
...................................
মেনে নিলেই তো চুকে যায়, আমি তোর কেউ নই।
অস্ফুটে যখন এই ধ্বনিটি উচ্চারিত হয়, তখনই
প্রাচীন ঘড়িটিতে
পেন্ডুলাম
সশব্দ সমাপ্তি শোনায়।
তুই দৌড়েছিলি ট্র্যা।কের ওপর, শুরুর সিগন্যালে
এমন দৌড়ই আসলে আমাদেরকে দেখিয়ে দেয়
সচল পৃথিবী, ঘোরে নিজ অক্ষে
আমিও আসলে চাটগাঁর বুক থেকে ছোট্ট এক কয়েন
দিয়ে একটা বড়ো গ্লোব কিনতে চেয়েছিলাম, দোকানির
রক্তচক্ষু দেখিনি।
আমি এখন জেনে গেছি, একটা রাবারের পৃথিবীও
চড়াদাম দিয়েই পেতে হয়।
এমনিতেই কিছু চাইনে
..................................
এমনিতেই কিছু চাইনে, কিছু না ...
চাইনে, উদ্বিগ্ন রাতজাগা জবা-রঙ
চোখে
আমার কথা ভেবে তোমার কষ্ট হোক ...
তবুও, যখন দেখি,
তোমার আলাদা ভুবন নিয়েই
পদযুগল কারুকাজ করে বৈশাখী নৃত্যে --
তোমার সময়গুলো আমাকে আর খোঁজে না
তখন সত্যিই মনে হয়,
শুধুই আমিময় হতে যদি !
তখন তোমায় স্বৈরাচার বলি,
বলি, মাটি ও স্বর্ণের ফারাক বোঝো
না ?
পাথুরে-কন্যা, আমি তোমায় হতভাগী বলি,
আমার নির্জলা নির্জন ভালোবাসার হাত ধরোনি
বলে -- শোনোনি, তাও থাক।
আমার চাওয়া নেই তেমন, চাইনে ...
তবুও, তোমার আজকের দিনটায় আমি নেই,
ভাবতে পারি ?
যদি, বিদ্রুপে নেচে ওঠার কথা বলো
...
বলি,
‘থাক, লীলাবতী, তোমার কষ্ট হবে !'