এ মাসের অতিথি কবি হাসিদা মুনের সাথে একান্ত আলাপচারিতায়
কবিতাউৎসব
কবিতাউৎসব: বাংলাসাহিত্যের
উদ্ভব ও বিকাশের ধারায় ৪৭ –এর দেশভাগ বাংলাদেশের
সাহিত্যের অগ্রগতিতে কতটা গুরুত্বপূর্ণ বলে আপনার মনে হয়? অনেকেই বলে থাকেন অখণ্ড বাংলার হিন্দুসমাজের নিরঙ্কুশ
প্রভাব থেকে মুক্তি দিয়ে দেশভাগ বাংলাদেশের সাহিত্যে আশীর্বাদস্বরূপ এক যুগান্তর
এনে দিয়েছে! এই বিষয়ে একটু বিস্তারিত ভাবেই আপনার কাছ থেকে জনতে চাইছি!
হাসিদা: ১৯৪৭ সালে ভারত বিভাগের ফলে পরিবর্তিত সমাজ ও জীবন-নতুন ভাবনায়
উজ্জীবিত হয়ে ওঠে। হিন্দু-মুসলমান উভয় সম্প্রদায়ের প্রাচীন ও
নবীন সাহিত্যিকদের মধ্যে জীবন ও জগৎ এবং সমাজ ও পরিবেশের নব মূল্যায়নের প্রয়াস
লক্ষ্য করা যায়। সাহিত্যিকগণ নতুন
রাষ্ট্রের সৃষ্টি, তার নতুন সমাজব্যবস্থা এবং জীবনের নবচেতনায় উদ্দীপিত
হন। এর ফলে বাংলা সাহিত্যও ভিন্ন ধারায়
প্রবাহিত হয়। দেশবিভাগের পরে ইসলামের প্রাথমিক যুগের ইতিহাসকে অবলম্বন করে
রোম্যান্টিক ভাবধারা-সম্পন্ন কবিতা রচনার প্রবণতা প্রকট হয়ে ওঠে। এর পাশাপাশি
পাকিস্তানি জাতীয়তাবাদ নিয়ে রচিত কবিতাও বিশেষ স্থান দখল করে। দেশভাগের অব্যবহিত
পরে শিক্ষিত মধ্যবিত্ত ও উচ্চমধ্যবিত্ত শ্রেণিকে আশ্রয় করে আরেকটি ধারা গড়ে ওঠে। এ ধারার কবিরা কবিতায়
নিয়ে আসেন একটি অসাম্প্রদায়িক দৃষ্টিভঙ্গি। তাঁরা দেশজ উত্তরাধিকারকে তাঁদের
কবিতার প্রধান উপাদান করে তোলেন; তাঁরা বিশ্বাস করতে শুরু করেন
বাংলা সাহিত্যের প্রবহমান ঐতিহ্যকে। ফলে কবিতা-রচনায় ও জীবনদর্শনে তাঁরা হয়ে
ওঠেন মানবতাবাদী। তাঁদের মুখপত্র হিসেবে ১৯৫০ সালে আশরাফ সিদ্দিকী ও আবদুর রশীদ
খানের সম্পাদনায় প্রকাশিত হয় নতুন কবিতা। সম্পাদকদ্বয় ছাড়াও শামসুর রাহমান, হাসান
হাফিজুর রহমান,আলাউদ্দিন আল আজাদ, বোরহানউদ্দীন খান
জাহাঙ্গীর প্রমুখ। প্রবন্ধ বিভাগোত্তরকালে রচিত প্রবন্ধগুলির অধিকাংশই
সাহিত্য ও সংস্কৃতিবিষয়ক। রচয়িতাদের অনেকেই দেশবিভাগের আগে থেকেই এ ক্ষেত্রে
খ্যাতিমান ছিলেন; মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্ ও মুহম্মদ আবদুল হাই-এর নাম এ
প্রসঙ্গে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
১৯৪৭ সালে দেশবিভাগের পর পূর্ববাংলার রাজনীতি এবং
রাজনীতিনির্ভর জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিষয়গুলি বাঙালিদের চিন্তাজগতে যেমন প্রভাব
বিস্তার করে। অনুরূপ ভাবেই প্রভাব বিস্তার
করে সৃজনশীল বাংলা সাহিত্যেও। বাংলাদেশের
উপন্যাসে সমকালীন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক রাজনীতির প্রভাবও বেশ লক্ষ্য
করা যায়। সমকালীন রাজনীতির গতিপ্রকৃতি এবং জাতীয়তাবাদী মুক্তিসংগ্রাম
যে-সকল উপন্যাসে বস্ত্তনিষ্ঠভাবে ধরা পড়েছে, সেগুলির মধ্যে রয়েছে - শহীদুল্লাহ
কায়সারের সংসপ্তক (১৯৬৫), আলাউদ্দিন আল আজাদের ক্ষুধা ও আশা (১৯৬৪), সরদার
জয়েনউদ্দীনের অনেক সূর্যের আশা (১৯৬৭), জহির রায়হানের আরেক ফাল্গুন
(১৯৬৯), জহিরুল
ইসলামের অগ্নিসাক্ষী (১৯৬৯), সত্যেন সেনের উত্তরণ (১৯৭০) এবং
আনোয়ার পাশার (১৯২৮-১৯৭১) নীড়সন্ধানী (১৯৬৮)।
মোটকথা, পাক-ভারত যুদ্ধের সময় কবিরা
স্বদেশপ্রেম,জাতীয় গৌরব ও সাম্প্রদায়িক বৈরিভাবকে কবিতার বিষয়
করে তুলেছিলেন। তবে যুদ্ধ শেষ হয়ে গেলে এ ধরনের
রচনার প্রয়াস ক্রমশ কমতে থাকে। এ সময়ে
জনপ্রিয় হয়ে ওঠে - মানবতাবাদে আস্থাশীল কাব্য ও সাহিত্য রচনার ধারা। প্রেম, প্রকৃতি
ও মানুষকে নিয়ে সরল রোম্যান্টিক ভাবোচ্ছ্বাস-সম্পন্নতাই হয়ে ওঠে ওই সময়ের
প্রধান কাব্যধারা। ওই সময়টাতে বাংলা
সাহিত্যে সমকালীন জীবনের গ্লানি, ব্যর্থতা ও হতাশাকে ধারণ করে
বুর্জোয়া মানবতাবাদের সমস্যা,দ্বন্দ্ব ও অবক্ষয়কে তুলে ধরার
ইচ্ছা প্রকাশ করেছে। এ সময়ের
বাংলার সাহিত্যের আকাশ
ক্রমশ সমষ্টির ভাবনায় উচ্চকিত
হয়ে ওঠে। নির্দিষ্ট কোনো রাজনীতিক বা সামাজিক আদর্শে বিশ্বাসী না হয়েও তাঁরা পূর্ববাংলার মানুষের সমষ্টিগত বোধ ও আবেগকে
ভাষা দেওয়ার চেষ্টা করেন।
সেই হিসাবে
এক যুগান্তর বলা যায়
বৈকি ............
কবিতাউৎসব: ইতিহাসের কালপরিক্রমণের ধারায় বার বার বিদেশী শক্তির
পদানত হওয়ার প্রভাবেই আধুনিক বাংলাসাহিত্য অধিকতর পুষ্ট হয়ে উঠেছে বলেই অনেকে মনে
করেন। এই বিষয়টি সম্বন্ধে আপনার অভিমত জানতে চাই! যেভাবে প্রথমে
মধ্যপ্রাচ্য আরব ও পরে ইংরেজী সাহিত্যের প্রভাব পড়েছে আমাদের বাংলাসাহিত্যে।
হাসিদা: গ্রীক, জার্মানী, ফরাসী, ইংরেজী
সহ পৃথিবীর সকল ভাষা ও সাহিত্যের মতই বাংলা ভাষা ও সাহিত্যেরও যুগে যুগে
ক্রমবিকাশের মাধ্যমে পরিবর্তন ও সমৃদ্ধ হয়েছে। বর্তমান মানুষের বহু ধারা উপধারা
পার করে আর্যপূর্ব বাংলায় আগত ভেড্ডিড ও দ্রাবিড়,মঙ্গোলীয়, আলপাইন
উপাদান সংকরায়িত বাঙ্গালির সাহিত্য জগত।
খ্রিষ্টীয় তের শতকের শুরুতে ইসলাম ধর্মাবলম্বী তুর্কিগণ পশ্চিমবঙ্গ অধিকার
করে। সমস্ত বঙ্গদেশে মুসলমান অধিকার বিস্তৃত হতে প্রায় একশো বছর সময় লাগে। খুব
সম্ভবত গৌড়ের পাঠান সুলতানগণ অন্তত পরবর্তীকালে বঙ্গভাষী ছিলেন,এবং
তাঁরা বাংলা সাহিত্যের উৎসাহদাতা ও পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। সম্রাট আকবর- এর কালে বাংলা
দেশ মোগল সাম্রাজ্যভুক্ত হয়। এই সময়ে রাজসরকারের ভাষা ছিল মধ্যপ্রাচ্য আরবের সমৃদ্ধ ভাষা
ফার্সি। এই ফার্সি ভাষার প্রভাব লর্ড উইলিয়াম বেনটিঙ্ক- এর আমল পর্যন্ত
ছিলো। ১৮৩৬ খ্রিষ্টাব্দে যখন ফারসি –এর পরিবর্তে ইংরেজি প্রধান রাজভাষা
ও বাংলা দ্বিতীয় রাজভাষা হিসেবে গৃহীত হয়, তখন ফারসি প্রভাবের অবসান হয়।
এই দীর্ঘ ছয় শত বছরের মুসলমান প্রভাবের ফলে বাংলা
ভাষায় দুই হাজারের অধিক ফার্সি শব্দ এবং
ফারসির মাধ্যমে আরবি এবং কিছু তুর্কি শব্দ প্রবেশ করেছে। এমনকি বাংলা ব্যাকরণেও
ফারসি প্রভাব দেখা যায়। প্রাচীন ও মধ্য
যুগীয় বাংলা সাহিত্য শুধু পদ্যেই রচিত হতো। তখন সাহিত্যের বিষয়বস্ত্ত ছিল
সীমাবদ্ধ এবং তাতে বাঙালি জীবনের প্রতিফলন ঘটত কম। প্রাচীন কবিদের জীবনী সম্পর্কেও
নির্ভরযোগ্য তথ্যের অভাব ছিল। সাহিত্যচর্চা হতো প্রধানত রাজপৃষ্ঠপোষকতায়। আঠারো
শতক পর্যন্ত বাংলা সাহিত্যের মূল লক্ষণগুলি হলো অনুকরণপ্রিয়তা, বৈচিত্র্যহীনতা, ধর্মমত প্রচারের প্রবণতা। সেইসাথে
কিছু প্রণয়কাব্য ও লোকগাথা এবং
সেখানে হূদয়াবেগ ও ভাবোচ্ছ্বাসের আধিক্য।
উনিশ শতক হচ্ছে বাঙালির নবজাগরণের যুগ। এ সময়
বাঙালি-প্রতিভার সর্বতোমুখী বিকাশ ঘটে এবং জাতি হিসেবে বাঙালির অভ্যুদয়ের সর্ববিধ
প্রচেষ্টারও সূত্রপাত ঘটে। এ যুগেই একটি শক্তিশালী সাহিত্যেরও সৃষ্টি হয়। প্রেক্ষাপট বিবেচনা করলে দেখা যাবে যে, ১৭৫৭
সালে বঙ্গদেশের রাষ্ট্রক্ষমতা ইংরেজদের হস্তগত হলেও সাংস্কৃতিক জীবনে উনিশ শতকের
পূর্বে ইংরেজি তথা পাশ্চাত্য প্রভাব
অনুভূত হয়নি। প্রধানত ইংরেজদের শিক্ষা ও সাহিত্যের সঙ্গে পরিচয় ঘটার মধ্য দিয়েই
আধুনিক যুগের সূত্রপাত হয় এবং বাঙালি
বুদ্ধিজীবী সম্প্রদায় ইউরোপীয় সংস্কৃতির নিকটবর্তী হয়। মধ্যযুগ থেকে
আধুনিক যুগে যে সামাজিক-সাংস্কৃতিক বিবর্তন ঘটে, তাকে ঐতিহাসিকগণ ‘নবজাগৃতি’ বা
‘রেনেসাঁ’ নামে
আখ্যায়িত করেন। এর ফলস্বরূপ উনিশ শতকের সাহিত্যে মানব-প্রাধান্য, গদ্য-সাহিত্যের
উদ্ভব, সাময়িক
পত্রের আবির্ভাব ইত্যাদি বৈচিত্র্যের সূত্রপাত হয়। এ সময় উপন্যাস, ছোটগল্প, প্রবন্ধ
প্রভৃতি বিচিত্র ধরনের গদ্য-সাহিত্য এবং ইংরেজির আদর্শে নাটক ও কাব্যসাহিত্য-
মহাকাব্য-আখ্যায়িকা, সনেট, গীতিকবিতা রচিত হতে থাকে। এমনকি ইউরোপীয় ধাঁচে নতুন নতুন ধাঁচে
রঙ্গমঞ্চও নির্মিত হতে থাকে।
গদ্যরচনার যুগ
উনিশ শতকের পূর্বে বাংলায় যেসব গদ্য রচিত হয়েছিল তা সাহিত্যপদবাচ্য নয়।
সতেরো শতকের শেষভাগে দোম আন্তোনিও ছিলেন
প্রথম বাঙালি লেখক এবং তাঁর রচিত ব্রাহ্মণ-রোমান-ক্যাথলিক-সংবাদ প্রথম মুদ্রিত
বাংলা গ্রন্থ। পরে পর্তুগিজ পাদ্রি মানোএল-দ্য আস্সুম্পসাঁও সংকলিত কৃপার
শাস্ত্রের অর্থভেদ এবং বাঙ্গলা ব্যাকরণ ও
বাঙ্গলা-পর্তুগীজ শব্দকোষ ১৭৪৩ খ্রিস্টাব্দে পর্তুগালের লিসবন শহর থেকে রোমান
অক্ষরে মুদ্রিত হয়। রাষ্ট্রক্ষমতা লাভের পর ইংরেজ শাসকবর্গ দেশীয় ভাষা রপ্তকরণের
আবশ্যকতা উপলব্ধি করেন। ইতোমধ্যে এদেশে মুদ্রণব্যবস্থা প্রচলিত হলে ইংরেজদের বাংলা
শেখাবার উদ্দেশ্যে নাথানিয়েল ব্রাসি হ্যালহেড ১৭৭৬ খ্রিস্টাব্দে রচনা করেন A Grammar of the Bengal
Language। গ্রন্থটি ১৭৭৮ খ্রিস্টাব্দে হুগলি
প্রেস থেকে মুদ্রিত হয় এবং এতে দৃষ্টান্তস্বরূপ উদাহরণ ও উদ্ধৃতিতে বাংলা হরফ
ব্যবহূত হয়। এর কাছাকাছি সময়ে খ্রিস্টান পাদ্রিগণ বাংলা গদ্যে আরও কিছু পুস্তক
রচনা করেন, যার সবগুলিরই উদ্দেশ্য ছিল ধর্মপ্রচার। শাসনকার্য
পরিচালনা ও ধর্মপ্রচারের প্রয়োজনেই আঠারো শতকে বাংলা গদ্যচর্চার প্রসার ঘটে, সেকারণেই তাতে সাহিত্য সৃষ্টি হয়নি। রাজকার্য
পরিচালনায় আইনগ্রন্থের বাংলা অনুবাদই প্রথম প্রয়োজন হয়,তাই
এ সময়ে কিছু আইন গ্রন্থের অনুবাদ প্রকাশিত হয়। এ ক্ষেত্রে সতের
থেকে আঠার খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত হ্যালহেডের পরে
উল্লেখযোগ্য হলেন ফরস্টার। তিনি কর্নওয়ালীসী কোড
ও শব্দকোষ বাংলায় অনুবাদ করেন। এ
দুটি মৌলিক রচনা না হলেও এ থেকে বাংলা গদ্যের প্রকৃতি সম্পর্কে ধারণা জন্মে। উনিশ
শতকে এই গদ্য-প্রচেষ্টা আরও বেগবান ও সমৃদ্ধ হতে থাকে।
এইভাবে
বিভিন্ন শাসক গোষ্ঠীর শাসন ও
শোষণ আমলের বিভিন্ন
আঁচার আচরণ বাংলা সংস্কৃতিতে
অনুপ্রবেশ করে যার সংসর্গে এসে
সাহিত্যের ব্যাপ্তি লাভ
করাটাই স্বাভাবিক।
কবিতাউৎসব: সাহিত্য মূলত দেশজ সংস্কৃতি ঐতিহ্য ও জলবায়ু সম্ভূত
স্বাভাবিক আত্মপ্রকাশ। কিন্তু বিদেশী ভাষা সংস্কৃতি ও রাজনীতির প্রভাবে যে নাগরিক
মনন ও চিন্তা চেতনার বয়ন গড়ে ওঠে,
তার সাথে দেশজ
শিকড়ের টানা পোড়েন কিভাবে একজন সাহিত্যিককে পুষ্ট করে?
হাসিদা: ‘মূলত দেশজ সংস্কৃতি ঐতিহ্য ও জলবায়ু সম্ভূত ‘-এ কথাই
প্রমাণ করে দিচ্ছে সাহিত্যিক
তাঁর আবহমান কৃষ্টি ও জলবায়ুতে বেড়ে ওঠে। সেই
পারিপার্শ্বিক আবহাওয়া তাঁর শিক্ষা দীক্ষায় মন মনন
পুষ্ট করে চিন্তা চেতনার বহিঃপ্রকাশ ঘটায় । তাতে
নিহিত থাকে নিজস্ব শেকড়ের টান। এ
কথার দৃষ্টান্ত কবি
মাইকেল মধুসূদন দত্ত
নিজেই। বিদেশী ভাষার
সংস্কৃতিতে মুগ্ধ হয়ে পরে
নিজ দেশের টানেই
নিজ বলয়ে ফিরে আসেন এবং বাংলা সাহিত্যকে সমৃদ্ধ
করে তোলেন। তাঁর নিজের উক্তি তে ব্যক্ত করেন ‘বহু
দেশ দেখিয়াছি বহু নদ দলে / কিন্তু এ স্নেহের তৃষ্ণা মেটে কার জলে / দুগ্ধস্রোতরূপি
তুমি মাতৃভূমি স্তনে। ‘’
কবিতাউৎসব:
এখন এই যে দেশজ সাহিত্যসংস্কৃতির প্রবাহমান ধারা, তার সাথে নাগরিক
সাহিত্যধারার কোনো বিরোধাভাস কি আপনার দৃষ্টিগোচর হয়? হলে
তার রূপ ও বিকাশ সম্বন্ধে যদি আলোকপাত করেন!
হাসিদা: আমার তো
তা মনে
হয়না । ইদানিংকালের লাইভ
কনসার্ট এ এ যুগের নতুন
প্রজন্মরা বেশ সাড়ম্বরে
লোকগীতি, লালন গীতি , হাসন
রাজার গান এমন সব লোকজ গান
গেয়ে যায়। ভাওয়াইয়া, জারী, সারীও
শোনা যায়। তবে সেই
থিম বা আবহ ঠিক তেমনটি
নেই। এরা গাইছে মডার্ন ব্যান্ডের
সাথে। তবে কবিগান তথা
তাৎক্ষণিকভাবে কবিতা রচনা করে কবিদের মাঝে তর্ক-বিতর্কের গীত
রচনা, পুঁথিপাঠের আসর ধীরে ধীরে
হারিয়ে যাচ্ছে। লোকজ সাহিত্যের এই ধারা আজ বিলুপ্তির পথে। এই বিলুপ্তি
কোন বিরোধী ধারার পরিপ্রেক্ষিতে
তেমন নয়।
জীবন যাপনের
ইঁদুর দৌড় প্রতিযোগীতায় টিকে
থাকার দ্রুততা, সময়
সংক্ষেপ হয়ে আসা দৈনন্দিন দিনলিপি এর জন্য বহুল অংশে দায়ী। গ্রাম গঞ্জেও তেমন বসে খাবার
সময় নেই, সেইসাথে জুতসই
আসর বসার জায়গারও অভাব।
মাঠ,ঘাট, খোলা বিস্তীর্ণ এলাকা
ক্রমশ কমে যাচ্ছে তাতে বাড়ছে
জনাকীর্ণ মানুষ। সেখানে হাঁফ ফেলার সময় কই ? তার
সাথে আছে চটুল হিন্দি ফিল্মিগানের
হাতছানি এবং কাউয়ালি জাতীয় গানের
অনুপ্রবেশ। পশ্চিমা সাহিত্যের
আমদানি করা হট’ গল্প, সিনেমা,নভেলের
বাজার । এমতবস্থায় দেশজ বা লোকজ সাহিত্য
সংস্কৃতি চর্চার ধারাকে অব্যাহত রাখতে হলে
প্রয়োজন রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় এলাকা ভিত্তিতে সাহিত্য চর্চার হল’ করে
দেয়া দরকার, সেইসাথে
দরকার সাহিত্যসংস্কৃতির প্রবাহমান এই ধারাকে যথাযথভাবে অবিকৃত অবস্থায় প্রজন্মের
হাতে তুলে দেয়া।
কবিতাউৎসব: বাংলাদেশের সাহিত্যের আলোচনায় অতি অবশ্যই ভাষা আন্দোলন
ও মুক্তিযুদ্ধের কথা চলে আসবে। ৪৭ পরবর্তী বাংলাদেশে এই দুইটি ঘটনার অভিঘাত নিয়ে
যদি একটু বিস্তারিত আলোচনা করেন আপনার অভিজ্ঞতা ও ইতিহাসবোধের আলোতে!
হাসিদা: আমি আগের এক
প্রশ্নের জবাবে বলেছি,পাক-ভারত
যুদ্ধের সময় স্বদেশপ্রেম,জাতীয় গৌরব ও সাম্প্রদায়িক বৈরিভাব কবিতা
ও সাহিত্যের বিষয়বস্তু
হয়ে উঠেছিলো। ১৯৪৭ সালের ১৪ অগস্ট
পাকিস্তানের স্বাধীনতা লাভের সপ্তাহখানেকের মধ্যে ডাক বিভাগের খাম,পোস্টকার্ড
ও অন্যান্য সরকারি ফর্মে ইংরেজির সঙ্গে শুধু উর্দু লেখা থাকায় মানুষের মধ্যে ক্ষোভের
সৃষ্টি হয়। তার প্রতিবাদে খুব ছোট আকারে আন্দোলনের সূচনা করেন ঢাকার প্রাদেশিক
সেক্রেটারিয়েটের চতুর্থ ও তৃতীয় শ্রেণির বাঙালি কর্মচারীরা। অবিলম্বে তাঁদের সঙ্গে
যোগ দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ও যুবসমাজ। এর মধ্যেই পাকিস্তানের প্রথম
গভর্নর জেনারেল মুহম্মদ আলি জিন্না ঘোষণা করে দেন,উর্দুই হবে পাকিস্তানের
একমাত্র রাষ্ট্রভাষা— অন্য কোনও ভাষা নয়। তবে জিন্না এ কথাও বলেন যে,পূর্ব
পাকিস্তানের সরকারি ভাষা কি হবে তা এই প্রদেশের জনগণই ঠিক করবে। কারণ হিসাবে
লক্ষ্য করা যায় যে, পাকিস্তান
প্রতিষ্ঠার পর থেকেই বাংলা ভাষা শাসকগোষ্ঠীর আক্রমণের বস্তুতে পরিণত হয়। সংস্কৃত
প্রভাবযুক্ত মুসলমানি ভাবাশ্রিত বাংলা ভাষা প্রবর্তনের চেষ্টা হয়। বিস্ময়ের
ব্যাপার হল,এই সব অপচেষ্টায় এক শ্রেণির বাঙালি কবি, সাহিত্যিক
ও শিক্ষাবিদ জড়িত ছিলেন। তাঁদের শুধু সমর্থন নয়, সহযোগিতাও ছিল। ১৯৪৯
সালের মার্চে গঠন করা হয়েছিল ইস্ট বেঙ্গল ল্যাঙ্গুয়েজ কমিটি বা পূর্ব বাংলা ভাষা
কমিটি। ওই কমিটির বিবেচনার বিষয় ছিল: - পূর্ব বাংলার মানুষের ভাষার ব্যাকরণ,বানান,ইত্যাদি
সমেত সরলীকরণ,সংস্কার
ও প্রমিতকরণের প্রশ্ন বিবেচনা করা এবং সে সম্পর্কে সুপারিশ করা হয়। বাংলা ভাষাকে
নির্দিষ্ট ভাবে পূর্ব বাংলা এবং সাধারণ ভাবে পাকিস্তানের মানুষের প্রতিভা ও
কৃষ্টির সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ করার জন্য প্রয়োজনীয় বিবেচনা করতে হবে।
কমিটি পাকিস্তানি ভাবধারার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নতুন এক সহজ রূপ দেওয়ার
সুপারিশ করে। তাঁদের করা সুপারিশের একটি দৃষ্টান্ত: ‘তিনি
যাবতীয় বিষয় আনুপূর্বিক অবগত হইয়া বিস্ময়াপন্ন হইলেন’,এর
পরিবর্তে লিখতে হবে: ‘তিনি সব কিছু আগাগোড়া শুনিয়া তাজ্জব হইলেন।’
বাংলা বর্ণমালা ও ভাষা সংস্কারের দায়িত্ব যাঁদের উপর
দেওয়া হয়েছিল তাঁরা শুধু সরকারের অনুগত ছিলেন তা-ই নয়,তাঁরা
ছিলেন অবিশেষজ্ঞ। তা ছাড়া মতাদর্শের দিক থেকে ছিলেন সাম্প্রদায়িক। তাঁরা
এক-তৃতীয়াংশ অমুসলমান সংখ্যালঘু বাঙালির আবেগ-অনুভূতির কোনও মূল্য দেননি। যে
চেতনায় রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন হয়,সেই চেতনা থেকেই বাংলা ভাষার
ইসলামীকরণ,পাকিস্তানীকরণ ও আঞ্চলিকীকরণের অপচেষ্টা প্রতিহত করা
হয়।
ভাষা সংস্কার কমিটি বাংলা ‘বর্ণমালা
থেকে শুরু করে ব্যাকরণ পর্যন্ত আদ্যন্ত সংস্কার’-এর জন্য অভিমত দেয়।
কিন্তু বাংলাদেশের শিক্ষিতসমাজের কাছে তা গ্রহণযোগ্য হয়নি। এর মধ্যে
প্রতিক্রিয়াশীল সরকারপন্থী বেসরকারি কোনও কোনও গোত্র থেকে বাংলা ভাষা আমূল
সংস্কারের নামে নানা উদ্ভট অপচেষ্টা হয়। তার একটি ‘শহজ বাংলা’ প্রবর্তনের
চেষ্টা। ‘শহজ-বাংলা’ নামে
এক নতুন বাংলা ভাষা বা পূর্ব পাকিস্তানি ভাষা সৃষ্টির প্রয়াস হয়। এই সব অপপ্রয়াসের
বিরুদ্ধে বাংলাদেশের মানুষ প্রতিরোধ গড়ে তোলে বাহান্নর একুশে ফেব্রুয়ারির চেতনা
থেকে। এক পর্যায়ে পূর্ব বাংলার প্রগতিশীলদের প্রতিরোধে তাদের
সব চেষ্টা ব্যর্থ হয়। পূর্ব পাকিস্থানের বাঙালিরা
জাতীয় চেতনায় উদ্বুদ্ধ
হয়ে ভাষা আন্দোলনে
ঝাঁপিয়ে পড়ে। ভাষা আন্দোলনের এই
প্রভাব বাংলাদেশের মানুষের জীবনে অপরিমেয়।
বাহান্নার ভাষা আন্দোলন বাঙালি জাতির জীবনের এমন এক
ঘটনা,সরকার
দাবি মেনে নেওয়ার পরও তাদের চেতনা শেষ হয়ে যায়নি। ওই আন্দোলন দীক্ষা দিয়েছে
অনির্বাণ বাঙালি জাতীয়তাবাদী চেতনার। সেই চেতনাই জন্ম দেয় স্বায়ত্তশাসন ও
স্বাধিকার আন্দোলনের। যার পরিণতি লাভ করে
একাত্তরে সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জন ও স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদ্বয়ের মধ্য
দিয়ে।
কবিতাউৎসব: পাকিস্তানী কর্তৃপক্ষ ও রাজাকার আলবদরদের মিলিত
ষড়যন্ত্রে বুদ্ধিজীবী নিধনের প্রভাবে বাংলাদেশের সাহিত্য সংস্কৃতির ভূবনে হঠাৎ যে শুন্যতার সৃষ্টি হয়েছিল, আজকের বাংলাদেশ কি
সেই অন্ধকার কাটিয়ে উঠতে পেরেছে বলে আপনার ধারণা! স্বাধীনতার পরবর্তী বিগত
চার দশকের আলোতে যদি বলেন!
হাসিদা: বুদ্ধিজীবীরা পূর্ববাংলার জনগণকে বাঙালি
জাতীয়তাবাদে উদ্বুদ্ধ করার কাজে বরাবরই ছিলেন তৎপর এবং তাঁরা পশ্চিম পাকিস্তানি
শাসকদের স্বৈরাচার ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে জনগণকে আন্দোলনে অনুপ্রাণিত করেন। এ কারণে
পূর্ববাংলার বুদ্ধিজীবীরা বরাবরই ছিলেন পাকিস্তানি শাসকদের বিরাগভাজন। বুদ্ধিজীবী
হত্যা স্পষ্টতই ছিল সামরিক জান্তার নীলনকশার বাস্তবায়ন,যে
নীলনকশার লক্ষ্য ছিল বুদ্ধিজীবীদের নিশ্চিহ্ন করে বাঙালি জাতিকে নেতৃত্বহীন এবং
বুদ্ধিবৃত্তিক দেউলিয়ায় পরিণত করা। জাতির সূর্যসন্তানদের হত্যাকান্ডের মাধ্যমে
দেশের যে অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে সেটা কখনও পূরণ করা সম্ভব না। যে শূন্যতার
সৃষ্টি হয়েছিলো বহু যুগেও
তা পূর্ণ করা অসম্ভব প্রায় ...
কবিতাউৎসব: আমরা জানি বাংলাদেশে এপাড় বাংলার সাহিত্য বিপুল
জনপ্রিয়, কিন্তু দুঃখের বিষয়, এপাড় বাংলায় ওপাড় বাংলার সাহিত্য সম্বন্ধে উদাসীনতার
ইতিহাসটি দীর্ঘকালের! এর মূল কারণ ঠিক কি বলে আপনার মনে হয়? নেট বিপ্লবের হাত ধরে সোশাল মিডিয়ার মাধ্যমে এই পরিস্থিতির
উন্নতির কোনো দিকচিহ্ন কি আপনার নজরে পড়ছে সম্প্রতি!
হাসিদা: সাহিত্যকে
জনপ্রিয় ও অজনপ্রিয় এভাবে বিভাজন করা
আপত্তিকর। দুই বাংলার সাহিত্য আলাদা হওয়ার একটা কারণ আমার মনে হয়,দেশের
কল্পনাটা সম্প্রদায়গত এবং ভূগোলগত কারণে ভিন্নভাব ও ভিন্নচিত্র অবলম্বন করে আছে। সাহিত্যিক মাত্রই
দেশের কল্পনা মানুষের কল্পনা একত্রিত করে
নিতে হয়। যদি দেশের কল্পনা আলাদা
হয়ে যায় তাহলে সাহিত্যও আলাদা হয়ে যেতে বাধ্য। রাষ্ট্রতাত্ত্বিক বা রাজনৈতিক
পার্থক্য ছাড়াও দেশের ধারণা ও কল্পনা দিয়ে সাহিত্য আলাদা হওয়ার সৃষ্টিতত্ত্বও খুঁজে পাওয়া সম্ভব।
১৯৪৭ সালে দেশ ভাগ হওয়ার পর এবং ১৯৭১ সালে বাংলাদেশে
আবির্ভাবের পর থেকে অর্থাৎ সুদীর্ঘ ষাট
বছরে যে ইতিহাসের মধ্য দিয়ে দুটি দেশ অগ্রসর হয়েছে, তাতে বাংলাদেশের
শিল্পসাহিত্য পশ্চিমবঙ্গের থেকে আলাদা ধারার হয়ে গেছে। এটাকে ভাবাবেগ দিয়ে বোঝা
যাবে না। ভাবাবেগ বা সেন্টিমেন্টালিজম আসে দুই জায়গা থেকে। একটা যেমন,পশ্চিমবঙ্গের
লেখকেরা মনে করেন তাঁরাই হচ্ছেন বাংলা ভাষার প্রধান দপ্তর। বাংলাদেশের লেখকেরাও
লিখছেন তাঁদেরকেও উৎসাহ দেওয়া উচিত। বাংলাদেশের অনেক লেখকও ভাবেন, পশ্চিমবঙ্গের
লেখক বা সমালোচকেরা স্বীকৃতি দিলেই তবে তাঁরা আসলে স্বীকৃতি পেলেন। এই দুটো
প্রবণতাই ক্ষতিকর। কারণ কোনো রকম নির্ভরশীলতা বা পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে সাহিত্য তৈরি হয়
না। এই পৃষ্ঠপোষকতা ও নির্ভরশীলতা থেকে মুক্তি পাওয়ার একমাত্র উপায় স্বীকার করা যে
দুটো দেশের সাহিত্য আলাদা সাহিত্য। মানুষের জীবনযাপন,সমাজের
জীবনযাপন, রাজনীতি,পৃথিবীর সঙ্গে সম্পর্ক,দৈনন্দিন জীবনের রকমফের—এগুলোর
বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে গল্প-উপন্যাসও বদলায়। কবিতার কথা বলছি না,তবে
বাংলাদেশের গল্প-উপন্যাস আর পশ্চিমবঙ্গের গল্প-উপন্যাস সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র।
দুই বাংলার সাহিত্যের মধ্যে যে পার্থক্যরেখা, তাকে
রাষ্ট্রবোধের ধরন বা ইতিহাসের ভিন্নতা দিয়েও বলা যায়। এই রাষ্ট্রবোধের মর্মে আছে মুসলিম
সম্প্রদায়বোধ। একই কথা পশ্চিমবঙ্গে
বাঙালিদের বেলাতেও খাটে। তবে এখন
গ্লোবালাইজেশানের যুগ, ইন্টারনেট সংযুক্ত
লেখকেরা এই পরিমন্ডল অচিরেই
পেরিয়ে এদেশ - ওদেশের মানুষের
সাহিত্য অঙ্গনে জানাজানির মাধ্যমে
কাছাকাছিও চলে আসবে বলে আমার ধারণা। দিকচিহ্ন
হিসাবে এই কবিতা উৎসবও যে
কাজ করে চলেছে – এটাও
উল্লেখযোগ্য এক ভূমিকা ।
কবিতাউৎসব: আমাদের এই দ্বিখণ্ডীত জাতিসত্ত্বায় সাম্প্রদায়িকতার যে
চোরাস্রোত নিরন্তর বহমান,
যাকে পুঁজি করে
ইঙ্গমার্কীণ মহাশক্তি ও তাদের বঙ্গজ সহসাথীরা ধর্মীয় মৌলবাদের রাজনীতিতে সদাসক্রিয়
থাকে; নেট বিপ্লবের দৌলতে সুদূর
ভবিষ্যতে সেই সাম্প্রদায়িকতার চোরাস্রোত থেকে কি গোটা জাতিকে মুক্ত করতে পারবো
আমরা? আপনার অভিমত! আর সেই কাজে
সাহিত্যের ভূমিকা কতটা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে বলে আপনি মনে করেন!
হাসিদা: মূলত প্যালিওলিথিক বা আদি প্রস্তর যুগ থেকে
পৃথিবী জুড়ে বসতি শুরু হয়।
আদিম যুগ প্রাপ্ত সকল
প্রত্নতাত্ত্বিক ও লিখিত দলিলে
সনদপ্রাপ্ত। লেখন রীতি আবিষ্কারের মধ্য দিয়ে প্রাচীন প্রামাণ্য
ইতিহাসের প্রারম্ভ। সেখান থেকে সভ্যতা
প্রবেশ করে নব্য প্রস্তর যুগ বা নিওলিথিক যুগে এবং কৃষি বিপ্লব -খ্রিষ্টপূর্ব
৫০০০-খ্রিষ্টপূর্ব ৮০০০ অব্দ সূচনা ঘটে। নিওলিথিক বিপ্লবে উদ্ভিদ ও পশুর নিয়মানুগ
চাষপদ্ধতি রপ্ত করা মানব সভ্যতার একটি অনন্য মাইলফলক হিসেবে চিহ্নিত হয়। উন্নতি ও উৎকর্ষতার দিক দিয়ে মেসোপটেমিয়ার
সভ্যতা,মিশরের
নীলনদ তীরবর্তী সভ্যতা ও সিন্ধু সভ্যতা
৪৬৭ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত প্রাচীন যুগ ছিল। ৫ম থেকে পঞ্চদশ শতাব্দী পর্যন্ত মধ্যযুগ, ইসলামী
স্বর্ণযুগ(৭৫০- ১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) ও ইউরোপীয় রেনেসাঁ ১৩০০ শতক হতে শুরু আধুনিক
যুগের সূচনাকাল ধরা হয়। পঞ্চদশ শতক হতে অষ্টাদশ শতকের শেষ পর্যন্ত যার মধ্যে
রয়েছে ইউরোপের আলোকিত যুগ। শিল্প বিপ্লব হতে বর্তমান সময় পর্যন্ত আধুনিক কাল বলে
বিবেচিত। পাশ্চাত্য ইতিহাসে রোমের পতনকে প্রাচীন যুগের শেষ ও মধ্যযুগের সূচনা
হিসেবে ধরা হয়। কিন্তু পূর্ব ইউরোপ রোমান সাম্রাজ্য থেকে বাইজেনটাইন সাম্রাজের
অধীনে আসে, যার পতন আরো অনেক পড়ে আসে। ১৫ শতকের মাঝামাঝি
গুটেনবার্গ আধুনিক ছাপাখানা আবিস্কার,যা যোগাযোগের ক্ষেত্রে বৈপ্লবিক
পরিবর্তন নিয়ে আসে। ফলে মধ্যযুগের সমাপ্তি ঘটে এবং বৈজ্ঞানিক বিপ্লবের সূত্রপাত
হয়। ১৮ শতকের মধ্যে ইউরোপে
জ্ঞান-বিজ্ঞানের প্রসার এমন একটি চরম অবস্থায় উপনীত হয় যা শিল্প বিপ্লবকে অবধারিত করে তুলে। এই সমস্ত
বিবিধ পরিবর্তন ও পরিবর্ধনের
ক্ষেত্র উন্নতি এবং আধুনিক যুগের
উৎকর্ষ সাধন করলেও। জ্ঞান-বিজ্ঞান,ব্যবসা-বাণিজ্য, অস্ত্রের
ধ্বংসক্ষমতা, পরিবেশগত ক্ষতি প্রভৃতি অসামান্য গতিতে বৃদ্ধি
পেয়েছে,যা
বর্তমান বিশ্বের মানুষের সামনে একই সাথে ব্যাপক সম্ভাবনা সাথে সাথে এক উদ্বেগের
দ্বার উন্মোচন করে করেছে। এমনই এক দ্বার
হচ্ছে, সাম্প্রদায়িকতা। এতসব সহস্র যুগেও
সাম্প্রদায়িকতার ক্ষেত্রে তেমন উল্লেখযোগ্য প্রসারতা লাভ করেনি। কুক্ষিগত
বলয়েই ঘুরাঘুরি বিস্ময়করভাবে
লক্ষণীয়। কারণ হিসাবে
যতটুকু বোঝা যায় - কি এক
অবগুণ্ঠনে গুটিয়ে রাখার
সু কৌশল । স্পষ্ট করে
বোঝানোর দায় কেউ কাঁধে নিতে
চায়না। এমন এক দ্বন্দ্ব
বিদ্বেষ নিয়ে আমরা
এগিয়ে যাচ্ছি সামনের দিকে,এই
পর্যায়ে এসে আশা করা যায় যে, নেট ওরিয়েন্টেড সাহিত্যিক, কবি,গবেষণাধর্মী লেখকেরা
তথ্য উপাত্তের মাধ্যমে
এর সুনির্দিষ্ট ব্যবহার
এবং তার গতি প্রতিক্রিয়া পর্যায়ক্রমে
বিশ্ববাসীকে লিখিত বিভিন্ন ভাষার
মাধ্যমে তুলে ধরে জানাতে সক্ষম হবে। সাম্প্রদায়িকতা এবং এর সম্যক
ব্যবহারের সুফল কুফল সম্পর্কেও
গোটা বিশ্বের সবাই সচেতন হয়ে সমাজ ও সংসারকে রক্ষা করতে
সক্ষম হবে। চোরা স্রোত যত
গোপনেই বয়েযাক -জ্ঞান বিজ্ঞানের
প্রায়গিক কৌশল এবং তার প্রচার
গুগোল, টুইটার,উইকিপিডিয়াতে প্রকাশিত হলে সত্য
মিথ্যার দিকদর্শন চিহ্নিত
করে সাপ্রদায়িকতার বিষবাষ্প থেকে
নিষ্কৃতি এনে দিতে সক্ষম।
প্রতিটি ধর্মীয় আপ্তবাক্য’ই আক্ষরিক । তবে অক্ষর দিয়েই তো এর আপাত’ প্রয়োগের উৎকর্ষ
সাধন ও অপপ্রয়োগ
রোধ করা সম্ভব হবারই কথা !
কবিতাউৎসব: এবার একটু ব্যক্তিগত প্রসঙ্গে আসি বরং, আপনার গড়ে ওঠার পিছনে কোন কোন সৃষ্টিশীল সৃজনশীল
ব্যক্তিত্বের প্রভাব বিশেষ ভাবে ক্রিয়াশীল ছিল জানতে ইচ্ছে করছে! এবং আপনার নিজের
সাহিত্যকর্ম সৃষ্টিশীলতার অন্তরালে
আর্থ-সামাজিক-রাজনীতির প্রভাব কিভাবে ক্রিয়াশীল যদি একটু বিস্তারিত ভাবেই
বলেন!
হাসিদা: সবার যেমন পারিবারিক
প্রভাব থেকে থাকে তেমনি আমারও
গোড়াপত্তন পরিবার থেকেই। আমার লেখার রসদ সমসাময়িক প্রেক্ষাপট ও তার চালচিত্র । রাজার গড়ে’ তো প্রজাদেরই
হাতে। আর রাজার নীতিও হয় - প্রজা গড়ার নীতি। যেই
দেশের প্রজা যেমন চায় তেমন রাজা গড়ে’। এসব রাজাদের নীতিই ‘ রাজনীতি
‘এবং রাজতন্ত্র উঠে গেলেও সেই
নীতিতেই চলছে রাজনীতির
ধারক ও বাহকেরা। শুধুই রকমফেরে, মোড়কে কিঞ্চিত তফাৎ । রাজপথে
হেঁটে গেলেই তো তার প্রভাব
লক্ষণীয় হয়ে ওঠে সেইসাথে
অকপটে বলা যায় - ক্রিয়াশীলতো বটেই !
কবিতাউৎসব: সাহিত্যিক প্রেমেন্দ্র মিত্র সাহিত্যচর্চায় যে শৌখিন
মজদূরী সম্বন্ধে আমাদের সচকিত করে দিয়েছিলেন, আজকের অন্তর্জাল সাহিত্যের হাটে সে কথা যেন আরও বেশি করে প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠছে
বলে মনে করেন অনেকেই। বাড়িতে আনলিমিটেড নেট,
হাতে স্মার্টফোন
বা কোলে ল্যাপটপ, হঠাৎ অবসর, ধরা যাক দু একটি শব্দ এবার। এই যদি সাহিত্যচর্চার সমকালীন
প্রকরণ হয়ে দাঁড়ায় তবে তো সত্যই চিন্তার বিষয়। আপনার অভিমত।
হাসিদা: কাব্যকৃতির কথা বিবেচনা করলে তিরিশের সুবিদিত পঞ্চ
নক্ষত্রের পাশেই প্রেমেন্দ্রের স্থান। প্রচলিত নৈতিকতাকে আঘাত করতে হবে কিংবা যা
কিছু পুরনো তাকেই আক্রমণ করতে হবে। এরকম চরমপন্থীসুলভ বিশ্বাসে আস্থা ছিল না
প্রেমেন্দ্র মিত্রের। মুক্ত মানসিকতার অধিকারী এই সহজ মানুষটি জীবনের কাছ থেকে উপার্জন করেছেন অসম্ভব
সহিষ্ণুতা এবং ঔদার্য। ফলে তার কবিকল্পনা শুধুই সহিত্যনির্ভর বিষয়কে কেন্দ্র করে
আবর্তিত হয়নি,তা পরিব্যাপ্ত হয়েছে জ্ঞান-বিজ্ঞানের বিচিত্র শাখা
প্রশাখায়ও। তবে ওই সব ক্ষেত্রেও সৃষ্টিশীল কল্পনা ভাবনাকে ছাপিয়ে জ্ঞান-বিজ্ঞানের
কথা মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারেনি। এই একবিংশ
শতাব্দীর সময়কালে সেই সময়কার প্রেক্ষাপট, স্থান,সময় কই? এখন ফেইড জিন্স পরা কবি সাহিত্যিক,তাঁদের দৃষ্টিভঙ্গিও
তেমন সময়ের চাহিদা অনুযায়ীই
হবার কথা। তবে সময়ের দাবী
মিটাতে মনের প্রকাশ ভঙ্গিও থেমে
থাকবে না,পাঠ
পরিক্রমাও থেমে থাকবেনা - চলেই যাবে চলনসই হয়ে চলমান থেকে
মহাকালের পথে পথে ।
কবিতাউৎসব: এই প্রসঙ্গে জানতে চাইবো জীবন ও জগৎ সম্বন্ধে যে
প্রগাঢ় সমবেদনা সাহিত্যের ও অন্যান্য যে কোন সৃজনশীল সৃষ্টিশীল মাধ্যমের
সূত্রপাতের মূল উৎস, বর্তমানের ভোগবাদী দুনিয়ার এই
উর্দ্ধশ্বাস ইঁদুর দৌড়ে সেই অনুভব আর কি আমাদের মধ্যে জায়মান আছে? আমাদের সাহিত্যবোধ ও সংস্কৃতিবোধও কি অনেকটাই মোড়ক সর্বস্ব বস্তুবাদী
হয়ে ওঠেনি? অনেকটাই বাজারদর ভিত্তিক? কি মনে হয় আপনার?
হাসিদা: অনুভব অনেকাংশে দায়সারা গোছের প্রকাশ
পায়। আর হবেইবা না কেন? আমি
একজন গৃহিণী সেই প্রেক্ষাপটে আলোচনা করছি।
আগের সময়ে মায়েদের দেখেছি
হেঁসেল ও
খাবার জোগাড়েই তাঁদের দিন
প্রায় ফুরিয়ে যেতো। এখন মায়েদের
কাজ সকালের নাস্তা রেডী করা, স্কুলে বাচ্চা পৌঁছে দিয়ে রান্নার
সামগ্রী কিনে বাসায় ফেরা, এর মাঝেই ফোনে আত্মীয় সজনের খোঁজ খবর রাখা, গ্যাস, ডিশের
বিল,ইলেকট্রিকের
বিল,স্কুলের
টিউশন ফিস ভরতে ব্যাংকে দৌড়ানো।
বিভিন্ন আচার অনুষ্ঠানে
যোগদান করা। এমন কোনঠাসা করা সময়ের হাত
থেকে ফুরসৎ মিলছেনা বিধায়
পরিবর্তিত হচ্ছে পটভূমি।
সাহিত্য বাজারদর ভিত্তিক হচ্ছেই সেও অকারণে
নয়। ভালো কোন ভেনু’ছাড়া প্রতিষ্ঠিত
কবি সাহিত্যিকেরা পদধূলি দেন না।
সেই কাঙ্ক্ষিত ভেনু’ ভাড়া
করতে হয় উচ্চমূল্য দিয়ে। এই রকম পর্যায়ে
আয়োজকের নজর থাকে ‘ এড’ কালেকশানের দিকে, তা
না হলে সাহিত্যের পৃষ্ঠপোষকতা করে নিজেই দেউলিয়া
হবার সম্ভাবনা দেখা দিতে পারে। এসব
দিক একে অপরের সাথে ওতঃপ্রোত ভাবে
জড়িয়ে ক্রমশ মোড়ক সর্বস্ব বস্তুবাদী হয়ে পড়ছে। সারাংশে বলা যায়, বস্তুবাদী হয়ে ওঠাতো
জীবন যাপনই শেখায়। জীবনের
অর্থই হচ্ছে - বস্তুতে
বস্তুর বিনিময়। যেমন বড় অংকের টাকা দিয়েই
তো কিনতে হয় - বড় পুজো / বড় ভোজ
/ বড় দান / হজ্জ /
যাকাত / বিয়ে শাদী মায়
সংস্কৃতি ও সংস্কার!
কবিতাউৎসব: আমাদের নাগরিক জীবনের অন্তঃসার শূন্যতা এবং দেশজ
সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও উত্তরাধিকারের সাথে শিকড়হীন সম্পর্ক বর্তমানের এই অন্তর্জাল
সাহিত্যজগতে কতটা ও কিরকম প্রভাব ফেলেছে বলে মনে করেন আপনি।
হাসিদা: ভালো
দিকটাই আমি দেখতে পাই, যেমন মেরিল্যান্ড এ অবস্থান রত এক
ফেসবুকিও বন্ধু ‘নিক্কি
উইলিয়ামের মন খারাপ,সে আমার একটা স্ট্যাটাস পড়ে
কিছুটা মনে স্বস্তি খুঁজে পেলো।
ইনবক্সে সে আমাকে তা জানালো। একাকীত্ব
নিয়ে তাঁর কষ্টের বিষণ্ণ
সময় এমন কারো ‘স্ট্যাটাস’ পড়ে কেটে যায়। অনেকদূরের কাউকেও মনের আঙিনায় নিয়ে আসতে সক্ষম হচ্ছে। প্রতিদিন অজানার দিগন্ত
উন্মোচন হচ্ছে বিদেশী কোন মানুষের
কাছে আরেক দেশের মন মানসিকতা ,সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য
এই প্রক্রিয়ায় বিস্তার লাভ করছে
বলে আমি মনে করি। ভালো মন্দ
মুদ্রার দুই পিঠ, যে
যেইদিকটা দেখতে পায় - এও তেমন
প্রভাব ফেলবে বলেই মনেকরা
যাক।
কবিতাউৎসব: অন্তর্জাল বিপ্লব বাংলা সাহিত্যের গণ্ডীটিকে হঠাৎই যেন
অনেকটাই বাড়িয়ে দিয়েছে। কাকদ্বীপ থেকে কানাডা বা সিলেট থেকে সিয়াটোল,যেখানেই হোক না কেন আজকের সাহিত্য আলোর গতিতে দ্রুত ছড়িয়ে
যাচ্ছে বিশ্বের এক প্রান্ত থেকে আর এক প্রান্তে। এর সবচেয়ে জরুরী সুফলটি আমরা
দেখতে পাই, দ্বিখণ্ডীত বাংলার উভয় পারের
সাহিত্যচর্চার মধ্যে পারস্পরিক সাহচর্য ও আদানপ্রদানের পরিসরটি অত্যন্ত সমৃদ্ধ হয়ে
উঠছে দিনেদিনে ও দ্রুতগতিতে। যেটি আগে প্রায় অসম্ভবই ছিল। এই পরিসরটিকে আরও
ফলপ্রসূ ও শক্তিশালী করে তোলার বিষয়ে কোন কোন বিষয়গুলির উপর জোর দিতে চান আপনি? কি কি বিষয়ে আমাদের আরও সাবধানতা অবলম্বন করা উচিৎ বলে মনে
হয় আপনার?
হাসিদা: ‘অন্তর্জাল
বিপ্লব ‘এই শব্দাহারেই
প্রকাশ পাচ্ছে এক ‘জাল
‘বিছিয়ে দেবার
কল্পচিত্র। উঠুক তবে মন্থনে – যা কিছু উঠে আসার। এক্ষেত্রে করণীয় আমরা একটু উদার হয়ে
দুই বাংলার বন্ধুদের লেখা পড়ে যাই।
কারো লেখায় সঙ্গতি অসঙ্গতি দেখা গেলে তুলে
ধরি। ভালো লেখার প্রশংসা
করি, যার হয়ে
উঠছেনা তাঁর লেখার
‘হচ্ছেনা’ কে বুঝিয়ে বলি , এভাবেই না ধরা
হাতেও অলক্ষ্যে আমরা হাত ধরে
সমন্বয়ের পথে চলি। তাতেই এই পরিসরটিকে আরও ফলপ্রসূ ও শক্তিশালী করে তোলা সম্ভব বলে মনেকরি।
কবিতাউৎসব: অন্তর্জাল সাহিত্যচর্চা যেন অনেকটাই চিত্ররূপময় কবি
জীবনানন্দের সেই অমোঘ বাণীটিরই প্রতিস্পর্ধী! অন্তর্জাল যুগে সকলেই যেন কবি। কেউ
কেউ কবি নয়! মাত্র একটি ইমেল পরিচিতি তৈরী করে নিতে পারলেই সোশ্যালসাইটের দিগন্তে
পা রাখতে না রাখতে যে কেউ নিজেকে কবি বানিয়ে নিতে পারে এখন। যার যত বড়ো বন্ধুবৃত্ত,তার কবিখ্যাতি তত বেশি। যে কোন ভাষার সাহিত্যের পক্ষেই এ যে
বড়ো সুখের সময় নয়- সেকথা বলাই বাহুল্য। কিন্তু অন্তর্জাল সাহিত্য দিগন্তের এইটাই
কি স্বাভাবিক পরিণতি নয়? কি ভাবে তৈরী হতে পারে প্রকৃত
সাহিত্যের রক্ষাকবচ?
হাসিদা: জহুরি
জহর চেনে ‘-এই প্রবাদের পরিপ্রেক্ষিতে বলতে হয়
যার যা খোরাক
সেই তা মিটিয়ে নেয়। পাঠক
যা ভালো মনে করে তুলে নেবে সেটাই নির্বাচিত বিবেচিত হবে। এমনটাই হতে থাক, আর যা কিছুর গোড়াপত্তন
আছে তাই স্থায়িত্ব পায়, বাদ বাকি ধ্বসে যায় কালের অতল গর্ভে - এ নিশ্চিত।
কাজেই তর্ক / বিতর্ক , সন্দিহান / বিস্ময়ের -
বিড়াম্বনা নাই বা রইলো।
কবিতাউৎসব: এত স্বল্প পরিসরে কতকথাই অনালোচিত রয়ে গেল, ভবিষ্যতে সেগুলির জন্যে আপনাকে আগাম আমন্ত্রণ কবিতাউৎসবের
পক্ষ থেকে। তবে আজকের আলোচনা শেষ করতে চাই আপনারই লেখা কোনো একটি কবিতা দিয়ে। যদি
অনুগ্রহ করে আপনার স্বরচিত কোনো একটি প্রিয় কবিতার উল্লেখ করেন, ভালো লাগবে আমাদের!
হাসিদা:
উঠে
দাঁড়াও বাংলাদেশ
- - - -
- - - - - - - - - - -
চেঁচিয়ে
উঠবে একদিন
একযোগে
সব রাত
সাপের
মতো মুচড়ে উঠবে
পিচঢালা
রাজপথ
ড্রেনের
বিষ্ঠা ছলকে এসে
পড়বে
তাদের মুখে
যারা
এদেশ করে ছাড়ছে
মগের
মুল্লুক সুখে
ইট
পাথরে একজোট হয়ে
দেবেই
তাদের রুখে
বৈরাচারী স্বৈরাচারীর ইতরামি সব শেষ
জীর্ণ
শীর্ণ কাঁধ ঝাঁকিয়ে উঠে দাঁড়াও বাংলাদেশ .......
হাসিদা মুন, এম এস সি - ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ( চিকিৎসা মনোবিজ্ঞান ) দুই পুত্র,এক
কন্যার জননী। ঢাকায় বসবাস রত।