বুধবার, ২১ ডিসেম্বর, ২০১৬

ইন্দ্রাণী সরকার




ইন্দ্রাণী সরকার

পথ হারানো

পথিক তুমি কি পথ হারাইয়াছ?
এ প্রশ্ন কি শুধু কপালকুন্ডলার?
না কি বনলতা সেনের ডাগর
দুটি চোখে একই পশ্নের ঝিলিক?
হয়তো দুর্গেশনন্দিনীর তিলোত্তমা
এই একই প্রশ্ন করেছিল জগত সিং কে |
আসলে যুগযুগান্তের সব প্রেমিকার
একই প্রশ্ন তাদের ভালোবাসাকে |
নবকুমার, জীবনানন্দ, জগত সিং আরও
কতজন যেন একই মায়ার বন্ধনে বাঁধা !
যার নাম আবার সেই চার আখরের
ছোট্ট অমুল্য শব্দটি "ভালোবাসা" |
কিন্তু কি ভীষন যাতনাদায়ক সে!
যে জন মরেছে তার জ্বালা সেই
শুধু জানে আর জেনেও তাকে
ধরে রাখে, ছাড়তে ত ' পারে না |
কেউ লেখে কবিতা, কেউ খায় শরাব,
কেউ শুধু রাতভোর জেগে থাকে হায়!
এ যেন বিষবৃক্ষে জন্মান অমৃতফল |
কোথায় পাব সেই চিন্তামনিরে যিনি
বিল্লমঙ্গল ঠাকুরের চোখ খুলে দেন
পরমাত্মা ভগবান শ্রীকৃষ্ণের পদে |
আর বিল্লমঙ্গল তাঁর চোখদুটি দিলেন
ভগবানের পায়ে যাতে অন্তরের চোখে
তিনি দেখতে পান সেই বনমালীকে !
একে যেন কবিগুরুর ভাষায় বলা যায়
"চোখের আলোয় দেখেছিলেম চোখের বাহিরে,
অন্তরে আজ দেখব যখন আলোক না হি রে  |"



অস্তিত্ত্বহীনতা

ভীষণ অস্তিত্ত্বহীনতার মাঝে তোমায় দেখি
গবেষণামূলক তথ্যগুলির ভিত নাড়িয়ে
তোমার একলা চেয়ে থাকা
বারে বারে সন্ধির প্রস্তাব নিয়ে হাত ছুঁয়ে থাকা
কথা বলতে চেয়েও সামাজিক নিয়ম অনুসারে স্তব্ধতা
লুব্ধকের বিরাণ অসংবদ্ধতার নীরব দর্শক থেকে
মৃত কোকিলের পুনরুজ্জীবনে বসন্তের চলমানতার বার্তা
সবই ত' তোমার জানা
তুমি ত' বোঝো গতানুগতিক সমীকরণে আমায় বাঁধা যায় না...


সম্পর্ক
যে কিছু লোক ভ্রান্ত গবেষণা করে সময় কাটায়
আমি তাদের থোড়াই কেয়ার করি
যাদের নিজেদের জীবনের হিসেবে গরমিল
তারাই ঘন ঘন মুখব্যাদান করে
অন্যের জীবন নিয়ে অর্থহীন পদ্য লেখে
তাও এই একটি দিকে লক্ষ্য রেখে বছরের পর বছর
না আছে কোনো লজ্জা, না আছে কোনো ঘেন্না
তাদের কেয়ার করি না দেখাতেই এখন এলাম
একটু পরেও আসা যেত কিন্তু তাতে সময়-ঘড়িতে
নিজেকে সুরক্ষিত করে,
সুরক্ষা কিসের?
ঘড়ির সময় ঠিক হোক কি না হোক কে দেখে?
নর্দমা খুঁচিয়ে মুক্ত যারা তোলে,
তারা সময় ঠিক থাকলেও অন্য কিছু দেখে।|

তুমি এসেছিলে নিজের ইচ্ছায়
সাথে ছিলে নিজের ইচ্ছায়
চলে গেছ নিজের ইচ্ছায়
দিদির সম্মানহানি কোনদিনও কর নি
তাই এই বলতে এলাম এতদিন পর সুখের মুখ দেখেছ
আগের সময়টা বড় কষ্টের ছিল
যদিও গোপনীয়তা রক্ষায় কোনো ত্রুটি করো নি
তবুও দিদিভাই-য়ের মন সবই বুঝে নিত
ঘরে লক্ষী এসেছে তাকে সুখে রাখো
এ আমি আগেও বহুবার তোমায় বলেছি
ইরেজারে মুছে দেব তোমায়, একটু সময় লাগবে খালি
যেমন বাকিরা সযত্নে ইরেজারে মুছে দেয়
আমার একটু সময় লেগে যায়

এ মুখো আর কোনদিনও হোও না
শেষ বন্ধন বলে কিছু নেই মানুষের জীবনে
মানুষ পুত্র কন্যা শোক থেকেও পুনরুত্থান করে
যে দুই তথাগত তাদের আশির্বাদী হস্তে এত কটা বছর করুণা বিলিয়েছে
যে কিছু সুন্দর মন তাদের আশির্বাদী কলমে রোজ খোঁচা দেয়
যাবার সময় এমনিতেই হয়ে এসেছিল
তোমার যাওয়াটা একটা উপলক্ষ্য মাত্র

ফিরে আসা ?
নিশ্চয়
হেঁট মুখে চলে যাবার লোক আমি নই
আমি মানবতায় বিশ্বাসী
যখন মানবতা আমায় ডাক দেবে আমি ফিরতে বাধ্য
তাই ফিরে ফিরেই আসব
তবে কোনো সম্পর্ক পাতাতে আর নয়
কাদের সঙ্গে সম্পর্ক, যার সম্পর্ককে মুনাফা করে ?
তাকে হাতিয়ার করে নিজেদের উদ্দেশ্য সিদ্ধি করে ?
যারা সম্পর্ক পাতাতে এসে একরাশ ইগো ঢালে
নিজেদের দুর্বলতা আর অক্ষমতা ঢাকার জন্য ?
সে ভুল আর কেউ করে না কি ?
তবুও যারা সুস্থ সম্পর্কে বিশ্বাসী সেই মুষ্টিমেয় কজনের জন্য
থাকবে নিত্য যাওয়া আসা।



অলৌকিক

বিভিন্ন রূপ ও পরিচয়ে এসে যায়
অদ্ভুত সব চরিত্রের সমাবেশ
অলৌকিক নদীজল সরে সরে যায়
সংগ্রামের মাঠে ওড়ে
একরাশ কালো ধুলো
লাল শাড়ি সবুজ জামায়
ঘিরে থাকে মাঠ
অবাক রাজা খলখলিয়ে হাসে
চোখ মুখ ঢাকে কাপড় আঁচলে
ফলের ঝুড়িতে বেচে যাওয়া ইজ্জত
যত্নে কুড়োয় ভিজে শাড়ির আঁচল