অভিজিৎ পাল
অবয়ব - ১
জীবন থেকে শরীর শব্দটা
তুলে নিলে যতটুকু ভগ্নাংশ পড়ে থাকে, তা থেকে আমার দীর্ঘ
পৃথিবীযাপনের হিসেব মেলাতে চেও না। আমি এখনও জটিল সব বিভাজ্য সংখ্যার সাথে যোগ করি
আদিরসগুলোকে। আমার শৃঙ্খলহীন চাওয়া পাওয়ার অনেক হিসেব গতেবাঁধা জীবনের বীজগাণিতিক
সূত্রে মিলে যায়। কখনও মিলতে চায়ও না। অযাচিত উপাখ্যান আঁকি। খসখস করে চারকোল চলে।
ক্যানভাসের নীচ জমতে শুরু করে নিটোল রঙের আনন্দগান। আমি বুঁদ হয়ে যাই...
................................................................
অবয়ব - ২
সহজ কথায় মিশে থাকে
সহজাত পাওয়ার এক-একটি আখ্যান। স্বচ্ছন্দ হতে শিখি। উগ্র নগরবাদ কর্পোরেট জগতের
বাচিক শিল্প সাজায়। বহুমাত্রিক ছবি আঁকি। জানি রাজনৈতিক পরিচয় না থাকলে ছবিগুলো
কখনই চিত্রশিল্প হতে পারে না। আমি ক্রমশ জটিল থেকে জটিলতর হয়ে উঠি। ভয় জমতে থাকে।
জটিলতম খোলসের ভিতর গুটি পাকিয়ে বসে থাকি অসহ সময় মেপে। একদিন গুটি কাটবই। বের হয়ে
আসব রঙিন পালকে...
................................................................
অবয়ব -৩
নান্দনিক গতিচিহ্নের
সাথে মিশিয়ে রাখি বিজন ভট্টাচার্যের নাটক। আমার একান্ত পরিচিত আত্মভাবনারা ঘুরে বেড়ায়
দৃশ্যগহ্বের। রতিপত্র উত্থাপন করি ডেস্কে। টেবিলের ওপারে আমার পরম শ্রদ্ধেয় আমার
ভাবনাগুলো নাকচ করতে করতে এক সময় নিজেই রঙ চড়ান। ছবি আঁকেন চিত্রপটে। হাততালি আর
হাততালি। আমার প্রদত্ত হাততালির শব্দ তাঁর কর্ণবিদারক হয়ে ওঠে। আমি এখনও পুরোপুরি
অনুগত মার্জার হতে পারিনি। আমার পূর্বপুরুষ আমার পূর্বনারী এখনও অজস্র ক্যালশিয়াম
জোগান দিয়ে চলেছেন আরও দৃঢ় করতে চাওয়া মেরুদন্ডে...
...........................................................................................
ত্রিশে মে
(ঋতুপর্ণ ঘোষ স্মরণে)
ক্যালেন্ডারের পাতা
সরাতে সরাতে সামনে এসে দাঁড়ায় ত্রিশে মে। একটা থমথমে গন্ধ ঘুরে বেড়ায় ক্যানভাসে।
কয়েকটা মেঘ পিওন চড়ে বেড়ায়। তিস্তা ব্যাকুল হয়ে ওঠে। আর আকাশের ডান দিক থেকে বাম
দিক, বাম দিক থেকে ডান দিক করতে করতে এসে থামে তাসের দেশের ঘরে। প্রতিদিন ঘুমের ওষুধ
খেয়ে ঘুমানো লোকটার ঠোঁটে লাল দাগ সাজায়। চোখে কাজল। আর বুকময় দু দলা মাংস পিন্ড
সাজানো যায় কি না ভাবে। মনের ছন্দ বাজে। শরীর বদলে যেতে চায়। আদর চায়। একটা নিটোল
ভালোবাসা। টেবিলের উপর বসে থাকে রবীন্দ্র-পাঠের আরেকটা নতুন সোপান। নিথর হয়ে যায়
পুং শরীর। দূরে কোথায় যেন যুদ্ধজয়ীর অডিও রেকর্ডার থেকে আবার একটা চেনা গানের সুর
ওঠে। সেই চেনা বনমালীর পর জন্মে রাধা হয়ে ওঠার...
.................................................................
রাই-কৃষ্ণ পদাবলী – ১
চেয়ে থাকি সেই
নবদ্বীপচন্দ্রের দিকে। হাতের উপর মুখ রেখে আকাশের দিকে চেয়ে আছেন একা বিবাগী। রাই
বিষয়ক অনুসঙ্গ ফুটে ওঠে উদাস চোখে চেয়ে থাকায়। একা চলে একা একা। ফুটে ওঠে বাদল
দিনের কদমফুল। সুবিলাসী চোখে মেঘ জমেছে। অজানা কোনো এক সঞ্চারী ভাব ফুটে উঠছে।
শরীরময় রোমাঞ্চিত এক বিমোহন। রাধামোহন ঠাকুরের কথা শুনি। পুরাধুনিক পাঠের থেকে
দেখিয়ে দিচ্ছেন,
ভাবমোহিত চৈতন্য পাঠের উপাচারসমূহ।
...............................................................