অরুণিমা মন্ডল দাস
আমার সুমিদি
আমার
সুমিদি ------
সবুজের বিছানো
বাগানে যে মেয়েটি সদ্য যৌবনাক্রান্ত,উদাসী পেয়ারাতে মন লাগিয়েছে---
দুচোখে সংসারের ঝুটা স্বপ্নে লেবুর গন্ধ--প্রেমের সিটিতে
পুড়ছে ভরা যৌবন--
বাবার পান সেজে
দিচ্ছে,মা র আনাজ কেটে দিচ্ছে,
চুল বেঁধে দিচ্ছে--ভাইকে ভাত বেড়ে দিচ্ছে,স্নান
করে পূজো করছে---ধান সিদ্ধ করছে---গোবরের ঘুঁটে লেপছে--গরুকে ফ্যান খাওয়াচ্ছে--
সে আসলে এক নারী --
এক প্রেমিকা--
এক গরিব কণ্যাদায় গ্রস্থ পিতার কণ্যা---
#
নতুন অপ্রস্তুত কাঠের নৌকা--কেউ চড়ে নি--মাঝিও ভয় পায়--শালকাঠের
অহেতুক বঁাধন
নরম নরম শাখাগুলো ভেঙে দুমড়ে রোগাক্রান্ত না হয়ে পড়ে-
পূজোর নাসপাতি পচে ও মাথার প্রসাদ--
সুমিদি
কোন বিখ্যাত
কবিতার লাইন তঁাকে ছুঁয়ে যায়
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের নীরার থেকে কম সুন্দরী নয়
গ্রামের মেয়ে
রোমান্টিক
ডায়লগ, শেক্সপীয়ারের প্রেমের উপণ্যাস, রোমিও জুলিয়েট,রাধা
-কৃষ্ণ,কিশোর কুমার কুমার শানু রোমান্টিক গান
কোমর, বুকের
উপর দিয়ে খড়্গ দিয়ে আঘাত হানে
উনিশের দিদি
আমাকে নিয়ে যায় ছাদে---একসংগে হাসি,ভাত খাই
কত ভালোবাসা বাসি
র ছেলেদের গল্প ,রঙিন যৌবনে পেঁয়াজের নেশা--
লাল সালোয়ারের
ঝঁাজে দূর্গা মুখি উচ্ছল, অনন্ত
যৌবনা দিদি আমার---
কাতলা মাছের ঝোলে হাত ডুবালে ভাতগুলো রূপের তেজে লজ্জাতে সরে যায়
পরেছে হলুদ
শাড়ি, চোখেতে কামনা ,মনেতে ভরপুর ভাঙের তৃপ্ততা,
মাঘ মাসের
বেহায়া হাওয়া তে এক বালতি শৃঙ্গারে কাতর---
সাইকেল টি পাশ
কাটিয়ে যাচ্ছে ,লাল গোলাপটি বারবার অক্ষত প্রেমিক
বিভ্রান্ত
অশোকের শেষ কলিঙ্গ আক্রমণ,
সিনেমার প্রতিটি বিট তালে তালে যৌবন গ্রাস করে নিচ্ছে---এক উলঙ্গ
হায়না র আনস্মার্ট আক্রমন
#
সুমিদির প্রেম
--- উচ্চমাধ্যমিক পাশ বালির বস্তার গতি চাই--
সে কোন বড় কবির
মেয়ে নয় ভাইঝিও নয়
কোন ডাক্তার প্রফেসারের রক্ত ও তঁার ধমণীতে বইছে না
গোলগাল চেহারাতে কৃষক -গন্ধে এক ঝুড়ি ধানের শুদ্ধ সেঁদো
স্পর্শ---দেহের চারিদিকে খেলা করছে---
পণ
নেই---চাকরি নেই--গুটিকতক ময়ূরপালকে ভর্তি বই আর অনামা প্রেমপত্র আছে---দিদি---
আমার সামনে
দঁাড়ালে --
একগুচ্ছ রজনীগন্ধার ধোঁয়ায় উপচে পড়তাম
ছেলে বন্ধু গা ঘেঁষলেই
হাজার বিষপিঁপড়ে মাথার মধ্যে কামড়ে ধরত,যন্ত্রণায় ছটফট শেষপাতের অসহায় পাকাল
মাছ--
#
মেয়ে বলেই হয়তো
ভালো লাগত ,বলতে পারতাম না বলতে পারতাম না
আমার একাকীত্ত্ব ,অস্থিরতা, ------
দিদির সেই চোখ,মুখ
আজও মনে পড়ে,জড়িয়ে হাসিটা আজও কি আছে---
আজও
কি দিদি ধানক্ষেতে ধানক্ষেতে ঘুরে বেড়ায় ,তেঁতুল
গাছের কঁাচা তেঁতুলের আচার খায়,ধানকাটার
সময় ফিসফিসিয়ে লুকিয়ে পালায়
গ্রামের মন্দিরে রাতভোর অবধি আড্ডা মারে,পেয়ারা
গাছে উঠে চোর -পুলিশ খেলে
এক ঝটকায়
ব্রেসিয়ার খুলে গেলে খিকখিক হেসে লজ্জা পায়---
স্কুলের নীলপাড়
শাড়ির বুক হালকা আলগা হলে---দিদি আজও কি আগের মতোই চমকায় ---বারবার তুলতে থাকা
বুকের শাড়ি আজও কি লুকোচুরি খেলে---
সুমিদি-----
আজ
বিবাহিত দুর্বল
অসহায় বেড়াল
শাড়ির পাড়
ছেঁড়া, সায়ার দড়ি বের হওয়া রোগা
তোবড়ানো গাল
তেত্রিশী
বুড়ি----
বিবাহ নামক
নিয়মের বলি---
এখন
সুমিদির সময় নেই ---
সময় নেই
নিজেকে ভালো রাখার ভালো বাসার ---
চারিদিকে থোকা
থোকা ফুল ফুটছে---দুদিন পর ঝরেও পড়ছে
আমার সুমিদি কি
ঝরে গেল---
দুটো বাচ্চা
নিয়ে উনুনের সামনে বসে চোখের জলে দিদি আজও কি ভাবে--
হঁাস, মুরগি, ছাগলগুলো
বোধ হয় দিদির হাতের স্পর্শ খঁুজছে----
রাতের পসরা
গানের কীর্তন পালা মুখ ভার করে দঁাড়িয়ে
গ্রামের
সীমানাগুলো দুপুরের রোদে নিরব ,একা---
থমথম গ্রাম্য সভ্যতা--অপ্রেমের নরক--
সরষের
ক্ষেত ,কলাবাগান, বর্ষার জল,ঝিরিঝিরি মৌসুমী বায়ু --
আবার কি
আমার দিদিকে
ফিরিয়ে আনতে পারবে---
উনুনের ধোঁয়া ,সরবত ,ছাগল গরু গোয়ালের গন্ধ,
ধান রোয়া ,কাটা,তোলা, ধান সিদ্ধ থেকে চাল বের করা, বাচ্চার
স্কুল ,টিউশান, স্বামীর পেটের রোগ,
সুগার ---নিজের কোমরে ব্যথা , বঁাচতে অনীহা---
থেকে অনেক দূরে---
যেখানে কোন সমাজ থাকবে না--রান্না থাকবে না--- শঁাখা পলা
বাসনের একচেটিয়া লাল চোখ থাকবে না--স্বামী নামক ছড়ি ঘোরানো এক খেয়াল থাকবে না---
একঘর
আনন্দের চকোলেট মুখে পুরে সারা দিন এ বাড়ি ও বাড়ি ঘুরে বেড়াবো
দুই বোন গাছের
ডাল ধরে ঝুলে ঝুলে আম খাব--
সংস্কারের হাওয়াগুলোকে হাতের মুঠোয় এনে অণ্যদিকে বইয়ে
দেব
সুমিদি
সংসারের এক
একনিষ্ঠ ভক্তিমতী চাকরাণী
বছরে দুটো
ছেঁড়া শাড়িতেও ঠাকুরের বড় মানত করা চাই
স্বামীর
অবৈধ চোখে পড়লেও অন্ধ বিষ্ণুপ্রিয়া --
ভেজা
উঠোনের মেঝেই স্বর্গের বিছানা--
#
আমষির
শুকনো ছালেই কি গরিব নারীতন্ত্র বিছানো---?
শুটকি
মাছের গৌরবই কি সংসার ধর্ম--?
#
অপ্রেম---১
তঁার
দেওয়া ভরা কলশীর আবেগগুলো আলনায় সাজিয়ে রাখলাম
কলশীর মুখ খুলতেই একঘর অপ্রেমের ধোঁয়ায় চোখে জল--
#
প্রতিটি
কলশী বিভিন্ন রঙের ছিল
রঙিন
অপ্রেমে ভেসে বেড়াতে ভালোই লাগে
ভূমিকম্পে গাছ পালা ,ঘরবাড়ি , সারা পৃথিবী ভেঙে পড়লেও
আমি কিন্তু তঁার বুকে ই থাকব--বুকটা হয়তো অর্ধেক বেইমান-
#
বিরহের
বরফে কাতরাতে কাতরাতে পেন কাগজগুলো আস্ত অজগর
গোটা
অপ্রেম ব্যাঙ টিকে গিলে সে একজন সম্মানীয় মধ্যবিত্ত প্রেমিক
#
অপ্রেম--২
চায়ের কাপে
ফার্স্ট চুমুক--
পরিষ্কার সকাল চোখ মেলল
মেঝেতে
পড়ে থাকা অপ্রেমের যন্ত্রনাগুলো
আবার
আমাকে জড়িয়ে ধরল
#
ফোটা ভাতের
ফ্যানে লুকোতে চাইলাম
পুড়ে পুড়ে
গ্যাসের ছাই---
হাত
পা ঘর ঝঁাট দিচ্ছে
মনের
বেডসীট কঁাকড়াবিছের বিষে অস্থির
অমৃতে ডুবে বিষে বিষ ঘষি--যখনই দেখা
--তখনই হেসে“হাই”---?
#
যাবে যখন
চলেই
বসে একটুখানি
কলাপাতা চিবাও
ভালোবাসা যদি ভালোবাসা হয়
শীতেও ঘাম
বইলে---শুষে খেও---!
অপ্রেম---৩
নির্জন মাঠে আমি একা দঁাড়িয়ে। আকাশ চোখে মুখে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। জলের কলকল
ধ্বনি পিঠে মাথা রেখে সরুসরু হাওয়াতে আমাকে বইয়ে দিতে চাইছে--
ব্যথাগুলো ম দাদার হাতে রেখে এসছি! বেমালুম ভুলে গেছি দুঃখকে এখানে ব্যাগে করে আনতে--
ম দাদা দুপুরে ঘুমোয় ---আমার হৃৎপিন্ড তঁার শরীরের কোথায়
একটা লুকিয়ে আছে--সে যখন হাসে ,খালি গায়ে মৈথুনে কাতরায় তখনই আমি ফুল হয়ে ,খুশি
হয়ে, সুখ হয়ে তঁার গোপন অঙ্গে বসবাস করি --আমি তঁার
একমাত্র পরজীবি প্রাণী--মিথোজীবিতা য় মিত্রতা স্থাপন করি-- কান্নাগুলো পোস্টমডার্ন করে আমাকে খায় ---ছুরি
দিয়ে দুজনের রক্তে দুজনায় স্নান করে পরিতৃপ্ত থাকি--
অপ্রেম---৪
(উৎসর্গ পুনরাধুনিক)
পুনরাধুনিক
পড়তে পড়তে হাই তুললে বাইবেল ,গীতা আমার দিকে ছুটে আসে
চোখ মুছিয়ে আঙুল
দিয়ে যীশুর কবর খুঁড়ে ভগবান দেখায়
গীতার কৃষ্ণ ও
অনেকবার জরাসন্ধ বধ দেখাতে চেয়েছে
ঠেলে ফেলে
ধর্মীয় আবেগ ,স্বরবৃত্ত ,অক্ষরবৃত্ত,
ভাব,
ছন্দ, তাল, জীবনানন্দ ,রবীন্দ্রনাথ
সংক্ষেপ হতে
থাকলাম যেমনটি অপ্রেমে মাথা ভাঙলে হয়
পূর্ণচ্ছেদগুলো এতোটাই কাছাকাছি হতে চাইছে
সঙ্গমে কিছু
করার আগেই শেষ হয়ে যায়
যৌনাবেগ ছাতা
খুলে ফোটানোর আগেই বৃষ্টি শেষ হয়ে গেল!