শনিবার, ২১ অক্টোবর, ২০১৭

মোস্তফা নূর



মোস্তফা নূর

দুরন্ত এক স্বপ্নের কথা
=====================
সময় আবারো বলছে দুরন্ত এক স্বপ্নের কথা 
অবিরাম গতিশীল বিষ্ফারিত আলোর কথা শুনি    
আলো টেরপায়; তার পেছন পেছন ধেয়ে আসছে 
ভয়ঙ্কর অন্ধকার, অবিশ্বাসের কালোঝড় 
ঘনিভূত সংকটের একটু আগে সময়ের রথ থামিয়ে 
নিজেও থেমে গিয়ে দেখে নেয় পেছনের পথ   
কী আশ্চর্য! আলোর হঠাৎ থেমে যাওয়ার ঘটনা 
বুঝতেও পারেনি অন্ধ অন্ধকার!
আলোহীন ক্ষণিক সময় কাটে, দুর্বলরা হতাশ হয় 
অন্ধকার আলোর মুখোমুখি হয়না কখনো জানি
সেদিন আলোর মুখোমুখি হতেই মুখ থুবরে পড়ে
পেছন হতে আক্রমনের সুযোগ হারায় অন্ধকার
বিশাল এক জিত হয় আলোর।
একটি সুদীর্ঘ সুন্দর সকাল আসে নতুন করে
এখনো সেই আলো বেঁচে আছে হাসে মাতে 
আছে অন্ধকারের সমাধি বোবা কালোরাত ও  
বেঁচে থাকবে আলো পৃথিবীর শেষ দিবসের সন্ধ্যা অবধি 
সেই সন্ধ্যাও জানি আলোর পর্বান্তরের কাল, ক্ষণিক পর্ব 



রোহিঙ্গারা মানুষ কি নয়
======================
রোহিঙ্গারা মানুষ কি নয় কারা ওদের মারছে?
অত্যাচারী জিতছে বুঝি মানবতা হারছে !
নাফ নদীতে ব্রীজ করে দাও মজলুমেরা বাঁচুক
মরছে যারা মানুষ ওরা বাঁচতে চলে আসুক।
মঘেরমুল্লুক কাটছে মানুষ আবাল বৃদ্ধ শিশু
ওদের কাছে মিছে বৌদ্ধ অলীক ঠেকে যিশু।
গেরুয়া বেশ পরে ওরা খুনের নেশায় মাতে
সূকীর কথায় জল্লাদেরা খর্গ নিয়ে হাতে।
ডাইনোসরের জাত নেমেছে ইতিহাসের পথ 
ফ্রিজ করে দাও বার্মা নামক নষ্ট কীটের ব্রত।
চিকিৎসা দাও দাঁতাল মঘায় উন্মাদে দাও বেরী
বিশাল ক্ষতি করবে ওরা করো যদি দেরী।
দাঁত কেলিয়ে হিংসা ছড়ায় দাঁত ভেঙ্গে দাও দেখে
জন্তু জাতে সভ্যতাকে কখ্খনো না শেখে।
ভাই-বোনেরা গুমরে কাঁদে ভাই-বোনেদের পাশে
আমরা নিঠুর ফিরিয়ে দেই নাফ নদীতে ভাসে।
ওদের জন্যে কেউ বুঝি নেই পৃথিবী আজ মরা
নতুন বিশ্ব তৈরী হবে পুরান বিশ্বে জ্বরা।




নদীর মতো
==========
এক নদীতে অঢেল পানি একই সাথে চলে
কিছু পানি সংগ্রামী হয় উথালে পাথালে।
কিছু পানি সুবিধা চায় দুপাশ ধরে বহে
পঁচা-মরা ঘোলা ময়লা পুতঃ শুদ্ধ নহে।
তবুও যে সকল পানি একই পথে ছোটে
বিভাজনে লাভ হবেনা কারো জন্যে মোটে।
স্রোতের তালটা সঠিক রাখা নাব্যতাও লাগে
স্বচ্ছ ঘোলায় বিবাদ কেনো ঐক্য সবার আগে।
শিয়া-সুন্নি পীর-ইমামে হাজার ফেরকা বানায়
পরস্পরে যুদ্ধ করে হাজার অস্ত্র শানায়।
সুফী সাধু সন্ত মিলে এক টেবিলে বসো
মানবতার ঢিলা সুতা আগের মতো কঁশো।
কেউ কারেও আঘাত করার কারণ কেন খুঁজবে
আসল কারণ হৃদয় হতে অন্ধকারটা মুছবে।
নদীর মতো সাগর পানে মিশতে চালো আবার
সবাই পাবে সমান শান্তি যার যেমনটা পাবার।




দিন জেগেছে  
=============
বাদুর পেঁচা ঘুমাতে যাও
দিন জেগেছে দীঘল
শুভ্র সকাল ডাকছে এসো
শান্ত কপোত ঈগল।
ঠোঁটে নখে রক্তপাতের
দাগ লেগেছে অনেক
মাসুল গোনার সময় এটা
ভাবো একটু ক্ষনেক।
বিচার মাঠে ক্ষমার বাণী 
তৌওবা যদি করো
নইলে বিচার কঠিন হবে
দ্বিগুন ত্রিগুন আরো।  
শহীদানের সন্তানেরা
আসছে পিতা-মাতা
স্ত্রী এবং আপন স্বজন
ভগ্নি সকল ভ্রাতা।  
সবার কাছে ক্ষমা চেয়ে
হাল্কা করো বোঝা
হয়তো পেতে পারো ক্ষমা
হৃদয় করো সোজা।




দাঁতাল শুকর
============
সুনসান সুন্দর শান্ত বাংলাদেশ আলোময় সবকিছু যেনো
ছোটপাখি প্রজাপতি বর্ণিল পতঙ্গ সবুজ বুনোপাতায় নাচে
এতো আয়োজন তুমি আসবে বলে আকাশ নীলাম্বরী পরেছে গাঢ়
সাদা কোদালামেঘের জমিন বসেছে বুকে হৃদয় উঁচুতে সে আসন
এসে দেখবে বন্ধু এখানে মানুষ নেই যতো চিন্তক গেছে মরে
চোখ তুলে গোঙ্গায় কলমের প্রজন্ম ধুলোময় শিল্পীর তুলি
রম্যকলা কার্টুন কবিতা এবং গান সেরদরে বেচে দেয় কারা
তারা আর কেউ নয় বাংলাদেশের লোক গাল গল্পের শেষে ঘুম
কাজের ভার দিয়েছে অন্যের কাঁধে তুলে খিলখিল হেসে বলে বাহ্
এখানে পরস্পর লুটেরা আর দালাল গণতন্ত্র বিরহে কাঁদে
আসলে শুনতে পাবে জীবনের রাশ টেনে চিবিয়ে খেয়েছে অদৃশ্য
আদিষ্ট হয়ে নাচে যায় সন্ধ্যার আগে আধারের কাজ সারে কারা
বলি ভেতরের কথা শোনো মনদিয়ে সব বেহিসাবী যতো মন্ত্রকে
একবার শোর তুলে বলো, আমি আছি এই সরে যাও দাঁতাল শুকর।





অমোঘ তৃষ্ণা মাটির
==================
প্রতি অনু পানি আবাদি মাটিতে মিশে আছে ঘাম মানুষের 
ঘাম চায় শুধু উপরিতলের মাটিতো বোঝেনা জাত পাত 
অভ্যন্তরের অমোঘ তৃষ্ণা বিশেষ প্রকট যে দুরাচারীর বিরুদ্ধে
মাটির চাওয়া; তৃষ্ণা যে বুঝি সৃষ্টির আদি হতে আজো 
মুক্তিকামীর শ্বাসে ঘ্রাণে খুশী হয় হাসে খুলে দেয় 
বুকের কপাট দেয় ভালোবাসা মাটি হতে চায় মুক্তির
পক্ষে শহীদি রক্ত এবং ফসিল মিশে তো শিহরিত 
মাটির শরীর ক্ষণে ক্ষণে স্বপ্নময়তা প্রশান্ত- 
আত্মা সমীপে হাঁটুগেড়ে বসে জীবন্ত হয় জেগে উঠে
পৃথিবীর মায়া ছড়ায় ফুলেরা যে তৃষ্ণার্ত মাটি আজ
বোবা কান্নায় উপরিতলেও গভীর গহীন সাম্যের-
প্রয়োজনে চীর সংগ্রামী যারা গণমানুষের পক্ষে যে
রক্ত ফসিল; গলে গলে যায় মাটির পাষাণ; মজলুম 
সাজায় বসতি আলোর বৈভবে শিহরিত হলে সব কিছু।




মাছের নামটি গাপ্পী  
================
গাপ করে খায় নাপ্পি
মাছের নামটি গাপ্পী
মাছ কি খাবে বালা
বাজেট খাবে নালা
নালায় এবং খালে
দখল করার তালে 
আর কি আছে লুটের
উর্দি বিহীন বুটের
ছোট বড় লুট যে
বলছি কিনা ঝুট যে!
দোষ করেছে পোলা
মনটা তাহার খোলা
ডিজিটালের ক্ষতে
কেল্লা যাবে ফতে
আহ্ চিকন গুনিয়া
বাহ্ বলে শুনিয়া
রাজা যে তার বাপ্পী
গাপ করে খায় নাপ্পি
মাছের নামটি গাপ্পী



জাগৃতির বাতাস  
==============
বাতাস বন্ধ যদি তার সীমানায় চলো
সাঁ সাঁ শব্দ শুনছো, নাকি বোবা স্থবির
বাতাসের মুখ হতে কুলুপ ছিনিয়ে নিতে
আবার খাটাবো পাল, অকূল সমুদ্র মুখে 
স্বাধীনতার কথা স্বাধীকারে পাগল 
কাঙ্খিত ভালোবাসা এবং তার হিসাব
বুঝে নেবার সময় শব্দ শুনছি কিছু 
সবাই বুঝবে কথা সবাই ভাববে তাই
ভাবনা তোমার হয়ে আমার হবে যখন
বাতাসের দায় আছে তাকে বলছি বইতে
সে যেনো বীরত্বের বাবরী দুলিয়ে বয়
হয়তো সে ধমনীতে প্রকাশ করুক ব্যথা
বয়ষ্ক যোদ্ধার পেশী রক্তের ভারে
নত হয় সব চোখ তখনো বাতাস চাই
এই প্রান্তের শুরু ওই প্রান্তের শেষ
সবখানে বলে যাক নিঃশ্বাসে বিশ্বাসে
গণতন্ত্রের ঘ্রাণ ছড়িয়ে সকল প্রাণে
জাগৃতির বাতাসে সুনামী হোক তবুও। 




খুঁজেছি তাকে
============
উচ্চকিত যার হৃদয় আমিতো ভাই খুঁজেছি তাকে
গতি সামলে চলছে যারা খর-মঔজ মোহনা বাঁকে
আলোর চেয়ে গতিমান সে আস্থায় দৃঢ় মনোবল
প্রয়োজন যে আজকে তাকে; মহামুক্তি দিন বদল।
নিরাসক্ত দূরগামীর চাদর ভাসে মহাশূণ্যে
পৃথিবী হতে কিছু নেয়না যারা নিজকে অন্যে-
বিলায় সব.আলোর কাছে ঋণ হয়েছে বিশালকায়
ঋণের ভারে কুঁজো হবার সুযোগ দাও আমি তা চাই
আজো তাদের খুঁজছি আমি জলে-স্থলে বন্ধু শোনো
মৃত্যুভয় কিংবা লোভ জীবনে নেই শংকা কোনো
কলমী কথা কাগজে আঁকে সপ্তকের পক্ষে থাকা
ঘুমন্ত না, নির্বাক না, বোবা নয়তো মনটা বাঁকা
আমায় দাও সে সংবাদ যার আলোয় চেতনা জাগে
সাহসে নাচে তারকা চাঁদ উদাসী চোখে আলোর ভাগে।




অস্তিত্ব
======
হারিয়ে খুঁজেছি যখন আমাকে, টুকরো করেছে জীবন
আঘাতের চাপে বিচ্ছিন্নতা তখন আবারো খুঁজতে
ডুবুরীর মতো নিজকে হরেক ডুবু পাথরের প্রবাসে
খাঁজে খাঁজে নামি বিষাক্ত হই ফিরে আসি ফের বায়ুতে  
দাপটে গভীর নিরবতা মাঝে নিমর্জ্জিত যে সময়
এখানে সেখানে জমা করি তুলে অন্ধকূপের কালোয়     
আমার নিজেরি অস্তিত্বকে কচলে দেখেছি দুহাতে 
একটু একটু জমা হতে থাকে বিক্ষিপ্ততা প্রগাঢ়- 
রক্তকণিকা, নানান রঙের বিন্দু বিন্দু দুঃখ
সুখ সম্মান মর্ম বিদারী কম্পন গুলো একত্রে
জমা হতে থাকে অযুত কষ্ট কথা হয় তার, শ্বাসে
উঠে আসে মন ধমণীতে ধীরে সবাক সজাগ কলম
নিঃশ্বাসে বুঝি সে নিরবতার কৈফিয়ত ফোটে আবার
জমা হতে নেয় পুরোটা সময় খুঁজতে নেমেছি যেখানে
স্থিরচিত্তে উচ্চারণের দৃঢ়ভীত গড়ে; হালকা
জিহ্বায় নাচে উচ্চারিত যে শব্দ অনায়াসে সেইতো
মহানন্দের পুতঃ হিন্দোল অস্তিত্বে হয় ব্যাকুল।




স্বৈর-নাসিকায়  
============
মানুষের যতো ভিন্ন ইচ্ছে ভিন্ন সবার হরেক পথ
একপথে টেনে একসাথে যদি চালাবার চাও সেই মানুষে   
বিপর্যয় শেষে কাতর গোঙানী মর্যাদা হারিয়ে; বাঁচেনা কেউ 
এক বিধ্বস্থ সম্প্রদায় যেনো নষ্ট ফুলের ধূসর কলি 
কোন বাগানীর হত অভিজ্ঞানে এমন সাধনা থাকতে পারো!
ওপিঠ পৃথিবী ঘুমে অচেতন এপিঠ বিশ্রামে ভাগে বিভাগে 
কেউ যে ব্যস্ত দিবস রজনী; আবর্তনে চলে হাঁটে নিয়ত 
পরস্পর সব অন্যকে ছাড়ছে নিজের রাস্তা সুগম রেখে
কাকে কার স্থলে বসিয়ে নিচ্ছ স্বৈর-নাসিকায় নিঠুর ঘ্রান! 
মানুষ কখনো একাকী হাসেনা একাকী বাঁচেনা নিজেকে নিয়ে
চরম ত্যাগের উদার সময় আনন্দ নিয়ে পরিতৃপ্ত
স্বাধীনতা নিয়ে অবিরাম বাঁচে অধিকার যত আরাধ্য তার।
 



সময় জ্বেলে   
------------------
শব্দ খোঁজে সময় জ্বেলে সামনে পিছে তাকায় 
কিছু শব্দ কাঁদায় বলে বিবশ ঠেকে সকাল
উড়িয়ে দিলে ফিরবেনা সে পড়বে দূরে ফাঁকায়
ব্যর্থ হলে ভিন্ন কিছু হারিয়ে কাঁদে বিকাল।

সময় পোড়ে পাতন জমে লিখে ভরাট পৃষ্ঠা
চাঁদ সূর্য সমান হাঁটে দায় বুঝলে সাঁতার
ডুবলে নাচে দিকভ্রান্ত নূড়ির যতো নিষ্ঠা
গাছের মূলে মাটির ঢিবি আলো-বাতাস পাতার।

কার হিসেবে কি সব আছে কার পরাণে কি চায়
অসীম হাসে মুচকি হাসি অনুক্ত সে যখন
হাজার আসে শতক পরে অযুত শূণ্যে নাচায়
পংক্তি সাজে জাগায় সাড়া কবি হাসেন তখন।
ফুটতে হাসে ফুলের কলি বৃক্ষ জাতে বাঁচায় 
শেষ ভরসা- কলম বাঁচে শব্দ নাচে সঘন।





মধু চাই
--------------
কি ঘটছে কোথায় বুঝতে চাবনা যে কখনো আর
শুধু চাইবো মধু, নাগিনীর বিষ হতে নেমে আসুক
পরিণতি মানিনা অনাহুত সে সব; আবর্জনায়
রুয়েছি মধুফল, যৌবন রাখা আছে ওখানে সবই
ভুলে গেছি ভাবলে! স্মৃতিভ্রমে ভুগিনা সেই অতীত
এখনো দীপ্যমান, মধুতে চাইবোনা ভুলেও বিষ।
ক্ষয়িষ্ণু সভ্যতা বেপরোয়া পিশাচে লাগাম টানি
নখরার আঁচড়ে কামড়ে উছলায় রক্ত এবং
চিৎকার, এখানে থামাতে চাই নিদ্রা নিঝুম রাত
উদ্বেগ নিয়ে আসা ভীরু কাপুরুষের হাঁক ডাকের
কখনো কাম্য নয় সে প্রবেশাধিকার পায়না যেনো
বুকের নিঃশ্বাসটি বেরিয়ে গেলেও যে তোমরা আছো
আওয়াজ ছড়িয়ে চারদিক সতর্ক রাখো রজনী
অহর্নিশ অশ্রাব্য কাতর গোঙ্গানীতে অশুভ স্থুতি
মধু চাই শিরায়, কাণ্ড শিকড় পাতা ছুয়ে আসুক
যৌবনের দাবী তো মুক্ত সমুজ্বল, সুদীপ্ত সে।




রূপেররাণী
----------------
লাল সবুজের বসন্ত আজ
ফুল মুকুলে খাসা
বাগ-বাগিছায় হরেক পাখী
শিল্পীত সব বাসা।
এমন সময় প্রাণ সাগরে
সুরের দোলাচল
চাঁদের আলো সবুজ পাতায়
সাজছে মখমল।
শেষ করেও হয়না যেনো
রূপের কথা শেষ
জগৎ সেরা রূপেররাণী
সোনার বাংলাদেশ।
কলম হাতে কবি আসেন
বাঁশির সুরে চুপ
ভাবনা জুড়ে ফাগুন ধারা
বহে অপরূপ।





কখনো সে দিনে
---------------------------
কখনো সে দিনে ফিরে আসা হলে আমায় ডেকো  
এখনো উড়ছে তোমার সীমায় তাকে তো দেখো
বাতাসের ভাষা অষ্ফুট বেদনা দুলছে শোনো 
ঝরে গেছে কতো দীপ্ত ফুলকলি বৃন্ত কি গোনো।

দেখা হলে বলি, অনন্ত সময় সুবোধ কাল
একটু দাঁড়াও যেভাবে দাঁড়ালে দেখি সকাল
ফিরে আসে সব স্মৃতির পাতায় সম্ভ্রম হয়ে
নুড়িপাথরের কল্যাণে দিয়েছি বাঁধ 
খরা নদীচরে জেগেছে অঢেল প্রেম-বাগিছা   

 
   
 
লাল শাড়িটির ভাঁজ
------------------------------
ভাবছি তোমায় ভাবছি জীবন
কেমন হবার ছিল
মাথার পরে আস্তে করে
ঘোমটা টেনে দিলো।
ঘোমটা পরে ত্বন্বি মেয়ে
লুকিয়ে রাখে আলো
হাত ধরেছে অবুঝ সময়
যে বাসেনি ভালো।
অভিনয়ে পার করেছো
অনেক বেলা আজ
মুছে গেছে রূপের আবীর
লাল শাড়িটির ভাঁজ।
তোমার সাথে কথার কথা
কে বলেনি হেসে
আমি কিন্তু দূরে ছিলাম
একলা ভালোবেসে।




আলোর পথে কষ্ট আছে
-----------------------------------------
আমি যখন চলছি একা দেখছি তুমি হাসো
সময় গেলে আর পাবেনা পারলে সাথে আসো
আলোর পথে কষ্ট আছে সইতে হবে চাপ
দোজখ যেতে সহজ দেখো করছে যারা পাপ
আজ যদিও দিনটি গেলো কালকে এসে ভাবো
আমরা বুঝি আর কখনো গত দিনটা পাবো!
তখন ফিরে আসার মানে পিছিয়ে গিয়ে কাঁদা
আর পাবেনা হারিয়ে গেলে সময় দেবে বাঁধা
দিনলিপির পাতার ফাঁকে খুঁজছি অবকাশ
ব্যর্থ হলে ক্ষমা করো এ জীবনের চাষ
হয়তো বৃথা মনের ভুলে মানতে পারো হার
নিজের বোঝা বইছি একা সাগর নদী পার
সুখে থাকার বাহানা হয় পরাধিনের জাতে
ভোগবাদীরা মাশুল গোণে পঁচন ধরে আঁতে
সহজ কিছু পাওনা নিয়ে কাপুরুষের দল
খোঁজে আরাম দুষ্টমতি করে হাজার ছল।




ছায়াবাজি
(অপহৃত প্রিয় কবি ফরহাদ মজহার কে)
মোস্তফা নূর
--------------------------------------
উড়ে যাবার পরে আবার কেমনে ফিরে আসে
মনটা কাঁদে হৃদয় আমার যাচ্ছে বনবাসে।
চল ওখানে দেখার কাজে আরেকটু দূর যাবো
আসা যাওয়ার বুঝলে মানে তার ঠিকানা পাবো।
ভালোভাবে উড়িয়ে দিয়ে বেঁধে দেবো ডানা
হাসা-হাসির গল্পটা না ছাড়তে করি মানা।
খাঁচাশুদ্ধ উড়ছে পাখি উতর দখিন যায়
অনেক নিচে ছায়ার সাথে আমি খবর নাই।
অপহরণ! ছায়া-মরণ! ছায়াবাজির নামে
আসল মরণ সবার আসে মানেনা তা বামে।
বামের পক্ষে মিছে-মিছির অজানা দেশ-কালে
মজহারে কী বুদ্ধি খেলে শুদ্ধি মেজাজ হালে !
কবির কাছে কলম এবং সুন্দরী হয় প্রিয়
হাত ফঁসকে ভাবনা পালায় তার ঠিকানা দিও।




সক্রিয় চোখের জন্যে
---------------------------------
অলস চোখেদের ভীড় জমেছে ব্যস্ত রাস্তায়
ওরা কাঁদেওনা, নিষ্পলক নাকি সজ্ঞাহীন!
ওদের শোনাবেনা কোনো সম্পর্কের কথা
আহা ! বলে দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে গেলে বিপদ
পরাজয় মানিনি কখনো, বাকীতো সামান্য পথ
এভাবেই পেরিয়ে যেতে চাই সক্রিয় চোখে
নিষ্কৃয় দীঘল নিষ্পলক থাকা আড়ষ্ঠবাদী -
হীন স্বার্থপর চোখ যেনো না জন্মায় পৃথিবী
ফুটপাতে হোক বসতি আমার তোমার
তাতে কিচ্ছু যায় আসেনা পলকদার সংবেদনী
দুটি চোখ তো আমার ছিল আছে থাকছে
সৃষ্টির সকল সৌন্দর্য অবলোকনে সকল পথে
চলায় বলায় সক্রিয় থাকা জোড়া চোখ হোক
সকল ইতিহাস চষে আসা মানুষের চোখ।




সাম্যতা সুখ  
-------------------
ভিড় ঠেলে হেঁটে যাই ভিড় কতো বিশ্রী
পার হয়ে পাই যদি মিঠা তালমিশ্রী।
এই ভিড়ে সুখ দুঃখ জড়ো হয়ে থাকে 
জীবনের হালখাতা আলপনা আঁকে।
ঝরে গেলে রাস্তায় জড়ো হয় লোক
টিপ দিয়ে শিরা দেখে আহা কতো শোক!
বুকে তুলে নেয়না তো মেডিকেলে কেউ 
মানুষেরা বস্তুত: হয়ে গেছে ফেউ।
চোখ মুখ ঠিক আছে আসলে অন্ধ
বোবা কালা জান্তব সব কিছু বন্ধ।
ঠিক আছে খানাপিনা মজা ও মাস্তি
ভুলে গেছে আখেরাত সাজা বা শাস্তি।
এর মাঝে কিছু লোক টিকে আছে ভালো
এরা বুঝি পেয়েছিল কোরানের আলো।
মানবতা ভরপুর মায়া ভরা বুক
এ মানুষ দিতে পারে সাম্যতা সুখ।
ভিড় হতে খুঁজে নিই অম্লান হাসি
সবার জন্যে কুড়াই ভালোবাসা বাসি।




মধুময় দিন
----------------
এক দুই তিন চারে খেলা ভেঙে যেতো
চোখের বাঁধন খুলে হাতে নিয়ে নিতো।
কানামাছি থেকে যেতো অপূর্ণ খেলা
আজ ভাবছি আমার সে কিশোর বেলা।
আম জাম জামরুল আষাড়ি কাঁঠালে
কী যে মজা হতো ভাই নানাজি পাঠালে
এতো সব রসাফলে ভরে যেতো বাড়ী
আজ নানা নানী নেই চলে গেছে ছাড়ি।
গাছ গুলো বেচে দিয়ে মামারা খেয়েছে
আম্মা তো দেখে সব দুঃখ যে পেয়েছে।
ভাবিনি তো বাগানটা বেচবে টাকায়
লোভের ঘ্রাণে ওরা ছুটছে ফাঁকায়।
রুই মাছে ভরপুর পুকুরের পানি
নানাজান মাছ ধরে জাল দিয়ে টানি।
লাল দুটি চোখ তুলে মাছেরা তাকায়
নানীজি বলেন দেখে ডিম ওলা হায়!
পুকুরের পাড়ে ছিল মধুগাছ লতা
সোনা মাপে ফল দিয়ে মিষ্টি তো পাতা।
নেই সেই মধুগাছ মধুময় দিন
হারিয়েছি সে সময় ব্যথা চিন্ চিন্।




চারভাগে তিনভাগ
------------------------------
পৃথিবীর চারভাগে তিনভাগ পানি বুঝি তাই
তিনভাগ মানুষের হৃদয় ক্ষরণ মেশে
একভাগ সুখী যারা তারা থাকে চুপচাপ বেশ 
একভাগ জীবনের জন্যেতো তিনভাগ ফেঁসে।

মানবের দেহ গড়া তিনভাগ পানিতে যে ঠিক
মুহূর্ত থেমে নেই একভাগ ফসিলের ক্ষয়
দেহ হতে সরে গিয়ে রক্তের স্রোতটি নামে 
তিনভাগ জলধারা মৌজের সাথে মিশে রয়।

একভাগ ফসিলের ভোগ নিয়ে উর্বর মাটি
তিনভাগ রক্তের জোগানের পরে দেয় সায়
তিনভাগে আমি আছি তুমি আছো সেও আছে জানি
সামান্য একভাগে আমাদের জীবনের দায়। 
কান্না কি মিছেমিছি সুখটুকু অম্লান নয়
ভেঙে নেয় জোড়া সব বারবার ভাংচুর হয়।