মঙ্গলবার, ২১ মার্চ, ২০১৭

সম্পাদকের কলমে



হাতের কাছে ইচ্ছাকাতর
ছিল একটি পরশপাথর
সবাই বলে। কিন্তু আমি জানি
সেই কথাটা সত্যি না-
বরং আমার অনাথ দিনের কবিতা
সেটাই আমার বেঁচে থাকার, ভালোবাসার
সরাজীবন পিপাসার যোগ্য পুরস্কার।
পরশপাথর- কবি বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়

কবির কাছে তার কবিতাই তার বেঁচে থাকার ভালোবাসার আজীবন সাহিত্য সাধনার যোগ্য পুরস্কার। একটু চিন্তা করলেই এই অমোঘ সত্যটি অনুধাবন করা সম্ভব, জীবনের অন্তিম পর্বে পৌঁছিয়ে মৃত্যুর মাস কয়েক আগে সে সত্যটি এমন স্পষ্ট করে জানিয়ে গেলেন কবি বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। যে বিশ্বকবির নোবেল প্রাপ্তি নিয়ে আমাদের এত গর্ব এত আহ্লাদ এত শ্লাঘা, সেই মহত্তম পুরস্কারও রবীন্দ্রসৃষ্টির কাছে কত তুচ্ছ! কবির লেখাই তাঁর সাহিত্যসাধনার শেষ পুরস্কার। এই অনুপম সত্যটি একজন কবি যত সহজে অনুধাবন করতে পারবেন ততই সজীব হয়ে সঞ্জীবনী শক্তি হয়ে উঠবে তাঁর কবিতা। পাঠকও সেই কবিতায় আশ্রয় খুঁজে পাবেন পরম তৃপ্তিতে।

দুঃখের বিষয়, অনেকেই এই সত্য থেকে আজীবন দূরবর্তী রয়ে যান। তাৎক্ষণিক পুরস্কারের মোহে আজকের সংবর্ধনাগুলিকেই সাহিত্যসাধনার চুড়ান্ত সাফল্য মনে করে নিশ্চিন্তে থাকেন। তাই অমুক পুরস্কার তমুক পুরস্কারের তাকভর্ত্তি তাক লাগিয়ে দেওয়া সঞ্চয় নিয়ে আত্মশ্লাঘা বোধ করেন। আর সেই ফাঁকে হয়তো অনাদরেই পড়ে থাকে একটি দুটি সত্যমূল্যের কবিতা কবিরই নজর এড়িয়ে। কবি যখন তাঁর কবিতার থেকেও পুরস্কারকেই বেশি যত্নে আগলিয়ে বয়ে বেড়াতে থাকেন মনের আনন্দে। আর তখনই সম্ভাবনাময় কবিরও দশা হয় ঠিক সেইমতো; কবি অলোকরঞ্জনের ভাষায়- ‘লব্ধপ্রতিষ্ঠ কবিরা স্তব্ধপ্রতিষ্ঠ আজ’। খ্যাতিটুকুই পড়ে থাকে। অবশিষ্ট থাকে না আর কবিতার সেই সঞ্জীবনী শক্তিটুকু। যে শক্তিটুকুই কবি বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ভাষায় পরশপাথর। একজন কবির যোগ্য পুরস্কার। তার আজীবন সাহিত্যসাধনার।

আজকের যুগে সত্যি কথা বলতে কি বাজার নির্ধারিত পুরস্কারমূল্যেই নির্ধারিত হয়ে থাকে কবির প্রতিষ্ঠা। অমুক পুরস্কার আর তমুক পুরস্কারের ঘেরাটোপে ঘুরতে থাকেন কবি ও তার পাঠককূল। নির্ধারিত হতে থাকে কবির বাজারমূল্য। কবিতাও হয়ে উঠতে থাকে পণ্য। নানান রকম মোড়কে চেষ্টা হতে থাকে বিপণনের। এবং অনেক কবিকেই দেখা যায় সেই কারবারে বেশ ফুলেফেঁপে উঠতে। অর্থে যতটা নয়, যশ ও প্রতিপত্তিতে অনেকটাই। এটাই কবিতার এখনকার বাজার। সেই বাজার ধরারই একটি অলিখিত প্রতিযোগিতা চলতে থাকে কবিযশ প্রার্থীদের মধ্যে। অনেকেই ভুল করে এই পরিস্থিতিকেই সাহিত্যের ভুবনায়ন বলে ভাবতে শুরু করেন। আর গণ্ডগোলটা হয় ঠিক সেখানেই।

কবি বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের যে কথাটি দিয়ে সম্পাদকীয় শুরু করেছিলাম, একজন কবির বেঁচে থাকার মতো কবিতা, তার ভালোবাসার, তার সারাজীবন পিপাসার যোগ্য পুরস্কার যে কবিতা- সেই কবিতার ধ্যানে সাধনরত থাকতে কজন কবিকে দেখা যায়? আজকাল? আমাদের বিশ্বাস, তাদের সংখ্যা কম হলেও তাঁরা আজও আছেন। নিভৃত সাধনায় মগ্ন হয়ে আপন নিরালায়। নিজস্ব কলমটির উপর ভরসা করে। কবিতাউৎসবের পথ চলা তাঁদেরই সন্ধানে। যিনি একটি কবিতার জন্যে শান দিতে থাকেন নিরন্তর- নিজস্ব অক্ষরে অক্ষরে। সেই কবিদের খুঁজে পেতে বের করতে হবে আমাদের। আর সেইটাই কবিতাউৎসবের সাধনা। সবে প্রথম বছর অতিক্রম করে সদ্যজাত এই পত্রিকা দ্বিতীয় বছরে পদার্পন করেছে। যে কোন সাহিত্যপত্রের পক্ষে এইটুকু সময় হিসাবের মধ্যে ধরার মতোই নয়। আমাদেরকে চলতে হবে তাই আরও অনেক পথ।

সেই পথচলার পথেই আমাদের এবারের আয়োজনে চৈত্রের ঝরাপাতার বিষাদঘন ডালি। চৈত্রের সাথেই পুরানো বছরের বিদায়বেলার গান। ঝরাপাতার মর্মরধ্বনির মধ্যে দিয়ে নির্জনতার যে একক সুর বেজে ওঠে, সেই সুরের রেশ ধরেই এবারের আয়োজনে সমবেত কবিবৃন্দের কলমে দুই বাংলার শতাধিক কবিতার ডালি নিয়ে কবিতাউৎসব চৈত্র ১৪২৩ সংখ্যা। এই সংখ্যায় আমরা আমাদের মধ্যে পেয়েছি এ মাসের অতিথি কবি সুমী সিকানদারকে। কবিতাউৎসবের সাথে একান্ত আলাপচারিতায় কবি তার সাহিত্য ভাবনা, তাঁর স্বদেশ ও তাঁর সংস্কৃতির অনুভবকে আমাদের পাঠকদের সামনে মেলে ধরেছেন একান্ত আন্তরিকতায়। আমাদের বিশ্বাস সুমীর সেই আন্তরিকতার রেশটুকু কবিতাউৎসবের পাঠকরা অনুভব করতে পারবেন পুরো মাত্রায়। একটি কবিতাপত্রের সেটাই তো কাজ। কবি আর পাঠকের মেলবন্ধনে সেতু হয়ে ওঠা।

কবিতাউৎসবের ফেসবুক পেজ :
https://www.facebook.com/amaderkobitautsov/  কে লাইক করে ফেভারিট করে রাখলে কবিতাউৎসবের যাবতীয় তথ্য ও বিজ্ঞপ্তি সরাসরি আপনার ফেসবুক ওয়ালেই দেখার সুযোগ ঘটবে। এই পেজেই কবিতাউৎসবে প্রকাশিত কবিতাগুলিও নিয়মিত প্রচারিত হয় লিংকসহ।


এবং এরই সাথে কবিতাউৎসবের ফেসবুক গ্রুপ:  https://www.facebook.com/groups/kobitaautsov/#  এ জয়েন রিকোয়েস্ট পাঠালে গ্রুপের সদস্য হিসাবে গ্রুপের ওয়ালে আপনার কবিতা ও কবিতা বিষয়ক মূল্যবান মতামত সরাসরি পোস্ট করে সকল সদস্যদের সাথে শেয়ার করেও নিতে পারবেন। গ্রুপের পিনপোস্টে এই বিষয়ে সুস্পষ্ট নির্দেশাবলীও দেওয়া আছে।


এছাড়াও কবিতাউৎসব গুগুল কমিউনিটি: https://plus.google.com/u/0/communities/117144176931778027450  তে সরাসরি জয়েন করে একটি সম্পূর্ণ ওয়েবসাইটের মতো সুযোগ গ্রহণ করতে পারেন। এখানে আপানার কবিতা পোস্ট করার সুবিধা ছাড়াও আপনার নিজস্ব সাহিত্য ব্লগের লিংক নিয়মিত ব্যবধানে প্রচারের সুবন্দোবস্ত ও অন্যান্য একাধিক বিভাগে আপনার যোগদানের সুযোগ রয়েছে। রয়েছে সুস্পষ্ট নিয়মাবলীও।


***কবিতাউৎসবে লেখা পাঠানোর সাধারণ নিয়মাবলী:
১) স্বনির্বাচিত স্বরচিত ৫টি প্রিয়কবিতা পাঠাতে হবে
২) অভ্র বাংলা হরফে টাইপ করে একটি এমএস-ওয়ার্ড ফাইলে এটাচ করে
৩) কোনভাবেই পিডিএফ ফাইল ও বিজয় ফন্ট গ্রহণযোগ্য নয়
৪) একটি প্রফাইল চিত্র  অতি অবশ্যই আবশ্যক
৫) কবিতা পাঠানোর ঠিকানা amaderkobitautsov@gmail.com
৬) পাঠানোর শেষ দিন প্রতি বাংলামাসের ১লা তারিখ

***কবিতাউৎসবে প্রকাশিত কবিতার স্বত্ত্ব লেখকের নিজস্ব।
কবিতাউৎসব আপনার সৃষ্টিশীলতার প্রতি ঐকান্তিক শ্রদ্ধাশীল থেকে সবরকমের সহযোগিতার বিষয়ে সাধ্যমত অঙ্গীকারবদ্ধ। কবিতাউৎসবের সাথে থাকুন কবিতাউৎসব আপনার পাশে রয়েছে সবসময়।