মঙ্গলবার, ২১ মার্চ, ২০১৭

শাকিলা তুবা




শাকিলা তুবা
তরুলতা

আজ তুমি বাড়ী ফিরে যাবে তরুলতা
তোমার দ্বৈতসত্ত্বা ফেলে যাবে এইখানে
ওরা বলেছিল, তুমি ভারী কুলটা
তুমিও জানতে কুলটাই তুমি
স্বামী ফেলে অন্য পুরুষ সংসর্গে গেলে যে!

তুমি খুব কাঁদছো তরুলতা
কোনো শোকে কি কাঁদছো?
তোমার শোক এই এক চিলতে সংসার
অন্য পুরুষটিও যা দিতে চায়নি
আদতে কতটা দুঃখি এই স্বামী বিচ্ছেদে হলে?

স্বামী তোমাকে এতটুকু ভালবাসেনি তরুলতা
সেটা ছিল তোমারই দোষ, ফুলমতীর নয়
তুমি তাকে প্রলুব্ধ করতে না পেরে ঝুঁকেছ অন্য দিকে
সেও ছেড়ে গেল দোররা খাবার ভয়ে
তুমি খেলে হাজার চোখের সাথে একশত লাঠির দোররা।

কি ভেবেছো? তোমার মেয়ে ঘুরে দাঁড়াবে একদিন?
তুমি নও কেন? কেন পরবর্তী প্রজন্মের কাঁধে বোঝা চাপানো?
ঘুরে দাঁড়িয়ে ফুলমতীর প্রেমিক স্বামীকেও বোঝাটা দাও
বলেছি কেঁদোনা তবু তুমি কাঁদছো
তরুলতা ফিরে যাচ্ছো তুমি সেই পরাধীন বালিকা।





সুখের কথা

একটুখানি সুখই ছিল যা বিক্রি করে দিয়েছি
বিক্রয়কৃত দ্রব্য ফেরত লওয়া হয়নাবলে ফেরতও নিইনা
এটাই কি সেই অলীক বস্তু নয়?
যা দেখা যায়না অথচ লেনদেন হয়ে যায় দিব্যি!

ডাংগুলি রে ডাংগুলি উড়ে যা চৌহদ্দি ছেড়ে---

এসব বড়ই গোপন ভেদ, অনেকটা খরোষ্ঠী ভাষার মতো
লিপিবদ্ধ হয়ে আছে নীরবে ডাংগুলি সুখ
কেড়েও নেয়নি কেউ, স্বেচ্ছায় বিকিয়েছি
যারা সুখে আছে থাক না সুখে, আমি তো মানা করিনিকেড়েও নিচ্ছিনা।





নিলম্বিত গণিতক

তোমাকে কেন আজকাল অন্যরকম দেখায় রাজন্য?
শার্টের বোতাম উপরেরগুলো সব খোলা বলেই
নাকি শেভ না করা গালে সূর্যের প্রভা পড়েনা?
এই কানা গলিটা হয়েছে তেমনি নচ্ছাড়
যতবার পাশ কাটিয়ে গেছি তোমাকে পাহাড়ের চূড়ায় দেখেছি
মাটিতে নেমে তুমি এতটা জলহীন হবে, এমন কেন?

তুমি জানতে, আমার কোন সংক্রামক ব্যধি নেই
ফাঙ্গাসের ঝাড়বাতি ঝুলছে ইদানীং তোমার ঘরে
চালাঘর থেকে তুমি যখন বোতল হাতে বেরোও
মালতী বা কল্পনাদের অনায়াসে হাত ইশারায় তাড়াও
পেরে ওঠোনি বলেই কি আজকাল এত আনমনা?
এতটা বদলে যেতে কি হয় রাজন্য?

মাত্র দুশ গজ ছিল বাকী, গন্তব্যটা ছুঁতে পারলেনা?
আমি গুহা দেখেছিলাম তোমার ভেতর
পাহাড় ফুঁড়ে নামা ঝর্ণায় একদিন হাত ডোবানোর সখ ছিল
ওখানে এখন পশুর হাট জমজমাট
পাইকারী দরে নিজেকে ওদের হাতে ছেড়ে দিলে!
আরেকটু অপেক্ষা কি করা যেত না রাজন্য?

তোমাকে আজকাল একদম অন্যরকম দেখায়
ছেলেবেলায় দাদু যেমন নুয়ে হাঁটতো দিদাকে হারিয়ে---
তোমাকে এমন দেখায় কেন রাজন্য?
তুমিও কি হারিয়েছ কিছু, এমন কিছু যা হারাতে চাওনি!
বোতাম ঘরগুলোতে ভারী হাহাকার লেগে গেছে রাজন্য
তুমি সূর্যের আলোকে আসতে দাও, বসতে দাও তোমার গালে।

এবার ঝর্ণার সবটুকু জল সামনের ঐ নদীতে এনে জমাও
এখানে শহর নেই, বাজার নেই, দামদস্তুর নেই
তোমাকে অন্যরকম দেখলেই আমার ইচ্ছে করে উল্টোস্রোত হই
তোমার শার্টের বোতামগুলো লাগিয়ে দিতে দিতে কানে কানে বলি,
দুঃখের ব্রিফকেসে আমাদের চাওয়া-পাওয়ার তেজষ্ক্রিয়তা রয়েছে
পারলে তুমি অন্যরকম না হয়ে, ঠিক এইভাবে পালিয়ে যেও।





সার্ষ্টি

বলেছিলাম, আমার সীমানা এঁকে দাও।
সরল রেখায় সব পথ দিয়েছিলে খুলে,
একটা বৃত্তের লোভে কত না ঘুরঘুর করেছি!
যেবার সত্যি সত্যি বৃত্ত এঁকে দিলে
ডানায় যেন নতুন জোর ভর করল
আমি সরল রেখা আর বৃত্ত ভেঙে ভেঙে
উড়তে শিখে গেলাম।

তুমি যতবার পায়ে বাঁধন দিলে
আমার ইঁদুরদাঁত মুহুর্তেই কেটে দিল সব
লোহার শিকলে জং ধরিয়ে খেলা দেখালাম ইচ্ছেমত।
যেদিন বললে, তোমাকে আর বাঁধতে চাইবনা
সেদিন থেকে আমিও আর বলিনি এঁকে দাও সীমা
খোলা আকাশের নীচে শুয়ে থেকেও
এখন শুধু ঘরে ফিরবার তাড়াই অনুভব করি।






কুইনেলা

সম্ভাবনা যদি কোনো উৎকৃষ্ট ব্র্যান্ডের নাম হয় তবে আমি মোক্ষম উপায়ে বাঁচিয়ে দিতে পারি সাদা জাতের একটা ঘোড়া পরিবার। প্রাচীর ডিঙ্গাতে পারে এমন সব তেজী ঘোড়া রেসের জন্যে রেখে দেব। খোঁড়া মেয়ে হেঁটে যাবে, দৌড়ে যাবে মাইলের পর মাইল। ঘোড়দৌড় থামানো যাবেনা। ওদের সোনালী শরীর থেকে লবন দানার রূপালী স্রোতে ভেসে যাবে জংলী কোন রাত। হান্টার ছাপিয়ে ট্রেনিং দেবার জন্যে খোঁড়া মেয়ে আর দাঁড়িয়ে থাকবেনা বাইরে। শিক্ষিত পশুরা এক এক করে ঢুকে যাবে খোয়াড়ে।

তুমি শুনেছ? চীৎকারটা তবে তুমি-ই শুনেছ প্রথম। এ চীৎকার আত্মরক্ষার্থে নয়, দারুনভাবে জিতে যাবার। ট্রফি ঘুরবে হাতে হাতে, মারামারি-কাটাকাটি হবে আরও কত! পকেট ফুলিয়ে নিঃশব্দে মঞ্চ ছাড়বে কোচোয়ান।

রেসের মাঠ পড়ে আছে বিপর্যস্তু। মেয়েটি ঘোড়ার খুরে শক্ত করে এঁটে দিল নাল আর পরীক্ষা করছে পিঠের উল্কি আঁকা তকমা । খোঁড়া মেয়ে অভুক্ত বলেই ঘোটকীর বাটে ঠোঁট ডুবিয়ে দিল। সবাই বলল, এই মেয়েটি নষ্টা ভারী। ওদিকে রেস জেতা টাকা জুয়ার টেবিলে উড়তে উড়তে মদ হয়ে যাবে, হবে মেয়ে মানুষ। পা টেনে হাঁটলে সে আর মেয়ে থাকেনা, এই কথাটা মেয়েটি এখনো বুঝলোনা।

রাতের তারাগুলো লেজে জড়িয়ে পরিশ্রান্ত পশুরা ঘুমায়। বাজীকর ভালবেসে মেয়েটি খোলা আকাশ হয়, ঘোড়াদের সাথে রতিক্রিয়ায় খুলে দেয় ভাঁজ করা যৌবন। লেজের লোমে আগামীদিনের ক্লান্তি ভর করে। রেস আসলেই বড় ভয়ানক, তারো চেয়ে এইসব ভয়াবহ ব্র্যান্ডিং।