মঙ্গলবার, ২১ মার্চ, ২০১৭

অভিজিৎ পাল



অভিজিৎ পাল

বাংলা

শব্দের পর শব্দ জমে পাহাড় জেগে ওঠে। সেই ওজস্বী পাহাড়ের ক্ষয়ীভবনের গানে গানে ছবি আঁকি বিচিত্র জীবনচর্চার। পাহাড়ের বুকে গাছ ওঠে। আকাশের দিকে হাত তুলে গাছের সব গৌর-নিতাই হয়ে যায়। গোপন কথার মতো জীবনের ধাপে ধাপে বাঁক নেয় একটা নদী। আমি আমার ভাষার ডিঙা ভাসাই। ঢেউয়ের ছন্দে শব্দ সাজাই চর্যা পদাবলীর, শ্রীকৃষ্ণকীর্তনের কথা ভেসে আসে। দূর থেকে নিশান তোলেন কৃত্তিবাস। একটা স্নেহ-হাতে কাশীরামের সহযাত্রী হয়ে যান সমস্ত মঙ্গলকবি। আজানুলম্বিত এক আত্মজিজ্ঞাসার ছবি আঁকেন রবীন্দ্রনাথ। শতাব্দীর পর শতাব্দী রঙ সাজাতে থাকে। অনাদি শৃঙ্গারের মতো স্পর্শ পেয়ে আমি জেগে উঠি একুশের ভোরে য় অনন্ত আকাশ আমায় স্বরবর্ণ ব্যঞ্জনবর্ণ শেখায়। আমি পাঠ নিতে থাকি...



সিরিজ কবিতা : পুরাধুনিক ডট কম এবং...

১.

অনেক দিনের পর ফিরে আসি। জটিল আবর্তগুলো আবার মুখ টিপে হাসে। আজানুলম্বিত উদাত্ত প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ভেঙে দেওয়ার আনন্দময় বিষাদে সেজে ওঠে ক্যানভাস। রঙ মাখি। রঙ মাখাই। ভালোবাসার লাল রঙ। ধূমল বাতাসে ভেসে আসে স্মৃতি অনেক। আমার ব্যর্থতা হতাশা নৈরাশ্য আসছে এবার। অধ্যাপনার কাজের মধ্যে ডুবে মরতে মরতে জীবনবাদী একটা গল্প লিখতে ইচ্ছে করছে। নিজের গল্প। একান্ত। আত্মসম্পর্কের আত্মজীবনী নয়। আকাশ ছুঁয়ে বাঁচতে চাইছি এবার। নিজের মতো করে। স্বপ্নভঙ্গ হলে জানাবো সবই একদিন অমোঘ ভবিতব্য বলে পুরাধুনিক পাঠের সিলেবাসে লেখা ছিল। সমস্ত জৈবলিপির পাঠোদ্ধার আমার পক্ষে এখনও সম্ভব হয়ে ওঠেনি...


২.

ভুল শব্দের মতো কথা বলছেন মহামান্য। ক্ষমতাহীনের মতো চুপ করে মেনে নিচ্ছি দ্বিচারীব্রত। আমার মানসপটে জেগে উঠছে ব্রহ্মবাদ। আমি পাঠ নিচ্ছি। একে একে জেগে উঠছে সম্পর্কের মুখগুলো। আমি বিষাদ আঁকছি। আমার জন্য অপেক্ষা করছে একটা সুবৃহৎ আমি। দৈব ভাষ্যমতে জটিল অদ্বৈতপাঠে ঋদ্ধ হতে হতে সেজে উঠছে দাগ। অম্লমধুর প্রেমের রতিবিলাস শুধু তোমাকেই দেখিয়ে বলে দিচ্ছে। সার্বিক কামানুভব চুষে খাওয়া যেতে পারে মেকানিক্যাল আঙ্গিকে। আমার মানসলোকে হেঁটে আসছেন তিনি। জানু পেতে বসছি। শুনেছি এভাবেই তাঁর কাছে বসতে হয়। ভ্রান্তিপথ হারিয়ে যাচ্ছে ক্রমশ। কাঙ্খিত শুচিতা পবিত্রতা অর্জন করতে শিখছি মাতৃত্বে। মানের মিথ্যে ভোরাই অন্ধকার কেটে আসছে বারবার...


৩.

আমার শহরের ভিতর লুকিয়ে থাকা সূক্ষ্ম শহরটিকে চেয়ে চেয়ে দেখি। নাগরিক জীবনের প্রথমার্ধের উপকরণ একসঙ্গে ভেঙে যায়। নাগরিক ধ্বংসাবশেষ থেকে অনতিদূরে ভেসে আসে লোককথা। কিছু পুরাধুনিক পাঠের আমন্ত্রণ। নগররাষ্ট্রের উপর দিয়ে এঁকে রাখি গোল্ডেন লাইন। এক স্বর্গীয় স্বর্ণালী রেখাদাগ। ধ্বনিত হয় সময়ে শব্দ। চর্যাগীতিকোষবৃত্তি আমায় দেখে হাসে একা একা। আত্মরতির প্রকরণবাদ চিনতে চিনতে এসে বসি মানসঘরে। আর দোলাচলতা নয়। তারল্য নয়। প্রেম নয়। আনন্দবিহারী হতে চাই অনন্তের স্পর্শ নিয়ে। সমাহিত হয়ে তাকিয়ে আছে বেলুড় মঠ। হাত বাড়িয়ে আছে আমার দিকে। আমার ভগবৎ বিলাসের বাহুডোরে আবদ্ধ করছি বিশ্বানুভূতির শব্দমালা। রাত্রির কোরাসে হারিয়ে গেছে কৃষ্ণনগরীয় একটা মুখ...


৪.

আমার ফিরিয়ে নেওয়ার আবেদন করতে এসেছি আবারশুধু ফিরিয়ে নেওয়ার দাবিতে। যে পথে অর্করা হেঁটেছে সে পথ আমার কখনই সুগম্য হতে পারতো না। স্ক্রল ডাউন করে চলেছি। বদলে যাচ্ছে ছবি। বদলে গেছে ছবিমালা। প্রতিটি ছবির মধ্যে লিপির অলিখিত ইতিহাস গুঞ্জন করে। লিপিবিজ্ঞানীর মতো কান পেতে শুনি, চোখ মেলে দেখি। অন্ধকারের স্নেহটুকুকে সম্বল করে আমার হৃদিকথা বুঝে নিতে শিখি একা একা। সমস্ত তত্ত্ববিশ্ব এখানে এসে থেমে যায়। বন্ধ হয়ে যায় পূর্বনারীদের আবহমান সংগ্রামের ইতিবাচক কথামালা। কর্মের আবর্তন মেনে পথ চলতে শিখি। আমার যে সব হেরে যাওয়া দীর্ঘযাপনের ইতিবৃত্ত হতে চায়, তাকে আদর করে জমিয়ে পাখির আকাশে। লিপিবদ্ধ কবিতায় আমার প্রেম রয়ে যাক নিরঞ্জন...


..........