মঙ্গলবার, ২১ মার্চ, ২০১৭

অলভ্য ঘোষ




অলভ্য ঘোষ


মিনু

 (১)

মিনু কি সুবিধা তোদের
তোরা কেমন গা ঝাড়া
দিয়ে দিতে পারিস।
মিনু আমার জানালায়
নয় কেবল ; তুই তো
অনেক উইন্ডো,
অ্যাপল,অ্যান্ড্রয়েড,
স্মার্ট ফোনে;
উঁকি মেরে চলেছিস।


(২ )

এই মিনু তোর সেলফি দিবি!

কি চালাক রে তুই মিনু।
যখন বুঝিস তোকে একঘেয়ে
দেখতে দেখতে আমি
বোর ফিল করছি।
খুঁজে নিস জম্পেশ
একটা অ্যাঙ্গেল
যেখান থেকে তোর
সাদা ধবধবে
বুকের খাঁজ অনায়াসে
ফ্রেমের সব কিছুকে ছাপিয়ে
দৃষ্টি আকর্ষণ করে।
মিনু কি সুবিধা তোদের
তোদের একটা ধবধবে বুক আছে!

গোদা বুকে হাত বুলিয়ে
সবাই তোদের কত আদর করে।



(৩)

আর কত ঢাকা উলটবি মিনু
লোকে ছ্যাঃ ছ্যাঃ করছে।
আদুরী একটু উষ্ণতার
লোভে এখন তুই আমার
কাঁথার তলায় ঢুকেছিস।
হাফ প্যান্টের নিচে খোকা টা
নরম গায়ের ঘষায় উঠছে
ধেড়ে ইঁদুর হয়ে ।
ইন-বক্সে আঁচড় বসিয়ে দিলি ।
লাফিয়ে উঠল শরীর নখের ডগায়।
বন্য লাবণ্য ব্যথা দিয়ে কি যে
মজা পাস!

ক্ষত বিক্ষত আমার বুকে মানচিত্র নখের দাগে।
মনে হয় তোর বুকটাও কামড়ে দিয়ে বলি;
দেখরে মিনু কেমন লাগে।

এমন ভাব করছিস
কখনো কোন দিন তুই
কারো বাড়ি যাবি না।
আমি জানি কাল সকাল
হলেই তুই আবার অন্য কারো
কার্নিশ বাইবি।
গা ঘেঁষে ঘেঁষে এমন একটা
ভাব করবি সে ছাড়া এই
পৃথিবীতে তোর আর কেউ নেই!
ঠিক এখনকার মত!



(৪)

আমি জানি আমি নেতিয়ে মরা হয়ে গেলে
তুই সুড়সুড় করে মধ্যরাতে
গিয়ে জুটবি গোলাপ বাগে।
বাগানের মালী ফুলে ফুলে
পদ্য রচনা করে রাখে।
আর তার ফুল গাছের সারের
কৌটাতে লুকানো থাকে
আঁশটে শুটকি মাছের যৌনতা।
সেই গন্ধে তুই মাতোয়ারা হয়ে
ইঁদুর খুঁজবি বাগান জুড়ে।
রাতের ঘুম ভাঙ্গা রজনীগন্ধা ।
শুরু হবে বায়স্কোপ।

এক ফুল দো মালী!

লুকোচুরি খেলতে খেলতে
অতিথি হবি গরম লেপের ।

কোথায় কোথায় যে চড়ে
বেড়াস তুই;বিধাতাও জানতে ফেল মারে।
আমি কতটুকুই বা জানতে পেরেছি তোকে!
এই ছোট্ট জীবনে জানার কিবা থাকে!

তোরা বড় রহস্যময়ী মিনু;
বহুরূপী! গিরগিটির মত
রং বদলাতে পারিস।
কথায় কথায় কাঁদিস।
পরক্ষণেই হাসিস।

ইমোশন গুলো
সুয়িং করে; গুগলি বল!
আমার সাথে আর এক রাউন্ড
টোয়েন্টি টোয়েন্টি খেলবি চল!



(৫)

কুকুরেরাও বিশ্বস্ত প্রভু পরায়ণ হয় ।
কিন্তু তোরা কুকুরের চেয়েও অধম;
এক এক বার ভাবি দুর দুর করে
তাড়িয়ে দেব তোকে ।

তারপর যখন তুই ভিজে বেড়ালের
মত মেউ মেউ করতে করতে
আবার গায়ে পড়ে পিরিত করিস;
জানিস কি ভাবি তখন!

ভাবি এই পৃথিবীতে কে কার!
আয়নার পারা উঠে গেলে
আর প্রতিবিম্ব ফোটে না তার
বুকে।যত প্রখর রোদ ওঠে।
নিত্য সঙ্গী ছায়াও
অস্পষ্ট হতে থাকে তীব্র আলোয়।
আধো আলোয় আবার ফিরে
আসে । আলো ছায়া
রাত্রির গোপন যাপনে টিকে আছে।

ঠিক তোর আমার মত!

একমাত্র গাড় অন্ধকার বড়ো পবিত্র।
সতীত্বের প্রমাণ দেয় না কালিমা ।
কোন ছায়ার ধার সে ধারে না।
বাকি সব ছিনাল।

ঠিক তোদের মত মিনু!


(৬)

যা মিনু যা-
আর মায়া নেই আমার হৃৎপিণ্ডে!
ছায়া মায়া সব একাকার হয়ে গেছে;
হৃদয়ের সংসর্গে।
আমি শ্বাস নালী দিয়ে ঢুকে
যকৃত ফুসফুস পিত্তথলি হয়ে
পায়ু পথে আর চাই না বের হয়ে
আসতে।

যা মিনু যা-

চেয়ে থাক সিঁকে টার দিকে;
ছিঁড়ে পড়ার অপেক্ষায়!
বলে কিনা মাছ খাব না কাশী যাব।
বৈরাগীনি হাসালি বড়!
কি ছলাকলা না জানিস তোরা মিনু।
যত পোষ মানাই না কেনো
ঢাকা উলটে তোরা খাবিই!

জানিস মিনু আমার নতুন
ঘরটায় কোন ঢাকনা নেই।
উন্মুক্ত। তাই আসা যাওয়ার
খামতি নেই কারো।
জানালা নেই, দরজা নেই, ছাদ
নেই, দেওয়ালও নেই।
বিছানা তোষক তাও ফেলে দিয়েছি।

শরীর শরীর করে মেলাই আয়োজন।
আজ আমি অশরীরী বুঝলি মিনু।
কেবল কটা পঙক্তি ....
'টা শব্দ---ক'টা উচ্চারণ।


(৭)

যা মিনু যা- আমিও শিখেছি
গা ঝাড়া দিয়ে নিতে!

বিশ্বাস অবিশ্বাসের
এখন অনেক ঊর্ধ্বে আমি।
যা জিভ দিয়ে লেহন করগে
যা নেংটি ইঁদুর।
ধেড়ে হলে আঁচড়ে কামড়ে দাঁত
বসিয়ে খা।

বিড়ালের মুখের মত থেঁতলানো
যোনিটার ফাঁক থেকে গলে
বাইলেন ধরে যেতে গিয়ে
হাওড়া ব্রিজে পৌঁছে গেছে
অনেকেই। নাব্যতা কমে গেলে
পরেও বেশ বোঝা যায়
বড় বড় জাহাজ পার হয়েছে
এ পথে।

দুটো ঠোঁটের ভিতর উবু হয়ে
বসে।চকচক করে দুধ খায়
যে জিভ।জীবকুলে তারা
প্রত্যেকেই বিশ্বাসঘাতক।

দাড়া সাপের মত।

সাপ আর অভিশাপ
দুটো পোষা যায় না।
তাই তুই আয় মিনু!
তোর পশম যে কটা লেগে আছে
এদিক ওদিকে একটা
একটা করে কুড়িয়ে ফেলে দেব ।
আমার নতুন ঘরে ডিপথেরিয়ার
ব্যাকটেরিয়া রাখবো না।
তুই আয় মিনু-আজ থেকে
আমি আর বিড়াল পুষবো না !


(সমাপ্ত)

[মিনু মানুষ নহে।মিনু একটি মার্জার। মনুষ্যকুলে তাহার সাথে কোন সাদৃশ্য খুঁজিয়া ব্যথা পাইবেন না।মিনু অতিব সাধারণ একটি বিড়াল যাহাকে করুণা করা যায় তবে ভালবাসা দুরূহ।]



চোখের জল

তোর চোখের কোনে জল লুকিয়ে আছে।
হাসছিস তুই কান্না লুকিয়ে মেয়ে।
এমন করে রাধাও হেসেছিল
স্বামীর ঘরে কৃষ্ণ কে বুকে নিয়ে।
কান্না জমে বুকের মাঝে প্রেমের ঘন দ্রবণ।
কষ্ট গুলো জমতে জমতে চোখের জলে
একদিন ঘনায় ঘনশ্যামের শ্রাবণ !



চুমু

তুই পাশের বাড়ির ঢিল ছোড়া দূরত্বে।
জানালার কোণে; ছাদে কাপড় মেলার ছলে
চড়ুই পাখি ফুড়ুৎ ফুড়ুৎ মনের গোপনে আবডালে।
হরিসভায় রাই কানাই;
আড় চোখেতে হাজার লোকের ভিড়েও
চারটি চোখের শুভ দৃষ্টির নেই কামাই।
আমার তখন সদ্য কদম ফুল;
তুই গোবেচারা গোঁফের রেখা অংকে করিস ভুল।
হুশ ধাপ্পা খেলার বয়স গেছে;
ছোঁয়াছুঁয়ি দূরের কথা লজ্জাবতী লাজে মরে ঝাঁটা কাঠির কাছে।
তবুও সেদিন ভর দুপুরে গ্রীষ্ম দাহে ছাদ ডিঙ্গিয়ে দিয়ে ছিলি ছুঁয়ে।
আজ ষোল বছর পরে ;
ওই একটা চুমু আমায় নিয়ে এখনো খেলা করে।



প্রত্নজিঞ্জাসা

শুকিয়ে গেলাম ভালবাসা নেই বলে ।
শুকিয়ে যাবে গোলাপি আভার অভাবে
হিরোশিমার মত । ফুসফুস, যকৃত সব
থাকবে উবে যাবে হৃদপিণ্ড !
গ্লেসিয়ারের মত গলে
যাবে বিশ্বায়ন নামক উষ্ণতায় ।
কত হাজার বার নগর ধ্বংস হয়েছে
প্রত্নতাত্ত্বিকেরাও জানেনা ।
কয়েক হাজার বছর বাদে প্রকৃতির
অলীক নিয়মে সভ্যতার বাঞ্ছিত শর্তে
বিচ্ছিন্নভাবে বঙ্গপোসাগরের তলায়
পাওয়া গেলেও যেতে পারে তোমার
আমার প্রিয় রাস্তা, করিডর, আসবাব কত কি।
হরপ্পা মহেঞ্জোদারোর মত ।
তখন সাগর টার অন্য নাম হবে ।
তোমার আমার অস্তিত্ব !!!!
পাওয়া যেতে পারে আমাদেরও জীবাশ্ম
দুঃখ এগুলো থাকবে অবিন্যস্ত ছড়িয়ে ছিটিয়ে ।
এখন কার মত শৃঙ্খলাহীন ভাবেই ।
ওরা সে সময় দাঁড়িয়েও সঠিক অনুমান করে নেবে
আমরা সভ্যতার নামে স্থাপন করেছিলাম পতিতালয়
দেব উদ্যানের মত এই সুন্দর পৃথিবী টাতে ।
অসুরের মত ঝাঁপিয়ে পড়েছিলাম একে অপরকে
ধ্বংসের ইর্ষাকাতর খড়গ নিয়ে । পাওয়া যেতে-পারে
অনেক আঘাতের চিহ্ন একটাও গোলাপ ফুল ডায়েরির
পাতার ভেতর ; কাটখোট্টা শুকনোও পাওয়া যাবে না ।



ভার্চুয়াল প্রেম

তুমি আমায় পছন্দ কর ?
ক্লিক করে দাও লাইকে ।
উপহার পাঠাতে চাও ?
পাঠিয়ে দাও একগাদা
গোলাপ ফুলের ছবি ।
আমি গন্ধ খুঁজবনা দু চোখ
ভরে শুধু দেখব তোমাকে ।
তুমিও আমাকে দেখতে চাও;
চাও উষ্ণতা নিতে ?
কল কর ভি ডি ও চ্যাট অপশনে ।
তুমি আমায় ভালবাস ?
একটা ছোট্ট ম্যাসেজ করে দাও
আই লাভ ইউ ।
আমি বুঝে যাব তোমার
ভালবাসার গভীরতা ।
কিন্তু প্লিজ রক্ত মাংসের আমাকে
দেখতে চেও না ।
আমার অনেক
কদর্যতা আছে ।
এক তরফা
দেখলে তুমি শুধু আমাকে ওপর
ওপর দেখতে পাও ।
থ্রি ডাইমেনশনে বুঝবে
আমারও অনেক জটিলতা , অজ্ঞতা ,
খামতি আছে ।
তোমার ও কি তাই ?
কি বলছ ; পুরু মেকআপ করা মুখে ;
ধুর পাগল ঘামে আর আকাঙ্ক্ষায়
কোন আস্তরণয়ই থাকে না ঘনিষ্ঠ
মুহূর্তে । পেঁয়াজের খোলার মত
একটা একটা পাপড়ি ছাড়িয়ে
নিজেদের বুঝে ফেলার পর যদি এ
প্রেমের ঝাঁজ না টেকে ! তার চেয়ে
ভালো তুমি থাকো শুধু একটা ইমেজে
বাঁধানো ছবির ফ্রেমে । হৃদয়ের
অ্যালবামে তোমার পাতা উলটে দেখব ;
যখন ওয়েব লিংক খুঁজে পাব না ।