সুমী সিকানদারের সাথে কবিতাউৎসব
কবিতাউৎসব: কবিতা উৎসবের পক্ষ থেকে আপনাকে স্বাগত। ‘কবিতা আর বাঙালি: বাঙালি আর উৎসব’ এ যেন এতটাই স্বত:সিদ্ধ যে, এই নিয়ে কোন সংশয়ের অবকাশই থাকে না। আমরা কবিতা লিখতে ভালোবাসি। কবিতা পড়তে ভালোবাসি। কবিতায় থাকতে ভালোবাসি। আর কবিতা নিয়ে উৎসব তো আমাদের বারোমাস্যা। তাই কবিতা নিয়ে বাঙালির এই উৎসবকেই আমাদের শ্রদ্ধার্ঘ মাসিক কবিতা উৎসব, শুধুমাত্র কবিতার জন্যে কবিদের মাসিক পত্র। বাংলার জনজীবনে কবিতার এই যে একটা বিপুল প্রভাব এই বিষয়টি আপনাকে কি ভাবে প্রভাবিত করে। এবং আপনার লেখকসত্ত্বার গড়ে ওঠার পেছনে এই প্রভাব কতটা ক্রিয়াশীল ছিল বলে মনে করেন আপনি?
সুমী: প্রথমেই কবিতাউৎসবকে প্রীতি শুভেচ্ছার বরণ। বলার অপেক্ষা রাখে না যে এটা একটা
ভালো কাজ হবে কবিতা নিয়ে উৎসবপত্র। শুভাগমন। আপনার
উপরের কথাতেই বিষয়টার স্পর্শ আছে যে কবিতা বাংলার জনজীবনে বিপুল অংশীদার। আমি
যেহেতু এই সমাজের,এই বিশদ বাংলা ভুবনের অংশ;প্রভাব তো সারাক্ষণই্ রোদ
ছায়ার মতো। আমার হাত যেমন আমার শরীরের সর্ব প্রকার অংশ। কবিতাও। আলাদা
তো নই। নিউটনের সূত্রের মতো বাঙ্গালি
জনজীবনে যে সব সামাজিক রাজনৈতিক,মনো-জাগতিক বিষয় আলোড়ন তোলে,আমি যেন রিসিভার হয়ে তা
ধারণ করি। এই প্রভাবের প্রকাশই আমার কবিতা। আমার গদ্য পদ্য যা কিছু লেখার
ভুবন..সঅব ।
কবিতাউৎসব: কিন্তু
বাঙালির প্রতিদিনের জীবনে কাব্যসাহিত্যের ঐতিহ্য কতটা প্রাসঙ্গিক কতটা হুজুগ
সর্বস্ব বলে আপনি মনে করেন? অর্থাৎ জানতে চাইছি জাতি হিসেবে সাহিত্যের
সাথে আমাদের আত্মিক যোগ কতটা গভীর। নাকি আসলেই এটি একটি সামাজিক হুজুগ,
সামাজিক পরিচিতি লাভের সহজ একটি উপায় হিসাবে।
সুমী: হুজুগেরও অংশত একটা গভীরতা আছে,হয়তো সীমাবদ্ধতাই বেশি। তবু ঢেউ তোলে তো মানবমনে। তবে
ঐতিহ্যের একটা নির্মোহ আগ্রাসন আছে। সুদূরপ্রসারী একটা জাগরণ,নব জাগরণ আছে।
জনজীবনে যে কোনো মানবসম্পদ যেমন কাজে লাগে,জীবনের বিকাশ ঘটায়,তেমনি আমাদের ঐতিহ্যও । আমরা মানব জীবন তো ভুঁইফোঁড় না।
পরষ্পরা আছে। এই পরষ্পরাই তো ঐতিহ্য। ঐতিহ্য
অবশ্য আত্মিক,ইতিহাস আশ্রয়ী।
কবিতাউৎসব: কাব্যচর্চা বলতে আপনি কি শিল্পসাহিত্যের
জন্যেই কাব্যচর্চায় বিশ্বাসী? না
কি মনে করেন কবিতারও একটা সামাজিক দায়বদ্ধতাও আছে? আপনার
নিজস্ব কাব্যচর্চার জীবনের প্রেক্ষিতে যদি বিষয়টি একটু আলোচনা করেন। সামাজিক
দায়বদ্ধতার নিরিখে, একজন কবির সমাজসচেতনতা কতটা জরুরী বলে
মনে হয় আপনার? যেমন ধরা যাক একুশের চেতনা। বাংলা ভাষার
স্বাধিকার বোধ। এইসব বিষয়গুলি। মুক্তিযুদ্ধের অপূর্ণ লক্ষ্যগুলি।
সুমী: বহুল আলোচিত আবার অমীমাংসিত একটি কনসেপ্ট। বিষয়টা নিয়ে
সারা দিনরাত বিতর্ক হতে পারে। যতো আলাপ গড়াবে তত বিশাল ব্যপ্তি নেবে;জীবনের জন্য
শিল্প নাকি শিল্পের জন্য জীবন। আমার মনে হয় জীবন শিল্পের জন্য বসে থাকে না,তার সময় নেই বা
ঋণ নেই শিল্পের কাছে প্রাথমিকভাবে। একটা গতির মতো জীবনের বয়সটাকে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে
যায় একটা অনন্তের দিকে,একটা রিলেটিভ সমাপ্তির দিকে। যাকে আমরা প্রচলিত অর্থে
মৃত্যু বলি। কিন্তু এই মৃত্যু সমষ্টিক অর্থে কোনো সিগনিফেকন্ট না। রূপান্তর মাত্র।
আবার একটা জনপদ,বন্দর,গ্রাম,মানুষ বাহিত কাজের জগত,চিন্তাসূত্র কিন্তু আবার শিল্প আশ্রিত। মানে কি দাঁড়াল তবে?দুজন দুজনার।
কবিতাউৎসব: এখন এই সমাজসচেতনতার প্রসঙ্গে একজন কবির
দেশপ্রেম ও রাজনৈতিক মতাদর্শ কতটা গুরুত্বপূর্ণ? আবার
এই প্রসঙ্গে এইকথাও মনে হয় না কি, নির্দিষ্ট
রাজনৈতিক মতাদর্শ একজন কবির সাহিত্যভুবনকে বৈচিত্রহীন করে তুলতে পারে?
এমনকি হারিয়ে যেতে পারে সাহিত্যিক উৎকর্ষতাও?
সুমী: কবি তা আর ভিনগোলার্ধের কেউ নয়। দেশপ্রেম বা রাজনৈতিক
মতাদর্শ থাকবেই বিশেষ করে আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশে। সাহিত্যভুবনের উৎকর্ষতা বা
বৈচিত্রের অভাব এই দুটো শব্দ আপনা মাংসে হরিণা বৈরীর মতো। নিজস্ব সীমাবদ্ধতা আছে।
পাঠক নিজের মতো করে ভেবে নেবে বা মহাকাল বলে দেবে ঐ সাহিত্যভুবন সাময়িক নাকি তিন
জনম থেকে যাবে অমরত্বে। দাঁড়িপাল্লা নিয়ে আমাদের ভাবার দরকার কি?
কবিতাউৎসব: আবার এই সমাজসচেতনতার ভিত্তি সুদৃঢ়
ইতিহাসবোধের উপর প্রতিষ্ঠিত হওয়াকে কতটা জরুরী বলে মনে করেন আপনি,
এবং কেন? কবি জীবনানন্দ যেমন জোর দিয়েছিলেন
সুস্পষ্ট কালচেতনার উপর।
সুমী: অবশ্যই ইতিহাসবোধ থাকবে যেটাকে আমরা প্রকারন্তরে ঐতিহ্য বলেছি। একটা সুঘ্রাণ
সমৃদ্ধ সাহিত্যকর্মের বৈশিষ্ট্য নিয়ে যদি কথা বলি,এরকম করে ভাবলে কেমন হয়;দেখুন তো?
১. ইতিহাসবোধ আশ্রিত
২.একেবারে সমসাময়িক (ঐতিহ্যের ধার ধারল না)
৩.উপরের দুটোর মিশ্রণ
৪.আবার এগুলোর একটাও না। একেবারে অন্য গ্রহের ..
জীবনানন্দের কবিতা যে কালের ইমেজ প্রকাশ করে,রবীন্দ্রনাথের
কবিতার দর্শন চেতনা আলাদা। এই আলাদা গোত্রও কিন্তু জরুরী না। জরুরী হলো মানব
জীবনের গহীনে দাগ কাটা,কালত্ব অর্জন করা।
কবিতাউৎসব: এই যে স্বদেশপ্রেম,
নিজের দেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যর প্রতি দায়বদ্ধতা- এগুলি একজন কবিকে আন্তর্জাতিকতার
প্রেক্ষিতে কতটা সীমাবদ্ধ করে তোলে বলে মনে করেন আপনি?
অর্থাৎ আপনার সাহিত্য তো প্রাথমিক ভাবে এই বাংলার সুর তাল লয়ের মন্থনই। কিন্তু
সেই সাহিত্যের পরিমণ্ডলেও কি একজন বিদেশী তৃপ্তি পেতে পারেন যদি না আপনার লেখা
আপনার স্বদেশপ্রেম আপন সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের উর্ধে উঠতে পারে?
বিষয়টিকে আরও একটু অন্যরকম করে মেলে ধরলে বলা যায়,
কালোত্তীর্ণ সাহিত্যের আন্তর্জাতিকতায় পৌঁছাতে গেলে যে বিশ্ববোধ জরুরী,
দেশপ্রেম স্বাজাত্যপ্রীতি কি সেই পথে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করে না?
সুমী: এই একটা বিষয় নিয়েই একটা সেমিনার,আলোচনা হতে পারে। একজন লেখকের একটা শিকড় থাকে,রক্তে ধারণ করে
তার জাগতিক দেখার চোখের পৃথিবী,আরেকটি অবচেতন ধারণ করে সমস্ত দেখা অদেখার বিশ্ব। আর এই
প্রকাশ একটা টুলস আশ্রয় করে সবখানে ছড়িয়ে পড়ে,সেটি হলো ভাষা। জীবন্ত ভাষা ছাড়া সাহিত্যকর্ম বেঁচে থাকা
কঠিন। দেশপ্রেম স্বাজাত্যপ্রীতি প্রতিবন্ধকতা তৈরী করে বলে আমি মনে করি না। মূল
প্রতিবন্ধকতাটা হলো পরিবহন ব্যবস্থা,মানে ভাষা। আমাদের বাংলা ভাষার বহু অসাধারণ কাজ
সঠিক অনুবাদের অভাবে আন্তর্জাতিকতা পায়নি। ভাষাকেন্দ্রিক একটি দেশের বা সমাজের
রাজনৈতিক কাঠামো বা ব্যবস্থাও অনেকাংশে দায়ী।
কবিতাউৎসব: সাম্প্রতিক অন্তর্জাল বিপ্লবে বাংলা
সাহিত্য বিশেষ করে বাংলা কাব্যসাহিত্যের ভুবন কি বিপুল পরিমাণে বিস্তৃত হয়ে গিয়েছে
সেটা আমাদের সকলের চোখের সামনেই ঘটেছে ও ঘটছে। আগে লিটল ম্যাগাজিনের পরিসরের বাইরে
অনেকটাই ফাঁকা জায়গা পড়ে থাকতো, যেখানে
অনেকেই কবিতা লিখলেও তা চার দেওয়ালের বাইরে আলো দেখতে পেত না। আজ কিন্তু যে কেউই
তার কবিতটিকে বিশ্বের দরবারে হাজির করতে পারছে। এই বিষয়টাকে আপনি ঠিক কি ভাবে
দেখেন? অনেকেই যদিও বলছেন, এতে
কবিতার জাত গিয়েছে চলে। এত বিপুল পরিমাণে অকবিতার স্তুপ জমে উঠছে,
যে তার তলায় চাপা পরে যাচ্ছে প্রকৃত কবিতা। এই প্রবণতা বাংলা সাহিত্যের পক্ষে
আদৌ কি আশাব্যঞ্জক বলে মনে করেন আপনি? না
কি এটি আসলেই অশনি সংকেত?
সুমী: একদমই অশনি সংকেত না। প্রশ্নই ওঠে না। এই যে প্রযুক্তিগত বিশাল পরিসর,এটাই সময়ের অংশ।
এটাই বাস্তব। অতীত মানে তো স্মৃতি আর ভবিষ্যৎ তো স্বপ্ন। কবিতার চারণভূমি তো পাঠক।
শেষ পর্যন্ত আমরা বিচারটা পাঠকের অঞ্জলিতেই বরং তুলে রাখি? প্রযুক্তি হলো
সহায়ক টুলস মাত্র। নির্ভর করছে যিনি আদান বা যিনি প্রদান করবেন তার উপর। আমি
বিষয়টাকে খুব পজিটিভ দেখছি। আপনি এটাও ভাবতে পারেন যে আপনার লেখার মানদন্ড কোনো
ব্যক্তির ইচ্ছার বেড়াজালে আটকা নেই। এই অন্তর্জালের যুগে প্যারাগুয়েতে বসে লেখা
কবিতার মৌ ঘ্রাণ আমি ধানমন্ডিতে বসে পাই,চুমুক দেই।
কবিতাউৎসব: সমাজজীবনে অস্থিরতা কাব্যচর্চার পক্ষে
কতটা প্রতিবন্ধক বলে মনে করেন? না
কি যে কোন সামাজিক পরিস্থিতিই একজন প্রকৃত কবির কাছে তার লেখার কার্যকারি উপাদান
হয়ে উঠতে পারে। যেমন ধরা যাক ওপার বাংলায় বাহান্নর ভাষা আন্দোলন,
এপারের সত্তরের উত্তাল ছাত্র আন্দোলনের দশক; বাংলাদেশের
একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ। বাংলার কাব্যচর্চার ভুবনটাকে তো বাড়িয়েই দিয়ে গিয়েছে বলা
যেতে পারে। তাহলে সাম্প্রতিক মৌলবাদের উত্থান লেখক বুদ্ধিজীবী ধরে ধরে হত্যা,
রাজনীতি ও মৌলবাদের পারস্পরিক আঁতাত; নিরন্তর
ক্ষমতার ছত্রছায়ায় থাকার বাসনায় বুদ্ধিজীবীদের ক্রমাগত ভোলবদল- এই বিষয়গুলি অতি
সাম্প্রতিক কাব্যচর্চার পরিসরকে নতুন দিগন্তে পৌঁছিয়ে দিতে পারে কি?
বা পারলে সেটা কি বর্তমানে আদৌ হচ্ছে বলে মনে করনে আপনি?
সুমী: সেরকম করে বলতে হলে তো বলতেই হয়,’আদর্শ ড্রিম’ রাজনৈতিক কাঠামো বা শাসন ব্যবস্থা কখনোই ছিল না। হানাহানি
বা যুদ্ধের খান্ডবদাহন তো সবসময়ই। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ বা ভাষা আন্দোলন তো
আমাদের জয় পতাকা। অর্জনের। আবার সাম্প্রতিক অরাজকতা বা ধর্মীয় মৌলবাদের থাবা
আমাদের মতো মুক্তিকামী মানুষের মুক্ত মনের বিকাশের পথে বড় বাঁধা। তবে আমি আশাবাদী
এই ভেবে যে চিরুনী নিয়ে টাক মাথাদের লড়াই করে লাভ নেই। শেষমেষ শুদ্ধ সাংস্কুতিক
চর্চা দেখাবে নতুন দিগন্তের পথ।
কবিতাউৎসব: আবার ধরা যাক এই সব নানান জটিলতা থেকে
মুক্তি পেতেই একজন সাহিত্যিক বিশুদ্ধ কবিতার কাছে আশ্রয় পেতে ছুটলেন। যেখানে
রাজনীতি নেই, সামাজিক অস্থিরতার দহন নেই,
আছে শুধু ছন্দসুরের অনুপম যুগলবন্দী। জীবনের জটিল প্রশ্নগুলি এড়িয়ে গিয়ে,
কল্পনার ডানায় ভর দিয়ে ছোটালেন তাঁর বিশ্বস্ত কলম। কবিতা তো মূলত কল্পনারই
ভাষিক উদ্ভাসন। কিন্তু সেই পলায়নবাদী কবির কাছে কবির কলম পাঠকের কাছে কতটা
বিশ্বস্ত থাকবে সেক্ষেত্রে বলে মনে করেন? পাঠকের
আশ্রয় কি জুটবে?
সুমী: পলায়নবাদী শব্দটায় খানিকটা আপত্তি আছে আমার। ঘুমের মাঝে তো আমার স্বপ্ন দেখা
বন্ধ নাই,বৃষ্টি বা ছোট্ট শিশুর কোমল ঘ্রাণের হাত ধরে আমার স্বপ্ন জগত বা ভিন্ন অনুপম
ড্রিম বা ফ্যান্টাসি নির্মাণ থেমে থাকে না। থাকুক না সেসব অবাস্তব কল্পনার উঠান। কেউ কেউ কঠিন রোদে ভিজে দুদন্ড স্বপ্ন ছায়ায়
জিরোতে চাইতেই পারে।
কবিতাউৎসব: সাহিত্যে শ্লীলতা ও অশ্লীলতার তর্ক
বহুদিনের। আজও সে বিতর্কের অবসান হয় নি বলা যায়। নিজের লেখা সম্পর্কে অনেক কবিকেই
অশ্লীলতার দায়ে অভিযুক্ত হতে হয়েছে তার সময়ে বিভিন্ন সমালোচকের কাছে। আপনার
কাব্যচর্চার জীবনের অভিজ্ঞতার প্রেক্ষাপটে এই বিষয়ে আপনার অভিমতে যদি সমৃদ্ধ করেন
কবিতাউৎসবের পাঠকবৃন্দকে।
সুমী: আসলে আমি নিজে মনে মনে এক অলীক স্ট্যান্ডার্ড তৈরী শ্লীল অশ্লীলের। আবার আপনি
যদি আমাকে কঠিনভাবে ধরে বসেন এসবের সঙ্গা নিরুপণে,সেটা আমার জন্য কঠিন হয়ে
যাবে। আমি ব্যক্তিগতভাবে সাহিত্য খুলে মেলে পারি না। কোথায় যেন মর্মে লাগে।
কবিতাউৎসব: আমাদের এই দ্বিখণ্ডীত বাংলায় কলকাতা
কেন্দ্রিক ও ঢাকা কেন্দ্রিক কাব্যচর্চার দুটি ভিন্ন স্রোতের মধ্যে কি ভাবে
সামঞ্জস্য বিধান করবেন বাংলাসাহিত্যের একজন পাঠক? ৪৭এর
দেশভাগ বাংলাসাহিত্যের দিগন্তকে কতটা প্রসারিত করেছে বলে আপনার ধারণা। এই যে
কাঁটাতারের দুইপারে ধুটি ভিন্ন ঘরানার বাংলাসাহিত্যের দিগন্ত দাঁড়িয়ে গেল;
এইটি আপনি কি ভাবে দেখতে চান?
সুমী: আসলেই কি মোটা দাগে সামঞ্জস্য করার দরকার আছে? বাংলা ভাষার একটি ভালো লেখা তো আমারও সম্পদ। সবার। ৪৭ এর
দেশভাগ একটি রাজনৈতিক বাস্তবতা। কাঁটাতারের সীমানা যখন হয়েই গেছে একমাত্র সংস্কৃতি
পারবে এই মিলনের। দেশ ভাগের অবধারিত প্রভাব দুই ঘরানার জন্ম দিলেও মূল শিকড় তো এক
: আমাদের বাংলা ভাষা।
কবিতাউৎসব: আমাদের এই দ্বিখণ্ডীত জাতিসত্ত্বায়
সাম্প্রদায়িকতার যে চোরাস্রোত নিরন্তর বহমান, যাকে
পুঁজি করে ইঙ্গমার্কীণ মহাশক্তি ও তাদের বঙ্গজ সহসাথীরা ধর্মীয় মৌলবাদের রাজনীতিতে
সদাসক্রিয় থাকে; নেট বিপ্লবের দৌলতে সুদূর ভবিষ্যতে সেই
সাম্প্রদায়িকতার চোরাস্রোত থেকে কি গোটা জাতিকে মুক্ত করতে পারবো আমরা?
আপনার অভিমত! আর সেই কাজে সাহিত্যের ভূমিকা কতটা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে
বলে আপনি মনে করেন!
সুমী: প্রতিক্রিয়াশীল যে চক্রের কথা বললেন সেটা তো অনাধুনিক,পশ্চাদপদ,দুর্গন্ধময়।
শুভকামী নিজের অস্তিত্বের কারণেই এসব আবর্জনা দুই হাতে ঠেলে সরাবে। ইতিহাস তো
আমাদের পক্ষেই। অনেক ত্যাগ লাগবে,পরিশ্রম লাগবে,ঐকমত্য লাগবে। আর এই সেতু গ্রন্থিকগণই আমাদের দুই বাংলা তথা
পৃথিবীর সাহিত্যভুবন।
কবিতাউৎসব: এবার একটু ব্যক্তিগত প্রসঙ্গের অভিমুখে
এসে আপনার নিজের লেখালেখির বিষয়ে যদি জানতে চাই, আপনার
পাঠকের কাছে ঠিক কি ভাবে পৌঁছাতে প্রয়াসী আপনি?
সুমী: আমি শুরু করেছি কবিতার হাত ধরে। এরই মধ্যে আমার পাঁচটা কবিতার বই বেরিয়েছে।
বইগুলো হচ্ছে;
১.এসো হাত ধরো (২০১১)
২.নদীটা রেখে যাও (২০১২)
৩.গ্রীবা তার ক্যানভাস (২০১৩)
৪.মিসিং পাসওয়ার্ড (২০১৫)
৫.একাপনা (২০১৭)
এখন সাম্প্রতিক সময়ে আমি গল্প লিখছি,গদ্যও লিখছি
অল্প। আমার কাজ তো একটাই;মানব জমিনে বোধের চাষাবাস।
কবিতাউৎসব: আপনার কাব্যচর্চার আজীবন সাধনার বিভিন্ন
পর্ব পেড়িয়ে এসে এই সময়ে দাঁড়িয়ে কতটা তৃপ্ত আপনি? আর
কতটা আক্ষেপ রয়ে গেল? ভবিষ্যতের বাংলা সাহিত্য সম্বন্ধে আপনার
মনে কি স্পষ্ট কোন ছায়পাত পড়ে?
সুমী: তৃপ্ত করে এতটুকুই যে কবিতা আমাকে ছেড়ে যায়নি। আমার সাথে সে বাক্সপেটরা নিয়ে
আছে। আমার সারাবেলা সঙ্গী। না,ভবিষ্যতের বাংলা সাহিত্যের ছায়াপাত নিয়ে আমার ধারণা নেই।
আমি বর্তমানের সুমী সিকানদার।