শাহানারা
ঝারনা
বিদায়
বেলায়
নদীর জলে নেইকো স্রোত জোয়ার তবু আসে
বন ভরলে ফুলে- ঠিকই, ঋতুর মেয়ে হাসে
সংক্রান্তি যাক চলে যাক তুই বাজা তোর বাঁশি
সুরটি শুনেই শুকনো পাতা ঝরুক রাশি রাশি ।
অনুভূতির শিল্পমেলায় আশার পণ্য সাজা
পংখিরাজে সওয়ার হয়ে আসবে মনের রাজা ।
দূর পাহাড়ে পাইন গাছের সবুজ পাতার ভাঁজে
তোর স্বপ্নের আবেশ নিয়েই রোদ বালিকা সাজে
ঝঞ্চা আসুক বৃষ্টি নামুক যাক ভেসে সব কালো
তোর দেউলে উঠুক জ্বলে নৈবেদ্যের আলো !
ঘর বিলাসি দুঃখী মানুষ বদলে ফেলুক পেশা
দত্যি মেঘের মনে জাগুক প্রলয় দহন নেশা
যাকনা উড়ে বৈষম্যের নষ্ট ছনের চালা
দূর হয়ে যাক বস্তিবাসীর কষ্ট ও শোক জ্বালা
বিসর্জনের নামতা পড়ে সাজ না এবার রানি
বিদায় বেলায় দে পেতে তোর বহ্ণি আঁচলখানি ।
এমনি
করেই
স্বপ্নগুলো যায় যে উড়ে যায় ভেসে হায় অনেকদূর
মনের মাঠে রাখাল বাজায় কোন বেদনার বাঁশির সুর ?
বিচ্ছেদী সুর কণ্ঠে নিয়ে উদাস হয়ে কোকিল গায়
ঝরাপাতার কান্না শুনে হৃদয় ভরে বেদনায় ।
পুরনো যায়, নতুন বছর দেয় ছড়িয়ে আশার ফুল
আমরা মাতি জয়োল্লাসে ভেঙে দ্বিধা ভয় ও ভুল ।
বদল দিনের পালকি চড়ে কোথায় যাব কোন সে গাঁয়
কোন নিয়মে বাঁধবো নূপুর বাধার পথে আলতা পায় ?
অন্তরেতে স্বপ্নপথিক আছো তবু সামনে নাই
বলবে কি আজ কোন সাধনায় , কোন মুলুকে তোমায় পাই ?
যতোই আমার মনকে বুঝাই মানসপটে তোমার বাস
আরতিতে ভুল করিনা ঘটলে ঘটুক সর্বনাশ !
লীলাসখির আস্থা নিয়েই এই আমি হই স্বয়ম্ভর
পথিক তুমি কল্পনাতেই দাও সাজিয়ে মনের ঘর !
ঝড় ঝঞ্চা আসুক যতোই পাইনা যেন একটু ভয়
তোমার মাঝেই বসত আমার , নইতো আমি নিরাশ্রয় ।
চৈত চলে যাক বিষাদ- ব্যথায় , পদরেখার চিহ্ন থাক
এইতো জীবন, এমনি করেই , নিই নিয়ত কতোই বাঁক !
ঝরা
পাতার মর্মরে বাজে
বিষণ্ণতা নিয়ে ছোটে আকালি মানুষ ।
জীবন ভেসে যায় বারোয়ারি দিনের খেয়ায় , দিনান্তের গোধূলি
শোনায় পয়মন্ত সকালের সুর ।
ঋতুর পালকিতে চড়ে মনকথা নায়রে যায় , দুঃসময়ের বাসর সাজায়
বেনেবউ । আমরা পারাপার করি উৎকণ্ঠিত আবেগ ।
সংযোগ-সংক্রান্তি নিয়ে গোলার্ধের অধীশ্বর হাসে । নতুনে
সবুজে ভরে
চিরায়ত প্রকৃতি । চৈত্রের বর্ষীয়সী মেঘ ঝড়ের বারতা আনে ।
ধুলোমাটির গভীরে কাঁদে পুরনো ঝরা পাতার দল ।
কখনও ভেঙে যায় আশার বসতি তবু মনে পড়ে সেই বাবলাতলা ,
রাখালি বাঁশির সুর আর তুমি আমিময় চৈতি বিকেলের খুনসুটি ।
তুমি আমি আজ অনেক দূরে । ঝরা পাতার মর্মরে বাজে
আমাদের মনকথার প্রতিধ্বনি । চৈতালি ফসলের গন্ধে
যখনি মন চঞ্চল হয় ---স্মৃতিতে জাগ্রত হয় ,সেই চৈতি গোধূলি,
হাতে হাত , চোখে চোখ , খেয়াঘাটে মাঝিদের কানাকানি,
তোমার আমার প্রেমের সাক্ষী সেই পালতোলা নৌকোর দুলুনি !
চিরায়ত
ভাবনা
চলে যায় দিন । রঙিন পাল তুলে স্মৃতিরা ভেসে আসে।
আমার মানসপটে জাগে চৈত্রী-চিত্রকাব্য । আমি তোমাকে আঁকি ।
শতবার আঁকি আমার মননের ক্যানভাসে ।
তুমিময় প্রহরের সংলাপ নিয়ে কত যে সময় যায় - জানা নেই ।
হিসেবও করি না কখনও । যখনি গতিশীল হয় আমার কর্মক্ষেত্র,
ভাবনার মেঠো পথ ধরে একাকি হেঁটে যাই অনেকদূর ।
উদাস সুরে গান গায় সংক্রন্তির বাউল ।আমার কুঁড়ে ঘরে
মিহিসুরে বাজে
স্মৃতির সানাই । নিত্যকার গেরস্থালির সতত প্রবাহে ভাসি ডুবি
কতবার ।
ভ্রমণিক প্রহর জুড়ে বাস করে বিষাদিত অনুভূতি ।
দেখি, নাগরিক উৎসবে মাতে সবুজ পাতা ও প্রকৃতি ।
হালখাতায় সংযুক্ত হয় চলমান নতুন হিসেব ।
মনটা আনচান করে ওঠে । এমনি করে সবকিছু বদলে যায় ?
নতুনে ভরে যায় কতকিছু । শুধু পুরনো দিন আর ,
ফিরে আসেনা নতুন হয়ে !
তবুও---প্রীতিকথা কিংবা স্মৃতিকথার মৌসুমি আবেশ -
হৃদয় জাদুঘরে ক্রমাগত দীর্ঘস্থায়ী হয় ।
নিঃশব্দের ছায়াপথে আমি সেসব নিয়েই উর্বরা হই ।
গৃহকাতরতায় পার করি দিন ,মাস, বছর ও শতাব্দী ।
সংক্রান্তির
পালাবদল
দিনগুলি হারিয়ে যায় | অমরতা নিয়ে জাগে মায়াবী রাত !
কিছু কথা বলা হয় ..কিছু বা রয়ে যায় বাঁকি |
একাকী প্রহর কখনো সুধাময় হয় .
স্মৃতির অমৃতে ভরে বুক |
কেউতো ভোলেনা শাশ্বত দিনের কথা !
বিষাদের সূচক ওঠানামা করে ...তবুও ওজস্বী জীবনচর্চায় মাতি |
আলোময় আমিত্বে বাজে রাখালিয়া সুর |
আমার বাঁশরি মনে আজো যেন বিলি কাটে
সেদিনের চৈতালী বাতাস |
আধো ঘুম ভেঙে দেখি পৈথানে বসে আছে স্মৃতির সারেং !
ইচ্ছের বেপরোয়া গতি আমাকে ভাসিয়ে দেয় |
কিশোরি মধ্যাহ্নে বসে হীরামন পাখিরা যখন
বৈরাগী শ্লোক বলে ...
ফসলি বার্তা নিয়ে আমার মন ছোটে কিষান পাড়ায় ।
কিষানির অপেক্ষিত চোখ . চৈতালি মাচান ছুঁয়ে আবেশে চঞ্চল হয় |
সেই খড়িমাটি বেলার গেরস্থালি প্রহরগুলো
সহসাই হয়ে ওঠে আরতিময় !
লোকাচারের ভিত ভেঙে
আস্থারা হয়ে যায় সংক্রান্তির শ্রমিক !
পেশাজীবী জীবনের পালাবদল চলে ... |
চেতনার ছায়াপথে ভাসে বিরহী কিষানির অবনত মুখ |
কিষানির ভাবনা জুড়ে ঢেউ তোলা পুকুর ঘাট..মরমী মইষাল গীতি ..
অপেক্ষার লোকজ আবহে
...কেবলি বুকে বাজে
" ওকি গাড়িয়াল ভাই ....
কতো
রবো আমি পন্থের দিকে চাইয়া রে...!!