মনোজ
আচার্য
মেঘের
অন্তরালে
আমি মেঘলা হয়েই আছি সারাদিন
যখন খুশী বর্ষাবো তোর গায়ে।
লুকোচুরি যতই খেলা খেলিস
এক পলকে আনবো আঙিনায়।
হাওয়ায় ভেসে খুঁজি তোকে কত
ভাবিস বুঝি আড়াল করে নিবি।
হঠাৎ যদি আঁধার সেজে আসি
তখন তুই কোথায় পালিয়ে রবি ?
হাওয়ার স্রোতে গা ভাসিয়ে এসে
আমি তোকে কুড়িয়ে নেবই দেখিস।
আকাশ কোলে পালিয়ে সেদিন যাব
যতই তুই ঘরে বসে থাকিস।
ভাবছি আবার তোকে বৃষ্টি করে নেব
রাখবো তোকে বুকের মধ্যে করে।
ঝড় ঝঞ্ঝা যতই আসে আসুক
থাকব তোকে দুহাতে জড়িয়ে ধরে ।
ভূগোলের
আড়ালে
পৃথিবী ঠিক গোলাকার নয় বলে
তার সুযোগ নিয়েছো বারংবার।
পরিধি ব্যাসের কোণায় কোণায়
লুকিয়ে রেখেছো আমার প্রেম।
আমি হন্যে হয়ে প্রতিটি অক্ষে-দ্রাঘিমায়
খুঁজেছি উদভ্রান্ত কাঙালীর মত।
তোমার প্রতিটি স্পর্শের অনুভূতি
শিরা-উপশিরায় প্রবাহিত হয় আজও।
তুমি সুমেরু বৃত্তের চারিপাশে
তুষার বলয়ে গা ঢেকেছো হয়তো!
কথা ছিল সাহারায় দেখা করে প্রশান্তে ডুবে যাব
কথা ছিল তারা ছোঁব হোক না লক্ষ আলোকবর্ষ
কথা রাখ নি তুমি!
আমি চললাম পৃথিবীর কেন্দ্রের দিকে ভাসতে
শুনেছি ওখানে শূণ্য অভিকর্ষ!
সৎকার
আমার বুকে বারুদের স্তুপ
চোখে তোমার জ্বলন্ত অগ্নিপিন্ড
ঠিকরে পড়া দৃষ্টিতে স্ফুলিঙ্গ আসে বুকে
শুরু হয় আমার নিরঙ্কুশ দহন!
আমি পুড়ছি তোমার বিস্তৃত বুকের উপর ...
দাবানলের অগ্নিশিখায় আকাশে তারা খসে
কালপুরুষ চোখ ফেরায় নিমেষে।
কালো ধোঁয়ায় আঁধার পৃথিবী!
বাতাসে হৈচৈ!
এখন আমার নিরক্ষরেখায় আগুন!
আত্মার অগ্নিপিন্ড বলে কানে কানে.....
এ দহন শেষে তুমি মিশে যাবে মানুষের স্রোতে!
তাই পুড়ছি আবার
পুড়বো বারংবার অবিনশ্বর দাহ -এ।
সন্ধ্যাতারা
সেদিনও রোদ মেখেছিল
ধুলাগাঁয়ের বারোর মেয়েটা
আকাশের মেঘ হতে চাইতো সে...
বৃষ্টি হয়ে ভিজিয়ে খিলখিলিয়ে
হাসবে বলতো প্রায়ই
সন্ধ্যার আলো আঁধারি পথে
তারা গোনার খেলা
বাহান্ন ..তিপ্পান্ন...চুয়া.....
দানবের থাবা বসে মুখে...
চারটে হিংস্র দানব
ছিঁড়ে খায় একটা নিস্পাপ
ফুলের কুঁড়িকে....
সবুজে ভেসে যায়
তার স্বপ্নগুলো নিথরে
লাল বৃষ্টি রূপে।
সেদিন শত চেষ্টাতেও
বজ্র হতে পারে নি সে!
পুনঃশ্চ
যদি আমি নষ্ট হই এক পরন্ত অবেলায়
আমার হৃদপিন্ডে যদি বাসা বাঁধে অবাধ্য ছত্রাকেরা অবলীলায়
যদি কালসিটে জ্যোৎস্নায় ভিজে যাই এক আবছা পূর্ণিমায়
আমার অস্তিত্বের অবশিষ্টটুকু উচ্ছিষ্ট ডাস্টবিনে পাবি।
সেদিন হলুদ অপরাহ্নে আমি তোর প্রেমিক হতে চেয়েছিলাম।
শহুরে কালো রাস্তার পীচ পেরিয়ে তোর বাড়ী।
বিলাসিতায় মোড়া অট্টালিকায় এক আমোদী সন্ধ্যায়
এক কাঁচ জানালায় তোকে বলেছিলাম ফিরে যেতে।
নদীর স্রোতে ভেসে যেতে যেতে ঠিকানাহীন জীবন নিবি বলে
তোর প্রথম ছোঁয়া আমায়।
সেদিন এক কংক্রিট ফুটপাতের গল্প বলেছিলাম তোকে।
আমার শরীরময় আঁচড় কাটা দগদগে দাগ
এখনও শৈশব মোছেনি আমার।
আজ তোর সীমান্তে তারকাঁটা, শরীরে বিষাক্ত
ঘাম!
মনে ভরা হা হুতাশ, ভয় হারাবার
সম্মান!
আমার বুকে রক্তক্ষরণ, বিঁধে থাকা শূল
এই পৃথিবীর পচন -গলন, স্মৃতিময় টাটকা
ভুল।
নামতা বলার দিন ফুরোলো, তোর মুক্তিবেলায়
জ্যোৎস্নাটা তাই ধূসর এত ছন্দ বাঁধার খেলায়।
এক সুবিশাল গহ্বরের দিকে এগিয়ে চলেছি ক্রমাগত।
ফুরোনের শেষবেলায় রোমন্থনের এক সুদীর্ঘ নিঃশ্বাসে
শুরু হোক তোর নূতন অধ্যায়!