মঙ্গলবার, ২১ মার্চ, ২০১৭

রাবেয়া রাহীম



রাবেয়া রাহীম

মহাদেশ--মহাসাগর দূরত্ব

দুজনার মাঝখানে আজ মহাদেশ--মহাসাগর দূরত্ব!
নাকি গ্যালাক্সি?
বোধহয়, তারচেয়েও অনেক বেশী!
জায়গাটা ছিলো হিথরো এয়ারপোর্ট--
লম্বা পথ পরিক্রমার পর যাত্রা বিরতি ছিলো
দীর্ঘ সময় বিমানের ভেতর সেঁধিয়ে থাকা শরীর
মুক্ত বাতাস পেতে ডাঙায় তোলা মাছের মত ফুসফুস হাসফাস।
যদিও টার্মিনাল ভবনটি মোটা কাঁচের ঘেরায়
বাইরে চেয়ে আলোর ঝলকানিতে মন প্রফুল্ল!!
হঠাত বাতাস কেমন অদ্ভুতরকম শীতল হয়ে শিরদাড়ায় কাঁপুনি ধরায়--
একটা ঘোরলাগা পরিবেশ সৃষ্টি
হ্যাঁ তাঁর সাথেই মুখোমুখি !
আটলান্টিক পার হয়ে আমি ইউরোপ ছেড়ে যাচ্ছি এশিয়ার দিকে
আর সে--
হিথরোই ছিলো গন্তব্য---
অচেনা হওয়ার ভান করিনি আজ আর কেউই!
কিছু ব্যথা ব্যাকুলতা
কিছু আকুলতা
ঘন নীল সময়ে ভেসে উঠে একঝাঁক রংধনু,
শালুক-শাপলা,
তুমি কি এখনও প্রবল বর্ষায় কিংবা শীতের রাতে
সেই নদীটির কাছে আমায় আনো?
না কি ভুলেছ ---
হারাই কন্ঠস্বর, বেড়ে যায় গ্রীবার কম্পন, ঠোঁট জোড়াও মৃত
সচল মস্তিস্কে থাকে কেবলি মলিন বিরহ,
বুকে খেলা করে রক্তের প্রবাহ।।

সময়ের সাথে বদলে ফেলেছি নিজেকে---
নাছোড়বান্দা অনুভুতি--বদলাতে পারলাম কই !
কান্নায় অঝোরে বৃষ্টি ঝরে বুকের জমিনে
না কাঁদিনি তখন---চোখের পাতা দুটি ভারি হয়েছিল।।
চারদিক অসংখ্য মানুষের বিবিধ কণ্ঠ ভেদ করে
লাউড স্পিকারের আর্তনাদ "ইয়র ফ্লাইট ইজ অন টাইম"
যাত্রা পথের বিরতি সময় শেস হয়েছে
অশান্ত মনের ডিঙি বেয়ে আমি উঠে দাঁড়াই।
আমার ঘরে ফেরার তাড়া নেই আজ
শীতল বাতাসে শীত শীত লাগছিল খুব ।।







থাকো তুমি নির্বাসনে
-------------------------
নিস্তব্ধ দুপুর---একলা একাকী নির্জন
শান্ত ছলছল-কলকল করে বয়ে যাওয়া নদীর তীর---
কল্প কথায় জড়ানো অচেনা সৌরভে বুঁদ হয়ে
দুরন্ত মন ছুটে চলে ভাবনার সীমান্তে,
সমস্ত আমিতে বিষন্নতা ছড়িয়ে
ঘোর লাগা জীবনের-জীবন্ত স্বাদ হয়ে উঠেছে পানসে,
ক্ষয়ে যাওয়া বসন্ত প্রচন্ড দহনের সংকেত জানান দেয়
ক্লান্ত মন,পেতে চায় সমাপ্তি এই জীবনের-
 বুকে নিয়ে শত অভিমান মন পুড়ে নিরবে
 কাজলে লেপ্টান মুখ বালিশে লুকিয়ে বলি,
 তুমি বরং নির্বাসনেই থাকো ।।
হঠাৎ করা-একটি মধুর ভুলের মাশুল গুনছি
মোমের মত গলে গলে;
আজ আর কোন কিছুর জন্য আক্ষেপ নেই,
সবই সয়---
উচ্ছাসে ভরা প্রাণোজ্জল তোমার ম্যাসেজের জন্যেও নয়,
দূর আকাশে লুকিয়ে রাখো তোমার অবশিষ্ট প্রেম--
তুমি বরং নির্বাসনেই থাকো ।।
সৃষ্টি-অবসাদ-মৃত্যু আর নিঃসঙ্গতাকে সঙ্গী করে;
বেশ আছি আজকাল--বয়সী বৃক্ষের মতো,
শুধু অভিমান গুলো বড় হয়--
হিলিয়াম গ্যাসে ভরা বেলুনের মতো,
নিত্য ভোরে মিষ্টি সুরে নাই বা ডাকলে!
তুমি বরং নির্বাসনেই থাকো ।।
মিলন বিহ্বলতায় কাঁপছে চাঁদ পূর্ণ কোজাগরী--
রক্তে উঠছে মেতে চৌরাশিয়া বাঁশী--
শেষ রাতের দীর্ঘশ্বাস হয়ে আর কত কাল থাকবে তুমি এই মনে...?
কামনা করি--
ভয়ঙ্কর আবেগের ভীষণ দুর্যোগ...নূহের প্লাবন, সুনামি,
সাইক্লোন বয়ে যাক আমারই জন্য তোমার ভেতর,
ভালোবাসার এই লড়াইয়ে তুমিই না হয় গেলে জিতে..
তুমি থাকো নির্বাসনে !! 






এলে তুমি কোথা হতে
-------------------------------
অনেকটা পথ গিয়েও এই অবেলায় এলে তুমি কোথা হতে
মৃদু হাসি ওষ্ঠে জুড়ে ?
চোখে আমার জল টলমল কাজলা দীঘির অভিমানী ঢল।
শীত ছুঁই ছুঁই কুয়াশা মাখা সোনা রোদ্দুর ঘিরে
চোরাপথে একটা নদী বয়ে যায় ধীর লয়ে।।
নদীর কাছে জল থৈ থৈ মাঠ--শক্ত করে ধরো দুটি হাত
এক পৃথিবী উলট-পালট হয়ে--গেলো পুরনো যে সাল
তন্ন তন্ন করে খুঁজে ফিরেছি সেই সোনালী বিকাল
এই বুকে কান পেতেই শুনো, অথৈ কথার উচ্ছল কলকল
চোরা স্রোতে ভেসে যেতে যেতে
উঠোনভর্তি ছড়িয়ে থাকুক দিন রাত্রির রঙিন কিছু পল ।।






গুচ্ছ কবিতা
-------------------
** পৃথিবীর প্রতি সব আকর্ষণ যখন অকার্যকর
ঈশ্বরীয় শূন্যতা সঙ্গী করে
উড়তে থাকি ফানুসের মত
ওজোনস্তর ডিঙিয়ে চলে যাই নিমিষে
অচেনা আরেক পৃথিবীতে
আদরে- প্রেমে,আকর্ষণে।।

*** চোখের জল--ছল ছল 
বয়ে যাও নীরবে
কত কথা থাকে যে লেখা
পড়তে পারে ক'জনে!!

*** বাড়তে থাকে ব্যস্ত নগরীর যান্ত্রিক কোলাহল,
শত ব্যস্ততাও কাউকে করে রাখে কবরের মত নীরব।
তিরতির করে বয়ে যায় সময় নদী
নিকোনো উঠোন জুড়ে অশ্বক্ষুরের ধ্বনি
জোড়া বিমুগ্ধ চোখ, বিষন্নতায়
মেঘ বিস্তীর্ণ আকাশে চাপা দীর্ঘশ্বাস !! 

*** কেন অকারণেই নিয়ে নাও আড়ি তাই বুঝি
ভালবাসার লেনা দেনা--চোখের জলে করি ।।
আমার থেকে দূরত্ব বাড়িয়ে লাভ কি ?
চিতার আগুন একা আমায় পোড়ায় নাকি !!

*** চক্রবুহ্য পার হয়ে এসেছি তোমার শহরে আবক্ষ তৃষা নিয়ে !
ঠিকানা জানা নেই তাতেইবা কি !যোজন পথ পেরিয়ে
আজ ভরদুপুরে এসে পৌঁছেছি একটি পুরো দিন কাটাবো বলে---
শহরের পিচ ঢালা পথ , দাম্ভিক বিল্ডিং,
সারি সারি ল্যাম্প পোস্ট, পার্কের বেঞ্চ এসবইতো আমার চেনা।।






উত্তর চিঠির অপেক্ষা
--------------------------------
খুব চেনা স্মৃতিগুলো আজো বড় বেশী
মনে করিয়ে দেয় অতীতের ভালোলাগাগুলো !
পেঁজা তুলোর মত নরম ঘাসে শান্ত পায়ে
অনেক দুরে একলা হেঁটে আপন মনে
ক্ষণে ক্ষণে মন উদাসি বাউল সুরে
লিখে যাই না বলা কথা গুলো কবিতার ছন্দে
উত্তর পাওয়ার আশা এখন আর করি না
নিরুত্তর তুমি---অভ্যাস হয়ে গেল যে !!
চিঠির উত্তর করবেনা আর কখনো কি?
পড়ন্ত বিকেলে নদীর স্বচ্ছ জলের দিকে চেয়ে
তোমার মুখচ্ছবি আঁকবার আপ্রাণ চেষ্টা
আর আশায় বাঁচি---হয়ত আজ উত্তর করবে
নির্বাসনে পাঠিয়েও নিজেকে ফিরিয়ে আনি বার বার,
ভুলে থাকার আশায় ব্যস্ততা পান করি চআকণ্ঠ
অবচেতন মনেতে ঠিক ভেসে থাকো তুমি
অনুনয় করি ! উত্তর চিঠি একবার লিখো ।।
কবিতার পাতারা ভারি হয়ে উঠে তোমার কারনে
রাত পাখির ডাক---ভোরের শিশির বলে দেয়
হৃদয়ের গভীর স্তরে খোদাই হয়ে আছে তোমার ছাপ
তুমি আছো আমার কাছেই...
ভুলতে চেয়ে তোমার মায়ার বৃত্তে জড়াই বার বার
তোমার মোহের ইন্দ্রজালে বন্দী হয়েছি অনেক আগেই
ভালোবাসি কতটা এখন আর সেটা বলিনা
নিজেকে বেঁধেছি তোমার গভীরে
কই, আমার চিঠির উত্তর তো দিলে না ?
তোমাকে কি এতোটাই ভালোবাসি !

কি কারন! জানিনা!!