অরিন্দম ভাদুড়ী
*** এক নিঃশ্বাসে ***
ভোর রাতের আশ্বাস,সকাল হবে !
উড়ো চিঠি ওড়েনি আজ,
এক ঝলক টাটকা রোদ্দুর এসে বললো
'ঘুমভাঙা চোখ ধুয়ে নে,স্বপ্ন হারাবে না
!'
নাড়ির গতি প্রবল,তাও
আপাদমস্তক শান্ত থাকার চেষ্টায়
"ড্যাম ফুল ! অ্যাম কুল !" কুলকুল করে ঘাম ছোটায়...
ট্রেনলাইন ক্রমশঃ রূপ পাল্টায় নিজের,
লাইন মেশে জংশনে |
ডান দিকের দুই নম্বর প্ল্যাটফর্ম নীলচে সালোয়ারে ঘর্মাক্ত !
হৃদপিন্ড তখন
একশো মিটারের পুরোনো রেকর্ড ভাঙতে বদ্ধপরিকর;
এক ঝটকায় ঊনিশ
স্টাইলভাই হতে হতেও
পাকা ঝুলফি ' ইয়া ইলাহি ইল্লেল্লাহ'
বলে মাথা ঝোঁকায়
ঘন্টাঘরের দিকে...
স্টেশনের শোরগোল হঠাত্ নিস্তব্ধ হয়ে যায়...
সাথে,অলিম্পিকের রেকর্ড ভাঙা
দৌড়'ও !
রিয়ার ভিউ মিররে
কমলা সূর্য্য চত্বর ছাড়ালো,সাঁঝবাতিকে
নিয়ে...
*** লেন দেন ***
তালিকা বিশাল,
সওদা করার আগে দেখে নাও !
একহাজার দিন চাই,শৈশবের গালে চুমু দিতে,
বর্ণমালার ওপারে স্বাধীনতা দেখবো |
একহাজার দিন বোকাবাক্সের উত্তেজনায়
জাতীয় নায়ক'দের নাম নিয়ে চেঁচাবো
রোজ নেশামুক্তির প্রতিজ্ঞা ভাঙবো;
রোজ একবার করে খিস্তি মারবো নিজেকে,
আর 'জিও গুরু' বলবো !
একহাজার দিন চাই,দু-চার'পেয়ের ভ্রাতৃত্বের,
ক্যানভাসে ছেটাবো রং,
ইচ্ছেমত চিল্লিয়ে গান করবো,
মনে মনে বাবা'কে বলবো 'ভালোবাসি',আর
এগুলোর পরে
একটা দিন সিঁদুর দেবো,সাঁঝবাতি'কে...
কত দর ?
“ভালোবাসো”
হাজারটা পরীক্ষা নেবো;
নির্জলা রাখবো,চোখে বেঁধে দেবো কাঁচের
পট্টি,
বিচ্ছিন্ন করবে দুনিয়া থেকে,
জ্বালিয়ে রাখবো চিতা !
সহমরণে নিয়ে যাবো টেনে !
চড়িয়ে লাল করে দেবে বুক,লালায় ভেজাবো
ঠোঁট,
অত্যাচার করবো দিনরাত !
প্রেম করবো মরার পরে...
এখনও আছো,সাঁঝবাতি ?
“বিদেহী”
বারুদের গন্ধ পাচ্ছিস ?
“না, ওটা পুরনো কোনো
অ্যালবামের খুলে যাওয়া ছবি,
পুড়ে গিয়ে ছাই উড়ছে ,তারই গন্ধ”
স্লোগান কিসের?আবার আন্দোলন?আবার জোট বাঁধা?
“না তো ! পথ নাট্যের দল,রাবন-বধ পালা”
রজনীগন্ধার সুবাস ! আম কাঠের খাট না ?
“না,কারুর বাড়িতে রুম
ফ্রেশনার ছড়িয়েছে ,
ও বাড়ির তিনতলার নতুন খাট এলো কিনা “
এই, ওখানে জটলা কিসের ?
চেঁচামেচি করছে কে ?
“ক্লাব ঘরে ম্যাচ চলছে,তারই হল্লা’’
কোমরে গামছা বাঁধা কেন ?
“গঙ্গা স্নানে যাচ্ছে হয়তো !’’
এই রাস্তাগুলো তো চেনা, হাঁটতে দে না !
“ডাক্তার শুয়ে থাকতে বলেছেন না !’’
ঘরটা খুব গরম, একটু পাখা-টাখা ,
“চাহিদার আর শেষ নেই, না ?
বেশ...
এই! জল ঢালছিস কেন ? আমি উবে যাচ্ছি
তো!
এই থাম , ঠাণ্ডা লাগছে ! এই !
“অনেক জ্বালিয়েছিস , এবার ক্ষান্ত দে,
শান্তি পা , ঠাণ্ডা হ’, ফিরিস না আর...
আয় তবে?চলি আমরা’’
আর আমি !
“সেই থেকে...”
মসজিদের বাইবেলে থাকা গায়ত্রীমন্ত্রের পাশে
যেদিন তোমার হাত ধরেছিলাম
হাজার পন্ডিত-মৌলবী- যাজক দের সাক্ষী রেখে,
কুড়ি টাকায় সেরে নিয়েছিলাম প্রমান করার পালা-
ভালোবাসি ।
গঙ্গার ছোটো ছোটো ঢেউ বয়ে নিয়ে গিয়েছিলো
এক প্রাচীন সমাধিক্ষেত্রে...
কে জানে কোনো জন্মে পাশাপাশি ঘুমিয়েছি কিনা !
উদ্দাম শহরকে নিস্তেজ করে তোমার ঠোঁটে
নিজেকে এঁকেছিলাম সেদিন,
কাল,আজ,কাল-
আমিই ছিলাম ।
চলো,ফিরে যাই ওই ছাতিম গাছটার
নিচে, যেখানে
সমাজ,শহর ভুলে
জড়িয়ে ধরেছিলে জাদুঘরের ভয়কে !