মঙ্গলবার, ২১ মার্চ, ২০১৭

পৃথা রায় চৌধুরী



পৃথা রায় চৌধুরী

ছায়া-ডাক

একেকটা দুপুরের কলিংবেল
তোমার পিঠ হয়ে যায়
দরজার চোরা চোখ
অবিশ্বাস করে নিজেকেই;


জন্ম নেবে বা নেবে না,
দোলাচলে থাকা শ্বাস
বার দুই দেখে নিশ্চিত হয়,
সে তোমারই অপেক্ষা।


তুমি বলোনি তো ফিরবে
শুধু অবয়ব ধরে রেখেছিলে,
দুজনে যখন হেঁটে চলে গেছি
বহুদূর আলাদা পথে...


একটা করে জ্বলে ওঠা বাতিতে,
চা' গুমটিতে তোমার এঁটো বিস্কিটে,
নানা নিষেধাজ্ঞায়, চেনা দাঁতে...
লিখে দিলে, আলোর প্রাসাদে দেওয়াল নেই।






ত্রুটি

দাগের শুরুতে কারো নাম এসে পড়ায়
দাগের অধিকার মুছে দিতে
জাহাজ ডেকে সাগর পাড়ি দিতে গেলে,
শোনোনি ঢেউ ভাঙ্গার কাঁপ হকারের ভিড়ে


স্টেনলেস্‌ স্টিল মেয়েতর্জনীতে ফেলেছে সাদাটে ছায়া
যে ভিখারিনীকে দুটাকা দাও রোজানা,
সাকুল্যে জমিয়েছে আট টাকা
নিয়ে যেও... জমা ঝনঝন।


এখন মাঝে মাঝে ঝড়জলে দাঁড়াতাম বিনা ছাতায়
জলের বোতল হাতে গলায় ঢোঁক ধরে রাখি
ভেজামেশা বিড়ির ধোঁয়ায় কাছে রাখি তোমায়...


বিজলিমাঠে দুকানে আঙ্গুল চেপে ভয় পাই
সবাই একা ঘুমোয়;
"এতো লাল!" ছিটকে যাওয়া ব্যস্ততারা বলে যায়।






অঙ্গীকার

রাত সত্যি এলো তাহলে, বলো
এবার সময় অন্ধকারকে চিরতরে
নিজেকে দেবার
কিন্তু, সে কি নেবে আমায়, কালো?


দূর কে নিজের করে নেবার কাল
আগতপ্রায়, পড়ে থাক যত সম্ভাব্য না হওয়া;
এসে যায় নি কোনো কিছু জন্ম ইস্তক
আজ নতুন করে বনশিমুল হতে লোভ হয়
একরাশ খয়েরাটে লাল চটচটে জমাটের মাঝেও
কেন তোমার হতে চাই, শুধু একবার
এক বিন্দু আলো...


সব বন্ধ ছবির রঙ মুক্ত করতে চেয়ে
অন্ধ তুলি শূন্য শুষে ছড়িয়ে গেলো
তোমার জন্যে
আকাশ ভরা ভীতু ধুলো।


সাহস করে একবার আমিও বলতে চেয়েছি,
ভালোবাসি,
অবশেষে বেলা বয়ে গেলো।





মন-জমিন

প্রথম ডাকে নিরুপায় উপেক্ষা
তবু ভবিতব্য কথা বলে


হাত ছুঁয়ে স্মৃতি হয়ে যাওয়া
এভাবেই ছাই, বিসর্জন এভাবেই
এভাবেই পুড়ে যাওয়া নিরন্তর
হিমরাত্রি বরফ আগুনে


একবার ডেকো আমার নাম ধরে,
আমি চলে গেলে...






অভিমান

পাখির ডানা জুড়ে আকাশ ভাঙার শব্দ,
দেওয়ালে ঢেউ আছড়ে পড়ার গন্ধে
সাধারন মেয়ে অসাধারন আয়না ভেঙ্গে
ঘুম তৈরি করে রাখে।


বিশ্বজোড়া তারিফের সামনে
একা অসহায় কুৎসিত হতে হতে বলে
ওদের ভাগের সমস্ত চাই
অপ্রেম প্রশ্নপত্র দেখায়, এই যে ঘৃণা পাও
তফাতটা নগন্য?


এক ছোঁয় না হাজার ভিক্ষামুঠি
কিছুক্ষণ আগে শীতের দীর্ঘশ্বাস হেঁটে গেছে,
অন্ধ মেঘেরা কার ছোঁয়ায় দিশাহারা হলে
হিংসে দাঁড়ায় প্রতি ট্র্যাফিক সিগনালে।


কিছু সুর ফিরে চলে গেছে
অজানা রাখাল ছেলের বাঁশিতে,
                               মেষপালকের দুর্লভ ছায়াসঙ্গীতে...।